কমলার খোসার ১০টি উপকারিতা - কমলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা

শুধু কমলা না কমলার খোসার মধ্যেও অনেক গুণ এবং উপকারিতা যে লুকিয়ে আছে সেটা হয়তো আমাদের অনেকেরই অজানা। কিন্তু আমরা না জানলেও কমলার খোসার উপকারিতা রয়েছে,কমলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা করা যায় এবংকিছু ক্ষেত্রে কমলার খোসার অপকারিতা রয়েছে। তাই কমলার খোসার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জানুন।

কমলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা ছাড়াও কমলার খোসা দিয়ে চুলের যত্ন নেয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে কমলার খোসার উপকারিতা রয়েছে। কমলার খোসার অপকারিতা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিছুটা থাকলেও এর দ্বারা বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয় না। তাই কমলার খোসা ফেলে দেওয়ার আগে অবশ্যই কমলার খোসার উপকারিতা , কমলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা এবং কমলার খোসার উপকারিতা গুলো জেনে নিন।

পোস্টের ভেতরে কমলার খোসা সম্পর্কে যা থাকছেঃ কমলার খোসার ১০টি উপকারিতা - কমলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা -

কমলার খোসার উপকারিতা

কমলা আমরা ছোট বড় সবাই খেয়ে থাকি এবং অনেকেরই এটি প্রিয় ফল । কমলা খাওয়ার পরে আমরা সাধারণত এর খোসা গুলো ফেলে দেই। কমলার খোসার উপকারিতা সম্পর্কের না জানার কারণে আমরা এই কাজটি করি। আমরা জানিও না যে কমলার খোসার মধ্যেও কত উপকারিতা রয়েছে। এবার তাহলে কমলার খোসার উপকারিতা গুলো জেনে নেয়া যাক। কমলার খোসার ১০টি উপকারিতা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।
  • চিনি শুষ্ক রাখতেঃ দোকান থেকে চিনি কিনে আনার পরে দেখা যায় সেই চিনিটা ভেজে ভেজে। চিনির এই ভেজা ভাব দূর করতে কমলার খোসা অতুলনীয়। একটি এয়ার টাইট বোয়ামে চিনি এবং কমলার খোসা রেখে দিলে চিনির ভেজে ভাব দূর হবে এবং চিনি শুকনা থাকবে।আর এই খোসা রাখা চিনি দিয়ে খাবার বানালে মানুষের খুদা মন্দা দূর হয়।
  • রান্নার স্বাদ বাড়াতেঃ বিভিন্ন রানায় কমলার খোসা ব্যবহার করা যায়, এতে রান্নার স্বাদ অনেকাংশে বেড়ে যায় এবং রান্নায় অলাদা একটা স্মেল যুক্ত হয়।এছাড়াও বিভিন্ন স্নেক্স জাতিয় খাবারে কৃত্রিম স্মেল ব্যবহার না করে কমলার খোসা ব্যবহার করলে নেচারাল ফ্লভার এবং স্বাদ দুটোই পাওয়া যাবে।
  • দাঁতের হলুদ ভাব দূর করতেঃ নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করার পরেও দেখা যায় আমাদের দাঁত হলুদ হয়ে যায়।দাঁতের এই হলুদ ভাব দূর করতে কমলার খোসা খুবই ভালো কাজ করে। কমলার খোসা পেস্ট বানিয়ে ব্রাশ দিয়ে দাঁতে ঘষলে, নিমিষেই দাঁতের হলুদ ভাব দূর হবে।
  • ব্যথা দূর  করেঃ কমলাে খোসার  মধ্যে এমন কিছু বিশেষ উপাদান আছে যেগুলো , শরীরের বিভিন্ন ধরনের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে যেমন , বাতের ব্যথা ,মাথা ব্যথা ,মাসিকের ব্যথা।
  • বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তিঃ কমলার খোসা খেলে বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কমলার খোসা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ক্যান্সার রোধ করে । কমলার খোসার মধ্যে রয়েছে ফাইবার আর এই ফাইবার আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান।
  • কাশির সমস্যা দূর করতেঃ কাশির সমস্যা দূর করতে কমলার খোসার চা খুব উপকারী একটি পানীয়। কমলার খোসা গুলো কুচি কুচি করে কেটে চা পাতার সাথে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে চা তৈরি করে নিতে হবে , পান করলে আপনার কাশির সমস্যা দূর হবে।
  • রূপচর্চাঃ রূপচর্চার ক্ষেত্রে কমলার খোসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। কমলার খোসা দিয়ে মুখের ব্রণ দূর করা যায় এবং উজ্জ্বল ত্বক , ঝলমলে চুল পাওয়া যায়। এছাড়াও কমলার খোসা স্কার্ভি হিসেবে ত্বকে ব্যবহার করা যায়।
  • স্যাঁতস্যাতে গন্ধ দূর করেঃ অনেক সময় ঘরের ভেতরে স্যাঁতস্যাঁতে একটা গন্ধ হয়,বিশেষ করে  বর্ষাকালে। ঘরের এই গন্ধ দূর করতে কমলার খোসা খুব ভালো কাজ করে । একটু পানির ভেতরে কমলার খোসা দিয়ে তার সাথে কয়েক টুকরা দারুচিনি দিতে হবে। কমলার খোসা এবং দারুচিনি একসাথে বেশ কিছুক্ষণ ফুটিয়ে সেই পানিটি ঘরের চারিদিকে ছিটিয়ে দিলেই স্যাঁতস্যাঁতে গন্ধ তো দূর হবেই সাথে সুন্দর একটা স্মেল বের হবে।
  • ঘুমের সমস্যা দূর করেঃ কমলার খোসা পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে অনেক সময় অনিদ্রার সমস্যা দূর হয়। যাদের রাতে অথবা দিনে ঘুমের সমস্যা হয় তারা এই কাজটি করে দেখতে পারেন।
  • খুশকি দূর করতেঃ আমাদের মাথার খুশকি দূর করতে কমলার খোসা ভীষণ উপকারী একটি উপাদান । অনেকের রয়েছে যাদের খুশকি হলে সহজে ভালো হতে চাই না। এই ধরনের খুশকির সমস্যায় যারা রয়েছেন তারা যদি নিয়মিত কমলার খোসা সিদ্ধ করা পানি দিয়ে মাথার চুল পরিষ্কার করেন তাহলে খুশকির সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।

যেসব রোগ সারাবে কমলার খোসা

কমলার খোসার মধ্যে এমন কিছু অসাধারণ গুণ রয়েছে যেগুলো শরীরের বিভিন্ন রোগ সারাতে ব্যাপক সহায়তা করে। কমলার খোসার ভিতরে যত ধরনের গুন আছে অন্য কোন ফলের খোসার ভেতরে এত গুণ নেই। যেসব রোগ সারাবে কমলার খোসা এবার সেই সব রোগ গুলো সম্পর্কে জানুন। কমলার খোসা দিলে দেওয়ার পূর্বে অবশ্যই জেনে নিন যেসব রোগ সারাদিন কমলার খোসা এবং এই খোসা গুলো ফেলে না দিয়ে বিভিন্ন খাবারের মধ্যে ব্যবহার করুন এবং দুরারোগ্য ব্যাধিগুলো থেকে দূরে থাকুন।

আরো পড়ুনঃ প্রেগন্যান্ট অবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা


  • ক্যান্সারঃ কমলার খোসা খেলে এই খোসার উপাদান গুলো শরীরের অভ্যন্তরে ক্যান্সারের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে।
  • কাশির সমস্যাঃ কমলার খোসার চা কাশির সমস্যা দূর করতে খুবই ভালো একটি পানীয়। প্রতিদিন যদি একবার অথবা দুইবার কমলার খোসা দিয়ে চা বানিয়ে খাওয়া যায় তাহলে সে সমস্যা দু-একদিনের মধ্যে দূর হয়ে যাবে।
  • পিত্তথলির সমস্যাঃ পিত্তথলির সমস্যা দূর করতেও কমলার খোসার চা খুবই উপকারী । নিয়মিত যদি কমলার খোসার চা পান করা যায় তাহলে এটি পিত্তথলির বিভিন্ন সমস্যা দূর করবে।
  • গ্যাসের সমস্যা দূর করেঃ যাদের পেটে অতিরিক্ত গ্যাস হয় তারা সকালবেলা করে কমলার খোসার পাউডার মধুর সাথে মিশিয়ে খান। পেটের এসিডিটি কমাতে কমলার খোসা ভীষণভাবে কার্যকরী।
  • লিভারের সমস্যা দূর করেঃ কমলার খোসার মধ্যে রয়েছে ডি-লিমোনেন ফাংশন কে ঠিক রাখে। লিভার সুস্থ রাখতেও কমলার খোসার অবদান রয়েছে।
  • ঘুমের সমস্যা দূর করেঃ কমলার খোসা পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে অনেক সময় অনিদ্রার সমস্যা দূর হয়। যাদের রাতে অথবা দিনে ঘুমের সমস্যা হয় তারা এই কাজটি করে দেখতে পারেন।
  • ভাইরাস থেকে দূরে রাখেঃ কমলার খোসার ভেতরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় এটি খেলে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাল জনিত রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

কমলার খোসা গুড়া করার উপায়

অত্যন্ত উপকারী এবং ঔষধি গুণে ভরা কমলার খোসা। এই ঔষধি কোন সম্পন্ন কমলার খোসা আমরা যদি সংরক্ষণ করতে চাই তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে এটি পাউডার করে বা গুড়া করে সংরক্ষণ করতে হবে। এবার আপনাদেরকে জানাবো কমলার খোসা গুড়া করার উপায়। কমলার খোসা গুড়া করার উপায় খুব কঠিন নয়, সহজেই কমলার খোসা গুড়া করা যায়। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক কিভাবে কমলার খোসা গুড়া করা যায়।

প্রথমে কমলা থেকে খোসা ছাড়িয়ে এগুলোকে ছোট ছোট স্লাইস অথবা কিউব করে কেটে নিতে হবে। এরপর এই খোসাগুলোকে টানা রোদে তিন থেকে চার দিন ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। এবার খোসা গুলো ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে সেগুলোকে ব্লেন্ডারি দিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন তাহলেই তৈরি হয়ে গেল কমলার খোসার গুড়া। এইবার এই গুড়াগুলো একটি এয়ারটাইট বোয়ামে সংরক্ষণ করতে পারেন।

কমলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা

কমলার খোসা দিয়ে যে রূপচর্চা করা যায় এটা আমরা প্রায় অনেকেই জানি। তারপরেও আপনাদের সুবিধার জন্য কিভাবে কমলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা করা যায় সেই বিষয়ে আজকে আলোচনা করব। আপনাদের সুবিধার জন্য আজকে জানাবো কমলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা করার উপায়।

মসুরের ডাল এবং কমলার খোসা একসাথে বেটে আপনার মুখে লাগিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পরে এটি শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। কমলার খোসা এভাবে মুখের ত্বকে লাগালে মুখের কালচে ভাব দূর হয় এবং ব্রণের সমস্যাও দূর হয়ে যায়।

আরো পড়ুন ঃ আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

প্রায় তিন টেবিল চামচ কমলার খোসার পাউডার নিয়ে এর ভেতরে ৬-৭ ফোটা লেবুর রস মিশন, এর সাথে চন্দন পাউডার াতে মেশাতে পারলে আরো ভালো হয়। এভাবে সবগুলো উপকরণ একসাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন এরপর শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কয়েকদিন নিয়মিত ব্যবহার করলে আপনার ত্বক থেকে রোদে পোড়া দাগ দূর হয়ে যাবে ।

কমলার খোসা স্ক্রাব হিসেবেও খুব ভালো কাজ করে। সামান্য একটু দুধের সাথে কমলার খোসার গুড়া বা পাউডার মিশিয়ে সেটি মুখে এবং হাতে পায়ে লাগানোর পরে হালকাভাবে কিছুক্ষণ মেসেজ করুন এরপর ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার ত্বক উজ্জ্বল হবে এবং স্ক্রাব করা হয়ে যাবে।

কয়েক চামচ ময়দার সঙ্গে কমলার রস মিশিয়ে ত্বকের ব্যবহার করলে ত্বক ভেতর থেকে পরিষ্কার হয়ে ওঠে।

কমলার খোসার ফেসপ্যাক

কমলার খোসা দিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে মুখের ত্বকে লাগালে, এটি ত্বক উজ্জ্বল করতে খুব ভালো কাজ করে। এতে করে ঘরে বসে প্রাকৃতিক উপায়ে আপনি উজ্জ্বল চেহারা পেয়ে যাবেন এবং সাথে সাথে পার্লারে যাওয়ার খরচ বাচিয়ে টাকা-পয়সা সেভ করতে পারেন। তাহলে এবার জেনে নিন কমলার খোসার ফেসপ্যাক বানানোর নিয়ম।

  • উজ্জ্বল টক পাওয়ার জন্য কমলার খোসার ফেসপ্যাক বানাতে হলে আপনাকে , দুই চামচ কমলার খোসার গুড়া অথবা কমলার খোসা বেটে নিতে হবে এবং এর সাথে দুই চামচ টক দই মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে হবে। অন্ততপক্ষে ২০-২৫ মিনিট লাগিয়ে রাখার পরে যখন প্যাকটি শুকিয়ে যাবে তখন ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কয়েক দিন ব্যবহার করতে পারলে আপনার ত্বক প্রাকৃতিকভাবেই উজ্জ্বল হয়ে উঠবে ।
  • কমলার খোসা, গোলাপ জল , হলুদের গুড়া , মধু , চন্দন পাউডার , এই সকল উপাদান গুলো দিয়েও ফেসপ্যাক বানানো যায় , উপাদান গুলো একসাথে মিশিয়ে মিশ্রণটি মুখের ত্বকের ব্যবহার করুন। লাবণ্যময় উজ্জ্বল পেতে হলে এই প্যাকটি সপ্তাহে অন্ততপক্ষে তিন থেকে চার দিন লাগান।
  • এক চামচ ময়দা এবং দুই চামচ কমলার খোসা গুড়া নিয়ে গোলাপ জলের সাহায্যে একটি স্মুথ পেস্ট তৈরি করুন। এবার এই ফেসপ্যাকটি আপনার সারা মুখে লাগিয়ে রাখুন এই প্যাকটি যাদের শুষ্ক ত্বক তাদের জন্য খুবই কার্যকরী একটি প্যাক হিসেবে কাজ করবে। এই প্যাকটি ব্যবহারের ফলে আপনি উজ্জ্বল চেহারা পেয়ে যাবেন কয়েকদিনের ভিতরে।
  • ত্বকের জেলা বাড়াতে কমলার খোসা এক চামচ , কাঠ বাদামের গুড়া এক চামচ , চন্দন পাউডার এক চামচ এর সাথে কিছু মধু অথবা গোলাপজল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন, এরপর এই প্যাকটি লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন তারপরে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই ফেসপ্যাক টি দুই একবার লাগানোর পরে আপনি পরিবর্তন বুঝতে পারবেন।
  • মুলতানি মাটি , কমলার খোসা এবং গোলাপ জল একসাথে মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাকটি তৈরি করুন। এই ফেসপ্যাকটি যাদের শুষ্ক স্কিন তাদের জন্য। কমলার এই ফেসপ্যাকটি লাগানোর ফলে আপনার মুখের কালো দাগ দূর হবে।

কমলার খোসা দিয়ে চুলের যত্ন

কমলার খোসার সাহায্যে শুধু ত্বকের যত্নই না কমলার খোসা দিয়ে চুলের যত্ন নেয়া যায়। কমলার খোসা দিয়ে চুলের যত্ন নিয়ে চুলের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করা যায়। তাহলে দেরি না করে জেনে নিন কমলার খোসা দিয়ে চুলের যত্ন নেয়ার উপায় এবং কমলার খোসা চুলের কি কি উপকার করে।
চুল পড়া রোধ করেঃ কমলার খোসার মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি। এই কারণে এটি মাথার ত্বকে লাগালে চুল পড়া কমে এবং চুল দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
  • খুশকি দূর করেঃ প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকার কারণে কমলার খোসার পেস্ট মাথার মধ্যে লাগালে মাথার খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। কমলার খোসা ৫-১০ মিনিট ধরে মাথার ত্বকে ঘষাঘষি করলে খুশকির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • চুলের আদ্রতা ধরে রাখঃ বিভিন্ন কারণে অনেক সময় আমাদের চুল তার নিজস্ব আদ্রতা হারিয়ে ফেলে শুষ্ক হয়ে যায়। লেবুর খোসার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি এই দুটি উপাদান চুলর আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। কমলার খোসা সিদ্ধ করা পানি দিয়ে শুষ্ক ভাব দূর করে এবং বজায় রাখে।
  • মাথার ত্বকের চুলকানি কমাতেঃ গরমের সময় আমাদের মাথার ত্বকের অনেক সময় চুলকানির ভাব অনুভব হয় এটি সাধারণত হয় চুলের ভেতরে ঘেমে থেকে বিভিন্ন ধরনের ফাঙ্গাস আক্রমণ এবং প্রদাহের কারণে। মাথার ত্বকের এই চুলকানি দূর করতে কমলার খোসার পেস্ট এবং টক দই একসাথে মিশিয়ে চুলের গোড়াতে অথবা মাথার ত্বকে লাগাতে হবে।
  • চুল সিল্কি করতেঃ ঝলমলে উজ্জ্বল চুল পেতেও আপনি কমলার খোসা ব্যবহার করতে পারেন । কমলার খোসার রস চুলে লাগালে অথবা কমলার খোসা সিদ্ধ করা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেললে আপনার চুল সিল্কি এবং উজ্জ্বল হবে। কমলার খোসা সিদ্ধ করা পানি চুলের কন্ডিশনার হিসেবেও কাজ করে এই কারণে কমলাস সিদ্ধ করা পানি দিয়ে চুল ধোয়ার পরে কন্ডিশনার না লাগালেও চলে।

কমলার খোসা দিয়ে ত্বকের যত্ন

কমলা খেয়ে এর খোসা ফেলে না দিয়ে এই খোসাগুলোর সাহায্যে আপনি বিভিন্নভাবে ত্বকের যত্ন নিতে পারেন। কমলার খোসা দিয়ে ত্বকের যত্ন নেয়ার উপায় গুলো আপনার যদি জানা না থাকে তাহলে এক্ষুনি কমলার খোসা দিয়ে ত্বকের যত্ন নেয়ার পদ্ধতি গুলো জেনে নিন। কমলার খোসা যেহেতু একটি প্রাকৃতিক উপাদান এই জন্য এটি ব্যবহারে আপনার ত্বকের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
  • ব্রণের সমস্যাঃ মুখের ত্বকে ব্রণের সমস্যা দূর করতে কমলার খোসা বিশেষ কার্যকর। কিছুটা কমলার খোসা নিয়ে পানিতে দিয়ে সিদ্ধ করে সেই পানিটি দিয়ে যদি মুখ ধোয়া যায় তাহলে খুব তাড়াতাড়ি ব্রণের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
  • ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করতেঃ যাদের অয়েলি স্কিন বা যাদের ত্বকে তৈলাক্ত ভাব বেশি তারা যদি মুখের তেল নিয়ন্ত্রণ করে ত্বককে সুন্দর রাখতে চান তাহলে কমলার খোসা ব্যবহার করুন। কমলার খোসার সাথে মসুরের ডাল এর পেস্ট বানিয়ে ত্বকে লাগান এতে আপনার ত্বকের তেলতেলে ভাবও দূর হবে এবং এটি মুখের কালচে দাগও দূর করবে।
  • মৃত কোষ দূর করতেঃ করতে কমলার খোসার পেস্ট এর সাথে কিছুটা মুলতানি মাটি এবং মধু মিশিয়ে মিশ্রণটি মুখের ত্বকে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রেখে হালকা একটু স্ক্রাব করে নিন এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন । দেখবেন আপনার ত্বকের সব মৃত কোষ দূর হয়ে গেছে এবং আপনার তো অনেক উজ্জ্বল হয়েছে আগের তুলনায়।
  • রোদের পোড়া ভাব দূর করেঃ বিভিন্ন কারণেই আমাদেরকে রোদের বা ঘরের বাইরে যেতে হয়। রোদে যাওয়ার কারনে আমাদের ত্বকে রোদে পোড়ার একটা কালচে ভাব চলে আসে। কিছুটা মুলতানি মাটির সাথে যদি কমলার খোসার পাউডার মিশিয়ে অন্ততপক্ষে ২০-২৫ মিনিট মুখের ত্বকে কয়েকদিন ব্যবহার করতে পারেন তাহলে এটি আপনার ত্বক থেকে রোদে পোড়া ভাব দূর করে।

কমলার খোসার সিরাম

কমলার খোসা দিয়ে সিরাম বানিয়ে সেটি মুখের ত্বকে ব্যবহার করা যায়। কমলার খোসার সিরাম মুখের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী ত্বকের কালো ভাব দূর করতে , তোকে বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে এবং ত্বকের টোনা হিসেবে খুব ভালো কাজ করে। নিচে কমলার খোসা সিরাম তৈরির নিয়ম গুলো দেওয়া হল।

টোনার সিরামঃ কমলার খোসা দিয়ে টোনার সিরাম তৈরি করার জন্য প্রথমে কমলার টুকরা করে নিতে, এইবার দুই গ্লাস পানির ভেতরে এক মুষ্টি পরিমাণ কমলার খোসার ছোট ছোট কিউব গুলো দিয়ে ভালোভাবে ফোটাতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না পানি অর্ধেক হয়ে আসে , এই পানি ফুটানোর সময় অবশ্যই কয়েক টুকরা দারুচিনি এবং লবঙ্গ দিতে পারলে খুব ভালো হয়। এভাবে পানি ফুটে অর্ধেক হয়ে গেলে সেই ফুটন্ত পানি ঠান্ডা করে আপনি একটি স্প্রে বোতলে ভরে রাখতে পারেন এবং প্রতিবার মুখ দেওয়ার পরে এই টোনার সিরাম মুখে স্প্রে করুন। টোনার হিসেবে কমলা খোসা খুবই ভালো কাজ করে।
নাইট সিরামঃ কমলার খোসা দিয়ে নাইট সিরাম বানিয়ে প্রতিদিন ব্যবহার করলে আপনার ত্বক থেকে কালো দাগ দূর , হবে বয়সের ছাপ দূর হবে , চেহারার উজ্জজ্বলতা  বাড়বে। এই সিরাম তৈরির জন্য আপনাকে প্রথমে কমলার খোসার উপরের অংশটি গ্রেট করে নিতে হবে এমন ভাবে গ্রেট করতে হবে যেন নিচের সাদা অংশটি এসে না যায়। এইবার এই গ্রেট করা কমলার খোসা থেকে রস বের করে নিতে হবে সেই রসের সাথে এলোভেরা জেল ভালোভাবে মিশালে তৈরি হয়ে যাবে কমলার খোসার নাইট সিরাম।
কমলার খোসা এবং গ্লিসারিনের সিরামঃ এই শ্রীরামটি তৈরি করার জন্য প্রথমে কিছু কমলার খোসা নিন, এরপর খানিক পানির ভেতরে দিয়ে ফুটাতে থাকুন যতক্ষণ পর্যন্ত না পানি অর্ধেক হয়ে আসে এবং পানির রং চেঞ্জ না হয়। ফুটন্ত পানি অর্ধেক হয়ে গেলে মেয়ে ঠান্ডা করে পরিমাণ মতন গ্লিসারিন মিশিয়ে নিন। তৈরি হয়ে গেল আপনার কমলার খোসা এবং গ্লিসারিনিয়াম এটি স্প্রে বোতলে ভরে আপনি সকালে অথবা রাতে যেকোনো সময় আপনার মুখের ত্বকে স্প্রে করতে পারেন । এর সাথে কিছুটা লেভেন্ডার অয়েল মেশাতে পারেন।
অ্যালোভেরা জেল এবং কমলার খোসার সিরামঃ এই সিরাম টি বানানোর জন্য আপনাকে নিতে হবে কমলার খোসা, বাদামের তেল এবং এলোভেরা জেল। কমলার খোসা থেকে রস বের করে সামান্য পানি দিয়ে ফুটিয়ে নিন এই পানি ঠান্ডা হলে বানানের তেল এবং এলোভেরা জেল মিশিয়ে কিছুক্ষণ ফ্রিজে রাখার পরে মুখে স্প্রে করুন। প্রয়োজনে ল্যাভেন্ডার অয়েল মেশানো যাবে।

অরেঞ্জ পিল পাউডার এর ব্যবহার

অরেঞ্জ পিল পাউডার বা কমলার খোসার গুড়ার বহুবিধি ব্যবহার রয়েছে। অরেঞ্জ ফিল পাউডারের ব্যবহার সম্পর্কে আপনি যদি জানা না থাকে তাহলে অবশ্যই জেনে নিন। আপনাদের জন্য আজকে অরেঞ্জ ফিল্ড পাউডারের ব্যবহার সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা হবে। তাহলে জেনে নিন কলেজ পাউডারের ব্যবহার সম্পর্কে। রূপচর্চা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের কেক, ডিজার্ট এবং স্নেক্স তৈরিতে অরেঞ্জ পিল পাউডার ব্যবহার করা হয় । এই অরেঞ্জ বিল পাউডার বাজারে বোয়াম অথবা প্যাকেট হিসেবেও কিনতে পাওয়া যায়। যেসব কাজে অরেঞ্জ ফিল পাউডারের ব্যবহার হয় সেগুলো হলো,

আরো পড়ুনঃ বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

  • রান্না সুস্বাদু করতে
  • রান্নায় আলাদা একটা ফ্লেভার যুক্ত করতে
  • অরেঞ্জ পিল এর চা তৈরি করতে, এই চা টি শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী
  • ত্বকের সান বার্ন দূর করতে
  • ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে
  • ত্বকের প্রাকৃতিক  স্ক্রাব হিসেবে
  • মাথার খুশকি দূর করতে
  • বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে
  • ঘরের সাথে গন্ধ দূর করতে

কমলার খোসার অপকারিতা

উপরের আলোচনা গুলো থেকে আমরা কমলার খোসা অনেক ধরনের উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি, কিন্তু তার মানে এই নয় যে কমলার খোসার অপকারিতা নেই। কমলার খোসার অনেক গুণ বা উপকারিতা থাকলেও এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। কমলার খোসা ব্যবহার এবং খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই এর অপকারিতা গুলো সম্পর্কেও জেনে নিবেন। কমলার খোসার অপকারিতা গুলো হলো। কমলার খোসা ব্যবহারের বড় ধরনের কোন অপকারিতা না থাকলেও অতিরিক্ত কমলার খোসা ব্যবহার করলে কিছু কিছু অসুবিধা পড়তে পারেন। যেমন,

অতিরিক্ত কমলার খোসা ব্যবহার করলে আপনার স্কিনে লালচে ভাব আসতে পারে বিশেষ করে যাদের সেনসিটিভ স্কিম। বেশি ব্যবহার করলে যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা আছে তারা কিছুটা এলার্জিতে ভুকতে পারেন।

কমলা চাষের সময় বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ঔষধ দেয়া হয়। এই কীটনাশক ঔষধ গুলো কমলার খোসার সাথে লেগে থাকতে পারে। সেই কারণে কমলার খোসা ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই সেটি ভালোভাবে কয়েকবার ধুয়ে নিতে হবে। কারণেই কীটনাশকগুলো আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কমলার খোসার মাধ্যমে যদি এই কীটনাশক গুলো আমাদের শরীরে প্রবেশ করে তাহলে উপকারের চাইতে অপকারিতা হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকবে। কি কারনে অবশ্যই কমলার খোসা ব্যবহারের পূর্বে এটি ভালোভাবে ধুয়ে নিতে ভুলবেন না।

শেষ কথা , উপরিক্ত আলোচনার মাধ্যমে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন কমলার খোসার উপকারিতা সম্পর্কে। কমলার খোসা কাজে লাগিয়ে আপনি কমলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা করতে পারেন। কমলার খোসা বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার করে এটি খাওয়ার মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারেন শরীরের অভ্যন্তরে। এবং এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনি কমলার অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আশা করব এরপর থেকে কমলা খেয়ে কমলার খোসা ফেলে দেওয়ার পূর্বে অবশ্যই এর উপকারীর দিকগুলো খেয়াল রাখবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url