কলা খাওয়ার উপকারিতা - রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা - কলা খাওয়ার অপকারিতা
কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের বিস্তারিত জ্ঞান খুব কমে মানুষেরই আছে। কলা খাওয়ার উপকারিতা কি এবং কলা দিয়ে রূপচর্চা করা যায় সে সম্পর্কে আমাদের অনেকের ধারণা নেই বললেই চলে। আমরা অনেকে এটাও জানি না যে রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি। কলা খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই এর উপকারিতা এবং অপকারিতা গুলো ভালোভাবে জেনে নিন।
কলা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি ঘাটতি দূর করে এবং যাদের উচ্চশক্ত চাপ রয়েছে তাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতেও কলা সাহায্য করে। কলা দিয়ে রূপচর্চা করার মাধ্যমে আমরা প্রাকৃতিকভাবে আমাদের ত্বক উজ্জ্বল এবং সুন্দর করতে পারি। কলার ভেতরে বিভিন্ন গুনাগুন এবং উপকারিতা থাকার কারণে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জ্ঞান রাখা।আলোচনায় যা রয়েছেঃ কলা খাওয়ার উপকারিতা - কলা খাওয়ার অপকারীতা - রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
- কলা খাওয়ার উপকারিতা
- কলা দিয়ে রূপচর্চা
- কলা খাওয়ার অপকারিতা
- রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
- কলা খাওয়ার সঠিক সময়
- দিনে কয়টি কলা খাওয়া উচিত
- প্রেগন্যান্ট অবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা
কলা খাওয়ার উপকারিতা
আমরা অনেকেই জানি কলাতে অনেক পটাশিয়াম , ফাইবার , মিনারেল রয়েছে যা শরীরের জন্য
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাঝারি সাইজের একটি কলাতে সাধারণত ৪০০ থেকে ৪৫০ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম থাকে যা আমাদের হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও কলা খাওয়ার আরো
অনেক উপকারিতা রয়েছে। নিচে কলা খাওয়ার উপকারিতা গুলো একে একে তুলে ধরা হলো।
আরো পড়ুনঃ কমলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা করার উপায়
- কলাতে থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম আমাদের হাড় ভালো ও মজবুত রাখে।
- কলা খাওয়ার মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা যায়
- কলায় থাকা IG এর পরিমাণ অনেক কম থাকায় আমাদের রক্তের সুগার বাড়ে না, তাই একটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি উপযুক্ত খাবার।
- কলা পেট ঠান্ডা রাখে ও পেট পরিষ্কার রাখে
- কম ক্যালরিযুক্ত হওয়ায় কলা আপনার ওজন বাড়তে দেয় না আর আপনার খিদে ভাবো মিটাতে সাহায্য করে।
- কলা খাওয়ার মাধ্যমে পেট ভরার সাথে সাথে আপনি পেতে পারেন ভরপুর এনার্জি
- কলা খাওয়া কিডনির জন্য উপকার
- ভিটামিন সি যেকোনো বয়সের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে
- বয়স্ক ব্যক্তিদের ও যাদের কাজের অনেক চাপ থাকে তাদের জন্য কলা অনেক কার্যকরী একটি ফল , কারণ এতে থাকা পটাশিয়াম শরীরের প্রেসার বা রক্ত চাপ বাড়তে দেয় না।
- শরীরের অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণ করে কলা
- কলা আমাদের মুখের ত্বক নরম রাখতে সাহায্য করে
- কলা খেলে আমাদের চুল মজবুত এবং সুন্দর হয়
- কলা ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং ত্বককে সতেজ রাখে। কলা ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে।
- কলা দাঁত মজবুত করে এবং দাঁতের হলদে ভাব দূর করে দাঁত সাদা করতে সাহায্য করে ।
- স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়
- হযমের সমস্যা দূর করে
কলা দিয়ে রূপচর্চা
কলা শুধু শরীরের অভ্যন্তরের জন্য পুষ্টিকর একটি ফল না, কলাকে আমরা রূপচর্চার
কাজেও ব্যবহার করতে পারি। কলা দিয়ে রূপচর্চা করা যায়, এটি আমাদের অনেকেরই অজানা
থাকলেও এ কথাটি সত্য যে কলা দিয়ে রূপচর্চা করলে অনেক ভালো ফল পাওয়া যায়। কারণ
কলার মধ্যে একটি অক্সিজেন থাকায় এটি যেমন শরীরের অভ্যন্তর থেকে আমাদের তার
অন্য ধরে রাখতে সাহায্য করে তেমনি এর বাহ্যিক ব্যবহারেও উজ্জ্বল সুন্দর ত্বক
পাওয়া যায়। তাহলে দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক কলা দিয়ে রূপচর্চা করার উপায়
গুলো।
ত্বকের বলিরেখা দূর করতেঃ পাকা কলার সাথে দুইয়ের পেস্ট বানিয়ে এর ভেতরে
পাঁচ থেকে সাত ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন, এবার এই মিশ্রণটি মুখে ভালোভাবে
লাগিয়ে শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে
মুখ ধুয়ে ফেললে আপনার মুখে বলিরেখা দূর হয়ে যাবে।
ব্রণ দূর করতেঃ পাকা কলার সাথে বেকিং সোডা এবং কিছুটা হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে
পেস্ট তৈরি করুন এরপর এটি তোকে ১৫-২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে নিয়মিত কয়েকদিন
ব্যবহার করলে আপনার ব্রণের সমস্যা আর থাকবে না।
ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতেঃ যাদের শুষ্ক স্কিন তাদের জন্য পাকা কলা
মুখের ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে খুব ভালো কাজ করে। কলা ব্লেন্ড করে অথবা পেস্ট করে
পুরানো খেয়ে লাগিয়ে রাখুন পরপর কয়েকদিন ব্যবহার করলে আর তোকে আদ্রতা তো বজায়
থাকবে এর সাথে সাথে আপনার মুখের ত্বক নরম হবে।
ব্রণ দূর করতেঃ বেকিং সোডা, কলা এবং হলুদের গুঁড়া একসাথে পেস্ট তৈরি করে
, মুখে মুখে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন একটি শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ
দিয়ে ফেলুন নিয়মিত কয়েকদিন করলে আপনার ব্রণের সমস্যা দূর হবে।
চোখের ফোলা ভাব কমাতেঃ কলার পেস্ট বানিয়ে চোখের ফোলা অংশে
দিয়ে রাখুন পনেরো মিনিট পরে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে দিল। নিয়মিত পাঁচ থেকে
সাত দিন করলে আপনার চোখের ফোলা ভাব দূর হয়ে যাবে।
রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
অনেকেই আমরা ঠান্ডা লাগার ভয়ে রাত্রেবেলা কলা খাইনা। কিন্তু রাতে কলা খাওয়ার
উপকারিতা রয়েছে। ঠান্ডা জনিত সমস্যা না থাকলে প্রতিদিন রাত্রে ঘুমানোর আগে একটি
করে কলা খেলে বেশ কয়েকটি শারীরিক উপকারিতা পাওয়া যায়। এবার তাহলে জেনে দিন রাতে
কলা খাওয়ার উপকারিতা কি।
- যুক্তরাষ্ট্রের একজন পুষ্টিবিদ যার নাম ট্রেসি লকউড বেকারম্যান তার মতে রাত্রেবেলা কলা এবং পিনাট বাদাম খেলে ঘুমের সমস্যা দূর হয়। কলা এবং পিনাট বাটার রাতে তাড়াতাড়ি ঘুম আসতে সাহায্য করে।
- যারা মানসিক চাপে আছেন , তাদের মানসিক চাপ দূর করতে রাত্রেবেলা কলা এবং পিনাট বাটার খান। কলা এবং পিনাট বাটার আপনার তাড়াতাড়ি ঘুমাতে সাহায্য করবে যেটি আপনাকে মেন্টালি অনেকটা ফ্রেশ রাখবে।
- কখনো যদি রাত্রে বেলা বাড়ি খাবার অথবা ভাজাপোড়া বেশি খাওয়া হয়ে যায় তখন এটি আমাদের পেটে এসিডিটি তৈরি করে। এমন পরিস্থিতিতে পড়লে আপনি যদি রাতে ঘুমানোর আগে একটি কলা খেয়ে নেন তাহলে এটি আপনার পেটের এসিডিটি কমাতে সহায়তা করবে।
- রাত্রিবেলা ঘুমানোর আগে কলা খেলে উচ্চ রক্তচাপ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- রাত্রেবেলা কলা খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা থাকলেও কয়েকটি ক্ষেত্রে রাত্রেবেলা কলা খাওয়া এড়িয়ে চলাই ভালো, কারণ এতে কলা খাওয়া শরীরের উপকারের চাইতে অউপকারী বেশি হয়। এবার তাহলে জেনে নেওয়া যাক কোন কোন ক্ষেত্রে রাত্রিবেলা কলা খাওয়া ক্ষতিকর।
- যাদের একটুতেই ঠান্ডা লেগে যায় বা একটুতে সর্দি-কাশিতে ভুগেন তাদের জন্য রাত্রেবেলা কলা খাওয়া উচিত নয়।
- হাঁপানি এবং শ্বাসকষ্টের রোগীদের রাত্রেবেলা কলা খাওয়া যাবে না
- যারা রাত্রিবেলা রাত জেগে পড়াশোনা অথবা বিভিন্ন কাজ করেন তাদের কলা এগিয়ে চলাই ভালো কারণ কলা ঘুম আসতে সাহায্য করে।
যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য রাত্রেবেলা কলা না খাওয়াই ভালো রাত্রে বেলা কলা
খেলে শরীরের ওজন বেড়ে যায়।
কলা খাওয়ার অপকারিতা
উপরের আলোচনার মাধ্যমে আমরা কলার অনেক ধরনের উপকারিতার কথা শুনলাম, এবার আলোচনা
করা যাক কলা খাওয়ার অপকারিতা নিয়ে। কলা বহু গুনে গুণান্বিত হলেও কলা খাওয়ার
অপকারিতাও রয়েছে। অতিরিক্ত কলা খেলে আপনি শারীরিক বেশ কিছু জটিলতার সম্মুখীন হতে
পারেন। আসুন এবার তাহলে জেনে নেওয়া যাক কলা খাওয়ার অপকারিতা গুলো।
- খালি পেটে কলা খেলে পেটে এসিডিটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
- অতিরিক্ত কলা খেলে হার্ট অ্যাটাকে সম্ভবনা বেড়ে যায়
- বেশি কলা খেলে এর ভেতরে থাকা উচ্চ পটাশিয়ামের কারণে কিডনির জটিলতা , হার্ট বিট এর তারতম দেখা দেওয়া , ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত কলা খেলে ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়া সম্ভব না থাকে
- যাদের একটুতেই ঠান্ডা লেগে যাওয়ার সমস্যা আছে তাদের কলা এড়িয়ে চলাই ভালো
কলা খাওয়ার সঠিক সময়
দিনে কয়টি কলা খাওয়া উচিত
কলা অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি ফল। কলার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ এবং বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন , মিনারেল , আইরন , ক্যালসিয়াম ইত্যাদি। পুষ্টিগুণে ভরপুর কলা আমাদের অনেকেরই প্রিয় একটি ফল এবং সুস্বাদু হওয়ার কারণে অনেক সময় আমরা তিন চারটা একসাথে অথবা সারাদিনের মধ্যে খেয়ে ফেলি । কিন্তু অতিরিক্ত কলা খাওয়ার যেহেতু কিছু অপকারিতা রয়েছে সেই দিক বিবেচনা করলে একদিনে এত বেশি কলা খাওয়া আমাদের মোটেও উচিত নয়।
আরো পড়ুন ঃ আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
দিনে কয়টি কলা খাওয়া উচিত সেই বিষয়ে জ্ঞান রেখে আমাদেরকে কলা খেতে হবে, তাহলে জেনে নিন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে কয়টি কলা খাওয়া উচিত। বড় সাইজের কলা হলে দিনে দুইটির বেশি কলা খাওয়া উচিত নয়। কলা যদি মাঝারি সাইজের হয় তাহলে খুব বেশি হলে দিনের মধ্যে আপনি তিনটি কলা খেতে পারেন এবং একদম ছোট সাইজের কলা চার থেকে পাঁচটি খাওয়া যেতে পারে।
প্রেগন্যান্ট অবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা
প্রেগন্যান্ট অবস্থায় শরীরে প্রচুর পুষ্টির দরকার হয় এর সাথে সাথে ভিটামিন এবং খনিজ লবণ , ফাইবার, আইরন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম , ক্যালসিয়াম ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের উপাদান ঘাটতি দেখা দেয় শরীরে । প্রেগন্যান্ট অথবা গর্ভবতী অবস্থায় যদি নিয়মিত কলা খাওয়া যায় তাহলে এসব পুষ্টি উপাদানের অনেকটাই পূরণ করা সম্ভব হয় কলার মাধ্যমে। গর্ভাবস্থায় পরিমিত পরিমানে সঠিক নিয়ম মেনে কলা খেলে গর্ভবতী মায়ের জন্য এটি একেবারে নিরাপদ এবং পুষ্টিকর একটি খাদ্য । প্রেগন্যান্ট অবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি। প্রেগন্যান্ট অবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা গুলো একে একে নিচে তুলে ধরা।
আরো পড়ুন ঃ বাদাম খেলে কি হয়
- মা ও শিশুর হাড় গঠনে সাহায্য করে
- গর্ভাবস্থায় ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে
- এসিডিটির সমস্যা দূর করে
- হজমে সহায়তা করে
- হাই প্রেসার এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
- শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে
- গর্ভবতী মায়ের রক্তস্বল্পতা দূর করে
- নবজাতকের জন্মগত ত্রুটি কমাতে সাহায্য করে
- গর্ভাবস্থায় হাত পায়ের ফোলা ভাব দূর করে
- বমি ভাব দূর করে
শেষ কথা, কলা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং শরীরের জন্য উপকারী একটি
ফল। কিন্তু তা হলেও পুষ্টিকর বলেই অতিরিক্ত কলা খাওয়া যাবে না। কারণ অতিরিক্ত
সবকিছুরই একটি খারাপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এর জন্য খাওয়ার আগে অবশ্যই
কলা খাওয়ার উপকারিতা , কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন। এবং প্রতিদিন
কয়টি কলা খেতে হবে , কলা খাওয়ার সঠিক সময় সবকিছু জেনে বুঝে তারপরে কলা খান
,সুস্থ থাকুন।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url