ডায়রিয়া হলে করণীয় - ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয় - ডায়রিয়া হলে যে খাবার খাবেন
ডায়রিয়া রোগটির সাথে আমরা প্রায় সকলেই পরিচিতি, পাতলা পায়খানা যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বার হয় অথবা দিনে তিনবার বা এর থেকে বেশিবার হয় এবং সাথে যদি পানি শূন্য হয় লক্ষণগুলো থাকে তাহলে সেটিকে ডায়রিয়া বলা হয়। ডায়রিয়া সম্পর্কে সচেতন না হলে এটি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারি। এই কারণে আমাদের জেনে রাখা উচিত ডায়রিয়া হলে করণীয়, ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয় এবং ডায়রিয়া হলে যে খাবার খাবেন সেগুলো জেনে রাখা।
আজকে এ পোস্টটিr সম্পূর্ণ আলোচনা জুড়ে থাকছে ডায়রিয়া হলে করণীয়, ডায়রিয়া প্রতিরোধে করনীয় এবং ডায়রিয়া হলে যে খাবার খাবেন সেই সম্পর্কে আলোচনা। আমাদের দেশে বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন সময় অনেক মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়, এই জন্য গণ সচেতনতা বাড়ানোর কথা চিন্তা করে আজকে আলোচনা করব ডায়রিয়া হলে করণীয়, ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয় এবং ডায়রিয়া হলে যে খাবার খাবেন সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। আপনার যদি জানা না থাকে ডায়রিয়া হলে করনীয় কি , ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয় কি এবং ডায়রিয়া হলে যে খাবার খাবেন সেগুলো সম্পর্কে, অবশ্যই করুন এবং জেনে নিন ডায়রিয়া হলে করনীয় , ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয় এবং ডায়রিয়া হলে যে খাবার খাবেন সে বিষয়গুলো।
সূচিপত্রঃডায়রিয়া হলে করণীয় - ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয় - ডায়রিয়া হলে যে খাবার খাবেন
- ডায়রিয়ার কারণ
- ডায়রিয়ার লক্ষণ
- ডায়রিয়া হলে করনীয়
- ডায়রিয়া হলে যে খাবার খাবেন
- ডায়রিয়া প্রতিরোধে করনীয়
ডায়রিয়ার কারণ
ডায়রিয়া রোগটির সাথে অথবা ডায়রিয়া নামটির সাথে আমরা মোটামুটি সকলেই পরিচিত
তবে এই রোগটির সাথে পরিচিত থাকলেও এর পেছনের কারণ কারণ সম্পর্কে অনেকেই
জানিনা তাই আজকে আমরা জানবো ডায়রিয়ার কারণ সম্পর্কে। আজকে আপনাদেরকে জানাবো
ডায়রিয়ার কারণ কি বা কি কারনে ডায়রিয়া হয়ে থাকে। আপনি যদি না জেনে থাকেন
তাহলে চলুন জেনে নেই ডায়রিয়ার কারণ সম্পর্কে।
ডায়রিয়া রোগের মূল কারণ হলো ব্যাকটেরিয়া। ডায়রিয়া রোগের মূল কারণ
ব্যাকটেরিয়া হলেও ডায়রিয়া কিন্তু একটি পানিবাহিত রোগ। ডায়রিয়া সাধারণত
পানির মাধ্যমে বেশি ছড়ালেও বাসি পচা খাবারের এই রোগের ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে
পারে।bangla.bdnews.com ওয়েবসাইটের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ICDDRB
হাসপাতালের প্রধান ডা. বাহারুল আলম বলেছেন-গরমের সময় সিগেলা, ই-কোলায় এবং
শীতকালে রোটা ভাইরাসের মাধ্যমে ডায়রিয়া ছড়ায়।
আরো পড়ুনঃ ফ্যাটি লিভারের লক্ষন
এবং তিনি আরো জানান এই ব্যাকটেরিয়া বিরোধী কোন খাবারে একবার পড়ে অথবা জন্মায়
তবে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি রেপ্লিকেন্ট করতে পারি। ডায়রিয়ার
ভাইরাসটি সাধারণত দুইটি থেকে চারটি , চারটি থেকে আটটি , আটটি থেকে ১৬
টি এইভাবে বিস্তার লাভ করে।
ডায়রিয়ার লক্ষণ
আজকে আমরা আলোচনা করব পানি বাহিত রোগ ডায়রিয়ার লক্ষণ সম্পর্কে। কোন কোন লক্ষণ
গুলো দেখলে আপনি নিশ্চিত হবেন যে আপনার ডায়রিয়া হয়েছে, ডায়রিয়া রোগের
লক্ষণগুলো আপনার যদি জানা না থাকে তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনাকে ডায়রিয়ার
লক্ষণ গুলো জানতে সাহায্য করুন। দেরি না করে তাহলে শুরু করে ফেলা যাক ডায়রিয়ার
লক্ষণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। ডায়রিয়ার লক্ষণগুলো হল,
- বারবার পাতলা পায়খানা হওয়া, এর সাথে পেটে হালকা ব্যথা এবং বনি ভাব থাকতে পারে।
- পেট ভারী এবং ফোলা ফোলা ভাব হওয়া
- শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেওয়া
- শরীর ক্লান্ত লাগা এবং মুখ শুকিয়ে যাওয়া
- খাবারে রুচি না থাকা
ডায়রিয়া হলে করণীয়
ডায়রিয়া রোগের কারণ গুলো আমরা উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে জেনেছি, এবার আমরা জানবো
ডায়রিয়া হলে করণীয় কি। কিছু টিপস ফলো করলে ডাক্তারের চিকিৎসা ছাড়াও আপনি
ডায়রিয়া রোগ থেকে সেরে উঠতে পারেন এই কারণে আপনার অবশ্যই জেনে রাখতে হবে
ডায়রিয়া হলে করণীয় কি সেই সম্পর্কে। আজকে আপনাদেরকে জানাবো ডায়রিয়া হলে
করণীয় কি এ বিষয়ে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক ডায়রিয়া হলে করণীয় বিষয়গুলো
হল,
- খাবার স্যালাইন খাওয়া
- পানি বা তরল জাতীয় খাবার খাওয়া
- জিং ট্যাবলেট খাওয়া
- পুষ্টিকর খাবার খাওয়া
- স্বাভাবিক খাওয়ার চালিয়ে যাওয়া
- তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলা
খাবার স্যালাইন খাওয়াঃ ডায়রিয়া হলে শরীরের লবণ পানির ঘাটতি পড়ে,
এই কারণে প্রতিবার পায়খানা হওয়ার পর খাবার স্যালাইন খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
খাবার স্যালাইন আপনি আশেপাশে ওষুধের দোকানগুলোতে খুব সহজেই পেয়ে যাবেন অথবা আপনি
ইচ্ছা করলে বাড়িতেও খাবার স্যালাইন তৈরি করে নিতে পারেন। বাসায় খাবার স্যালাইন
তৈরি করার জন্য একটি পরিষ্কার পাত্রে আপনাকে বিশুদ্ধ আধা লিটার পানি নিতে হবে,
আধা লিটার বিশুদ্ধ পানি সাথে আপনাকে একমুঠ চিনে অথবা গুড় মেশাতে হবে এর মধ্যে
আরও মেশাতে হবে এক চিমটি লবণ। উপকরণগুলো পানিতে দিয়ে ভালোভাবে চামচ দিয়ে নেড়ে
নিন উপকরণগুলো ভালোভাবে মিশে গেলে স্যালাইন তৈরি হয়ে গেল। ডায়রিয়া হলে
প্রতিবার পাতলা পায়খানার পরে একগ্লাস করে স্যালাইন খেতে পারেন, স্যালাইন আপনার
শরীরে লবণ এবং পানির ঘাটতি পূরণ করবে। মনে রাখতে হবে ঘরের তৈরি অথবা বাইরের খাবার
স্যালাইন বানানোর পর 12 ঘন্টা পর্যন্ত এটি ভালো থাকে। 12 ঘন্টা পর তৈরি
খাবার স্যালাইন খাওয়া ক্ষতির কারণ হতে পারে।
পানি বা তরল খাবার খাওয়াঃ ডায়রিয়ার সময় পাতলা পায়খানার মাধ্যমে
শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায় এই কারণে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা
দেয়, ডায়রিয়ার সময় শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়া পানির ঘাটতি পূরণের জন্য
আমাদেরকে বেশি বেশি পানি অথবা তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। ডায়রিয়ার সময়
প্রতিবার পাতলা পায়খানা হওয়ার পর ১/২ গ্লাস পানি অথবা তরল জাতীয় খাবার কিংবা
ফলের রস সেবন করা উচিত। এতে করে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিবে না। ডায়রিয়া হলে
তরল খাবার হিসেবে-ডাবের পানি, ভাতের মাড়, চিড়ার পানি খেতে পারেন।
জিং ট্যাবলেট খাওয়াঃ আপনি যদি ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানায়
আক্রান্ত হন তাহলে ট্যাবলেট অথবা জিংক সিরাপ খেতে পারেন। জিংক ট্যাবলেট বা
সিরাপ আপনার পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া বন্ধের জন্য দ্রুত কাজ করবে।
পুষ্টিকর খাবার খাওয়াঃ ডায়রিয়া হলে পাতলা পায়খানার সাথে শরীরের
বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান গুলো বের হয়ে যায় সেই কারণে শরীরে পুষ্টি ঘাটতিও দেখা
দেয়। পাতলা পায়খানা হলে যেহেতু শরীরে পুষ্টি ঘাটতি দেখা যায় এ কারণে এই সময়
পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরী। পাতলা পায়খানার সময় পুষ্টিকর খাবার খেলে শরীর
হারানো পুষ্টিগুলো ফিরে পাবে এবং শরীর দুর্বল লাগবে না।
আরো পড়ুনঃ এডিনয়েড হলে করণীয়
স্বাভাবিক খাবার চালিয়ে যাওয়াঃ পাতলা পায়খানা হলে কখনোই খাবার বন্ধ করে
দেওয়া উচিত নয় এই সময় স্বাভাবিক খাবারগুলো চালিয়ে যেতে হবে।১/২ বছর বয়সী
শিশুদের পাতলা পায়খানা হলে মায়ের দুধ বন্ধ করা যাবে না দুধ খাওয়া চালিয়ে যেতে
হবে। অনেকে মনে করেন ডায়রিয়া হলে শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ালে ক্ষতি হয় আসলে এ
ধারণাটি একেবারেই ভুল।
তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলাঃ ডায়রিয়া হলে সহজপাচ্য খাবার গুলো
বেশি খেতে হবে। ডায়রিয়া হলে তৈলাক্ত খাবার অথবা যেসব খাবারের পেটে
গ্যাস সৃষ্টি হতে পারে এই জাতীয় খাবার কোনভাবেই খাওয়া চলবে না। কারণ তৈলাক্ত
বা অ্যাসিডিটি হতে পারে এ জাতীয় খাবার গুলো সহজে হজম হয় না আর এগুলো যদি
ডায়রিয়ার সময় খাওয়া হয় তাহলে হজমের অসুবিধার কারণে ডায়রিয়া আরো বেড়ে যেতে
পারে।
এছাড়াও শিশুদের পাতলা পায়খানা অথবা ডায়রিয়া হলে একটু পরপর দুই তিন চামচ করে
স্যালাইন খাওয়াতে থাকুন। ডায়রিয়া হলে, প্রতিবার পায়খানার পরে পায়খানার
পরিমাণ অনুমান করে অথবা শিশুর যতখানি ওজন সেটি অনুমান করে চা চামচ দিয়ে সেই
পরিমাণ বা স্যালাইন খাওয়াতে পারেন। মনে করুন আপনার বাচ্চার ওজন যদি পাঁচ
কেজি হয় তাহলে প্রতিবার পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হওয়ার পর চা
চামচ স্যালাইন খাওয়াবেন এতে করে শিশুর শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দিবে না। এরপরেও
যদি শিশু এবং বড়দের শারীরিক অবনতি বুঝতে পারেন তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ
গ্রহণ করতে হবে।
ডায়রিয়া হলে যে খাবার খাবেন
ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হিসেবে আমাদের দেশে ডায়রিয়ার প্রকোপটি কখনো কখনো খুব বেশি দেখা
যায়। ডায়রিয়া যেহেতু আমাদের একটি কমন সমস্যা এই কারণে ডায়রিয়া হলে যে খাবার
খাবেন সেগুলো জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি। ডায়রিয়া হলে যে খাবার গুলো খেতে হবে
সেগুলো আপনার জানা থাকলে আপনি খুব সহজেই ডায়রিয়া থেকে সেরে উঠতে পারবেন অথবা
আপনার আশেপাশে কারো ডায়রিয়া হলে এই খাবারগুলো খাওয়ার পরামর্শ দিতে
পারবেন। চলুন তাহলে জেনে নিন ডায়রিয়া হলে যে খাবার খাবেন সেই খাবারগুলোর
নামের তালিকা। ডায়রিয়া হলে সাধারণত পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গুলো খাওয়া উচিত
যেমন
- কাঁচা কলার তরকারি
- আলু
- ফলের রস
- পিনাট বাটার
- মুরগির মাংস অবশ্যই চামড়া ছাড়া
- টক দই
- ডাবের পানি
- লেবু
- ডালিম
- মধু
ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয়
- পানি ফুটিয়ে ব্যবহার করা
- ক্লোরিন ট্যাবলেট ব্যবহার করা
- হাত ধোয়ার অভ্যাস করা
- শাকসবজি ও ফলমূল ভালোভাবে ধুয়ে খাওয়া
- অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করা
- টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান ব্যবহার করা
- স্যানিটারি টয়লেট ব্যবহার করা
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url