স্বাধীনতা দিবসের রচনা ও স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে ভাষণ

বহু ত্যাগ - তিতিক্ষা, সম্পদ - সম্ভব এবং দীর্ঘ সংগ্রামের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। ৩০ লক্ষ বিদ্যালয়ের রক্তে রাঙানো আমাদের স্বাধীনতার সূর্য। তাই মহান স্বাধীনতা দিবস আমাদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং গৌরব উজ্জ্বল একটি দিন। আর এই দিনটিকে ঘিরে তাই প্রতি বছর দিন বিভিন্ন জায়গায় রচনা লেখা প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে, আপনাদের সুবিধার জন্য স্বাধীনতা দিবসের একটি রচনা ও স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে একটি ভাষণ এই পোস্টে শেয়ার করা হলো
আশা করছি স্বাধীনতা দিবসের বিভিন্ন রচনা লিখার প্রতিযোগিতা এবং বিভিন্ন জায়গায় স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে ভাষণ দেওয়ার জন্য আজকের পোস্টের মাধ্যমে শেয়ার করা স্বাধীনতা দিবসের রচনা ও স্বাধীনতা দিবসের ভাষণটি আপনাদের উপকারে আসবে। আসুন তাহলে শুরু করা যাক স্বাধীনতা দিবসের রচনা ও স্বাধীনতা দিবসে সম্পর্কে ভাষণ

সূচিপত্রঃস্বাধীনতা দিবসের রচনা ও স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে ভাষণ

ভূমিকা

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস একটি ঐতিহাসিক ও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। আমাদের জীবনে এই দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম।এটি নব প্রত্যয় ও শপথ গ্রহণের একটি দিন। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ মধ্যরা শেষে, অর্থাৎ ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পরে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় কারাগারে। বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণার পর বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযুধে।


দেশকে স্বাধীন করার জন্য তারা দীপ্ত শপথ নেই। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকের নাগাশ্বাস থেকে নিজেদের মুক্ত করার জন্য এবং আপন পরিচয় খোঁজার নিয়মিত সেদিন বাঙালি গর্জে ওঠে। আবহমানকালে গৌরবময় সাহসিকতায় ইতিহাস যেন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেদিন এই জাতির ভেতর। তাই সর্বোচ্চ ত্যাগ করে সেদিন বাঙালি অর্জন করেছে স্বাধীনতার সোনালী সূর্য।

স্বাধীনতা দিবস

২৬ শে মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ মধ্যরাতে অর্থাৎ ২৬ শে মার্চ প্রথম প্রহরে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার গোষ্ঠীর দখলদারিত্ব থেকে মুক্তির লক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল। তাই এই দিন আমাদের জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এবং যেহেতু এই দিনে স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল সেই জন্য এই দিনটিকে আমরা স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করে থাকি।

ঐতিহাসিক পটভূমি

২০০ বছরের শাসন - শোষণ এবং নিপীড়নের পর সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসকেরা ১৯৪৭ সালে এই দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু যাবার পূর্বে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে হিন্দু এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে ভারতবর্ষকে খন্ড-বিখন্ড করার চক্রান্ত যুক্ত হয় । এর অংশ হিসেবে মুহাম্মদ আলী জিন্নার নেতৃত্বে পাকিস্তান নামের এক নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ব্রিটিশরা হিন্দু এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বাংলাদেশকে শিখন্ডিত করে পূর্ব বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তান নাম দিয়ে পাকিস্তানের সাথে যুক্ত করে।
ফলে পূর্ব বাংলা হয়ে যায় পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ পূর্ব পাকিস্তান। এই সময় পশ্চিম পাকিস্তানীরা নানাভাবে পূর্ব বাংলাকে শাসন ও শোষণ করার দীর্ঘমেয়াদী চক্রান্তে লিপ্ত হয়। চাকরি, ব্যবসা -বাণিজ্য, আর্থিক সম্পদ ও অন্যান্য সম্পদ বিবি বাটোয়ারায় তারা পূর্ব বাংলার কে ঠকাতে শুরু করে। তারা পূর্ব বাংলার মানুষের মাতৃভাষা বাংলাতে বাদ দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার চক্রান্তেও লিপ্ত হয় । ফলে পূর্ব বাংলার ছাত্র-জনতা কে চক্রান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে।
 ১৯৫২ সালে রক্তক্ষয় ভাষা আন্দোলনের পর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষায় হিসেবে স্বীকার করে নিতে বাধ্য হলেও এদের ষড়যন্ত্র , চক্রান্ত এবং শোষণ-নির্যাতন থেমে থাকেনি। স্থলে ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে সংঘটিত হয় ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন এবং ১৯৬৬ এর ৬ দফা ভিত্তিক স্বাধিকার আন্দোলন এবং ১৯৬৯ উত্তাল গণঅভ্যুত্থান। বিতাড়িত হয় স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ুব খান। ক্ষমতাসীন হয় আরেক জেনারেল ইয়াহিয়া খান। নব্য শরীর শাসক ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচনে আওয়ামী লীগে নিরঙ্কুশ ভাবে জয়লাভ করে।


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবির্ভূত হন বাংলার মানুষের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে। আওয়ামী লীগের এই অভূতপূর্বক বিজয় পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর কাছে ছিল অপ্রত্যাশিত। তাই সামরিক শাসক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া এসেম্বলি আহবান করতে টালবাহানা শুরু করে। ফলে বাংলার আপামর জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। অতঃপর ৭ মার্চ ঐতিহাসিকদের কোর্স ময়দানে লক্ষ লক্ষ মানুষের বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন-" এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম"।

স্বাধীনতা অর্জন

স্বাধীনতার আন্দোলনের সংগ্রামী বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে। এরপর আসে ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ। এ দিন মধ্যরাতে হানাদাররা রাজধানীর ঘুমন্ত মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে অত্যাধুনিক মরন অস্ত্র ট্যাংক আর মেশিনের গান নিয়ে। তারপরে হাজার হাজার ঘুমন্ত নারী-পুরুষ, শিশুকে। হত্যা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র , শিক্ষক , বুদ্ধিজীবীদের। হত্যা করে রাজার বাগ পুলিশ লাইনের শত শত বাঙালি নিরস্ত্র পুলিশ আর পিলখানা নিরস্ত্র বাঙালি ই পি আর সৈনিক দেরকে।
গ্রেফতার করে বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কিন্তু , পরিস্থিতি বিবেচনা করে গ্রেপ্তার হওয়ার কিছু পূর্বেই বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিকল্পনা অনুযায়ী ওয়ারলেসের মাধ্যমে ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে দেশবাসীকে মুক্তিযুদ্ধে ছাপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। অবশেষে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ এবং ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ এবং আত্মদানের মধ্যে দিয়ে অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা।

সমাজ-প্রগতি ও স্বাধীনতা

সমাজের প্রগতি হলো স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য। এর জন্য প্রয়োজন নতুন চেতনা, নতুন আত্মউপলব্ধি , নতুন শপথ। দেশের সর্বস্তরের মানুষের মেধা ও পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলতে হবে উন্নয়নের নতুন মাইক ফলক। প্রগতির পথে সমাজকে পরিচালিত করতে স্বাধীনতার মূল স্তম্ভ গুলোকে লালন পালন করতে হবে এবং সে অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা হতে হবে। এ পথে সাময়িক ব্যর্থতা হলেও তা ভবিষ্যতে স্বাধীনতার গৃহদার থেকে সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেবে।

স্বাধীনতার লক্ষ্য অর্জনের মূল্যায়ন

স্বাধীনতার মূল অর্থ হলো পরাধীনতা থেকে মুক্তি। আত্মউন্নয়নের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে নিজেকে প্রকাশিত করার সুযোগ লাভ লাভ। তাই প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবস আমাদের জীবনে এনে দেয় নতুন এক সম্ভাবনা। আমরা নিজেদের ভেতর স্বাধীনতা স্বাদ কতটা অনুভব করতে সমর্থ হয়েছি এই দিনে তা বুঝতে পারি। স্বাধীনতার সুফল সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পারলে কেবল ৩০লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে।

উপসংহার

২৬ শে মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস টি প্রতিবছর রাষ্ট্রায়ত ভাবে অত্যন্ত জাকজমক ভাবে পালন করা হয়।এ দিবসের অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন আয়োজন আমাদের চেতনাকে শানিত করে। তাই স্বাধীনতার মূলমন্ত্রকে আমাদের হৃদয়ে ধারণ করা সকলেরই উচিত। ভুলে গেলে চলবে না আমাদের স্বাধীনতা অনেক রক্তের দামে কেন শহীদদের এই পবিত্র রক্তের দায়ী জাতি হিসেবে আমাদের সবারই।

স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ

স্বাধীনতা দিবসের রচনা সম্পর্কে এই পোষ্টের উপরের অংশে আমরা জেনেছি এবার, পোস্টে নিচের অংশের আমরা জানবো স্বাধীনতা দিবসে আয়োজিত কোন অনুষ্ঠানে কিভাবে ভাষণ দিতে হবে সে সম্পর্কে। চলুন তাহলে দেরি না করে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ কিভাবে দিতে হবে তা জেনে নেয়া যাক।
সম্মানিত সুধী
আজ বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সর্বভৌম রাষ্ট্র। তবে আমাদের এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, স্বাধীনতা অর্জিত হলেই সংগ্রাম শেষ হয়ে যায় না। স্বাধীনতা অর্জনের পর বিজয়ী জাতির সামনে আসে স্বাধীনতা রক্ষার লড়াই। তাইতো মীর মশাররফ হোসেন বলেছেন-' স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা বেশি কঠিন'। স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রামে অনেক বেশি ত্যাগ-তিতিক্ষা সামর্থ্যের প্রয়োজন হয়। স্বাধীন হওয়ার পরেও এ দেশে এখনো চলছে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র। বিশেষ করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত অশুভ শক্তির দোসররা এখনো বাংলাদেশে স্বাধীনতাকে ধ্বংস করে দিতে বিভিন্ন অপচেষ্টায় তৎপর।
সম্মানিত সুধী সমাজ
স্বাধীনতার পর অনেক যুগ অতিবাহিত হয়ে গেছে। কিন্তু বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে মনে হয়, স্বাধীনতা শব্দটির সঙ্গে যে স্বপ্ন দেশবাসী দেখেছিল আজও কিতা বাস্তবায়নের রূপান্তরিত করা সম্ভব হয়েছে?
ভাই সব
এখনোও স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি। তাই আসুন, আজকের এই দিনে স্বাধীনতা সংগ্রামের আত্মদান কারি নীল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা শপথ নিই, জাতীয় ঐতিহ্য , দেশের স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধি থেকে বাঁচিয়ে রাখতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হই। আমাদের সকল দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের মধ্য দিয়ে দেশকে গড়ে তুলি। আসুন, সব রকম বিভেদ-বিচ্ছেদ ভুলে, হানাহানি-সংঘাত ভুলে, সংকীর্ণ স্বার্থচিন্তা বিসর্জন দিয়ে সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি। মহান স্বাধীনতার সংগ্রামে আত্মত্যাগ কারী বীর শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে আমার বক্তব্য এখানে শেষ করছি।


পরিশেষে, এটাই আপনাদেরকে বলতে চাই আমাদের এই স্বাধীনতা একদিনে অথবা একটি প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়নি। আমাদের এই স্বাধীনতা অর্জন করতে বহু বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে এবং অনেক প্রাণের রক্তের বিনিময়ে, অনেক মা-বোনের সম্মানের বিনিময়ে নয় মাস রক্তক্ষয় যুদ্ধের পরেও যুদ্ধ হয়েছে স্বাধীনতা। এই কারণে স্বাধীনতার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url