ফরজ গোসলের নিয়ম - গোসলের ফরজ কয়টি
ফরজ গোসল করা অত্যন্ত আবশ্যকীয় একটি কাজ, যে কাজটি না করলে কখনোই অপবিত্রতা থেকে শরীরকে পবিত্র করা যায়না। নাপাকি থেকে শরীর পবিত্র করতে আজকে আমরা জেনে নেব ফরজ গোসলের নিয়ম, ফরজ গোসলের নিয়ত সম্পর্কে।
সূচিপত্রঃ ফরজ গোসলের নিয়ম - গোসলের ফরজ কয়টি - ফরজ গোসল না করার শাস্তি
গোসলের ফরজ কয়টি
অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য আমাদেরকে ফরজ গোসল করতে হয়।গোসলের সময় বেশ কয়েকটি কাজ রয়েছে যেগুলো করা অত্যন্ত জরুরী আর এই কাজগুলোকে বলা হয় গোসলের ফরজ। আমরা যদি গোসল করার সময় এই ফরজ কাজগুলো না মানি তাহলে কখনোই আমাদের ফরজ গোসল হবে না, আর এ কারণে আমাদের জানা থাকতে হবে গোসলের ফরজ কয়টি সে সম্পর্ক। তাহলে আর দেরি না করে জেনে নিন গোসলের ফরজ কয়টি এবং কি কি।
গোসলের ফরজ ৩ টি। সুতরাং গোসল করার সময় এই তিনটি কাজ অবশ্যই করতে হবে না হলে,
সেই গোসলটি ফরজ গোসল হবে না এবং আপনি নাপাকি থেকে মুক্তও হতে পারবেন না। এবার
তাহলে জেনে নেয়া যাক গোসলের সময় এই তিনটি ফরজ কাজ কি কি।
- গড়গড়া সহ কুলি করা
- নাকের ভেতরের নরম অংশ পর্যন্ত পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করা
- সারা শরীর পানি দিয়ে ভালোভাবে ধোয়া
তবে মনে রাখতে হবে কেউ যদি রোজা যার হয় তাহলে গড়গড়া না করে মুখে ভালোভাবে কুলি
করে নিলেই চলবে এবং নাক পরিষ্কার করার সময় নাকের নরম অংশ পর্যন্ত পানি না
দিয়ে হাতের নখ ভিজিয়ে নাকের ভেতরে অংশ পরিষ্কার করে নিতে হবে।
আশা করছি বুঝতে পেরেছেন গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি এই বিষয়টি।
ফরজ গোসলের নিয়ম
এবার আমরা আলোচনা করব ফরজ গোসলের নিয়ম সম্পর্কে। পবিত্রতা অর্জনের জন্য ফরজ গোসল যেহেতু অত্যন্ত জরুরী তাই আপনি যদি ফরজ গোসলের নিয়ম সঠিকভাবে না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই এ বিষয়টিতে অবহেলা না করে এখনই জেনে নিন। চলুন তাহলে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাক, ফরজ গোসলের নিয়ম সম্পর্কে।
ফরজ গোসলের নিয়মঃ ফরজ গোসল করার শুরুতেই সর্বপ্রথমে নিয়ত করে নিতে হবে
এরপর বিসমিল্লাহ বলে দুই হাতের কব্জি ধুতে হবে, তারপর লিঙ্গ স্থান ভালোভাবে ধৌত
করতে হবে। হাতে এবং লিঙ্গ স্থানে নাপাকি থাকুক আর না থাকুক ভালোভাবে ধুয়ে নিতে
হবে। পুরুষ ও নারী উভয় তাদের লিঙ্গের ভেতর পর্যন্ত ভালোভাবে পানি দিয়ে পরিষ্কার
করে নেবে , বিশেষ করে নারীরা তাদের লিঙ্গের ভেতরের পর্দা পর্যন্ত ভালোভাবে
পরিষ্কার করে নেবে এরপর শরীরের যে স্থানগুলোকে নাপাকি লেগে থাকবে বা লাগার
সম্ভাবনা থাকে সেই স্থানগুলো প্রথমে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
তারপর ওযু করার মতন করে অজু করে নিতে হবে, যদি কোন চৌকি বা পাথরের উপরে বসে বা
দাঁড়িয়ে গোসল করা হয় তবে পুরোপুরিভাবে অজু করে নিতে হবে আর যদি কোন
কাদাযুক্ত বা অপবিত্র স্থানে দাঁড়িয়ে গোসল করা হয় তবে পা বাদ দিয়ে ওযু করতে
হবে, এবং পরবর্তীতে গোসল শেষ করে পরিষ্কার জায়গায় গিয়ে তারপরে পা ধুতে
হবে। ফরজ গোসলের জন্য ওযু করার মতন করে প্রথমে অজুর স্থানগুলো ধোয়া হয়ে
গেলে, এবার প্রথমে মাথায় তিনবার পানি দিতে হবে তারপর ডান কাঁধে তিনবার এরপর বাম
কাঁধে তিনবার পানি ঢালতে হবে। এভাবে পানি ঢেলে তারপর সমস্ত শরীর হাত দিয়ে
ভালোভাবে ঘষে পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
ফরজ গোসল করার সময় চুল, দাড়ি , শরীরে থাকা অলংকারের প্রতিও বিশেষ
খেয়াল রাখতে হবে যেন এগুলোর থাকে শুকনা না থেকে যায় ফরজ গোসল করার সময় শরীরের
মধ্যে কোন এক চুল পরিমান স্থানীয় শুকনো থাকা যাবে না। এ কারণে ফরজ গোসল করার
সময় আপনার শরীরে যদি কোন অলংকার বা কাপড়চোপড় থাকে তাহলে অবশ্যই নাড়াচাড়া করে
এর নিজ পর্যন্ত ভালোভাবে পানি পৌঁছানোর ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে হবে।
ফরজ গোসলের পরে ইবাদতের জন্য নতুন করে ওযু করার প্রয়োজন পড়েনা ,তবে ওযু ভঙ্গের কারণ গুলো যদি ঘটে থাকে তাহলে তাহলে আপনাকে পুনরায় অজু করে পাক পবিত্র হয়ে তারপরে এবাদত করতে হবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু বলেন-নবীজি (সা) ফরজ গোসলের পর ওযু করতেন না।(তিরমিজিঃ১০৩, মিশকাতঃ৪০৯)
ফরজ গোসল করতে না পারলে করণীয়
এবার জেনে নিন ফরজ গোসল করতে না পারলে করণীয় কি এ বিষয়টি। আপনি যদি অসুস্থ হন,
পানি ব্যবহারে আপনার অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে অথবা আপনি সফলত
অবস্থায় এমন জায়গায় থাকেন যেখানে পানির অভাব রয়েছে এ সকল পরিস্থিতিতে আপনার
গোসল ফরজ হলে কি করবেন? দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই , ফরজ গোসল করতে না পারলে
করণীয় বিষয়টি সম্পর্কেও এখন আলোচনা করা হবে। দেরি না করে তাহলে জেনে নিন ফরজ
গোসল করতে না পারলে করণীয় কি।
কুরআন হলো পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা সুতরাং এই কোরআনের মধ্যে খুঁটিনাটি সকল বিষয়ই
আল্লাহ পাক আমাদেরকে জানিয়ে রেখেছেন। কোরানুল কারীমের আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন
বলেছেন-তোমরা যদি অসুস্থ হও , সফরে থাকো এবং এই অবস্থায় স্ত্রী সম্ভোগ অথবা অন্য
যেকোনো কারণে যদি অপবিত্র হও অতঃপর পানি না পাও তাহলে তোমরা পবিত্র মাটি দিয়ে
তায়াম্মুম করে নাও। আল্লাহ তোমাদের পবিত্র রাখতে চান।(সূরা মায়েদা, আয়াত ৬)
আরো পড়ুনঃ তায়াম্মুমের নিয়ম
সুতরাং এটিকে স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায় যে, বিশেষ কোনো কারণে অপবিত্র হওয়ার পরে যদি
গোসল করা না যায় বা গোসলে অসুবিধা থাকে অথবা আশেপাশে পানির ব্যবস্থা না থাকে
তাহলে মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করেও ফরজ গোসলের মতোই পবিত্র হওয়া যায়।
মন্তব্য, উপর আলোচনার মাধ্যমে আপনি জানতে পেরেছেন গোসলের ফরজ কয়টি ,গোসল
ফরজ হওয়ার কারণ ,ফরজ গোসলের নিয়ম ও ফরজ গোসল না করার শাস্তি
সম্পর্কে। পোস্টটি পড়ে আশা করি বুঝতে পেরেছেন পবিত্রতা অর্জনের জন্য ফরজ গোসল
করা কতটা জরুরী এবং ফরজ গোসল না করলে পরবর্তী জীবনে আমাদের কি ধরনের ভয়ংকর
শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে সেটিও নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। সুতরাং অপবিত্র হওয়ার
পরে যত দ্রুত সম্ভব ফরজ গোসল করে নিজেকে পাক-পবিত্র রাখার চেষ্টা করুন।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url