বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - কাঁচা বাদামের উপকারিতা
বাদাম এক ধরনের ফল যেটিকে আমরা সাধারণত Dry fruit ( ড্রাই ফ্রূট) বলে থাকি। ছোট বড় আমরা সবাই বাদাম খেয়ে থাকি। কিন্তু বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা না জেনেই আমরা শুধু শখের বসেই বাদাম খাই। খাওয়ার আগে অবশ্যই আমাদেরকে বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে হবে।
আজকে এই পোস্টে আলোচনা করা হবে বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। এবং আরো আলোচনা করা হবে বিভিন্ন ধরনের বাদামের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে । এই পোস্টটি পড়লে আপনি জানতে পারবেন কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা এবং ভাজা বাদাম খাওয়া উচিত নাকি কাঁচা বাদাম। বাদাম সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় জানতে হলে এই পোস্টটি অবশ্যই শেষ পর্যন্ত পড়ুন এবং বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নিন।পোষ্টের ভেতরে যা যা থাকছেঃ বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - কাঁচা বাদামের উপকারিতা
- বাদামের খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- অতিরিক্ত বাদাম খাওয়ার অপকারিতা
- সকালে কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
- প্রতিদিন কি পরিমান বাদাম খেতে হবে
- ভাজা বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা
- কাঁচা বাদামের উপকারিতা
বাদামের খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
বাদাম কথাটার সাথে আমরা ছোট বড় সবাই পরিচিত। বিভিন্ন সময় শখের বসে অথবা আড্ডা
দিতে দিতে আমরা বাদাম খেতে পছন্দ করি। কিন্তু বাদাম খাওয়ার যে বেশ কিছু উপকারিতা
এবং পাশাপাশি অপকারিতাও রয়েছে এ বিষয়ে আমরা অনেকেই জানিনা। এবার
তাহলে আলোচনা করা যাক বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে। আপনাদের
সুবিধার জন্য বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো আলাদাভাবে তুলে
ধরা হলো।
বাদাম খাওয়ার উপকারিতাঃ নিয়মিত বাদাম খাওয়ার শারীরিক উপকারিতা
অনেক বেশি এর ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করা যায় এবং শরীরে বিভিন্ন পুষ্টির
ও প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয় পূরণ হয়।
- ক্যান্সার প্রতিরোধে বাদামঃ বাদামের ভেতরে রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে ।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করেঃ বাদাম আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এবং আমাদের শরীরকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ রোগ থেকে দূরে রাখে।
- হাড় গঠনে সাহায্য করেঃ বাদামের ভেতরে রয়েছে ফসফরাস। এই ফসফরাস শরীরের হাড় গঠনে সাহায্য করে এবং হাড়ের বিভিন্ন অসুখ বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলে।
- কোলেস্টেরলের এর মাত্রা ঠিক রাখেঃ আমাদের শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ফেলে এবং শরীরে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ আমেরিকায় অবস্থিত অ্যান্ডারস ইউনিভার্সিটির একদল গবেষকের মতে, বাদামের মধ্যে থাকা উপাদান গুলো স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- উচ্চ রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করেঃ বাদামের ভেতরে থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে । শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের অভাব থাকলে হুট করেই ব্লাড প্রেসার অতিরিক্ত বেড়ে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে ।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ করেঃ প্রতিদিন কিছু পরিমাণ বাদাম খাদ্য তালিকায় যুক্ত করলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব কারণ ওজন নিয়ন্ত্রণে বাদাম বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ বাদামের মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়াম শরীরের শর্করা কমাতে সাহায্য করে। আর এই কারণে বাদাম খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডাক্তাররা ডায়াবেটিস রোগীদের কে বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে।
- হজমের সমস্যা দূর করেঃ গবেষকদের মতে প্রতিদিন কিছু পরিমাণ বাদাম খাওয়া গেলে শরীরের ভিতরে এমন কিছু বেড়ে যায় যার ঘরে হজম শক্তি উন্নত হয়।
- পুষ্টির অভাব দূর করেঃ বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার , ম্যাঙ্গানিজ , ফসফরাস , ভিটামিন ম্যাগনেসিয়াম, প্রোটিন সহ আরো বিভিন্ন ধরনের উপাদান সুতরাং নিয়মিত বাদাম খেলে আমাদের শরীরে এই পুষ্টির অভাব দূর হয়।
অপকারিতাঃ উপরের আলোচনায় আপনারা বাদামের বিভিন্ন ধরনের উপকারিতার কথা
জেনেছেন এবার আপনাদের জানাবো বাদামের কিছু উপকারী দিক সম্পর্কে। বাদাম খাওয়ার
উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই আমাদের ভালোভাবে জেনে রাখা দরকার।
আরো পড়ুনঃ আম খাওয়ার উপকারিতা।
- ওজন বাড়িয়ে দিতে পারিঃ বাদাম ওজন কমাতে সাহায্য করলেও অনেক সময় বেশি পরিমাণে বাদাম খাওয়ার কারণে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
- এ্যাসিডিটিঃ ২০০ গ্রামের বেশি বাদাম খেলে পেটের এ্যসিডিটি বেড়ে যেতে পারে।
- এলার্জিঃ অনেক সময় বাদাম খেলে এলার্জি রোগীদের এলার্জির মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
- ওষুধের কার্যক্ষমতাঃ বাদাম ওষুধের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় যার ফলে বিভিন্ন সময় অসুখ থেকে সেরে উঠতে সময় লাগে।
অতিরিক্ত বাদাম খাওয়ার অপকারিতা
উপরের আলোচনায় আমরা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বেশ কিছু আলোচনা
করেছি। এবার আপনাদেরকে জানাবো অতিরিক্ত বাদাম খাওয়ার অপকারিতা। পরিমিত পরিমাণে
বাদাম আপনাদের খাদ্য তালিকায় যুক্ত করলেও খেয়াল রাখতে হবে যে বাদাম যেন
অতিরিক্ত খাওয়া না হয়ে যায়, অতিরিক্ত বাদাম খাওয়ার অপকারিতা রয়েছে। অতিরিক্ত
বাদাম খেলে আপনি নিম্নত্র বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। অতিরিক্ত
বাদাম খাওয়ার অপকারিতা গুলো হল
আরো পড়ুনঃ বেসন দিয়ে রূপচর্চা করার উপায়
- ওজন
- বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ হয়
- পরিমিত পরিমাণে বাদাম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে কিন্তু অতিরিক্ত বাদাম খেলে রক্তচাপ বেড়ে যায়।
- এলার্জি প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়
- অতিরিক্ত বাদাম খাওয়া শরীরের ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ কমিয়ে দেয়
- অতিরিক্ত বাদাম খেলে ,বাদামের ভেতরে থাকা ফাইটিক এসিড শরীরের পুষ্টি মাত্রা কমিয়ে দেয়।
- অতিরিক্ত বাদাম খাওয়া আর্থ্রাইটিস রোগীদের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে কারণ , অতিরিক্ত বাদাম খেলে আর্থ্রাইটিস এর প্রদাহ বেড়ে যায়।
- অতিরিক্ত বাদাম খাওয়ার ফলে ক্ষুধামন্দা সৃষ্টি হয় , হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে, লিভারের ক্ষতি করতে পারে।
সকালে কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
সকালে কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা গুলো নিচে তালিকা আকারে তুলে ধরা হলো।
সকালবেলা কাঁচা বাদাম খেয়ে, কাঁচা বাদামের এই উপকারিতা গুলো
কাজে লাগাতে পারেন।
- শরীরের বিভিন্ন ধরনের টিউমার হতে বাধা দেয়
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনে
- স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা গর্ভাবস্থায় নিয়মিত সকাল বেলা কাঁচা বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন কারণ এটি নবজাতকের জন্য উপকারী।
- ক্যান্সার রোধে সহায়তা করে
- শরীরের ফোলা ভাব কমায়
- হার্ট ভালো রাখে
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে
- সারাদিন পেট ভরা ভরা ভাব থাকে
প্রতিদিন কি পরিমান বাদাম খেতে হবে
প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় বাদাম রাখা আমাদের খুবই প্রয়োজন। কারণ বাদামের মধ্যে
রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীরে পুষ্টির চাহিদা দূর করে এবং
বিভিন্ন ধরনের রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলে। কিন্তু প্রতিদিন কি পরিমান বাদাম
খেতে হবে সেই সম্পর্কে আমাদেরকে জানতে হবে। আসুন তাহলে এবার জেনে নেয়া যাক
প্রতিদিন কি পরিমাণ বাদাম খেতে হবে
গবেষকরা বিভিন্ন ধরনের গবেষণার পরে এই ফলাফল প্রকাশ করেছেন যে দৈনিক ৪০
গ্রাম বাদাম অথবা দেড় আউন্স বাদাম খাওয়া উচিত এতে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা
গড়ে ওঠে। আপনাদের সুবিধার জন্য ১০ গ্রাম বাদাম সংখ্যায় কয়টি বাদাম হয়, সে
সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেওয়া হলো। প্রতিদিন ১০ গ্রাম করে বাদাম খেলে গড় আয়ু
বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।১০ গ্রাম চীনা বাদাম মোটামুটি ১২/১৩ টি বাদামের সমান,
১০ গ্রাম কাঠবাদাম হল ৪/৫ টি এবং কাজুবাদাম ৮/৯। অবশ্য এগুলো সম্ভাব্য
সংখ্যা, বাদামের আকার এবং আয়তন অনুযায়ী এটি কম বা বেশি হতে পারে।
ভাজা বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা
ভাজা বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা হয়তোবা কমবেশি জানলেও এর
উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান আমাদের অনেকেরই নেই। আসুন
তাহলে জেনে নেওয়া যাক ভাজা বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
ভাজা বাদামের উপকারিতা গুলো হলঃ ভাজা বাদামে ভালো কলেস্টরলের মাত্রা
বেশি থাকে , হার গঠনে সহায়তা করে , শরীরে পুষ্টি ঘাটতি দূর করে , ক্যান্সার
প্রতিরোধ করে , এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করে ,
হার্টের বিভিন্ন অসুখ থেকে হার্টকে ভালো রাখে , রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণ করে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে, চুল এবং ত্বকের পুষ্টি যোগায় ,
ইমিউন সিস্টেম ঠিক রাখে , দাঁতের ক্ষয় রোধ করে , ওজন কমাতে সাহায্য করে।
ভাজা বাদামের অপকারিতাঃ বাদাম ভাজার সময় তাপের তারতম্যের কারণে অনেক সময় এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। ভাজা বাদাম শরীরের টক্সিন এর পরিমাণ অনেক সময় বাড়িয়ে দেয় , ভাজা বাদাম বেশি খাওয়ার ফলে অনেক সময় বদহজম এবং পেটে গ্যাসের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
কাঁচা বাদামের উপকারিতা
কাঁচা বাদামের মধ্যে থাকা বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে। গবেষণায় দেখা যায় ভাজা বাদামের চাইতে কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি। কাঁচা বাদাম হাড় গঠনে সাহায্য করে ,স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে , ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে, শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে, কাঁচা বাদামে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর পরিমাণ বেশি থাকে। কাঁচা বাদামের উপকারিতা হলো এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন , ক্যালসিয়াম আয়রন থাকে। এই কাঁচা বাদাম মেনোপজ হয়ে যাওয়া নারীদের ক্ষেত্রে তাদের হাড় গঠনের জন্য বিশেষ উপকারী । কিন্তু কাঁচা বাদামে থাকা ব্যাকটেরিয়া শরীরে বিভিন্ন সময় ক্ষতি করতে পারে।
উপরিক্ত আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। বিভিন্ন ধরনের বাদামের অনেক
স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও বেশি পরিমাণে বাদাম খাওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের
স্বাস্থ্য ঝুঁকিও হতে পারে। এ কারণে আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে বাদাম খাওয়ার
পূর্বে অবশ্যই জেনে বুঝে পরিমিত পরিমাণে খাবেন । আশা করছি ,বাদাম সম্পর্কিত
বিভিন্ন তথ্য জানতে পেরে নিশ্চয়ই আপনি উপকৃত হয়েছেন
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url