বেগুন সম্পর্কিত তথ্য ও এর গুনাগুন - বেগুনে উপকারিতা এবং অপকারিতা

বেগুন,আমাদের দেশের খুবই সাধারন একটি সবজী।বেগুনের সাথে আমরা ছোটো বড় সবাই পরিচিত।কিন্তু আমরা বেগুনের নামের সাথে পরিচিত হলেও এর গুন বা উপকারিতার সাথে আমরা অনেকেই পরিচত না।আমরা অনেকেই শুধু এর নাম শুনে এভাবে বিচার করি যে - বেগুন অর্থ এর কোন গুন নেই,অথচ এই বেগুনই গুনে ভরপুর একটি সবজী ।এবং আমাদের সুস্থ্য জীবন যাপনেও বেগুনের অবদান রয়েছে , তবে বেগুনের কিছু খারাপ দিক বা অপকারিতাও আছে ।তাহলে চলুন বেগুন সম্পর্কিত তথ্য ও এর গুনাগুন এবং এর অসাধারণ কিছু উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।



আজকে এ পোস্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানাবো আমাদের দেশের একটি অতি সুপরিচিত সবজি বেগুনের বিভিন্ন গুনাগুন উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে। সুস্থ জীবন যাপনের জন্য বেগুনের এই উপকারিতা গুলো সম্পর্কে আমাদের সকলেরই জানা প্রয়োজন।বেগুন সম্পর্কিত তথ্য ও এর গুনাগুন সম্পর্কে জানা থাকলে ,দৈনন্দিন জীবনে আমরা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ঘাটতি গুলো এর মধ্যে দিয়া পুরণ করতা পারব।

আলোচনায় যা যা থাকছেঃবেগুন সম্পর্কিত তথ্য ও এর গুনাগুন - বেগুনে উপকারিতা এবং অপকারিতা

বেগুনের প্ররকারভেদ:

আমরা সাধারনত দুই প্রকারের বেগুন চিনি
  • শীতকালীন বেগুন
  • বারমাসী বেগুন
এ ছাড়াও আমাদের দেশে কয়েক প্রজাতীর বেগুন আছে।যেমন
  • ভারতীয় বেগুনঃ এ বেগুন দেখতে আঙুরের মত বড়
  • জাপানী বেগুনঃজাপানী বেগুন ছোট এবং গাঢ় বেগুনী রঙের হয়
  • মুসরিয়ান বেগুনঃডিমের মত দেখতে এ বেগুন ফ্যাকাসে সবুজ রঙের হয়
জাতের দিক থেকেও বেগুন বেশ কয়েক প্রকার।যেমন,
  • বারি বেগুন -১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮,৯,১০,১১,১২
  • বারি হাইব্রিড বেগুন -৩,৪
  • বারি বিটি বেগুন -১,২,৩,৪

কোন জেলাই ভাল বেগুন চাষ হয়ঃ

আমাদের দেশের সব জায়গায় কম বেশি বেগুন চাষ হয় । তবে মাটি ও জাত ভেদে বাগেরহাট জেলায় বিটি বেগুন -৪, সিলেটে -বারি ১২,
এছাড় নরসিংদি,নঁওগা,মেহেরপুর,রাজশাহী,নাটোর ইত্যাদি অঞলে বেগুনের ফলন ভাল হয়।

বেগুনের ইংরেজি নামঃ

বেগুনের ইংরেজি নাম  Brinjal এটা আমরা কম বেশি সবাই জানি, কিন্তু এটা ছাড়াও বেগুনকে  ইংরেজিতে  Eggplant [এগপ্লান্ট] ,Aubergine [আওবেরগিন] বলা হয়।

বেগুনের পুষ্টিগুন

শুরুতেই আপনাদেরকে বলেছি যে বেগুন পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি সব্জি। এবার তাহলে বলি বেগুনে কি  কি পুষ্টি আছে । বেগুনে প্রচুর পরিমানে ক্যালরি ,প্রোটিন ,ম্যাঙ্গানিজ, ফোলেট , পতাসিয়াম , কার্বোহাইড্রেট , কপার ,থায়ামিন ,ফসফরাস ,আয়রন ,নিয়াসিন , ফাইবার।

বেগুনে আছে ভিটামিন - বি 6, ভিটামিন- এ , সি , ই , কে 



পুষ্টিগুনের মাত্র

আমরা ১০০ গ্রাম বেগুন থেকে প্রায় যে পরিমান পুষ্টি পেয়ে থাকি তা হল,
ক্যালরী -২৪ গ্রাম
শর্করা -২.১ গ্রাম
প্রটিন- ১ গ্রাম
আয়রন- ০.৮ গ্রাম
কার্বহাইড্রেড - ৬ গ্রাম
ভিটামিন C - ৩ গ্রাম
ভিটামিন B6 - ৫ গ্রাম
সুগার- ৩.৫ গ্রাম
ফাইবার-৩গ্রাম
মেগনেশিয়াম -৩ গ্রাম
কার্বহাইড্রাড -৩ গ্রাম

বেগুনের উপকারিতা

বেগুনে প্রচুর পুষ্টিকর উপাদান থাকার কারনে এর উপকারিতাও অনেক বেশি। বেগুনে থাকা আন্টি অক্সিডেন্ট আমাদের শরীর থাকে ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দেয় এবং চেহারায় বয়সের ছাপ পরতে বাঁধা দেয়।বেগুন খেলে আমাদের হজমশক্তি উন্নত হয় । বেগুন খেলে  রক্তশূন্যতা দূর হয় ।বেগুন শরীরের ভেতরে রক্তকে জমাট বাঁধতে দেয়না। ধুতরার বিষ কাটাতে বেগুন খুব ভাল কাজ করে। প্রতিদিন রাতে পোড়া বেগুন খেলে যাদের কিডনিতে পাথর কেবল শুরু হয়েছে তাদের পাথর গলে যাবে। বেগুন চোখের বিভিন্ন সমস্যা বিরুদ্ধে লড়ায়  করে বেগুনের রস খেলে দাঁত ব্যথা থাকে মুক্তি পাওয় যায় এবং এর শিকড় হাঁপানি রুগীদের জন্য  খুব কার্যকর।এছাড়াও বেগুন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শরীরে পটাসিয়ামের ২৯% ঘাটতি পূরন করে।

হার্ট ভাল রাখতে বেগুন

বেশ কিছু গবেষনা দেখা গেছে বেগুনের ভেতরে থাকা আন্টি অক্সিডেন্টের কারনে হার্টের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। বেগুন হার্টের বিভিন্ন কার্যকারিতা ভাল ভাবে সম্পন্ন করতেও সাহায্য করে।হার্ট এ্যটিকের ঝুঁকি কমাই।

ক্যন্সার প্রতিরোধে বেগুন

ক্যন্সার প্রতিরোধে বেগুন বিষেশভাবে কার্যকরী।প্রায় ২০০ বছর ধরে গবেষনার পর জানা যায় বেগুন মূত্রথলী,গ্রীবাসংবন্ধীয়,স্তন ও ক্যন্সারের বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। আমাদের শরীরে থাকা ক্যন্সারের কোষগুলোর মৃত্যু ঘটায় ।বেগুন সম্পর্কিত তথ্য ও এর গুনাগুন জানা থাকলে আপনি জানতে পারবেন ক্যন্সার প্রতিরোধে বেগুন খুবি কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।

ওজন কমাতে বেগুন

বেগুন শরীরের ওজন  কমাতে কাজ করে। বেগুনের তৈরি খাবারগুলো পেট ভারী রাখে ,ফলে মানুষ খাবার কম খাই।বেগুন আমাদের শরীরের খারাপ কোলেস্ট্রোলের মাত্রা ঠিক রাখে।

ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রনে বেগুনঃ

ডায়বেটিস রুগীদের জন্য বেগুন একটি আর্দশ খাবার। কার্বহাইড্রেট কম এবং ফাইবার বেশি থাকা এটি ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে খুব ভাল কাজ করে।বেগুন শরীরে ইনসুলিন নিঃসরন বাড়াতে কাজ করে এবং রক্তে শর্করার পরিমান কম করে।

বেগুনের  অপকারিতা

বেগুন সম্পর্কিত তথ্য ও এর গুনাগুন সম্পর্কে জানার পাশাপাশি এর অপকারিতা সম্পর্কেও জানতে হবে।সব কিছুরই কম বেশি কিছু উপকারীতা এবং অপকারিতা থাকে, বেগুনও এই নিয়মের বাইরে না। বেগুনের নানা প্রকার গুন থাকলেও এর কিছু খারাপ গুনও আছে।বেগুন একদিকে যেমন হযমে সাহায্য করে আবার বেশি খেলে হজমে ব্যঘাতো ঘটাতে পারে।
মাতৃগর্ভে থাকে ভ্রুনের ক্ষতির কারন হতে পারে বেগুন,কারন এট ভ্রুনের বিকাশ সাধনে বাঁধা দেয়।
যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের বেগুন না খাওয়াই ভাল, বেগুন আপনের অ্যালার্জিকে উস্কে দিতে পারে।
যদের ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের বেশি বেগুন না খাওয়া ভাল, বেগুন রক্তচাপ বাড়ায়। 

বেগুনের সম্পর্কিত তথ্য ও এর গুনাগুন সম্পর্কে আলোচনা করার পরে দেখা যায় দু একটি ক্ষেত্রে বেগুনের অপকারিতা থাকলেও, অপকারিতার চেয়ে বেগুনের উপকারিতা অনেক বেশি, প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় নির্দিষ্ট পরিমাণ বেগুনের সবজি রাখলে আমাদের সুস্থ জীবন যাপনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে এই বেগুন ।বেগুন সম্পর্কিত তথ্য ও এর গুনাগুন সম্পর্কে জেনে আপনি উপকৃত হয়েছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url