এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ - এপেন্ডিসাইটিস ফেটে গেলে কি হয়
অ্যাপেন্ডিক্স আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কোন অর্গান না হলেও, এখান থেকে সৃষ্টি রোগের কারণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে, আর এই কারণে আমাদেরকে জেনে নিতে হবে এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ,এপেন্ডিসাইটিস হলে করনীয় এবং এপেনডিক্স সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য। কারণ,এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ গুলো জানা থাকলে তবেই আমরা সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবো। দেরি না করে এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে এপেন্ডিসাইটিস সম্পর্কিত বিভিন্ন অজানা তথ্য গুলো জেনে নিন।
এই পোস্টে আজকে আমরা আলোচনা করব এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ ,এপেন্ডিসাইটিস হলে করনীয় এবংএপেন্ডিসাইটিস ফেটে গেলে কি হয় এই বিষয়গুলো সহ এপেন্ডিসাইটিস সম্পর্কিত আরো বিভিন্ন ধরনের তথ্য নিয়ে। আশা করছি সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার মাধ্যমে এপেন্ডিসাইটিস সম্পর্কিত তথ্যগুলো জানতে পেরে আপনি উপকৃত হবেন। এপেন্ডিসাইটির সম্পর্কিত তথ্যগুলো জানার জন্য পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃএপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ - এপেন্ডিসাইটিস ফেটে গেলে কি হয়
- এপেন্ডিসাইটিস কেন হয়
- এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ
- এপেন্ডিসাইটিস হলে করনীয়
- এপেন্ডিসাইটিস কোন পাশে হয়
- এপেন্ডিসাইটিস ফেটে গেলে কি হয়
- এপেন্ডিসাইটিস অপারেশনের পর করনীয়
এপেন্ডিসাইটিস কেন হয়
পোস্টের শুরুতেই আজকে আমরা জেনে নেব অ্যাপেন্ডিসাইটিস কেন হয়। বর্তমানে এপেন্ডিসাইটিস এই রোগটি খুবই কমন একটি রোগে পরিণত হয়েছে, আপনার যদি এপেন্ডিসাইটিস রোগ সম্পর্কে ধারণা না থাকে তাহলে এখনই জেনে নিন এপেন্ডিসাইটিস কেন হয় সে সম্পর্কে। মানবদেহের বৃহদন্ত্রের মধ্যে তিনটি অংশ রয়েছে যার একটি হল সিকাম। এই সিকামের সাথে হাতের আঙ্গুলির মতন যেই নালিটি ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে তাকে বলা হয় এপেন্ডিক্স।
কোন কারণে যদি এই এপেন্ডিক্স এর ভেতরে প্রদানের সৃষ্টি হয় তখন তাকে বলা হয় অ্যাপেন্ডিসাইটিস। এই নালীটির ভেতরে খাদ্য আটকে অথবা অন্য কোন কারণে ব্লক হয়ে গেলে তখন এপেন্ডিসাইটিস এর প্রবলেম দেখা দেয়। আরো সহজ ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়, কোন কারনে এপেন্ডিক্স এর নালীটি ব্লক হয়ে গেলে অথবা অ্যাপেন্ডিক্স এর নালিটির মধ্যে প্রদাহের সৃষ্টি হলে অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়। আশা করছি, এপেন্ডিসাইটিস কেন হয় বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।
এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ
বর্তমানে এপেনডিক্সের রোগ এবং অ্যাপেন্ডিক্স এর অপারেশন খুবই সাধারণ একটি ব্যাপার হলেও সময় মতন এর বিরুদ্ধে সঠিক ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এপেন্ডিক্স এর কারনে রোগীর মৃত্যু ঘটতে পারে। সঠিক সময় সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ সম্পর্কে জানা থাকতে হবে। আপনার যদি জানা না থাকে এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ গুলো সম্পর্কে তাহলে, আর দেরি না করে এখনই এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ গুলো জেনে নিন।এপেন্ডিসাইটিস হলে রোগীর শরীরে বেশ কিছু উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা দেয়,এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ গুলো হলো,
- বমি ভাব এবং বমি হওয়া
- খাদ্যে অরুচি এবং খিদা না থাকা
- কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা ডায়রিয়া হওয়া
- মাঝে মাঝে শরীরে মৃদু জ্বর অনুভূত হওয়া
- নাভির আশেপাশে এবং পেটর ডান পাশে প্রচন্ড ব্যথা হওয়া
- পেট ফোলা
এপেন্ডিসাইটিস হলে করনীয়
এবার আমরা জানবো এপেন্ডিসাইটিস হলে করনীয় বিষয় সম্পর্কে। যদিও এপেন্ডিসাইটিস জটিল কোন সমস্যা নয় খুব সাধারণ এবং অল্প সময়ের মধ্যে এর অপারেশন করিয়ে নেয়া যায় এবং এপেন্ডিসাইটিস এর অপারেশনে কোন ধরনের ঝুঁকি থাকে না কিন্তু তারপরেও, সময় মতন এই রোগের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। এপেন্ডিসাইটিস হলে সবচেয়ে প্রথমে করনীয় হলো কোন ভালো ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা এবং ডাক্তার যে পরামর্শ দেয় সেই পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তবে ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করার পাশাপাশি আপনি এপেন্ডিসাইটিস হলে করনীয় বেশ কিছু ঘরোয়া টোটকা এপ্লাই করে দেখতে পারেন।এপেন্ডিসাইটিস হলে করনীয় বিষয়গুলো হলো।
মেথি জল খাওয়া
বাদামের তেল মাসাজ
জিনসেং চা পান করা
পুদিনা পাতার রস
সবজির রস খাওয়া
পানি পান করা
ঘোল খাওয়া
মেথি জল খাওয়াঃ এপেন্ডিসাইটিস হলে আপনি যদি দিনে অন্ততপক্ষে দুইবার মেথি জল খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন তাহলে এটি এপেন্ডিসাইটিস প্রতিকার করতে বেশ ভালো কাজ করবে। ১-২ চামচ মেথি হাফ বা এক লিটার পানিতে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে। যখন দেখবেন মেথির ভেতর থেকে রস বের হয়ে পানির কালার চেঞ্জ হয়ে গেছে, তখন এই প্রাণীটি ঠান্ডা করে দিনে দুইবার পান করলে এপেন্ডিসাইটিস এর রোগ ভালো হয়।
আরো পড়ুনঃ পাইলসের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়।
বাদামের তেল মাসাজঃ এপেন্ডিসাইটিস ব্যথার স্থানে আলতো হাতে যদি বাদামের তেল মাসাজ করা যায় তাহলে ,এপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথার হাত থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যায়। এ কারণে এপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথার সময় , ব্যথার স্থানে বাদামের তেল মাসাজ করতে পারেন।
জিনসেং চা পান করাঃজিনসেং হল লতা টাইপের এক ধরনের কাজ। একে এক ধরনের ওষুধি গাছও বলতে পারেন। এই জিনসেং কে আপনি যদি চা বানিয়ে নিয়মিত খেতে পারেন তাহলে এপেন্ডিসাইটিস এর প্রবলেম থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।জিনসেং চা নিয়মিত পানের ফলে এপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথার উপশম হয়।
পুদিনা পাতার রস ঃ পুদিনা পাতা দিয়ে চা বানিয়ে অথবা পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেলে এপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।এপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথা সারানো ছাড়াও পুদিনা পাতার আরো অনেক ঔষধি গুন রয়েছে।
সবজির রস খাওয়াঃ বিভিন্ন ধরনের সবজির রস খেলে এপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথা সারাতে সবজির রস প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে কাজ করে। এ কারণে আপনার এপেন্ডিসাইটিস এর সমস্যা থাকলে বা এপেন্ডিসাইটিস ব্যথা অনুভব করলে বিভিন্ন ধরনের সবজির রস বানিয়ে বানিয়ে খেতে পারেন এর মধ্যে রয়েছে -গাজর,বিট,শসা, মূলা, ধনেপাতা, পালং শাক ইত্যাদি
পানি পান করাঃএপেন্ডিসাইটিস এ রোগীদেরকে দিনের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
ঘোল খাওয়াঃএপেন্ডিসাইটিস এর রুগীরা যদি প্রতিদিন ১ লিটার গোল খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন তাহলে, একদিকে যেমন এপেন্ডিসাইটিস এর রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকবে অন্যদিকে অ্যাপেন্ডিক্সের ভেতরে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ কম হবে।
এপেন্ডিসাইটিস কোন পাশে হয়
এবার আমরা নেব এপেন্ডিসাইটিস কোন পাশে হয় এই বিষয়টি সম্পর্কে। এপেন্ডিসাইটিস কোন পাশে হয় সে সম্পর্কে অধিকাংশই ধারণা থাকলেও, অনেকেই জানা না থাকতে পারে এপেন্ডিসাইটিস কোন পাশে হয় এ বিষয়টি। তাই আজকে আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে জেনে নেবএপেন্ডিসাইটিস কোন পাশে হয়। মানবদেহের ডান পাশে তলপেটের নিচে ,পা এবং কোমরের জয়েন্ট অংশ থেকে প্রায় ৩/৪ আঙ্গুল উপরে রয়েছে এপেন্ডিক্স, তাহলে বুঝতেই পারছেন এপেন্ডিসাইটি কোন পাশে হয় অথব এপেন্ডিসাইটিস হলে কোন পাশে ব্যথা হবে।এপেন্ডিসাইটিস কোন পাশে হয় বিষয়টি সহজভাবে এবং অল্প কথায় আরো একবার বোঝানোর চেষ্টা করছি ,এপেন্ডিসাইটিস হলে আপনার তলপেটে ডান পাশে ,যেখানে পা এবং জয়েন্ট হয়েছে সেই স্থানে অথবা এর আশেপাশের স্থানে ব্যথা হবে।
এপেন্ডিসাইটিস ফেটে গেলে কি হয়
এপেন্ডিক্স এর নালি বা থলিটি যখন কোন কারনে ব্লক হয়ে যায় তখন এর ভেতরে প্রদাহের সৃষ্টি হয় এবং এই নালিটি ফুলে ওঠে। দীর্ঘদিন যদি এপেন্ডিক্স এর নালীটির ভেতরে প্রদাহ চলতে থাকে তাহলে একসময় এটি ফেটে গিয়ে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। এবার আমরা জেনে নেব,এপেন্ডিসাইটিস ফেটে গেলে কি হয় এই বিষয়টি। আমাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষেরই ধারণা নেই যে ,এপেন্ডিসাইটিস ফেটে গেলে কি হয়। তাই আজকে আমরা জেনে নেব ,এপেন্ডিসাইটিস ফেটে গেলে কি হয়। চলুন তাহলে আর দেরি না করে বিষয়টি জেনে নেওয়া যাক।
আরো পড়ুনঃ নাকের এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়
এপেন্ডিক্স এর নালীটি ব্লক হওয়ার পরে এপেন্ডিসাইটিস এর প্রধান সৃষ্টি হয় আর সেই সময় এই নারীদের ভেতরে প্রচুর ব্যাকটেরিয়া জন্মতে থাকে। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসার অভাবে বা অন্য যেকোনো কারণে যদি এই ব্যাকটেরিয়ায় পরিপূর্ণ এপেন্ডিক্স এর নালীটি ফেটে যায় তাহলে এর ভেতরে থাকা ব্যাকটেরিয়া গুলো পেটের সমস্ত স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। আর সমস্ত পেটের ভেতরে ব্যাকটেরিয়া গুলোর ছড়িয়ে পড়ার ফলে, পেরিটোনিয়ামে সমস্যা এবং পেপসিস হতে পারে। এছাড়াও ,এপেন্ডিসাইটিস ফেটে গেলে পুরো পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব হবে। সময়মত যদি সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় তাহলে এপেন্ডিসাইটিস ফেটে গিয়ে রোগীর শেষ পরিণতি মৃত্যুও হতে পারে।
এপেন্ডিসাইটিস অপারেশনের পর করনীয়
যদিও আমাদের কম বেশি সবারই অপারেশনের পর করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞানগুলো রয়েছে, তারপরেও এপেন্ডিসাইটিস অপারেশনের পর করনীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনাদেরকে আরো একবার জানিয়ে বা সতর্ক করে দেব। পোস্টের এই অংশে আমরা এখন আলোচনা করব, এপেন্ডিসাইটিস অপারেশনের পর করনীয় বিষয় সম্পর্কে। এপেন্ডিসাইটিস অপারেশনের পর যে বিষয় গুলো খেয়াল রাখতে হবে সেগুলো হলো,রএপেনডিক্স এর ওপেন সার্জারি করলে কমপক্ষে ছয় সপ্তাহ এবং ল্যাপারসকপি করলে ৩-৪ সপ্তাহ বিশ্রাম করতে হবে।
- ২/১ মাস ভারী কাজকর্ম করা যাবে না। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে কাজের অভ্যাস করতে হবে।
- পেন কিলার খাওয়ার সময় অবশ্যই ডাক্তারি পরামর্শ মোতাবেক খেতে হবে
- অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধগুলো সময় মতন খেতে হবে এবং এন্টিবায়োটিকের কোর্স কমপ্লিট করতে হবে।
- অপারেশনের স্থানটিতে কোন রকমের সমস্যা, ফোলা- লালচে ভাব অথবা প্রস্রাবে অসুবিধা বোধ করলে দ্রুত ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
- পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে ।
- সুষম খাদ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে ।
- শাকসবজি এবং বিভিন্ন ফল জাতীয় খাদ্য বেশি হতে হবে ।
- কাটা বা ক্ষতস্থান দ্রুত সারিয়ে তোলার জন্য ভিটামিন সি জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে।
- ডিম, মুরগির মাংস , জিংক , আইরন , ক্যালসিয়াম ভিটামিন ই,এ এ জাতীয় খাবার গুলো বেশি খেতে। হবে।
মন্তব্য, পুরো পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আমি আশা করছি আপনি বা আপনারা জেনে নিয়েছেন এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ,এপেন্ডিসাইটিস হলে করনীয় এবং এপেন্ডিসাইটিস সম্পর্কিত আরো বিভিন্ন ধরনের তথ্য গুলি। এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণগুলো যদি আপনার ভেতরে থাকে তাহলে অবহেলা না করে ও ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ, কারণ অবহেলার কারণে এই সাধারণ সমস্যাটি থেকে মারাত্মক ক্ষতির এমনকি মৃত্যুর কারণ হয়েও দাঁড়াতে পারে।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url