ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ - ব্লাড ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায়
ব্লাড ক্যান্সার অত্যন্ত জটিল একটি রোগ। দিন দিন এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তবে এই রোগটি যতই জটিল হোক না কেন কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলে দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব। ব্লাড ক্যান্সার নিয়ে সচেতন করার জন্য আজকে আপনাদেরকে এই পোস্টের মাধ্যমে জানানো হবে ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ, ব্লাড ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায় সম্পৃক্ত বিষয়গুলো।
প্রাণঘাতী এই ব্লাড ক্যান্সার সম্পর্কে আপনি যদি জানতে চান বা ফ্লাট ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে থাকেন তাহলে , এই পোস্টটি অবশ্যই শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে করার জন্য অনুরোধ করছি। কারণ এই রোগে প্রতি বছর বিশ্বের বহু মানুষ আক্রান্ত হয় এবং মৃত্যুবরণ করে। আর এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করার পেছনে মূল কারণ হলো ব্লাড ক্যান্সার সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকা। তাই আজকের এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং ব্লাড ক্যান্সার সম্পর্কে তথ্যগুলো বিস্তারিতভাবে জেনে নিন।
সূচিপত্রঃব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ - ব্লাড ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায় - ব্লাড ক্যান্সার হলে কতদিন বাঁচে
- ব্লাড ক্যান্সার কিভাবে হয়
- ব্লাড ক্যান্সার কত প্রকার
- ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ
- ব্লাড ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায়
ব্লাড ক্যান্সার কিভাবে হয়
ব্লাড ক্যান্সার - ব্যাপক হারে দিন দিন ছড়িয়ে পড়া একটি আতঙ্কের নাম। ব্লাড ক্যান্সারের কোন বয়স নেই যে কোন বয়সে ইতি দেখা দিতে পারে এবং এটি কোন সংক্রমক রোগ নয় । কিন্তু আপনি কি জানেন ব্লাড ক্যান্সার কিভাবে হয়। জানা না থাকলে ,জেনে নিন ব্লাড ক্যান্সার কিভাবে হয়।ব্লাড ক্যান্সার মানে হলো রক্ত কোষের ক্যান্সার। পশ্চিমমোজা ভেতরে তৈরি হয় রক্ত তারপর পর্যায়ক্রমে পরিপক্ক হয়ে এটি রক্তে আসে । যদি পশ্চিমমজ্জায় রক্তপোষ তৈরি অতিমাত্রায় হয় তাহলে এই কোষ গুলো ঠিক মতন পরিপক্ক হতে পারেনা , যার কারণে তৈরি হয় ব্লাড ক্যান্সারে।
ব্লাড ক্যান্সার হওয়ার পেছনে কোন নির্দিষ্ট কারণ পাওয়া না গেলেও বেশ কিছু
সম্ভাব্য কারণ রয়েছে ব্লাড ক্যান্সার হওয়ার। চলুন তাহলে ব্লাড ক্যান্সার কিভাবে
হয় অথবা ব্লাডার হওয়ার কারণগুলো জেনে নেওয়া যায়। ব্লাড ক্যান্সার হওয়ার
সম্ভাব্য কারণগুলো হলো,
- ভাইরাসের আক্রমণ
- বিভিন্ন ধরনের তেজস্ক্রিয় পদার্থের প্রভাব
- ধূমপান এবং কৃত্রিম রং খাদ্য ব্যবহার করা
- রাসায়নিক বর্জ্য এবং কিট নাশক শরীরে প্রবেশ
ব্লাড ক্যান্সার কত প্রকার
ক্যান্সার কত প্রকার তা কি আপনাদের জানা আছে? চলুন আজকে জেনে নেওয়া যাক ব্লাড ক্যান্সার কত প্রকার ও কি কি এই বিষয়টি। ক্যান্সার বা রক্ত কোষের ক্যান্সারকে সাধারণত ৩ ভাগে ভাগ করা হয় যথা ,
- লিউকেমিয়াঃ শ্বেত রক্তকণিকার অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে এই ক্যান্সার হয়ে থাকে।
- লিম্ফোমাঃ অস্থিমজ্জার লিম্ফোসাইট থেকে এ ক্যান্সারের উৎপত্তি হয়।
- মাইলোমাঃ অতি মজ্জার প্লাজমা কষে এই ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়।
ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ
ব্লাড ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা যেহেতু দিন দিন ক্রমাগত হারে বেড়েই চলেছে এই
কারণে ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ গুলো আমাদের জেনে রাখা উচিত। ব্লাড ক্যান্সারের
লক্ষণগুলো জেনে রাখা প্রয়োজন এই কারণে কারণ এই ধরনের বড় বড় বা জটিল অসুখগুলোতে
প্রাথমিক অবস্থাতে কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না , রোগ যখন অনেকটা এগিয়ে যায় তখন
ধীরে ধীরে রোগের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেতে থাকে। তাই আমরা যদি আগে থেকেই ব্লাড
ক্যান্সারের লক্ষণগুলো জেনে রাখি তাহলে যখন এই লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেতে থাকবে তখন
আমরা দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করতে পারব। চলুন তাহলে ব্লাড
ক্যান্সারের লক্ষণগুলো জেনে নেওয়া যাক । ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ গুলো হলো,
- শ্বাসকষ্ট হওয়া
- ত্বক সাদা হয়ে যাওয়া
- মাথা ঘোরা
- হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া
- ঘনঘন জ্বর আসা
- গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া।
- খাদ্যে অরুচি
- শরীরের দুর্বলতা আসা
- কাটা স্থান দিয়ে অতিরিক্ত রক্ত বের হওয়া অর্থাৎ রক্ত জমাট না বাধা
- রক্তশূন্যতা
- দাঁত দিয়ে রক্ত পড়া
- নাক দিয়ে রক্ত পড়া
- লিভার , টনসিল ফুলে যাওয়া
- হাড়ে ব্যথা ও মাংসপেশিতে ব্যথা হওয়া
- ত্বকে র্যাশ বা লাল দাগ হওয়া
- শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
শরীরে এ ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পেলে শুরুতেই উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই , কারণ এই লক্ষণগুলো শুধু ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ নয় আরো বিভিন্ন অসুখের কারণে এই রকম লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তাই এ ধরনের লক্ষণগুলো শরীরে প্রোপার পেলে নিশ্চিত ভাবে ব্লাড ক্যান্সার ভেবে নেওয়ার প্রয়োজন নেই , প্রথমে আপনি একজন ভালো ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা গুলো করানোর পরেই এই ব্যাপারে নিশ্চিত হন।
ব্লাড ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায়
আমরা আগে যেহেতু ব্লাড ক্যান্সারের কারণ গুলো ভালোভাবে জেনে নিয়েছি তাই এবার
আমাদেরকে জানতে হবে , ব্লাড ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায় গুলো। কারণ ব্লাড
ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায় গুলো জানা থাকলে খুব সহজেই আমরা জটিল এবং অনেকাংশে
মরণব্যাধি এই রোগের হাত থেকে পেতে পারিবো। ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হন বা না হন
, ব্লাড ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায় গুলো আমাদের সকলেরই জেনে রাখা প্রয়োজন।
আপনাদের যদি ব্লাড ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায় গুলো জানা না থাকে তাহলে অবহেলা
না করে এখনই এই বিষয়টি জেনে নিন। ব্লাড ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে
আপনাকে বেশ কিছু জিনিসের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে যেমন,
প্রসেস ফুড এবং ফরমালিনযুক্ত খাবারগুলো না খাওয়াঃ আলোচনার মাধ্যমে
আমরা আগেই জেনে নিয়েছি যে প্রসেসফুড ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার একটি
অন্যতম কারণ , এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক পদার্থ মেশানো থাকে। তাই আপনি
যদি ব্লাড ক্যান্সার থেকে মুক্ত থাকতে চান তবে, অবশ্যই এই জাতীয় প্রসেসফুল অথবা
ফরমালিন খাবার গুলো খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার ও কৃত্রিম রং ব্যবহার করা খাবার না খাওয়াঃ ব্লাড
ক্যান্সার থেকে মুক্ত থাকার আরেকটি উপায় হল মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার এবং কৃত্রিম
রং ব্যবহার করা খাবারগুলো না খাওয়া। মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার গুলোর মেয়াদ শেষ
হওয়ার পরে এগুলোর মধ্যে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয় , তাই এই খাবারগুলো খেলে তা
আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক পরিণতি নিয়ে আসতে পারে। শুধু মেয়াদ উত্তীর্ণ
খাবারই নয়, কৃত্রিম রং ব্যবহার করা খাবার গুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত
ক্ষতিকর এবং ব্লাড ক্যান্সার সৃষ্টি করার পেছনে অনেক অংশে দায়ী। তাই এই জাতীয়
খাবার গুলো অবশ্যই এড়িয়ে চলুন।
আরো পড়ুনঃ
পেটে গ্যাস হলে কি কি সমস্যা হয়
রেগুলার চেকআপ ঃ বিভিন্ন সময়ে ব্লাড ক্যান্সার অথবা অন্যান্য
ক্যান্সার গুলো বংশগত কারণেও হয়ে থাকে। তাই আপনার বংশের কারণ যদি ব্লাড
ক্যান্সারে বা অন্যান্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার রেকর্ড থাকে, তাহলে ৬ মাস
অথবা ১ বছর পর পর বডি চেকআপ করানোর ব্যবস্থা করুন। কারণ ওপর থেকে সুস্থ মনে হলেও
এই ধরনের জটিল রোগগুলো শরীরের অভ্যন্তরেই বাসা বাঁধে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে কোন
কোন প্রকাশ পায়না। এই কারণেই বংশের কারো ব্লাড ক্যান্সারের রেকর্ড থাকলে এই
ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন হন এবং রেগুলার চেকআপের ব্যবস্থা করুন।
অস্বাস্থ্যকর খাবার বর্জন করাঃ বিভিন্ন সময় আমরা ব্যস্ততার কারণে , অথবা
আলসেমির কারণে বাজারের অসত্য ফল খাবার বা ভাজাপোড়া এবং ফাস্টফুট জাতীয় খাবারের
ওপরে বেশি ঝুঁকে থাকি। বাইরের এইসব খাবারগুলো মুখরোচক হলেও মোটেও স্বার্থপর নয়।
এই জাতীয় খাবার গুলো শরীরের অন্যান্য জটিলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ক্যান্সারের জন্য
দায়ী। তাই এই ধরনের অশান্তকর খাবারগুলো বর্জন করুন।
টাটকা শাকসবজি ও ফলমূল গ্রহণ করাঃ ব্লাড ক্যান্সার থেকে মুক্ত থাকতে হলে
টাটকা শাকসবজি ও ফলমূল বেশি বেশি খাওয়ার চেষ্টা করব , কারণ টাটকা
শাকসবজি এবং ফলমূলের ভেতর রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। অক্সিডেন্ট
ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে প্রত্যন্ত কার্যকর। তবে অবশ্যই বাজার থেকে আনা সবজিগুলো
আবার পূর্বে ভালোভাবে ধুয়ে নেবেন কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহার করা
হয়ে থাকে, আর এই কীটনাশক গুলো শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
শরীর চর্চাঃ নিয়মিত শরীর চর্চার ফলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকে এবং ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ওষুধ থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত শরীর চর্চার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, এ কারণে প্রতিদিন অন্তত ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হাটাহাটি করা উচিত ।
মন্তব্য, এই প্রশ্নের মাধ্যমে ব্লাড ক্যান্সার সম্পর্কিত
বিভিন্ন তথ্যের সাথে আশা করছি বিষয়ে ধারণা পেয়ে গেছেন। এই পোস্টের মধ্যে যেহেতু ব্লাড ক্যান্সার কিভাবে হয়
এবং ব্লাড ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে আপনারা জেনেছেন সুতরাং, যদি
আপনি ইতিমধ্যেই ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তাহলে সতর্ক হয়ে চলাফেরা এবং
খাওয়া-দাওয়া করুন আর যদি এখন পর্যন্ত আপনি সুস্থ থাকেন তাহলে যেসব কারণে ব্লাড
ক্যান্সার হতে পারে এই কারণগুলো এড়িয়ে চলুন।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url