বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয় - জন্ডিস এর লক্ষণ কি
জন্ডিস কমন একটি রোগ হলেও, সঠিক সময়ে যদি এই রোগের বিরুদ্ধে চিকিৎসা গ্রহণ না করা যায় তাহলে এর থেকে জটিল এবং মারাত্মক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। জন্ডিসের সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার কোন সময় ও বয়স নেই। রক্তের বিলুরুবিনের মাত্রা বেশি হওয়া জন্ডিসের অন্যতম প্রধান কারণ।
জন্ডিস সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য গুলো জানার জন্য মানুষ বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে থাকে। সকলের কথা চিন্তা করে আজকে এই ছোট পোষ্টের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করছি, সকলের মাঝে অত্যন্ত পরিচিত একটি সমস্যা জন্ডিস এর লক্ষণ কি , বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয় এই বিষয়গুলো। এছাড়াও এই প্রশ্নের মাধ্যমে জন্ডিস সম্পর্কে আরো বিভিন্ন ধরনের তথ্য পেয়ে যাবেন যেমন- জন্ডিস কি বাহিত রোগ, জন্ডিস কি ভাইরাসজনিত রোগ ইত্যাদি বিষয়ে সম্পর্কে। চলুন তাহলে আর দেরি না করে জন্ডিস বিষয়ক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো জেনে নেয়া যাক।
সূচিপত্রঃ বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয় - জন্ডিস এর লক্ষণ কি - জন্ডিস হলে কি ঔষধ খাব
- জন্ডিস কি
- জন্ডিস কেন হয়
- জন্ডিস কত প্রকার
- জন্ডিস এর লক্ষণ কি
- জন্ডিস কি বাহিত রোগ
- জন্ডিস কি ভাইরাসজনিত রোগ
- বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়
জন্ডিস কি
জন্ডিস এই নামটির সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত এবং অনেকে এই রোগটির দ্বারা আক্রান্ত
হয়েছি। কিন্তু আমরা কি সঠিক ভাবে জানি জন্ডিস আসলে কি। আমরা অনেকেই জন্ডিসকে রোগ
হিসেবে জানলেও এটি আসলে কোন রোগ নয় , এটি হলো রোগের উপসর্গ বা লক্ষণ। রক্তে
বিলিরুবিনের মাত্রা যখন বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন আমাদের শরীর অথবা চোখ ,নখ , চামড়া
হলুদ হতে শুরু করে সাধারণত এই পরিস্থিতিটি আমাদের মাঝে জন্ডিস হিসেবে পরিচিত। আরো
সহজভাবে জন্ডিস কি এই প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয় -রক্তের লোহিত কণিকা ভেঙ্গে গিয়ে
বিলুরুবিনের বাড়ার ফলে , সম্পূর্ণ শরীরসহ প্রস্রাবের রং হলুদ হয়ে যাওয়ার নামই
হলো জন্ডিস।
জন্ডিস কেন হয়
আপনারা কি সঠিকভাবে জানেন জন্ডিস কেন হয়? জন্ডিস এর সমস্যার সাথে ছোট বড় আমরা
প্রায় সকলেই পরিচিত। কারণ এই রোগের কোন বয়স নেই। নারী পুরুষ নির্বিশেষে যে কোন
সময় যে কোনো বয়সের মানুষ এই জন্ডিস রোগে আক্রান্ত হতে পারে। অনেকেরই জন্ডিস কেন
হয় জানা না থাকার কারণে ,আজকে আপনাদেরকে জন্ডিস কেন হয় এ বিষয়টি জানাবো। চলুন
তাহলে সহজ ভাবে জেনে নেওয়া যাক জন্ডিস কেন হয়।
আমাদের রক্তে দুই ধরনের ব্লাড সেল থাকে, এগুলো হলো - Red blood cells এবং
White blood cells. একটি নির্দিষ্ট সময় পরে রক্তের Red blood cells গুলো ভেঙ্গে
গিয়ে বিলু রবিনের তৈরি হয় , এবং এই বিলুরুবিন লিভারের মাধ্যমে তো পিত্তরসের
সাহায্যে পিত্তনালীর মধ্যে দিয়ে পরিপাকতন্ত্রে এবং পরিপাকতন্ত্র থেকে পায়খানা
বা মলের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। তবে সঠিকভাবে যদি এই বিলুরুবিন শরীর
থেকে বের হতে না পারে তাহলে ,শরীরে এর মাত্রা বেড়ে গিয়ে দেখা দেয় সকলের কাছে
পরিচিত জন্ডিস নামক রোগের সমস্যা। সাধারণত লিভারের প্রদাহ থেকে জন্ডিস হয়। তবে
আরও বিভিন্ন কারণে জন্ডিস হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ
পিত্তথলির পাথর কেন হয় ও পিত্তথলির পাথরের লক্ষণ
বংশগত কারণে , থ্যালাসিমিয়া রোগ থেকে , হিমোগ্লোবিনের সমস্যা থাকলে , পিত্তথলিতে
পাথর থাকল, শরীরে টিউমার বা ক্যান্সার থাকলে জন্ডিস হতে পারে। লিভারের প্রদাহ বা
অন্যান্য সমস্যার কারণে জন্ডিসের সমস্যাটি বেশি দেখা যায়, তবে শুধুমাত্র যে
লিভারের সমস্যার জন্য জন্ডিস হবে বিষয়টি এমন নয়। আমাদের মধ্যে অনেকেরই এই ভুল
ধারণাটি রয়েছে যে শুধুমাত্র লিভারের সমস্যা থেকে জন্ডিস হয়।
জন্ডিস কত প্রকার
জন্ডিসেরও কয়েকটি ধরন বা প্রকারভেদ রয়েছে, আপনার কি জানা আছে জন্ডিস কত প্রকার? এক এক ধরনের জন্ডিসের তীব্রতা এবং জন্ডিসের কারণ এক এক রকম। চলুন আজকে জেনে নেওয়া যাক জন্ডিস কত প্রকার ও কি কি সেগুলো। জন্ডিস মূলত তিন প্রকার , যথা
হেমোলাইটিক জন্ডিসঃ শরীরে যখন রেড ব্লাড সেল বা RBC বেড়ে যায় তখনই শরীরে দেখা দেয় হেমোলাইটিক জন্ডিস।
হেপাটোসেলুলার জন্ডিসঃ হেপাটোসেলুলার জন্ডিস তৈরি হয় লিভার প্রদাহ থেকে। কোন কারনে যখন লিভারের কোষগুলো আক্রান্ত হয় এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে , তখন হেপাটোসেলুলার জন্ডিস দেখা দেয়।
অবস্ট্রাক্টিভ জন্ডিসঃ পিত্তথলিতে পাথর বা অন্য কোন সমস্যার কারণে পিত্তরস বের
হতে না পারলে অ্যাবস্ট্রাক্টিভ জন্ডিস হয়।
জন্ডিস এর লক্ষণ কি
আমাদের দেশসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি দেশে জন্ডিস রোগটি ব্যাপক হারে দেখা দেয়। যেহেতু যেকোনো বয়সের মানুষ যেকোনো সময় এই জন্ডিস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে তাই এর ব্যাপারে আমাদের সকলকে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আর সচেতন হওয়ার জন্য অবশ্যই আমাদেরকে জানতে হবে জন্ডিস এর লক্ষণ কি সেগুলো। জন্ডিস এর লক্ষণ কি তা যদি আপনার সঠিকভাবে জানা না থাকে তাহলে, অবশ্যই আপনার জেনে রাখা প্রয়োজন জন্ডিস এর লক্ষণ কি এ বিষয়টি। চলুন আজকে জন্ডিসের লক্ষণ কি কি এগুলো নিয়ে সঠিক একটি ধারণা নেয়া যাক। আমাদের মধ্যে অনেক মানুষের মধ্যেই বদ্ধমূল একটি ধারণা রয়েছে যে জন্ডিস আক্রান্ত হলে ত্বক এবং প্রস্রাব হলুদ হবে। এগুলো জন্ডিসের লক্ষণ গুলোর মধ্যে থাকলেও, শরীর হলুদ হওয়া জন্ডিসের একমাত্র লক্ষণ নয়। জন্ডিসের প্রধান লক্ষণ গুলো হল -
- চোখ হলুদ হওয়া
- প্রস্রাব হলুদ হওয়া
- হাতের নখ হলুদ হয়ে যাওয়া
- সমগ্র শরীর এবং ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়
এগুলো ছাড়াও জন্ডিস হলে যে সব ছোটখাট উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে পারে সেগুলো নিচে একে একে তুলে ধরা হলো।
- জ্বর হওয়া
- পায়খানার রং পরিবর্তন হওয়া
- তলপেটে এবং নাভির আশেপাশে ব্যথা করা
- শরীর দুর্বল লাগা
- বমি বমি ভাব
- লিভার শক্ত হয়ে যাওয়া
- শরীরে এলার্জির মতন চুলকানি হওয়া
- ক্ষুধা মন্দা বা খাদ্যে অরুচি দেখা দেওয়া
- পায়ে ব্যথা হয়
- ওজন কমে যায়
জন্ডিস কি বাহিত রোগ
জন্ডিস কি বাহিত রোগ সে সম্পর্কে কি আপনার জানা আছে যদি জানা না থাকে তাহলে
উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই এখনই আপনাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হবে জন্ডিস কি বাহিত রোগ
এই বিষয়টি। কারণ জন্ডিস কি বাহিত রোগ জানা থাকলে তবেই আমরা যে যে মাধ্যমগুলো
থেকে জন্ডিস ছড়াই সেগুলো সম্পর্কে সচেতন হতে পারব এবং জন্ডিস থেকে নিরাপদে থাকতে
পারবে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক জন্ডিস কি বাহিত রোগ।
আরো পড়ুনঃ
কিসমিসের উপকারিতা
জন্ডিস মূলত এক ধরনের পানি বাহিত রোগ। দূষিত বা অস্বাস্থ্যকর পানি পানের ফলে এবং
রান্না বা বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের ফলে, এটি যদি কোন ভাবে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে
তাহলে এই দূষিত পানির মাধ্যমে জন্ডিসের জীবাণু আমাদের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। দূষিত
পানির মাধ্যমে বা পানিবাহিত রোগ হওয়ার কারণে বিশেষ করে বর্ষাকালে এই রোগের
প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায় তবে বছরের যে কোন সময়ই মানুষ জন্ডিস দ্বারা আক্রান্ত
হতে পারে
জন্ডিস কি ভাইরাস জনিত রোগ
জন্ডিস যে একটি পানিবাহিত রোগ এই বিষয়ে আমরা জেনে নিয়েছি এবার জানবো
জন্ডিস কি ভাইরাস জনিত রোগ কিনা। আমাদের মধ্যে অনেকেরই জানা রয়েছে যে জন্ডিস
পানিবাহিত রোগ কিন্তু অনেকেই জানেন না এটি ভাইরাস বাহিত কিনা। এই কারণে অনেক সময়
হবে আমরা জানার চেষ্টা করে থাকি জন্ডিস কি ভাইরাস জনিত রোগ ?
পানি বাহিত রোগ হওয়ার পাশাপাশি জন্ডিস এক ধরনের ভাইরাসজনিত রোগও ঘটে। মূলত
হেপাটাইটিস ভাইরাস গুলোর কারণে জন্ডিস হয়। আর হেপাটাইটিস ভাইরাস গুলোর মধ্যে
রয়েছে,
- হেপাটাইটিস এ
- হেপাটাইটিস বি
- হেপাটাইটিস সি
- হেপাটাইটিস ই
জন্ডিস সাধারণত হেপাটাইটিস এ এবং হেপাটাইটিস ই ভাইরাসের কারণে বেশি দেখা
যায়। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকলেও ধীরে
ধীরে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তবে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের
আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা খুবই নগণ্য বা রেয়ার।
বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়
আমরা আলোচনার মধ্যে দিয়ে এটা পরিষ্কারভাবে জানতে পেরেছি যে রক্তের বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে জন্ডিস হয়।রক্তে বিলিরুবিনের ঘনত্বের স্বাভাবিক মাত্রা হলো 1.2 mg/dl বা এর নিচে , কিন্তু যদি বিলিরুবিনের ঘনত্বের এই স্বাভাবিক মাত্রা বেড়ে গিয়ে যদি 3 mg/dl বা তার বেশি হয়ে যায় তখনই দেখা দেয় জন্ডিস। আর বিলিরেবিনের মাত্রা যত বাড়তে থাকে, শরীর ,চোখ এবং প্রসাব তত হলুদ হতে থাকে ও জন্ডিসের উপসর্গ গুলো তীব্রভাবে প্রকাশ পেতে থাকে।
মন্তব্য, জন্ডিস একটি সাধারণ রোগ হলেও অবহেলা বা সঠিক চিকিৎসার অভাবে যেহেতু এটি
মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বা প্রাণঘাতী রোগের সৃষ্টি করতে পারে এজন্য
জন্ডিসকে অবহেলা না করে সতর্ক হোন এবং জন্ডিস থেকে দূষিত পানি ব্যবহার
এবং খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। আশা করছি জন্ডিস এর লক্ষণ সম্পর্কিত এই পোস্টটির
মাধ্যমে জন্ডিসের ব্যাপারে বিভিন্ন তথ্য পেয়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন এবং বুঝতে
পেরেছেন জন্ডিস হলে কি ঔষধ খাব।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url