সজনে পাতার উপকারিতা - সাজনা পাতা খাওয়ার নিয়ম
সজনা পাতাকে আমরা অতি সাধারণ মনে করলেও এর মধ্যে যে কিছু অসাধারণ গুণ রয়েছে তা আমরা অনেকেই জানি না। শুধু সাজনা ডাটা নয় এর পাতা ,ফুল এবং শেকরের মধ্যেও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গুন আর এই কারণেই সাজনা গাছকে মিরাক্কেল ট্রি বলা হয়। সজনে পাতার শত গুণ থাকলেও কয়েকটি ক্ষেত্রে রয়েছে এর অপকারিতা। তাই আজকে আমরা আলোচনা করব সজনে পাতার উপকারিতা , সাজনা পাতা খাওয়ার নিয়ম ও সাজনা পাতার অপকারিতা সম্পর্কে।
সূচিপত্রঃসজনে পাতার উপকারিতা - সাজনা পাতা খাওয়ার নিয়ম - সাজনা পাতার অপকারিতা
সজনে পাতার উপকারিতা
সাজনে ডাটা খেতে আমরা অনেকেই ভালোবাসি ,অনেকে আবার পছন্দের খাবার না হলেও এর গুনাগুনে কারনে এট ডাটা খাই।কিন্তু আপনি জানেনে কি ? যে শুধু সজনে ডাটা নয় ,সজনে পাতাও গুনে ভরপুর। সজনে পাতায় যত পষ্টিগুন রয়েছে , একটি খাবারের মধ্যে এত পুষ্টিগুন সম্পুন্য খাবার খুব কমই আছে এত পুষ্টিগুণ । তাই আজকে আমরা জেনে নেব সজনে পাতার উপকারিতা গুলো তাই আজকে আমরা জানবো। আমাদের শরীরের উপরে সজনে পাতার উপকারিতা অনেক বেশি। সজনে পাতার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের যদি জানা থাকে তাহলে আমরা খুব সহজেই বিভিন্ন জটিল রোগগুলো থেকে আমাদের শরীর বা দেহকে রক্ষা করতে দেয়। তাই চলুন আজকে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক সজনে পাতার উপকারিতা গুলো।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ সজনে পাতার ভেতরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি
উপাদান , প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং এ , জিংক , ক্যালসিয়াম , পটাশিয়াম
, আয়রন ইত্যাদি থাকে ।এক কথায় , বলতে গেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
যে সকল পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন সজনে পাতায় সেই সব পুষ্টি উপাদান গুলো পর্যাপ্ত
পরিমাণে থাকায় এর মাধ্যমে আমাদের শরীরে পুষ্টি চাহিদাগুলো পূরণ হয় এবং পুষ্টি
ঘাটতি না থাকার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে যায়।
রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ সজনে পাতার ভিতরে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং জিংক
থাকায় এটি আমাদের শরীরে রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। সজনে পাতা খাবার
হিসেবে গ্রহণ করলে এর মাধ্যমে আমরা শরীরের চাহিদা অনুযায়ী আয়রনের ঘাটতি মেটাতে
পারবো এবং এর ফলে রক্তশূন্যতা হোক সহ আয়রনের ঘাটতি জনিত বিভিন্ন সমস্যা গুলো
থেকে মুক্ত থাকতে পারব।
আরো পড়ুনঃ পেয়ারা পাতার উপকারিতা এবং পেয়ারা পাতা খাওয়ার নিয়ম
মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করেঃ আমাদের শরীরে মেটাবলিজম বাড়াতে অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সুজনে পাতা । আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সকল
ধরনের অ্যামাইনো এসিড রয়েছে এই সজনে পাতায়। তাই সজনে পাতা খেলে এর মধ্যে থাকা
অ্যামাইনো এসিড আমাদের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে।
লিভার ভালো রাখেঃ সজনে পাতায় বেশ কিছু ঔষধি উপাদান রয়েছে যেই উপাদানগুলো
আমাদের যকৃত বা লিভার কে ভালো রাখতে অত্যন্ত সাহায্য করে।সজনে পাতার মধ্যে
আন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় সজনে পাতা লিভারের কোষগুলো সচল রাখতে এবং সুস্থ রাখতে
সাহায্য করে। এছাড়া সজনে পাতার ভিতরে পলিফেনল নামক এক ধরনের উপাদান রয়েছে যেই
উপাদানটি লিভার থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যেতে সাহায্য করে , যার ফলে
লিভার সুস্থ থাকে।
অতিরিক্ত ওজন কমানোঃ সজনে পাতার ভেতরে থাকা উপাদানগুলো আমাদের শরীরের
খারাপ কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে, সজনে পাতা খাওয়ার ফলে আমরা খুব সহজেই
আমাদের শরীরের অতিরিক্ত মেদ ও চর্বি কমিয়ে ফেলতে পারি। তাই যারা অতিরিক্ত
শারীরিক ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন এবং ওজন কমানোর জন্য ডায়েট করছেন
,তারা খাদ্য তালিকায় সজনে পাতা রস অথবা গুড়া যুক্ত করতে পারেন।
হার্ট ভালো রাখেঃ সজনে পাতা খেলে শররীরে অতিরিক্ত মেদ চর্বি থাকেনা বিধায় হার্ট এ্যটাক বা হার্টের যা কোন সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যায়।এবং হার্টে অসুখ থাকেনা বিধায় হার্ট ভাল থাকে।
ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রন করেঃসজনে পাতা শরীরের শর্করার মাত্রা কে বাড়তে দেয় না যার ফলে ডায়াবেটিস রোগীরা যদি প্রতিদিন সজনে পাতা খেতে পারে তাহলে তাদের শরীরে চিনির পরিমাণ বাড়বে না থাকবে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে করেঃ সজনে পাতার ভেতরে থাকা ঔষধি উপাদানগুলো
আমাদের শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
শরীর কর্মক্ষম থাকেঃ সজনে পাতার ভেতরে যেহেতু শরীরের প্রয়োজনীয়
বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান বিশেষ করে ভিটামিন , আইরন, ক্যালসিয়াম , জিংক
ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে থকে এবং সজনে পাতার ভেতরে থাকা অ্যামাইনো এসিড আমাদের
মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে এ কারণে শরীর তার প্রয়োজনীয় শক্তি পাই ,যার ফলে
শরীর দুর্বল লাগে না এবং কর্মক্ষম থাকা যায়।
হাড় মজবুত করতেঃ সজনে পাতার ভেতর ক্যালসিয়াম থাকায় এটি আমাদের হাড়
গঠনের জন্য বাহার মজবুত করার জন্য অত্যন্ত উপকারী। নিয়মিত সজনে পাতা খেলে
এর মধ্যে থাকা পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম আমাদের হাড় গঠন এবং দাঁত মজবুত করতে
সাহায্য করে।
বুকের দুধ বৃদ্ধি করেঃ বাচ্চা প্রসবের পরে মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে কালোজিরার পাশাপাশি আরেকটি কার উপাদানের নাম হল সজনে পাতা। নিয়মিত কিছু পরিমাণ সজনে পাতা খেলে নতুন মায়েদের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে এটি অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে কারণ সজনে পাতার ভেতরের রয়েছে চাহিদা অনুযায়ী ক্যালসিয়াম এবং আয়রন সহ আরো বিভিন্ন উপাদান।
চোখের জ্যোতি বাড়াতেঃ আমাদের দৃষ্টি শক্তি বাড়ানোর জন্য ভিটামিন এ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবং ভিটামিন এ অন্ধত্ব বিশেষ সাহায্যকারী আর এই ভিটামিন এ আমরা প্রচুর পরিমাণে পেতে পারি সজনে পাতার ভিতরে।
ত্বকের এলার্জি কমাতেঃ সজনে পাতার ভিতরে বিভিন্ন ঔষধি উপাদান সহ এর ভেতরের
রয়েছে এন্টি অ্যালার্জিটিক উপাদান। আর এ কারণে এলার্জি কমাতে সজনে পাতা ভূমিকা
রাখতে পারে। আপনার ত্বকের এলার্জি কমানোর জন্য আপনি কাজে লাগাতে পারেন সজনে
পাতাকে। ত্বকে যেখানে এলার্জি আক্রান্ত হয় সেই স্থান সজনে পাতা বেটে লাগালে অথবা
সজনে পাতা খেলে এলার্জি সমস্যা দূর হয়।
কৃমিনাশকঃ কৃমিনাশক হিসেবেও সজনে পাতা কাজ করে। যাদের কৃমির সমস্যার
রয়েছেন তারা কয়েকদিন সজনে পাতা রস অথবা শুনে পাতার গুড়া পানির সাথে মিশিয়ে
খেলে খুব দ্রুত কৃমির সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
আরো অন্যান্য যেসব রোগ দূর করেঃ সজনে পাতা খেলে আমাশয় , ডায়রিয়ার , কলেরা , জন্ডিস ,বাত , কোষ্ঠকাঠিন্য কিডনি জনিত যে কোন সমস্যাদূর করতে বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও সজনে পাতা আমাদের শরীরের হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে এবং পেটে এসিডিটির সমস্যা দূর করে।
আরো পড়ুনঃ কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
এছাড়াও শরীরে ছোট বড় আরো বিভিন্ন সমস্যা এবং অসুখ সারাতে সজনে পাতা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সজনে পাতা , ডাটা এবং ফুল শরীরের জন্য এত উপকারী যে একে Nutrition super food (নিউট্রিশন্স সুপার ফুড) বলা হয়ে থাকে। Wikipedia এবং agricare24.com সহ আরো বেশ কয়েকটি ওয়েব সাইট থেকে জিনতে পারা যায় যে , প্রটি ১০০ গ্রাম সজনে পাতাই নাকি রয়েছে -১ টা কমলার চেয়ে ৭ গুন বেশি ভিটামিন সি , গাজরের চেয়ে ৪ গুন বেশি ভিটামিন এ ,দুধের চেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন ,কলার চেয়ে ৩ গুন বেশি পটাশিয়াম।আশা করছি সজনে পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন।
সাজনা পাতা খাওয়ার নিয়ম
শুধু সাজনা পাতার উপকারিতা জানলে চলবে না ,জানতে হবে সাজনা পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কেও। আপনার যদি সাজনা পাতা খাওয়ার নিয়ম জানা না থাকে তাহলে ,আপনিও জেনে নিন সাজনা পাতা খাওয়ার উপকারিতা। চলুন তাহলে আর দেরি না করে আমরা জেনে নিই সাজনা পাতা খাওয়ার নিয়ম গুলো। সাজনা আপনি বিভিন্নভাবে খেতে পারেন যেমন - সাজনা পাতা শাক হিসেবে ভাজি করে অথবা অন্য শাকের সাথে মিশিয়ে ভেজে খেতে পারেন। সাজনা পাতা বেটে এর সাথে বেসন বা অন্য ডাল মিশিয়ে বড়া বানিয়ে খেতে পারেন।
সজনা পাতার চা বানিয়ে এর সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন হালকা কুসুম গরম পানিতে সজনা পাতা গুড়া এবং লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন, এছাড়াও সাজনা পাতার গুড়া বিভিন্ন সালাত জাতীয় খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। সাজনা পাতা ভর্তা এবং জুস বানিয়েও খাওয়া যায়। আশা করছি সাধনা পাতা খাওয়ার নিয়ম গুলো সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন।
ত্বকের যত্নে সজনে পাতার উপকারিতা
সজনে পাতার উপকারিতা শুধু শারীরিক ভাবে বিভিন্ন অসুখ সারাতে নয়, রূপচর্চার কাজেও এই সজনে পাতা কম ভূমিকা রাখতে পারেনা।রূপচর্চা বা ত্বকের যত্নে সজনে পাতার উপকারিতা রয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। চলুন এবার ত্বকের যত্নে সজনে পাতার উপকারিতা গুলো জেনে নেয়া যাক,
বলিরেখা ও বয়সের ছাপ দূর করেঃ আমরা আগেও জেনেছি সজনে পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি সহ আরো বিভিন্ন ধরনের উপাদান।অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় সজনে পাতা খেলে বা সজনে পাতার পেস্ট ত্বকে লাগালে ,ত্বক থেকে বলিরেখা ও বয়সের ছাপ দূর হয়। সজনে পাতার ভেতরে থাকা উপাদান গুলো আমাদের ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে বাঁধা দেয় ও ত্বকের কুচকে যাওয়া রোধ করে।
ব্রণ এবং দাগ দূর করেঃ সজনে পাতা ত্বক থেকে ব্রণ ও মুখের কালো দাগ দূর করতে ভিষন উপকারি , কারন সজনে পাতায় রয়েছি অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। সজনে পাতার পেস্টের সাথে মধু , গোলাপজল ও লেবুর রস এক সাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ব্রণের সমস্যা এবং দাগ ছোপ দূর হয় পাশাপাশি স্কিনের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
মন্তব্য, এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন সাজনা পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। এই কারণে অবশ্যই সাজনা পাতা
খাওয়ার পূর্বে সতর্কতা অবলম্বন করবেন কারণ , সজনা পাতা অতিরিক্ত খেলে বেশ
কয়েকটি ক্ষেত্রে এর জটিলতা দেখা দিতে পারে আর যেটি আমাদের কোনভাবেই কাম্য নয়।
সঠিক পরিমাণে সজনা পাতা খাদ্য তালিকায় যুক্ত করুন এবং এর মাধ্যমে আপনার
সুস্বাস্থ্য রক্ষা করুন।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url