অনিয়মিত মাসিকের ঔষধ - অনিয়মিত মাসিকের কারণ - অনিয়মিত মাসিকের কুফল
আপনাদের সকলের সুবিধা এবং সচেতনতার জন্য অনিয়মিত মাসিকের ওষুধ, কারণ ও কুফল ছাড়াও আরো বেশ কিছু বিষয় নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো
সূচিপত্রঃ অনিয়মিত মাসিকের ওষুধ - অনিয়মিত মাসিকের কারণ - ও নিয়মিত মাসিকের খুব ফল।
- অনিয়মিত মাসিক কি
- অনিয়মিত মাসিকের কারণ
- কিশোরীদের অনিয়মিত মাসিক কেন হয়
- অনিয়মিত মাসিকের এলোপ্যাথিক ঔষধ
- অনিয়মিত মাসিকের হোমিওপ্যাথিক ঔষধ
- অনিয়মিত মাসিকের কুফল
- অনিয়মিত মাসিকের ঘরোয়া সমাধান
- অনিয়মিত মাসিক হলে কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে
অনিয়মিত মাসিক কি
মাসিক হলো মেয়েদের একটি সৃষ্টিগত প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। প্রায় ১০ থেকে ৪৫ বছর বয়সে মহিলাদের প্রতি মাসে জরায়ুতে হরমোনার পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে হরমোনের প্রভাবে যে রক্ত জরায়ু থেকে বের হয়ে আসে সেটিকে মাসিক বা পিরিয়ড বলে। আর এই মাসিক বা পিরিয়ড যখন নিয়মিত না হয় তখন তাকে অনিয়মিত মাসিক বলে।
ধর্মীয় মতে তিন দিন থেকে দশ দিন স্বাভাবিক মাসিকের সময়সীমা। তিন দিনের কম বা ১০ দিনের বেশি হলে এটি অনিয়মিত মাসিকের মধ্যে পড়বে।ঘন ঘন মাসিক হওয়া এবং অনেক দেরিতে বা কয়েক মাস পর পর মাসিক হওয়া অনিয়মিত মাসিকের মধ্যে পড়ে। তবে প্রথম মাসের মাসিক থেকে দ্বিতীয় মাসে মাসিক যদি সাত দিন আগে বা সাত দিন পরে হয় তবে এটি মাসিকের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
অনিয়মিত মাসিকের কারণ
বিভিন্ন কারণে কিশোরী এবং মহিলাদের অনিয়মিত মাসিক হয়ে থাকে। অনিয়মিত মাসিক না হওয়ার প্রধান কারণ গুলো হলো ,
পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোমঃ পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম মেয়েদের একটি হরমোনাল অসুখ। এই রোগের ফলে মেয়েদের শরীরের এন্ড্রোজেন হরমোন অনেক বেড়ে যায় আর এই কারণে ডিম্বাশয় এর আশেপাশে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয়। এই সিস্ট গুলোর কারণে মাসিক অনিয়মিত হয়। ১৮ থেকে ৪৪ বছরের মহিলারা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।
ওজনঃ অনিয়মিত মাসিকের আরেকটি অন্যতম কারণ হলো ওজন।বর্তমান যুগে আমাদের অনেকের মধ্যেই এ সমস্যাটি দেখা যায় যে,বয়সের তুলনায় ওজনের কম বা বেশি হয়ে যায়। স্বাভাবিকের তুলনায় ওজন কম বা বেশি হলে অনিয়মিত মাসিক দেখা দেয়। ওজন স্বাভাবিক না থাকলে এক দুই মাস পর পর মাসিক হয়ে থাকে।
মানসিক চাপঃঅতিরিক্ত মানসিক চাপের ফলে আমাদের শরীরের হরমোনের স্বাভাবিক কাজের ব্যাঘাত ঘটে। এ অবস্থায় শরীরে হরমোন স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে না পারায় মাসিক দেরিতে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেউ যদি কোনো কারণে দুশ্চিন্তা গ্রস্ত থাকে বা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে তখন অনিয়মিত মাসিক হতে পারে।
থাইরয়েড হরমোনঃ আমাদের শরীরের সব ধরনের কার্যপ্রক্রিয়া ঠিক রাখে থাইরয়েড গ্রন্থি। এ থাইরয়েড গ্রন্থি থাকে আমাদের গলার নিচে। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে যখন কোন কারণে স্বাভাবিকের তুলনায় কম বা বেশি হরমোন বের হয় তখন স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের শরীরের সব কার্য প্রক্রিয়ার উপরে একটা প্রভাব পড়ে আর এর ফলে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে।
বুকের দুধ খাওয়ানোঃ যেসব মায়েরা বাচ্চাদেরকে বুকের দুধ খাওয়ান তাদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় অনিয়মিত মাসিকের সমস্যাটি দেখা দিতে পারে।
তবে, এগুলো ছাড়াও আরো বেশ কিছু কারণে অনিয়মিত মাসিক হয়ে থাকে । যেমন, যারা ক্যাফেইন জাতীয় খাবার বেশি গ্রহণ করে তাদের অনিয়মিত মাসিক হতে পারি, যারা অতিরিক্ত কপি পান করে মদ্যপান করে ধূমপান করে তাদের মধ্যে অনিয়মিত মাসিক হওয়ার প্রবণতা বেশি। এছাড়াও অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে।
কিশোরীদের অনিয়মিত মাসিক কেন হয়
যে সকল কারণে কিশোরীদের অনিয়মিত মাসিক হয়ে থাকে তার মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ নিচে দেওয়া হল
অপরিপক্ক ডিম্বাশয়ঃ কিশোরীদের ক্ষেত্রে ডিম্বাশয় পরিপক্ক হতে প্রায় কয়েক বছর সময় লাগে। অপরিপক্ক ডিম্বাশয় একটি উল্লেখযোগ্য কারণ অনিয়মিত মাসিকের ডিম্বাশয় অপরিপক্ষ থাকার কারণে কিশোরীদের শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রেজেস্টেরন হরমোনের তারতম্য দেখা যায় এর ফলে মাসিক অনিয়মিত হয়ে থাকে।
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমঃ যদি কোন কিশোরীর পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম এই রোগ থাকে তাহলে তার অনিয়মিত মাসিক হতে পারে। এবং এই রোগের ফলে অনিয়মিত মাসিকের পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন স্থানে যেমন, ঘাড় ও গলায় কালচে দাগ ও লোম দেখা যায়।
থাইরয়েড সমস্যঃ কিশোরী অবস্থায় কারো যদি থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দেয় তাহলে থাইরয়েডের পাশাপাশি মাসিক অনিয়মিত হতে পারে।
অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসঃ কিশোরীদের অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস থেকেও অনিয়মিত মাসিকের সমস্যাটি হয়ে থাকে। এই বয়স তাতে শরীরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি ও ভিটামিন প্রয়োজন হয় তাই এ সময় যদি পুষ্টিকর খাবার বা ভিটামিন জাতীয় খাবার কিশোরীদের না দেয়া হয় তাহলে তাদের শরীরে বিভিন্ন পুষ্টি বা ভিটামিনের অভাবে অনিয়মিত মাসিক হতে পারে।
অনিয়মিত মাসিকের এলোপ্যাথিক চিকিৎসা
যদি কারো দীর্ঘদিন ধরে অনিয়মিত মাসিক হয়ে থাকে বা অনিয়মিত মাসিকের সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে দেরি না করে আপনার উচিত হবে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে। অনিয়মিত মাসিকের জন্য কিছু ওষুধের নাম উল্লেখ করা হলো। অনিয়মিত মাসিকের ওষুধ হিসেবে, ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে এই ওষুধগুলি আপনি খেয়ে দেখতে পারেন। অনিয়মিত মাসিকের ওষুধ হিসেবে এগুলো বেশ ভালো কাজ করে
- Carbonica
- Amenorrhea
- Aconitum n.
- Viburnm op.
- Ferrum meta
- Natrum
অনেকের মাসিকের আগেও পরে হরমোনের কমবেশির কারণে স্তন ব্যথা হতে পারে এর জন্য আপনি পেইন কিলার নিতে পারেন ।তবে অনিয়মিত মাসিকের ওষুধ হিসেবে এগুলো ব্যবহারের আগে অবশ্যই রেজিস্টার ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
অনিয়মিত মাসিকের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
অনিয়মিত মাসিকের জন্য হোমিওপ্যাথিতে বেশ কিছু ঔষধ আছে। এ ওষুধগুলো অনিয়মিত মাসিক দূর করার জন্য বেশ ভালো কাজ করে। হোমিওপ্যাথি যেহেতু শারীরিক গঠন, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্, উচ্চত, রাগ, পছন্দ-অপছন্দ ইত্যাদির উপরে ভিত্তি করে দেওয়া হয় তাই এই জিনিসগুলো মাথায় রেখে যদি রোগীর বিভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সাথে মিলিয়ে এই ওষুধগুলো প্রয়োগ করলে অনিয়মিত মাসিকের ক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যেতে পারে। ওষুধগুলো হল,
- পালসাটিল্লা
- কাউলোফাইলাম
- ল্যাচেসিস
- লাইকোপোডিয়াম
- সেপিয়া
- সিকেল কর্নাটাম
- মুর এক্স পরপারিয়া
অনিয়মিত মাসিকের কুফল
মাসিক নিয়মিত হলে নারীদের স্বাস্থ্য যেমন সুস্থ থাকে তেমনি মাসিক অনিয়মিত হলে নারীদের বেশ কিছু সমস্যা হয়ে থাকে। আর এ সমস্যাগুলো দীর্ঘমেয়াদী এবং জটিল আকার ধারণ করতে পারে। অনিয়মিত মাসিক হলে যেটির উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে সেটি হল বাচ্চা না হওয়ার সমস্যা। মাসিক নিয়মিত না হলে ভবিষ্যতে বাচ্চা হওয়ার ক্ষেত্রে বা বাচ্চা কনসেপ্ট করার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। এই অনিয়মিত মাসিক নারীদের বন্ধ্যাত্বের একটি অন্যতম কারণ।
তাছাড়াও নিয়মিত মাসিক না হলে ঘন ঘন মাথা ব্যথা হতে পারে, পেট ব্যথা হতে পার, খাবারের অরুচি, খিটখিটে মেজাজ ,অবসাদ , মুখে ব্রণ , ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যা , চেহারার সৌন্দর্য নষ্ট হওয়া , চোখের দৃষ্টি কমে যাওয়া , চুল ওঠা , শরীরে সবসময় শীত অনুভব হওয়া সহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে।
অনিয়মিত মাসিকের ঘরোয়া সমাধান
মাসিক একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া তবে কোন কারনে যদি এই প্রক্রিয়াটি অস্বাভাবিক হয়ে যায় তাহলে আমরা প্রথমে ঘরোয়া ভাবেও কিছু টিপস ফলো করে বা কিছু খাবার খাওয়ার মাধ্যমে এর সমাধানের চেষ্টা করতে পারি। চলুন তবে জেনে নিই ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করা যায়
কাঁচা হলুদঃ শারীরিক হরমোনের ব্যালান্স এবং মাসিক নিয়মিত করতে কাঁচা হলুদ বেশ ভালো কাজ করে। এই কাঁচা হলুদ মাসিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। চা চামচের চার ভাগের এক ভাগ কাঁচা হলুদ এক কাপ দুধ এবং কিছু মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে আপনি অনিয়মিত মাসিকের সমস্যায় উপকার পাবেন পাবেন।
কাঁচা পেঁপেঃ কাঁচা পেঁপের মধ্যে যে প্রাকৃতিক উপাদান গুলো আছে সেগুলো জরায়ুর মালস ফাইবার কন্ট্রাকশনের ভালো কাজ করে। কাঁচা পেঁপে অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করতেও ভালো কাজ করে। কয়েক মাস যদি নিয়মিত ভাবে নিয়মিতভাবে কাঁচা পেঁপের রস খাওয়া যায় তাহলে মাসিক রেগুলার হয়।
অ্যালোভেরার রসঃ অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দূর করতে এলোভেরা রস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অ্যালোভেরার রস সামান্য মধু দিয়ে যদি সকাল বেলা খালি পেটে কিছুদিন নিয়মিত খাওয়া হয় তাহলে অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দূর হয়।
আদাঃ অনিয়মিত মাসিকের ক্ষেত্রে আদাও বেশ ভালো ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন তিন বেলা ভরা পেটে যদি কিছুটা আদার রস চিনি বা মধুর সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায় তাহলে দ্রুত অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
জিরাঃ রাতে ভিজিয়ে রাখা এক গ্লাস জিরা পানি যদি রেগুলার খাওয়া হয় তাহলে অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দূর হয়ে যাব।
ফল ও সবজিঃ ফল সবজি জাতীয় খাবার আমাদের শরীরের বিভিন্ন হরমোন ঠিক রাখে এবং আমাদের শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। মাসিক নিয়মিত করতে আমাদের বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজি বেশি বেশি খাওয়া প্রয়োজন মাসিক রেগুলার করতে গাজর পুদিনা পাতা করলার রস বেশ ভালো কাজ করে এছাড়া ফলের মধ্যে গাজর ও রেগুলার মাসিকের জন্য আঙ্গুর খুবই উপকারী।
এছাড়াও প্রতিদিন নিয়ম করে হালকা কিছু ব্যায়াম, হাটাহাটি আমাদের শরীরে ফিট রাখে এবং মাসিক নিয়মিত হওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করে। শরীরে আইরনের ঘাটতি পরলেও অনিয়মিত মাসিক দেখা দেয় তাই জন্য আমাদের উচিত আমাদের খাদ্য তালিকায় লৌহ এবং আইরন জাতীয় খাবার রাখা হয়।
অনিয়মিত মাসিক হলে কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে
বেশ অনেক কারণেই মাসিক অনিয়মিত হয়ে থাকে। শারীরিক বিভিন্ন খাদ্য পুষ্টির ঘাটতি বা মানসিক চাপের কারণে মাঝেমধ্যে একটু অনিয়মিত মাসুক হয়ে থাকে। অনিয়মিত মাসিক হলে আমরা প্রথমে ঘরোয়া উপায়ে সমাধানের চেষ্টা করে দেখতে পারি এতে যদি কাজ না হয় তাহলে আমাদের অবশ্যই উচিত হবে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া। যে পরিস্থিতি গুলোতে পরলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত ,
- একটানা তিন মাস মাসিক না হলে
- মাসিকের সময় যদি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়
- একটানা ১০ দিনের বেশি মাসিক হলে
- ৪৫ বছর হওয়ার পূর্বে মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে
- ৫৫ বছরের পর ও মাসিক দেখা দিলে
- ২০ , ২১ দিন পর পর মাসিক হলে
আমাদের সমাজ অনেক উন্নত হয়ে গেলেও আমরা বিভিন্ন জায়গায় এ সকল বিষয় নিয়ে কথা বলতে লজ্জা বোধ করি বা ইতস্তত বোধ করি এই কারণে আমাদের প্রায় ১০০ জনের মধ্যে ৩০ থেকে 40 জন নারী বা কিশোরী ভেতরে ভেতরে এই অনিয়মিত মাসিকের সমস্যায় ভুগে থাকি কিন্তু প্রকাশ করিনা। আমাদের সকলেরই জানা উচিত যে এটি কোন ছোট বা সাধারণ ব্যাপার নয় এই অনিয়মিত মাসিকের কারণে একটি মেয়ে সারা জীবন বন্ধ্যাতের শিকার হতে পারে ।তাই আমাদের উচিত এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url