বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম - বিতর নামাজের নিয়ত - দোয়া কুনুত বাংলা
প্রত্যেকটি মুসলমান নর-নারীর ওপরে বিতরের নামাজ ওযাজিব। আর ওয়াজিবের মর্যাদা হলো ফরজের কাছাকাছি। সুতরাং বুঝতেই পারছেন ভেতরের নামাজকে কোনভাবেই ছেড়ে দেওয়া যাবে না আর যদি আমরা বিতরের নামাজ ছেড়ে দেই তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে কঠিন গুনাগার হতে হবে। তাই সঠিকভাবে বিতের নামাজ পড়ার জন্য আজকে আমরা বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম , বিতর নামাজের নিয়ত এবং তোর নামাজ পড়ার জন্য দোয়া কুনুত বাংলা জানবো।
সূচিপত্রঃ বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম - বিতর নামাজের নিয়ত - দোয়া কুনুত বাংলা
- বিতর নামাজের ইতিহাস
- বিতর নামাজ কয় রাকাত
- বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম
- বিতর নামাজের নিয়ত
- দোয়া কুনুত বাংলা
- দোয়া কুনুত অর্থ
বিতর নামাজের ইতিহাস
আজকে আপনাদের বিতর নামাজ পড়ার পড়া নিয়ম ও নিয়ত জানানোর আগে , বিতর নামাজের ইতিহাস সম্পর্কে জানাবো। অনেকেই হয়তো বিতর নামাজের ইতিহাস অর্থাৎ আমাদের প্রিয় নবী কখন এই নামাজ পড়েছিলেন সেটি জানেন না , কিন্তু এ বিষয়টি আমাদের জেনে রাখা উচিত তাই চলুন আজকে জেনে নেওয়া যাক বিতর নামাজের ইতিহাস সম্পর্কে।আমাদের নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ নামা্য পড়েছিলেন। কেতাবে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ২৭ রজব মে'রাজের রাত্রিতে বাইতুল মোকাদ্দাসে গিয়ে যখন সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরামগণের সঙ্গে দু'রাকাত নামায আদায় করলেন তখন হযরত মুসা (আঃ) আমাদের নবী করীম (সাঃ) কে বললেন, " আপনি যখন 'সিদরাতুল মুনতাহায়' যাবেন তখন আমার জন্য এক রাকাত নামা্য পড়বেন।"
নূর নবী (সাঃ) উহা স্বীকার করে যখন সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছালেন তখন ওয়াদা পূর্ণ করার নিয়তে এক রাকাত নামাযে আরম্ভ। পরে ঐ সঙ্গে নিজের জন্য আরো এক রাকাত নামা্য পড়লেন। তৎপর আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে আরো এক রাকাত নামা্য পড়লেন। শেষ রাকাতে আপন থেকেই তাহরীমা খুলে গেলে তিনি পুনঃ তাকবীরে তাহরীমা বলে দোয়া কুনুত পড়ে নামা্য আদায় করলেন। যেহেতু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াদা পুর্ণ করার জন্য এ নামায পড়েছিলেন, সেহেতু আমরা তার উম্মত বলে আমাদের ওপর এ নামায পড়া "ওয়াজিব" হয়েছে। আর এ নামায পৃথক পৃথক পড়েছিলেন বলে এ নামাযের নাম হয়েছে বেতরের নামায। (নোফেউল মোমেনীন)
বিতর নামাজ কয় রাকাত
আজকে আমরা বিতর নামাজ কয় রাকাত এই বিষয়টি জানার চেষ্টা করতে কারণ অনেকের মধ্যেই
বিতর নামাজের যাকাত সংখ্যা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। বিতর নামাজ হলো বিজোড় সংখ্যার
নামাজ। বিভিন্ন জনের মত অনুসারে বিতর নামাজ ১,৩ ,৫, রাকাত পড়ার কথা শোনা যায়।
তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ওলামায়ে কেরামগণ বিতরের নামাজ ৩ রাকাত বলেই জানতে
পারা যায়। আবু সালমা ইবনে আব্দুর রহমান এর বর্ণনা থেকে জানতে পারা যায় যে
-তিনি কোন এক সময় হযরত আয়েশা (রা) এর কাছে জানতে চান নবীজির নামাজ
কেমন হতো? এই প্রশ্নের উত্তরে আয়েশা (রা) বলেন ,রাসূলুল্লাহ (সা) রমজানে
এবং রমজানের পরবর্তী সময়ে ১১ রাকাতের বেশি পড়তেন না। তিনি বলেন প্রথম এবং
দ্বিতীয় চার রাকাতের সৌন্দর্য ও তার সম্পর্ক বলা বাহুল্য এবং এরপর নবীজি তিন
রাকাত বিতর নামাজ পড়তেন (সহীহ বুখারী; ১৫৪, সহীহ মুসলিম;২৫৪ , সুনানে
নাসায়ি;২৪৮)
আরো পড়ুনঃ
তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও নিয়ম
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস এক রাতের ঘটনা বর্ণনা করে বলেন - নবীজি বিছনা ছেড়ে
উঠে যান মেসওয়াক করেন এবং তারপর দুই রাকাত নামাজ পড়ে, এরপর নবীজি শুয়ে
পড়েন তারপর আবার কিছুক্ষণ পরে যান মেসওয়াক করেন এবং আবার দুই রাকাত নামাজ
পড়েন। এভাবে নবীজি ছয় রাকাত নামাজ পড়েন এবং তারপর তিন রাকাত বিতের নামাজ আদায়
করেন (সুনানে নাসায়ি ;২৪৯ , মুসনাদে আহমদ; ৩৫০ ,)
বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম
বিতরের নামাজ পড়া প্রত্যেক নর-নারীর উপরে ওয়াজিব। তাই এই ওয়াজিব পালনের জন্য আমাদের অবশ্যই জানতে হবে বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম। এই কারণে যারা বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম জানেন না। তাদের উচিত অবশ্যই বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম জেনে নেয়া। কারণ যেহেতু বিতর নামাজ আমাদের উপরে ওয়াজে এ কারণে যদি আমরা এই নামাজ ছেড়ে দেই তাহলে অবশ্যই আমাদের কঠিন গুনাগার হতে হবে। তাই চলুন আজকে বিকেল নামাজ পড়ার নিয়ম জেনে নেওয়া যাক। বেশিরভাগ ওলামায়ে কেরামদের মতে বিতরের নামাজ তিন রাকাত পড়া উচিত। তাই আজকে আমরা তিন রাকাত বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে জানবো।
এশার নামাজের পরে তিন রাকাত বিতরের নামাজের নিয়ত করতে হয় এরপর অন্যান্য
নামাজের নিয়মেই পুরুষ হলে কানের লতি পর্যন্ত এবং মহিলা হলে কাঁধ পর্যন্ত
হাত উঠিয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলে হাত বাঁধতে হবে। হাত বাধার সময় পুরুষেরা নাভির
ওপরে এবং মহিলারা বুকের উপরে হাত বাঁধবে। এরপর নামাজের নিয়ম অনুযায়ী প্রথম
রাকাতে সানা , আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ সহকারে সূরা ফাতিহা এরপর অন্য একটি সূরা
অথবা কুরআনের যেকোনো তিন আয়াত পাঠ করে রুকুতে যেতে হবে। রুকুর তাসবিহ পড়ার পরে
রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে , রুকু থেকে ওঠার সময় -সামি আল্লাহু
লিমান হামিদা এবং রুকু থেকে দাঁড়িয়ে বলতে হবে -রাব্বানা লাকাল হামদ।
এরপর সিজদায় গিয়ে সেজদার তাসবিহ , সেজদা থেকে উঠে দুই সেজদার মাঝখানের দোয়া
পড়ে দ্বিতীয় সেজদায় যেতে হবে। তারপর সেজদা থেকে সোজা উঠে দাঁড়িয়ে পূর্বের
নিয়মে সূরা ফাতিহা, অন্য সূরা অথবা কোরআনের সর্বনিম্ন ৩ আয়াত পাঠ
করে রুকু এবং সেজদা করতে হবে। দ্বিতীয় রাকাতে সেজদার পরে প্রথম বৈঠকে বসে
আত্তাহিয়াতু পাঠ করতে হবে এবং তৃতীয় রাকাতের জন্য উঠে দাঁড়িয়ে , পুনরায় সূরা
ফাতিহা , অন্য কোন সূরা অথবা কুরআনের তিন আয়াত পাঠ করতে হবে এবং এরপর দোয়া
কুনুত পড়তে হবে। যদি কারো দোয়া কুনুত মুখস্ত না থাকে তাহলে সে দোয়া কুনুতের
পরিবর্তে সূরা ইখলাস তিনবার পড়তে পারবে অথবা নিচের দোয়াটি পড়বে,
'রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনয়া হাছানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাছানাতাওঁ ওয়াকিনা আযাবান্নার' । এই দোয়াটি পড়ার পরে তিনবার 'আল্লাহুম্মাগ ফিরলি' ও তিনবার 'ইয়া রাব্বি' পড়ে রুকু , সেজদা এবং শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়াতু, দরুদ , দোয়া মাসুরা পড়ার পরে সালাম ফিরানোর মাধ্যমে বিতরের নামাজ শেষ করতে হবে। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যাদের দোয়া কুনুত মুখস্ত নেই, তারা খুব তাড়াতাড়ি দোয়া কুনুত মুখস্ত করে ,বিতর নামাজ দোয়া কুনুত এর মাধ্যমে আদায় করবেন।
বিতর নামাজের নিয়ত
বিতর নামাজ পড়ার পূর্বে আমাদের অবশ্যই বিতর নামাজের নিয়ত জেনে নেওয়া উচিত।
অনেকে বিতর নামাজের নিয়ত জানা নাও থাকতে পারে। তাই আপনাদেরকে আজকে বিতর নামাজের
নিয়ত বাংলায় এবং এর অর্থ জানাবো। আপনারা যারা বিতর নামাজের নিয়ত জানেন না তারা
অবশ্যই বিতর নামাজের নিয়ত জেনে নিন। আপনাদের সুবিধার জন্য নীচে বিতর নামাজের
নিয়ত বাংলায় এবং এর অর্থ দেয়া হলো।
দোয়া কুনুত বাংলা
আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা ঠিক মতন কোরআন তেলাওয়াত বা আরবি পড়তে পারেন না। তাদের জন্য আরবীতে লেখা দোয়া গুলো পড়া বা মুখস্ত করা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাই তাদের কথা চিন্তা করে আজকে আপনাদেরকে জানাবো দোয়া কুনুত বাংলা। এই পোষ্টের মাধ্যমে শেয়ার করা দোয়া কুনুত বাংলা দেখি আপনি খুব সহজে এটিএম গুরুত্বপূর্ণ করতে পারবেন এবং ভেতরের নামাজ পড়ার সময় দোয়া কুনুত কোন দোয়া পড়তে হবে না। তাই চলুন , ভালোভাবে জেনে নিন দোয়া কুনুত বাংলা।
আরো পড়ুনঃ
সালাতুল তসবিহ নামাজের নিয়ম
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url