মাসিক বন্ধ করার উপায় - মাসিক বন্ধ করার ঔষধ
যে সকল মহিলারা মাসিকের অতিরিক্ত ব্লিডিং এবং নির্দিষ্ট সময় পরেও হতে থাকা মাসিকের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য আজকের এই পোস্টটি অনেক উপকারই হবে বলে আশা করছি। কারণ আজকে এই পোস্টে আলোচনা করা হবে মাসিক বন্ধ করার উপায় ও মাসিক বন্ধ করার ঔষধ সম্পর্কে।
আপনি যদি অতিরিক্ত ব্লিডিং এর সমস্যাই ভুগে থাকেন এবং এর সমাধানের উপায় জানতে চান , তাহলে অবশ্যই এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে আপনার পড়ে নেওয়া উচিত। কারণ এই পোস্টের মাধ্যমে আজকে আপনাদেরকে জানিয়ে দেয়া হবে মাসিক বন্ধ করার উপায় ও মাসিক বন্ধ করার ঔষধ সহ অতিরিক্ত ব্লিডিং হওয়ার কারণ ,মাসিক বন্ধ না হওয়ার কারণ সম্পর্কে। আর এই বিষয়গুলো জানতে হলে অবশ্যই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
সূচিপত্রঃ মাসিক বন্ধ করার উপায় - মাসিক বন্ধ করার ঔষধ
অতিরিক্ত ব্লিডিং হওয়ার কারণ
অনেক মেয়ের ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত ব্লিডিং এর সমস্যা দেখা যায়। কারো কারো ক্ষেত্রে
এই সমস্যাটি এতই প্রকট ধারণ করে যে ১/২ ঘন্টার মধ্যেই প্যাড চেঞ্জ করার
প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এই বিষয়টিতে অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কিন্তু
এই অতিরিক্ত ব্লিডিং হওয়ার কারণ কি, অধিকাংশ মেয়েরাই হয়তো এ বিষয়টি জানেন
না। তাই আজকে আপনাদের জানাবো অতিরিক্ত ব্লিডিং হওয়ার কারণ সম্পর্কে। আপনিও যদি
অতিরিক্ত ব্লিডিং হওয়ার কারণ জেনে না থাকে তাহলে এই বিষয়টি এখনই জেনে নিন।
তাহলে চলুন আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক অতিরিক্ত ব্লিডিং হওয়ার কারণ
গুলো।
- জরায় সংক্রান্ত কোনো সমস্যা যেমন ফাইব্রয়েড, টিউমার বা ক্যান্সার থাকলে মাসিকের সময় অতিরিক্ত হতে পারে।
- শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোন সঠিক মাত্রায় না থাকলে অথবা হরমোনের ওষুধ সেবনের ফলে অতিরিক্ত ব্লিডিং হওয়ার সমস্যায় পড়তে হয়।
- ডিম্বাণু যদি সঠিক নিয়মে ওভারিতে নিঃসরণ না হয় তাহলে অতিরিক্ত ব্লেডিং এর সমস্যা দেখা দিতে পারে কারণ ডিম্বানু সঠিকভাবে নিঃসরণ না হলে প্রজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে যায় এবং যার ফলে অতিরিক্ত ব্লিডিং এর সমস্যা দেখা দেয়।
- শরীরে থাইরয়েড অথবা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম এর সমস্যা থাকার কারণে অতিরিক্ত ব্লিডিং হয়ে থাকে।
- অ্যাবরশন বা মিসক্যারেজ হওয়ার কারনে এবং রক্তের প্লেইটলেট কমে যাওয়ার কারণে অতিরিক্ত ব্লিডিং এর সমস্যা হয়ে থাকে.
- যদি
মাসিক বন্ধ না হওয়ার কারণ
অনেক মহিলারই দেখা যায় একবার মাসিক শুরু হলে কি আর বন্ধ হতে চায় না এবং দীর্ঘদিন ধরে মাসিকের ব্লিডিং চলতে থাকে। অনেক কারণেই দীর্ঘদিন ধরে মাসিক হওয়ার বা অতিরিক্ত ব্লিডিং এর সমস্যাটি হয়ে থাকে। তবে আমাদের যদি মাসিক বন্ধ না হওয়ার কারণ গুলো জানা থাকলে তাহলে খুব সহজে আমরা এর সমাধানের চেষ্টা করতে পারি অথবা সঠিক সময়ে ডাক্তারে শরণাপন্ন হতে পারি। তাই চলুন আজকে জেনে নেয়া যাক মাসিক বন্ধ না হওয়ার কারণ গুলো।মাসিক বন্ধ না হওয়ার কারণ হতে পারে,
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা
- হরমোনাল ইমব্যালেন্স
- রক্তশূন্যতা
- শরীরের বিভিন্ন পুষ্টির ঘাটতি
- সঠিকভাবে ডিম্বানু নিঃসরণ না হওয়া
- পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম
- জরায়ুতে ফাইব্রোয়েড , টিউমার , ক্যান্সার এর কারণে
- প্রজেস্টেরন হরমোনের ঘাটতির কারণে
- এব্রেশন অথবা মিসক্যারেজের কারণে
দীর্ঘদিন অথবা অতিরিক্ত ব্লিডিং এর পেছনে উপরের যে কারণ গুলোই না কেন। এ
ধরনের পরিস্থিতিতে করলে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। কেননা
দীর্ঘদিন ব্লিডিং চলতে থাকলে রক্তশূন্যতার পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দেখা
দিতে পারে যা দেখে আনতে পারে মারাত্মক পরিস্থিতি।
মাসিক বন্ধ করার উপায়
অনেকের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের পরেও মাসিকের রক্তক্ষরণ
চলতে থাকে এবং যার কারণে রক্তশূন্যতার পাশাপাশি দেখা দেয় বিভিন্ন
ধরনের শারীরিক সমস্যা। আর এই পরিস্থিতি থেকে মুক্ত পাওয়ার জন্য আমাদের জেনে রাখা
উচিত মাসিক বন্ধ করার উপায়গুলো। যদিও এসব ক্ষেত্রে বিলম্ব না করে যত দ্রুত
সম্ভব ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়া উচিত তারপরেও , ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পূর্বে
অবশ্যই একবার মাসিক বন্ধ করার উপায় গুলো প্রয়োগ করে দেখা উচিত। যদি
মাসিক বন্ধ করার উপায় গুলোতে সমস্যার সমাধান হয়ে যায় তাহলে এর চেয়ে ভালো
তাহলে আর কি হতে পারে। তাহলে চলুন আজকে আমরা মাসিক বন্ধ করার উপায় জেনে
নিয়। মাসিক বন্ধ করার উপায় হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন,
দারুচিনিঃ অতিরিক্ত ব্লিডিংবা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা মাসির বন্ধ করার জন্য খেতে পারেন দারুচিনি। হালকা গরম পানিতে দারুচিনির গুড়া মিশিয়ে পান করতে পারেন অথবা গোটা দারুচিনি পানির ভেতরে কিছুক্ষন। ফুটিয়ে হালকা কুসুম গরম থাকা অবস্থায় এই পানিটি পান করুন। অতিরিক্ত মাসিকের রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে এটি সাহায্য করবে।
আরো পড়ুনঃ অনিয়মিত মাসিকের কুফল
ধনের বীজঃ নির্ধারিত সময়ের পরেও মাসিক চলতে থাকলে এই মাসের বন্ধ করার জন্য ধনের বীজ খুবি কার্যকর। ধনের বীজ গুড়া করে পানির সাথে মিশিয়ে তিন বেলা কয়েক দিন খেলে , অতিরিক্ত বিডিং এর সমস্যা দূর হবে।
আদাঃ আন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান থাকায় অতিরিক্ত মাসিকের সমস্যা দূর করতে খেতে পারেন আদা কুচি অথবা আদার রস। দীর্ঘদিন অথবা অতিরিক্ত মাসিক হতে থাকলে আদা কুচি করে মধুর সাথে অথবা হালকা কুসুম গরম পানিতে আদার রস মিশিয়ে কিংবা ঘন ঘন আদা চা পান করতে পারে। আদার রস আপনার মাসিকে ব্লিডিং বন্ধ করতে সাহায্য করবে।
অ্যাপেল সিডার ভিনেগারঃ দীর্ঘ সময় ধরে ব্লিডিং চলতে থাকলে সে ক্ষেত্রে আপনি পান করতে পারেন অ্যাপেল সিডার ভিনেগার। কারণ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার অতিরিক্ত ব্লেডিং বন্ধ করতে সাহায্য করবে। কারণ এখন লিডার ভিনেগারের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি , অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং হরমোনের তারতম রক্ষাকারী উপাদান। দিনে দুই থেকে তিনবার কুসুম গরম পানিতে আপেল সিডার মিশিয়ে পান করুন কয়েকদিন নিয়মিত পান করলে দেখবেন আপনার অতিরিক্ত মাসিকের সমস্যা সেরে যাবে।
আয়রন যুক্ত খাবারঃ শরীরের রক্তশূন্যতা থেকে অতিরিক্ত ব্লিডিং বা অতিরিক্ত
মাসিকের সমস্যা হয়ে থাকে। এ কারনে যদি অতিরিক মাসিকের সমস্যা
থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আইরন সমৃদ্ধ খাবারগুলো গ্রহণ করতে পারেন অথবা ডাক্তারি
পরামর্শ অনুযায়ী শরীরে আয়রনের ঘাটতি থাকে আয়রন ট্যাবলেট সেবন করতে
পারেন।
লাল মরিচ গুড়া ঃ মাসিকের অতিরিক্ত ব্লিডিং বন্ধ করতে সাহায্য
নিতে পারেন লাল মরিচের গুড়ার। লাল মরিচের গুঁড়া রক্ত চলাচল প্রক্রিয়াকে
নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে পাশাপাশি হরমোনাল ব্যালেন্স ঠিক রাখতে সাহায্য করে
আর এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা অতিরিক্ত মাসিক বন্ধের ক্ষেত্রে লালমরিচের
গুড়া অত্যান্ত কার্যকর। হালকা গরম পানিতে লাল মরিচের গুড়া এবং এক চামচ মধু
মিশিয়ে পান করুন এটি আপনার মাসিকের অতিরিক্ত ব্রিডিং বন্ধ করতে সাহায্য করবে।
নারিকেল তেলঃ শুনতে অবাক লাগলেও নারিকেল তেল মাসিকের ব্লিডিং বন্ধ করতে
বিশেষ সাহায্য করে। তাই আপনার যদি অতিরিক্ত মাসিক হওয়ার বা দীর্ঘদিন ধরে মাসিক
হওয়ার সমস্যা থাকে তাহলে সরাসরি নারিকেল তেল খেতে পারলে খুবই ভালো উপকার পাওয়া
যাবে। আর যদি সরাসরি খেতে না চান তাহলে হালকা গরম পানি অথবা চায়ের সাথে মিশিয়েও
নারিকেল তেল খেতে পারেন।
এছাড়াও মাসিকের অতিরিক্ত ব্লিডিং বন্ধ করতে আয়রন যুক্ত খাবারের পাশাপাশি বেশি
বেশি খেতে হবে ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত খাবার। মাসিকে ব্লিডিং বন্ধের জন্য
পান করুন লেবুর শরবত এবং গাজরের জুস এই পানীয় গুলো দ্রুত মাসিক বন্ধ করার
ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাহায্যকারী।
মাসিক বন্ধ করার ঔষধ
অনেক সময় অতিরিক্ত মাসিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে মাসিক বন্ধ করার ঔষধ গুলো প্রয়োজন হতে পারে।তাই আপনাদের জানাব কার্যকরী মাসিক বন্ধ করার ঔষধ। আপনার যদি প্রয়োজন থাকে তাহলে আপনিও এই মাসির বন্ধ করার ঔষধ গুলোর নাম জেনে নিতে পারেন। কারণ আজকে আমরা জানবো মাসিক বন্ধ করার বেশ কিছু হোমিও ও এ্যালোপেথিক ঔষধের নাম। নিচে আপনাদের সুবিধার জন্য মাসিক বন্ধ করার ঔষধ গুলোর নাম তালিকা আকারে দেয়া হলো।
মাসিক বন্ধ করার এলোপ্যাথিক ওষুধঃ মাসিক বন্ধ করার কার্যকরী এলোপ্যাথিক ওষুধ গুলো হল নিম্ন রূপ। তবে এই ওষুধগুলো সেবনের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করে নেবেন এবং ডাক্তারি পরামর্শ মোতাবেক দিনে এক বেলা অথবা দুই বেলা সেবন করবেন।
- Traxyl 500
- Xamic 500
- Intrax
- Bionex 500
- Nexyl 500
- Enclot
- Fibrostat
- Normens 5
- Menogia
- Feminor
- Remens 5
- Mensil N
মাসিক বন্ধ করার হোমিও ঔষধঃ উপরে আমরা মাসিক বন্ধের এলোপ্যাথিক জেনেছি , এবার আমরা মাসিক বন্ধের হোমীওপ্যাথিক কিছু কার্যকরী ঔষধের নাম জানবো। তবে অবশ্যই ঔষধ গুলো সেবনের পূর্বে অভিজ্ঞ কারো মতামত গ্রহণ করবেন।
- থুজা
- সিপিয়া
- চায়না
- পালসাটিল্লা
- ফসফরাস
- বেলেডোনা
- এপিস মেল
- ফেরাম মেট
মন্তব্য , উপরিউক্ত আলোচনার পরে এতক্ষণে নিশ্চয় আপনারা ভালোভাবে মাসিক
বন্ধ করার উপায় ও মাসিক বন্ধ করার ঔষধ সম্পর্কে জেনে নিয়েছেন । মাসিক বন্ধ করার
ঔষধ গুলো জানা থাকলে অবশ্যই এগুলো সেবনের পূর্বে ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করে
নেবেন। আর আপনার যদি মাসিকের সময় অতিরিক্ত ব্লিডিং অথবা নির্দিষ্ট
সময় পরেও মাসিক চলতে থাকে অবশ্যই দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url