রূপচর্চায় বেসনের ব্যবহার - বেসনের স্ব্যাস্থ উপকারিতা
সাধারণত বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার তৈরি হয়।কিন্তু এছাড়াও যে বেসনের অনেক উপকারিতা রয়েছে সেটি আমাদের অনেকেরই অজানা। সুস্থ জীবন যাপনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেসন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে হার্ট এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বেসনের ভূমিকা অনস্বীকার। বেসনের অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে ।আসুন তাহলে আলোচনা শুরু করা যাক বেসনের উপকারী দিকগুলো নিয়ে।
বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরিতে এই ভীষণ ব্যবহার করা হয়, রূপচর্চা এবং স্কিন
কেয়ারের কাজেও ভীষণ ব্যবহার করা হয়। বেসনের উপকারিতা এবং ভীষণ সম্পর্কে
বিভিন্ন তথ্য জানতে হলে এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
সূচিপত্রঃরূপচর্চায় বেসনের ব্যবহার - বেসনের স্ব্যাস্থ উপকারিতা
- বেসনের তৈরি খাবার
- বেসন তৈরীর নিয়ম
- বেসনের প্রকারভেদ
- বেসনের উপকারিতা
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বেসন
- হার্ট ভালো রাখতে বেসন
- হাড় গঠনে বেসন
- খাবার পরিপাক ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বেসন
- ওজন ও ক্লান্তি দূর করতে বেসন
- রূপচর্চায় বেসন
- চুলের যত্নে বেসন
বেসনের তৈরি খাবার
বেসন দিয়ে বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার তৈরি করা হয়। সন্ধ্যার ঘরোয়া নাস্তা , রোজার ইফতারিতে স্ট্রিট ফুড তৈরিতে বেসন ব্যবহার করা হয়। যেসব খাবার তৈরি করতে আমরা বেসন ব্যবহার করি সেগুল হলো- ডিম, আলু্ , কিমা ইত্যাদির চপ বানানোর ক্ষেত্রে , পিয়াজু ,বেগুনি , বেসনের লাড্ডু , বেসনের জিলাপি , বুন্দিয়া বেসনের হালুয়া ও বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি তৈরিতে ব্যবহার হয় বেসন ।এছাড়াও আরো নাম না জানা অনেক ধরনের মুখরোচক খাবার তৈরি করা যায় বেসন দিয়ে ।
মুখরোচক ভাজাপোড়া এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের তরকারিও করা যায় বেসন দিয়ে। এছাড়াও বেসন দিয়ে তৈরি করা যায় বেসন পরোটা , পালং বেসনের তরকারি , দই বেশন , বিভিন্ন ধরনের দোসা তৈরিতে মূল উপকরণ হিসেবে ব্যবহার হয় বেসন।
বেসন তৈরীর নিয়ম
বর্তমানে আমাদের আশেপাশের বিভিন্ন সুপার মার্কেট এবং ছোট বড় সকল ধরনের মুদি দোকান থেকে বেসন কিনে ব্যবহার করতে পারি, তবে বাজার থেকে কেনা এই বেসন গুলো সব সময় স্বাস্থ্যকর ও উন্নত মানের হয় না। আমরা যদি ঘরে বেসন তৈরি করে সেটি ব্যবহার করি তাহলে এটি, স্বাস্থ্যসম্মত হয় এবং এই বেসনটা আমরা অনেকদিন ধরে সংরক্ষণ করে রাখতে পারি।
আরো পড়ুনঃ আম খাওয়ার উপকারিতা।
বেসন তৈরি করা হয় ডাল এবং চাল দিয়ে। প্রথমে শুকনা ডাল এবং অল্প পরিমাণ চাল হাড়িতে বা মিডিয়াম আছে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ভালোভাবে ভেজে নেব। এরপর এগুলো ভালো ভাবে ঠান্ডা হলে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে চালনি দিয়ে চেলে নেব, তাহলেই বেসন রেডি হয়ে যাবে। এরপর এই বেসন গুলোকে মুখ বন্ধ একটি সর্বোচ্চ তিন মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে পারব।
বেসনের প্রকারভেদ
যেকোনো ধরনের ডাল দিয়ে বেসন তৈরি করা যায়। তবে আমাদের দেশে কয়েক ডালের
বেসন খুব বেশি ব্যবহৃত হয়, এগুলো হলো
- বুটের ডালের বেসন
- খেসারির ডালের বেসন
- মুশুরের ডালের বিষয়
- মিক্স বেসন। বুট , খেসারি এবং মসুরের ডাল একসাথে করে এই মিক্স বেসন বানানো হয়।
বেসনের উপকারিতা
বেসনের উপকারিতা অনেক এবং অপকারিতা নেই বললেই চলে।সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো বেসনে ' গ্লূটেন ' থাকেনা। গ্লূটেন হচ্ছে এক ধরনের প্রোটিন , এর আরেক নাম প্রোলামিন। গ্লূটেন এর সাথে এলার্জির সম্পর্ক রয়েছে । বেসনে যেহেতু গ্লূটেন নেই তাই বেসন খেলে এলার্জি বেড়ে যাওয়ার ভয় থাকে না। বেসনে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ , ই , কে।
আরো পড়ুনঃ আম খেলে কোন কোন রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
এছাড়াও ক্যালসিয়াম , খনিজ লবণ, এই ভিটামিন এবং খনিজ লবন, আইরন, ম্যাগনেসিয়াম , ফসফরাস, পটাশিয়াম , সোডিয়াম ,থায়ামিন। এছাড়াও বেসনের আরো অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। প্রতিদিন খাবারের বিভিন্ন রেসিপির মাধ্যমে বেসন গ্রহণ করা গেলে এটি আমাদেরকে অনেক রোগের ঝুঁকি থেকে নিরাপদ রাখে , বেসনে উপকারিতা শুধু স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে রয়েছে এমটি নয় , আমাদের মুখ ও ত্বকের বিভিন্ন রকম সমস্যা দূর করে বেসন। রূপচর্চায় বেসনের ব্যবহার হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বেসন
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি উপযুক্ত এবং নিরাপদ খাবার। বেসনের মধ্যে
গ্লাইসনিক ইনডেক্স অনেক কম পরিমাণে থাকে । যেসব খাবারে গ্লাইসনিক
ইনডেক্স সেই সব খাবার ডায়াবেটিস রোগীরা অনেক সহজেই হজম করতে পারে।
বেসন ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে চিনির পরিমাণ হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়াকে বাধা
দেয়। বেসন ইনসুলিন সেনসিটিভিটি করাতেও সাহায্য করে।
খাবার পরিপাক ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বেসন
পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূরে রাখে এই আঁশযুক্ত খাবার বেসন। খাবার পরি পাশের
সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে বেসনের গুরুত্ব অনেক বেশি। বেসন
স্বাভাবিক মলত্যাগের ক্ষেত্রে অনেক সহায়তা করে। আমাদের পাকিস্তানি
বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া যেগুলো খাবার পরিপাকে সহায়তা করে সেই ধরনের ব্যাকটেরিয়া
গুলোকে জীবিত রাখে এই বেসন ।
হার্ট ভালো রাখতে বেসন
পোস্টের আগের অংশে আমরা জেনেছি বেসনে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ
লবণ। এই খনিজ লবণ আমাদের হার্টের রোগ গুলো দূরে রাখতে সাহায্য করে।
বিজ্ঞানীদের মতে, বেসনে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা ৩.৬% যার ফলে বেসন খেলে
হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে।
হাড় গঠনে বেসন
বেসনে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। এই ক্যালসিয়াম ও ফর্ফরাস আমাদের হাড় শক্ত রাখতে সাহায্য করে। তাই হার গঠনের ক্ষেত্রে বেসনের অবদান অন্যতম।
ওজন ও ক্লান্তি দূর করতে বেসন
বেসনে থাকা উচ্চমাত্রার প্রোটিন অনেক সময় খোদার অনুভূতি হতে দেয় না । বেসনের
তৈরি খাবার খেলে প্রোটিন থাকার কারণে পেট ভারী ভারী লাগে। তাই যারা অতিরিক্ত
ওজন কমাতে চান তাদের ক্ষেত্রে বেসন বেশ ভালো ভূমিকা পালন করে। সারাদিন ব্যস্ত
তারপর আমাদের ক্লান্তি দূর করতেও এটি একটি অন্যতম খাদ্য উপাদান । কারণ বেসনের
মধ্যে আছে যা শরীরের ক্লান্তি দূর করে ও শরীরের শক্তি যোগায় ।
রূপচর্চায় বেসন
রূপচর্চার কাজে বহু আগে থেকেই বেসন ব্যবহার হয়ে আসছে । বেসনের ভেতরে রয়েছে
বিভিন্ন ধরনের এসিড যেমন, লাইলোনিক এসিড অয়েলিক ফ্যাটি অ্যাসিড এবং
বিভিন্ন ধরনের খনিজ লবণ । বেসন যে শুধু ভাজা পোড়া কিংবা স্বাস্থ্যকর খাবার
তৈরীর ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় তাই না , বেসন রূপচর্চার বেশ ভালো একটি উপকরণ।
বেসন আমাদের মুখে dead skin cells দূর করতে সাহায্য করে। বেসন আমাদের মুখের
কালো দাগ দূর করে , আমাদের মুখে ছোট ছোট যে অবাঞ্ছিত লোম থাকে সেগুলো দূর করতে
সাহায্য করে , বেসন আমাদের ত্বকের প্রাকৃতিক স্ক্রাব হিসেবে কাজ করে।
আরো পড়ুনঃ বেগুনের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে ।
আমাদের সবারই কমবেশি গ্রহণের সমস্যা বিশেষ করে উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের ,
ব্রণের সমস্যা দূর করতে বেসন খুব ভালো কাজ করে ,
মুখ ও আন্ডার আর্মের কালো দাগ দূর করে দেখুন , সপ্তাহে অন্তত চার থেকে পাঁচ দিন বেসনের সাথে তিন চার চামচ লেবুর রস ও টক দই মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে মুখ এবং আন্ডার আর্মে ৩০ মিনিটের জন্য লাগিয়ে রেখে তারপর ধুয়ে ফেলুন। এতে মুখ এবং আন্ডার আর্মের কালো দাগ দূর হবে।
চুলের যত্নে বেসন
অনেকেরই না জানা থাকলেও বেসন চুলের যত্নের জন্যও বেসন খুব ভাল একটি উপাদান।
কারো যদি চুল পড়ার সমস্যা থাকে তাহলে চুলের গোড়া মজবুত করতে ৩-৪ চামচ বেসন,৪
চামচ টক দই ও এক চামচ লেবুর রস এবং ডিমের সাদা অংশ ভালোভাবে মিশিয়ে ৩৫-৪০
মিনিট মাথায় লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহ ৩-৪ দিন
ব্যবহার করলে ফলাফল আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।
পরিশেষে, উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় বেসন আমাদের নিত্যদিনের
বিভিন্ন কাজের বেশ উপকারী একটি উপাদান , বেসন দিয়ে আমরা ঘরোয়া ভাবেই বিভিন্ন
রুচি সম্মত, স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ঘরোয়া খাবার তৈরি করে নিতে
পারে, এতে বাইরের খাবারগুলোর ক্ষতির হাত থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করতে পারি।
এছাড়াও বিভিন্ন পাল্লার বা বাজারে প্রোডাক্ট ব্যবহার না করে বেসন দিয়ে আমরা
ঘরোয়া ভাবেই নিরাপদে রূপচর্চাও করতে পারি। বাইরের প্রোডাক্টগুলো অনেক সময়
আমাদের ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা বা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url