কতটুকু সাদা স্রাব হওয়া স্বাভাবিক - বিভিন্ন ধরনের স্রাব সম্পর্কে আলোচনা।

সাদা স্রাব হওয়া এটি মেয়েদের একটি স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। কিন্তু এই সাদা স্রাবটি যখন স্বাভাবিক পরিমাণে না বের হয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে বের হয় তখন সেটিয়া স্বাভাবিক থাকে না, এই অস্বাভাবিকতার কারণে জরায়ু ক্যান্সার সহ আরো বিভিন্ন জটিল রোগ সহ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সুস্থ থাকতে হলে লজ্জা ও সংকোচ না করে জানতে হবে এবং অন্যকে জানাতে হবে।


বর্তমান যুগের নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক এডভান্স বা এগিয়ে গেলেও, তাদের শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা যেমন মাসিক বা স্রাবজনিত বিভিন্ন বিষয়গুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে এখনো সংকোচ বোধ করে। আর এই কারণেই তারা এই ধরনের সমস্যা গুলো হলে সহজে ডাক্তারি সহায়তা বা পরামর্শ নিতে জানি না। আর এই ধরনের অসতর্কতার জন্য প্রতিবছরই অনেক সংখ্যক নারী আক্রান্ত হয়ে থাকে মরণব্যাধি জরায়ু ক্যান্সারের মতন রোগী। আজকে তাই এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের সাথে আলোচনা করা হবে মেয়েদের সাদা স্রাব জনিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে।

পোস্ট জুড়ে যা থাকছেঃসাদা স্রাব কী - কতটুকু সাদা স্রাব হওয়া স্বাভাবিক - বিভিন্ন ধরনের স্রাব সম্পর্কে আলোচনা।

সাদা স্রাব কী

সাধারণত শরীরের রাসায়নিক ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং মেয়েদের যোনিপথের কোষগুলো একটিভ রাখতে জরায়ু বা যোনিপথ দিয়ে সাদা ও তরল যে এক ধরনের পদার্থ বের হয় তাকে সাদাস্রাব বলে। শরীরের ইস্ট্রোজেন হরমোনের কারণে সাদাস্রাব হয়ে থাকে, স্বাভাবিক মাত্রায় সাদা স্রাব হওয়া শরীরের জন্য ভালো। কিন্তু সাদা স্রাবের মাত্রা যদি অতিরিক্ত হয় তাহলে এটি মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

প্রাকৃতিকভাবে স্বাভাবিক মাত্রায় মেয়েদের যোনিপথ দিয়ে যে সাপটা বের হয় সেটাকে সাদা স্রাব বলে। সাদা স্রাব  মেয়েদের প্রজনন প্রক্রিয়াকে সচল রাখে। সাদা স্রাবের মধ্যে দিয়ে যোনিপথের মৃত কোষ, অপরিপূর্ণ ডিম্বাণু এবং ব্যাকটেরিয়া বের করে দেয় । সাদাস্রাবের মাধ্যমে মেয়েদের প্রজননতন্ত্র পরিষ্কার এবং অ্যাক্টিভ থাকে।

সাদা স্রাবের ধরন

মেয়েদের স্বাভাবিক সাদা স্রাব সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। স্বাভাবিক সাদা স্রাবের কোন গন্ধ থাকে না। মেয়েদের সাধারণত যে দুই ধরনের স্বাভাবিক স্রাব হয়ে থাকে সেগুলো হলো ,

  • দুধের মতন সাদা স্রাব
  • পানির মতন স্বচ্ছ স্রাব

কতটুকু সাদা স্রাব হওয়া স্বাভাবিক

আমাদের প্রত্যেকেরই শারীরিক গঠন এবং হরমোনাল পার্থক্য রয়েছে। এই জন্য শারীরিক গঠন ও হরমোনাল তারতম্যের উপর ভিত্তি করে এক এক ধরনের মেয়েদের সাদা স্রাবের পরিমাণ এক এক রকম হয়ে থাকে। তবে বিজ্ঞানমতে , সাধারণত দিনে  ২ থেকে ৫ মিলিমিটার সাদা স্রাব হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। পরিমাণে এর চেয়ে কিছু কমবার কিছু বেশি চাপ হলে সেটিতে ভয় বা ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই কারণ আগেই বলেছি আমাদের শারীরিক গঠন এবং হরমোনাল পার্থক্য রয়েছে। আর এই পার্থক্যের কারণেই এক একজনের তাদের স্বাভাবিক মাত্রা একেক রকম হয় ।

অতিরিক্ত সাদা স্রাব এর লক্ষণ

শরীরের তারতম্য অনুযায়ী একেকজনের তাদের স্বাভাবিক মাত্রা একেক রকম হয়ে থাকে, এ কথাটি আপনাদেরকে আগেই জানিয়েছি । কিন্তু এখন প্রশ্ন হল, আপনি কিভাবে বুঝবেন আপনার স্রাবের মাত্রা স্বাভাবিক নাকি অস্বাভাবিক। আপনার শ্রাদ্ধের মাত্রা স্বাভাবিকভাবে হচ্ছে নাকি অতিরিক্ত হচ্ছে এটি বোঝার কিছু লক্ষণ রয়েছে । এই লক্ষণ গুলোর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার অতিরিক্ত সাদা সাপ হচ্ছে কিনা । সাদা স্রাব হওয়ার সময় যদি এই লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে যে, আপনার স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত স্রাব হচ্ছে। আপনাদের জানার সুবিধার জন্য অতিরিক্ত সাদা স্রাবের লক্ষণগুলো নিচে দেওয়া হল,

  • তাদের কারণে কোমরে ব্যথা হলে
  • সাদাস্রাবে গন্ধ থাকলে
  • শরীর দুর্বল অনুভব হলে
  • তলপেট ভারি ভারি লাগলো
  • চোখের নিচে কালো দাগ এবং গর্ত দেখা দিলে
  • শ্রাবের কারণে মুখের মলিনতা নষ্ট হলে
  • বদহজম হলো
  • সহবাসের সময় যোনীপথ জ্বালাপোড়া করলে
  • যোনি পথে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া হলে

ওপরের এই লক্ষণগুলো যদি আপনার থাকে তাহলে আপনাকে বুঝে নিতে হবে যে আপনার স্বাভাবিকের চাইতে বেশি চাপ হচ্ছে, এবং এই পরিস্থিতিতে বসে না থেকে ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়া উচিত।

দুধের মতন ঘন সাদা স্রাব কেন হয়

মেয়েদের যোনিপথে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হলে এই ধরনের স্রাব দেখা যায়। এই ধরনের সাপ দেখতে অনেকটা দইয়ের মতন বা ঘন সাদা দুধের মতন হয় এবং এর ভেতরে গোটা গোটা ভাব থাকে। এই ধরনের স্রাব যাওয়াকে ' ইনফেকশন' বলা হয়। এ ধরনের চাপের কোন গন্ধ থাকে না। কোন কারনে যোনিপথের ভালো ব্যাকটেরিয়া গুলো কমে গেলে অথবা বিভিন্ন অসুখের কারণে ওষুধ সেবনের ফলে এই ব্যাকটেরিয়া গুলো কমে গেলে ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ঘটে এবং সেখান থেকে ফাংগাল ইনফেকশন হয় আর এই ইনফেকশন হলে দুধের মতন ঘন সাদা রংয়ের গোটা গোটা স্রাব যেতে দেখে দেখা যায়। এ ধরনের ইনফেকশনের বৈশিষ্ট্য হলো,

  • যোনিপথের চারপাশে ভীষণ চুলকায় এবং জ্বলে
  • প্রসাব ও সহবাসের সময় দেখা এবং অস্বস্তি হয়

ধূসর স্রাব কনো হয়

' ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস' এটি যোনিপথের এক ধরনের ইনফেকশন , যার কারণে ছাই বা ধূসর রঙ্গের স্রাব দেখা যায়। এ ধরনের চাপের ভীষণ দুর্গন্ধ হয়। কিন্তু ধূসর স্রাবে কোনরকম ব্যথা বা চুলকানি থাকে না। এই ধরনের স্রাবের বৈশিষ্ট্য হলো,

  • এ ধরনের স্রাবে প্রচন্ড দুর্গন্ধ হয়
  • সহবাসের পর পঁচা মাছের মতন দুর্গন্ধ যুক্ত স্রাব নির্গত হয়

সবুজ স্রাব কেনো হয়

সবুজ স্রাব হওয়া গনোরিয়া লক্ষণ । তাই এ ধরনের স্রাব দেখা দিলে দেরি না করে খুব দ্রুত রেজিস্টার ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত ।' নাইশেরিয়া গনোরিয়া' নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্টি হওয়া গনোরিয়া নামক রোগ হলে সবুজ স্রাব হয়। এটি একটি যৌনবাহিত রোগ। এই রোগ হলে যে ধরনের লক্ষণ দেখা যায় তা হল,

  • প্রসাবের ব্যথা ও জ্বলা
  • তলপেটে ব্যথা হওয়া
  • সহবাসের সময় ব্যথা হওয়া
  • দুই মাসিকের মাঝামাঝি সময় রক্তক্ষরণ হওয়া

সবুজ ভাবের হলুদ স্রাব কেনো হয়

এই ধরনের স্রাব কখনোই স্বাভাবিক স্রাবের পর্যায়ে পড়ে না। যোনি পথে এক ধরনের ইনফেকশনের কারণে এ ধরনের সাপ দেখা যায়, সাধারণত এই স্রাব হলুদ হয়ে থাকলো এর মধ্যে সবুজের কিছুটা আভা পাওয়া যায়। যেই ইনফেকশনের কারণে এই ধরনের সাপ হয়ে থাকে সেই ইনজেকশনটির নাম হল 'ট্রিকোমোনারাসিস'। গনোরিয়ার মতই এটি একটি যৌনবাহিত রোগ। এ রোগের জীবাণুর নাম হল 'ট্রাইকোমনাস ভ্যাজাইনাসিস'। এই ধরনের রোগের লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্য গুলো হল,

  • কেন যুক্ত পাতলা অথবা ঘন স্রাব হাওয়া
  • এই স্রাবে আশঁটে গন্ধ থাকে
  • যোনিপথের আশেপাশে ব্যাথার সাথে চুলকানি ও জ্বালাপোড়াও থাকে
  • যোনিপথ লাল হয় এবং ফুলে উঠে
  • প্রসাব ও সহবাসের ব্যথা অনুভব হয়

লালচে স্রাব কেন হয়

মাসিকের আগে বা পরে একটু একটু স্বাভাবিক বা ভয়ের কোন কারণ নেই, কিন্তু যদি মাসিক ছাড়াও স্বাভাবিক সময় লালচে সাপ দেখা দেয় তাহলে সেটি শরীরের কোন জটিলতা কোন মারাত্মক অসুখের লক্ষণ হয়ে থাকতে পারে। অনেক সময় জন্য অথবা সহবাসের সময় আঘাত পাওয়ার ফলে লাঞ্চের সাপ হতে পারে, এ ধরনের স্বাভাবিক কারণগুলো ছাড়া যদি এমনিই লালচে চাপ দেখা যায় তাহলে তাড়াতাড়ি ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়া উচিত ।

অতিরিক্ত স্রাবের ব্যাপারে সচেতন হন।অতিরিক্ত সাদা স্রাব বা অন্যান্য বর্ণের স্রাব দিলে গাফিলতি না করে দ্রুত ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করুন। প্রথম থেকে ডাক্তারি পরামর্শ মতন চললে এই ধরনের স্রাব থেকে সেরে ওঠা যায় এবং সুস্থ জীবন যাপন করা যায় । তাই সাদা স্রাবের ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান রাখুন এবং শুরু থেকেই সচেতন থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url