কোলন ক্যান্সার কোথায় হয় - কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ - কোলন ইনফেকশনের লক্ষণ
কোলন ক্যান্সার অত্যন্ত জটিল এবং প্রাণঘাতী একটি রোগ। প্রতিবছর দিচ্ছে হাজার হাজার নারী পুরুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। প্রাণঘাতী এই কোলন ক্যান্সার থেকে রক্ষা পেতে হলে অবশ্যই জানতে হবে কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ,কোলন ইনফেকশনের লক্ষণ, কোলন ক্যান্সার কোথায় হয় এবং ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায়। আর এই বিষয়গুলো যদি ভালোভাবে জানতে চান তাহলে অবশ্যই এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
যে কোন ক্যান্সারের নাম শুনলেই আমাদের মধ্যে একটা ভয় বা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। ক্যান্সার যদিও একটি আতঙ্কের বিষয় তারপরেও যদি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত বা চিকিৎসা নেওয়া যায় তাহলে কোলন ক্যান্সার থেকে অনেকাংশেই রেহাই বা মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এখন পর্যন্ত অনেকে হয়তো জানেনই না কোলন ক্যান্সার কোথায় হয়, কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ এবং কোলন ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায়। তাই পোস্টের মাধ্যমে সকলকে সচেতন করার জন্য আলোচনা করা হবে, কোলন ক্যান্সার সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়। ঠিক পোস্টের মধ্যে কোলন ক্যান্সার বিষয়ক বিভিন্ন তথ্যের পাশাপাশি কোলন ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো জেনে নিতে পারবেন, তাই আর দেরি না করে সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন।
সূচিপত্রঃ কোলন ক্যান্সার কোথায় হয় - কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ - কোলন ইনফেকশনের লক্ষণ
- কোলন ক্যান্সার কোথায় হয়
- কোলন ক্যান্সার কেন হয়
- কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ
- কোলন ইনফেকশনের লক্ষণ
- মহিলাদের কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ
- কোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায়
- কোলন ক্যান্সার কি নিরাময়যোগ্য
কোলন ক্যান্সার কোথায় হয়
কোলন ক্যান্সার কেন হয় বা কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ এই বিষয়গুলো জেনে নেওয়ার আগে
,আমাদের জানতে হবে কোলন ক্যান্সার কোথায় হয়। আপনি যদি না জানেন তাহলে জেনে নিন
ক্যান্সার কোথায় হবে। কলম ক্যান্সার যেই স্থানটিতে হয় সেই স্থানটির নাম হলো
মলাশয়। আর মলাশয় কি রয়েছে আমাদের পরিপাকতন্ত্রের বৃহদান্ত্রের পরের অংশে যেখান
থেকে শুরু করে পায়ুপথের শেষ পর্যন্ত মলাশয় বিস্তৃত। কোন কারনে এই মোলাশয়
টিউমার দেখা দিল, এই টিউমার ধীরে ধীরে পরবর্তীতে ক্যান্সারে রুপ নেয়। তাহলে
বুঝতেই পারছেন, কোলন ক্যান্সার হয় দেরি নাই নিচে থাকা অংশ মলাশয়ে ক্যান্সার
জটিল একটি রোগ ,বয়স 40 থেকে 50 ফের হলেই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অত্যন্ত
বেড়ে যায়। আশা করি বলুন ক্যান্সার কোথায় হয় এই অংশটুকু পড়ে বুঝতে
পেরেছেন।
কোলন ক্যান্সার কেন হয়
সাধারণত একটু বয়স বেশি হলে কোলন ক্যান্সারে সম্ভাবনা দেখা দেয় , তবে বর্তমানে
আমাদের খাদ্যাভ্যাস এবং অনিয়মতান্ত্রিক চলাফেরার কারণ অল্প বয়স্কদের মধ্যেও কলম
ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা বাড়তে দেখা যাচ্ছে। কোলন ক্যান্সারের প্রতিরোধের
জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের পূর্বে আমাদেরকে অবশ্যই জেনে নিতে হবে কোলন
ক্যান্সার কেন হয় বা কোন ক্যান্সার হওয়ার কারণগুলো। কারণ যখন আমরা কোলন
ক্যান্সার হওয়ার কারণগুলো জানবো তখনই এই রোগ প্রতিহত করার জন্য আগে থেকেই সচেতন
অথবা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবো। আপনার যদি জানা না থাকে কোলন ক্যান্সার কেন হয়
তাহলে এই বিষয়টি অবহেলা না করে এখনই অথবা খুব দ্রুত জেনে নেওয়া উচিত কলম
ক্যান্সার কেন হয় বিষয়টি। চলুন তাহলে করুন ক্যান্সার কেন হয় এই বিষয়টি নিয়ে
আপনাদের সাথে আলোচনা করা যাক।
বংশগত কারণেঃ কোলন ক্যান্সার হওয়ার একটি অন্যতম কারণ হলো বংশগতি।
বংশে যদি কারো কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থাকে তাহলে জিনগত কারণে
এটি বংশ পরম্পরায় সকলের মাঝে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মলদ্বারের বিভিন্ন সমস্যাঃ মলদ্বারের যে কোন সমস্যা থেকে কোলন
ক্যান্সারের সৃষ্টি হতে পারে , যেমন-পাইলস ,ফিস্টূলা ইত্যাদি রোগগুলো থেকে
কোলন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরো পড়ুনঃ
পিত্তথলি পাথর কেন হয় ও পিত্তথলির পাথরের লক্ষণ
কোষ্ঠকাঠিন্যঃ কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থকেও হতে পারে কোলন ক্যান্সার। যারা
অতিরিক্ত রেডমিট যেমন-গরু, ছাগল , মহিষ ইত্যাদির মাংস খায় এবং আঁশযুক্ত
খাবার কম খায়, তাদের ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্যের অসুবিধা বেশি মাত্রায় দেখা যায়
এবং এই জাতীয় মানুষেরা কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকিতে বেশি থাকে।
অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণঃ অস্বাস্থ্যকর এবং ভাজাপোড়া খাবার গ্রহণের ফলে
বাড়তে পারে কোলন ক্যান্সারের যুক্তি। কারণ অস্বাস্থ্যকর খাবার গুলো গ্রহণ করার
ফলে দেখাতে পারে ডায়রিয়া অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য। অনেক সময় ভাজাপোড়া এবং
অস্বাস্থ্যকর খাবার গুলো খাওয়ার ফলে পেটে অতিরিক্ত এসিডিটি হয়ে থাকে আর
অতিরিক্ত এসিডিটি থেকে হতে পারে পেটের আলসার যা পরবর্তীতে রূপ নিতে পারে কোলন
ক্যান্সারে।
এছাড়াও, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস , আলসারেটিভ কোলাইটিস নামক অসুখ ,অতিরিক্ত
ওজন এবং ধূমপানের কারণে তৈরি হয় কোলন ক্যান্সার। আশা করছি কোলন
ক্যান্সার হওয়ার কারণগুলো বুঝতে পেরেছেন।
কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ
প্রতিনিয়ত তরুণ যুবকদের মাঝে কোলন ক্যান্সার বিস্তার লাভ করায় কোলন
ক্যান্সারের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে সকলেরই জেনে রাখা উচিত। কারণ কোলন ক্যান্সারের
লক্ষণ গুলো জানা থাকলে তবেই আমরা সঠিক সময়ে এই রোগের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত
নিতে পারব। যেকোনো বড় বড় রোগের ক্ষেত্রেই দেখা যায় এই রোগ গুলো শরীরের
অভ্যন্তরে নিজেদের অজান্তেই বাসা বাঁধে তাই শুরুতে এরকম কোন লক্ষণ বোঝা না গেলেও
, রোগের একপর্যায়ে এসে বেশ কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। শারীরিক যে সকল পরিবর্তন বা
লক্ষণ গুলোর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন , যে আপনি কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত
হতে পারেন সেই সকল সম্ভাব্য লক্ষণগুলো আজকে আপনাদের সামনে প্রকাশ করা হবে। আপনারা
যদি কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে না জেনে থাকেন এবং জানতে চান তাহলে এর
লক্ষণ গুলো ভালোভাবে জেনে নিন।
কোলন ক্যান্সার সাধারণত মলাশয় বা কোলনের ভেতরে ছোট ছোট পলিপস আকারে মাংসপিণ্ড
হওয়ার মধ্যে দিয়ে ধাপে ধাপে ক্যান্সারে পরিণত হয়। এবং একপর্যায়ে এসে এর কিছু
পরিবর্তন বা লক্ষণ উপলব্ধি করা যায়, কোলন ক্যান্সারের অবস্থান এবং
ক্যান্সারের স্টেজ অনুযায়ী এই রোগের লক্ষণগুলো কিছুটা কম বেশি বা তারতম্য
দেখা দিতে পারে। তবে কোলন ক্যান্সারের সম্ভাব্য লক্ষণগুলো হল,
- ডায়রিয়া হওয়া অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেওয়া
- মলের সাথে কালকে রঙের রক্ত যাওয়া
- মলের সাথে মিউকাস যাওয়া
- মলত্যাগের সময় পেটে ব্যথা অনুভব করা
- লম্বা ফিতার মতন মল বের
- স্বাভাবিকের তুলনায় ওজন কমে যাওয়া
- পেট পরিষ্কার হয়ে পায়খানা না হওয়া
- ঘন ঘন মলত্যাগ করা বা মলের চা আসা
- পেটে ব্যথা
- দুর্বল লাগা
- পেটে পানি জমা
- কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ বমি বমি লাগা
উপরের এই লক্ষণগুলো যেকোনো কারণে শরীরে দেখা দিতে পারে ,তবে যদি আপনার শরীরে হঠাৎ
করে এই ধরনের লক্ষণ দেখেন তাহলে শুরুতেই ভাববেন না গিয়ে বিষয়টি ২-৩ দিন
অবজারভেশনে রাখুন। যদি দেখেন কন্টিনিউয়াসলি এই লক্ষণ গুলো আপনার শরীরের প্রকাশ
পাচ্ছে তাহলে আর দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারি পরামর্শ নিন এবং কোলনে সমস্যা রয়েছে
কিনা চেকআপ করুন।
কোলন ইনফেকশনের লক্ষণ
মানবদেহের কোলন বা মলাশয় প্রায় ৫-৬ ইঞ্চি হয়ে থাকে এবং মাঝে মাঝে মলাশয়
ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে ।কোন কারনে মলাশয় বা কোলনের অভ্যন্তরে
ব্যাকটেরিয়া অথবা ভাইরাস সংক্রামিত হয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করলে তাকে কোলন ইনফেকশন
বলে হয়, কোলনের ইনফেকশন কে বলা হয় কোলাইটিস। কোলন ইনফেকশন সাধারণত অস্বাস্থ্যকর
খাবার এবং তো পানীয় পান করার ফলে হয়ে থাকে। আর এই ইনফেকশন যদি
দীর্ঘদিন মলাশয়ে থাকে তাহলে এখান থেকে সৃষ্টি হয় কোলন ক্যান্সারের মতন
মারাত্মক রোগ। এখন প্রশ্ন হল কোলন ইনফেকশনের লক্ষণগুলো কিভাবে বুঝবেন। বেশ কিছু
উপসর্গের মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার কোলনে ইনফেকশন রয়েছে। আপনার যদি
কোলন ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জানা না থাকে , তাহলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু
নেই এখনই আপনাদের জানিয়ে দেওয়া হবে কোন ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো। তাহলে চলুন জেনে
নেয়া যাক কোলন ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো।
- ঘন ঘন জ্বর আসা
- শরীর ক্লান্ত লাগায় এবং বমি বমি ভাব হওয়া
- রক্তশূন্যতা এবং চামড়া ফ্যাকাসি হয়ে যাওয়া
- শরীরে এবং পেটে ব্যথা করা
- কোলন ফুলে যাওয়া
- পানি শূন্যতা দেখা দেওয়া এবং শরীর নিস্তেজ হওয়া।
- প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া
- পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া
- পেটের বাম পাশে ব্যথা করা
মহিলাদের কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ
কোলন ক্যান্সার সাধারণত পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা গেলেও এটি যে মেয়েদের
হবে না। এমন কিন্তু মেয়েদের তুলনায় পুরুষদের ক্ষেত্রে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি
বেশি থাকে। মেয়েদের ক্ষেত্রেও যেহেতু অল্প হলেও কোলন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি
রয়েছে এই কারণে জেনে রাখা ভালো মেয়েদের কোলন ক্যান্সারের লক্ষণগুলো। এবার
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক মহিলাদের কোলন ক্যান্সারের লক্ষণগুলো। কোলন
ক্যান্সারের এই লক্ষণগুলো ভালোভাবে জেনে নিন এবং এই ধরনের লক্ষণ শরীরে প্রকাশ
পেলে অবহেলা না করে দ্রুত ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করবে। মেয়েদের ক্ষেত্রে কোলন
ক্যান্সারের উপসর্গগুলো খুব একটা আলাদা হয় না, মেয়েদের কোলন ক্যান্সারের উপসর্গ
হিসেবে যেসব লক্ষণ প্রকাশ পায় সেগুলো হলো,
- কোলন ফুলে যাওয়া
- কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা ডায়রিয়া হওয়া
- মলের সাথে কালকে রক্ত যাওয়া
- হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া
- পেট ভারী অনুভব হওয়া
- মাসিক ছাড়া যোনিপথে রক্ত আসা
- জ্বর হওয়া
- পেট ব্যাথা
- দুর্বল লাগা
- পেটে পানি জমা
আরো পড়ুনঃ
এ্যাপেন্ডিসাইটিস ফেটে গেলে কি হয়
মন্তব্য, কোলন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যদি সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে
পারেন তাহলে এর থেকে সম্পূর্ণরূপে নিরাময় সম্ভব। আর সঠিক সময়ে
চিকিৎসা গ্রহণ করার জন্য এই পোস্টের মাধ্যমে করুন ক্যান্সার কোথায় হয় কোলন
ক্যান্সারের লক্ষণ এবং কোলন ইনফেকশনের লক্ষণ সহ আরো বিভিন্ন তথ্য জানিয়ে
দেওয়া হয়েছে। আপনার শরীরে যদি কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ গুলোর বহিঃপ্রকাশ ঘটে
তাহলে অবশ্যই, অবহেলা না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url