গনোরিয়া রোগ থেকে মুক্তির উপায় - মহিলাদের গনোরিয়ার লক্ষণ
গনোরিয়া হল ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রামিত জটিল এক ধরনের যৌন রোগ। এই রোগ থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই এই রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানতে হবে ও সচেতন হতে হবে। আর তাই এই রোগ সম্পর্কে জানতে এবং অন্যকে জানাতে এই পোষ্টের মাধ্যমে আজকে আমরা আলোচনা করব গনোরিয়া রোগ থেকে মুক্তির উপায় এবং মহিলাদের গনোরিয়ার লক্ষণ।
আপনাদের সচেতনতা এবং সাবধানতা বৃদ্ধির জন্য এই পোস্টে গনোরিয়া রোগ থেকে মুক্তির উপায় ও মহিলাদের গনোরিয়ার লক্ষণ এর পাশাপাশি আরো আলোচনা করা হবে গনোরিয়া রোগের কারণ , পুরুষদের গনোরিয়া রোগের লক্ষণ গনোরিয়া হলে কি কি সমস্যা হয় এবং গনোরিয়া রোগের ঔষধ সম্পর্কে। এই জটিল রোগ সম্পর্কে সচেতন ও সাবধান হতে হলে অবশ্যই আপনার এই বিষয়গুলো জেনে রাখা প্রয়োজন , আর গনোরিয়া বিষয়ক এই সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো জানতে হলে অবশ্যই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
সূচিপত্রঃ গনোরিয়া রোগ থেকে মুক্তির উপায় - মহিলাদের গনোরিয়ার লক্ষণ
- গনোরিয়া রোগের কারণ
- পুরুষদের গনোরিয়া রোগের লক্ষণ
- মহিলাদের গনোরিয়ার লক্ষণ
- গনোরিয়া রোগ থেকে মুক্তির উপায়
- গনোরিয়া কি ভালো হয়
- গনোরিয়া হলে কি কি সমস্যা হয়
- গনোরিয়া রোগের ঔষধ
- গনোরিয়ার ছবি
গনোরিয়া রোগের কারণ
গনোরিয়া হলো এক ধরনের যৌনবাহিত সংক্রামক রোগ। নারী পুরুষের অবাধ যৌন মিলনের ফলে
এই রোগ একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে সংক্রান্ত হয়। আজকে আমরা গনোরিয়া রোগের কারণ
সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানার চেষ্টা করবো। কারণ অধিকাংশ মানুষই গনোরিয়া
রোগের কারণ গুলো জানেন না।গনোরিয়া রোগ হওয়ার পেছনে দ্বায়ী এক ধরনে
ব্যক্টেরিয়া আর এ ব্যক্টেরিয়ার নাম হল Neisseria Gonorrhoeae এবং এই রোগের
জীবাণুর নাম হল Gonococcus.যৌন মিলন বা শারীরি সম্পর্কের সময় আক্রান্ত
ব্যক্তির বহিযৌনাঙ্গ,মুখ ,পায়ু থেকে এই রোগের জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে। পুরুষ
যদি গনোরিয়া রোগে আক্রান্ত হয় ,তাহলে তার সাথে যৌন সম্পর্কে মাধ্যমে
একজন মহিলা খুব সহজেই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে । তবে ,যদি
মহিলা আক্রান্ত হয় তাহলে তার সাথে যৌন সম্পর্ক করলে পুরুষের আক্রান্ত
হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে।
পুরুষদের গনোরিয়া রোগের লক্ষণ
গনোরিয়া রোগের জীবাণু শরীরের প্রবেশ করা মাত্রই এর লক্ষণ প্রকাশ পায় না।যৌন বা
শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে এই রোগের জীবাণু শরীরের প্রবেশ করার প্রায় ৭
থেকে ১৪ দিনের মধ্যে এর লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে। পুরুষেরা গনোরিয়া রোগে
আক্রান্ত হলে বেশ কিছু শারীরিক লক্ষণ প্রকাশ পায়। আমরা আজকে পুরুষদের গনোরিয়া
রোগের লক্ষণ গুলো জানবো। পুরুষদের গনোরিয়া রোগের লক্ষণ গুলো নিচে একে একে তুলে
ধরা হলো,
- জ্বর এবং জ্বর জ্বর ভাব হওয়া
- লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া ও ব্যথা হওয়া
- স্কিনে ক্ষতের সৃষ্টি হওয়া
- মস্তিষ্কে প্রদাহ
- কোন কোন ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডেও ক্ষত হতে পারে
- বীর্জের সাথে রক্ত যাওয়া
- পেনিসের অগ্রভাগে লাল ও চুলকানি হওয়া
- পেনিসের মাথায় পুঁজ হওয়া
- পেনিসে জ্বালাপোড়া
- ঘন ঘন প্রসাবের বেগ আসা
- পয়ুপথে ব্যথা হওয়া, বিশেষকরে মলত্যাগের সময়
মহিলাদের গনোরিয়ার লক্ষণ
উপরের আলোচনায় আমরা পুরুষদের গনোরিয়া রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জেনেছি , এবার আমরা
মহিলাদের গনোরিয়ার লক্ষণ গুলো জেনে নিব। যদিও পুরুষদের তুলনায় মহিলারা এই রোগে
আক্রান্ত তুলনামূলকভাবে কম হয় , তারপরেও মহিলাদের গনোরিয়ার লক্ষণ গুলো আমাদের
জেনে রাখা উচিত। গনোরিয়া অত্যন্ত জটিল এক ধরনের যৌনবাহিত রোগ , এই রোগে আক্রান্ত
মায়ের থেকে শিশু জন্মগ্রহণ করলে সেই শিশুকে অপথালমিয়া নিওন্যট্রাম নামক চোখের
প্রদাহ নিয়ে জন্মাতে দেখা যায়। বেশিরভাগ মানুষের মহিলাদের গনোরিয়ার লক্ষণ গুলো
জানেন না , সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অবশ্যই এই রোগের লক্ষণ গুলো জেনে রাখা উচিত।
যারা মহিলাদের গনোরিয়ার লক্ষণ গুলো জানেন না তারা এই পোস্টটির মাধ্যমে বিষয়টি
ভালোভাবে জেনে নিতে পারেন । মহিলাদের গনোরিয়ার লক্ষণ গুলো হল,
আরো পড়ুণ ঃ কতটুকু সাদা স্রাব হওয়া স্বাভাবিক
- যোনি লালা ও থকথকে ঘা
- অনিয়মিত মাসিক
- মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা
- ডিম্বনালী পুঁজে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠা
- সন্তান ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়া
- অতিরিক্ত সাদা ও হলুদ স্রাব নিঃসৃত হওয়া
- প্রসাবে যন্ত্রণা হওয়া
- ঘন ঘন প্রস্রাবের তীব্র চাপ অনুভব হওয়া
- মস্তিষ্কের প্রবাহ
- ত্বকে এবং হৃদপিন্ডের ক্ষতের সৃষ্টি হওয়া
- পায়ুপথে তীব্র ব্যথা ও প্রদাহ এবং এর সাথে রক্তক্ষরণ হওয়া
গনোরিয়া রোগ থেকে মুক্তির উপায়
চলুন এবার আমরা আলোচনা করি ও জেনে নেই গনোরিয়া রোগ থেকে মুক্তির উপায়
সম্পর্কে।গনোরিয়া নামক এই জটিল রোগ থেকে বাঁচার জন্য আমাদেরকে সতর্কতা এবং
সচেতনতা বাড়াতে হবে বহু গুনে। এছাড়াও গনোরিয়া থেকে বাঁচতে অবশ্যই নারী
পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধ করতে হবে এবং যৌন সঙ্গী নির্বাচনে সতর্ক
করতে হবে।যৌন মিলনের সময় কনডম ব্যবহার করতে হবে।যৌন মিলনের ক্ষেত্রে ধর্মীয়
সামাজিক গুলো মেনে চলতে হবে। বিবাহের পূর্বে অবশ্যই ছেলেমেয়ে উভয়েরই DVRL
টেস্ট হবে এবং রিপোর্ট নেগেটিভ না হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।মাসিকের সময়
অবশ্যই নিরাপদ স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাড ব্যবহার এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন
থাকতে হবে। সকল শ্রেণীর মানুষসহ পতিতাদের এই রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে
জানাতে হবে এবং বহুগামীতা পরিহার করতে হবে। এক কথায় বলা যেতে পারে , সামাজিক
সচেতনতাই হলো গনোরিয়া রোগ থেকে মুক্তির উপায় । আশা করছি গনোরিয়া রোগ থেকে
মুক্তির উপায়।
গনোরিয়া কি ভালো হয়
গনোরিয়া নামক এই জটিল রোগটি সম্পর্কে সকল খুঁটিনাটি তথ্য গুলো আমাদের
জেনে রাখা উচিত, তাই আলোচনার এই পর্যায়ে আমরা গনোরিয়া কি ভালো হয় এই প্রশ্নের
উত্তর জানবো। কারণ অনেকের মনের মধ্যে গনোরিয়া কি ভালো হয় ? এই প্রশ্নটি
জানতে পারি জাগতে পারে , তাই আজকে আমরা এর সঠিক উত্তর জানব। হ্যাঁ , সঠিক সময়ে
যদি সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা যায় তাহলে গনোরিয়া রোগ থেকে সম্পূর্ণরূপে
সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব । হোমিও ও এলোপ্যাথি দুই ধরনের পদ্ধতিতেই এই গনোরিয়ার
সফল চিকিৎসা সম্ভব। তাই , গনোরিয়া রোগ হলে ভীত এবং সংকোচ বোধ না
করে দ্রুত এই রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করুন এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা
শুরু করুন।
গনোরিয়া হলে কি কি সমস্যা হয়
গনোরিয়া একটি জটিল রোগ হলেও সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে এই রোগ থেকে
মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আর সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করার জন্য আমাদের জেনে রাখতে
হবে গনোরিয়া লক্ষণ এবং করণদিয়া হলে কি কি সমস্যা হয় এ সকল বিষয়গুলো। যেহেতু
আমরা আগে গনোরিয়ার লক্ষণ সম্পর্কে জেনেছি তাই এবার আমরা জেনে নেব হলে কি কি
সমস্যা হয়। নারী ও পুরুষদের ক্ষেত্রে গনোরিয়া রোগ হলে যে যে সমস্যা হয় সেগুলো
হলো,
আরো পড়ুন ঃ
জরায়ু বড় হওয়ার কারণ
- জ্বর হওয়া
- মাথাব্যথা
- ত্বকে ওহৃৎপিণ্ডের ক্ষতের সৃষ্টি
- ঘন ঘন প্রসাবের তীব্র চাপ
- পায়ুপথে প্রদাহ , ব্যথা ও রক্তক্ষরণ
- মহিলাদের ক্ষেত্রে যোনীতে ঘা , অনিয়মিত মাসিক , মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা , ডিম্বোনালীতে পুঁজ , অতিরিক্ত সাদা ও হলুদ স্রাব।
- পুরুষদের ক্ষেত্রে পেনিসের অগ্রভাগে প্রদাহ ও চুলকানি ,পুঁজ , জ্বালাপোড়া করাএবং বীর্জের সাথে রক্ত যাওয়া।
গনোরিয়া রোগের ঔষধ
এবার আমরা গনোরিয়া রোগের ঔষধ সম্পর্কে জানব। তবে গনোরিয়া রোগের ঔষধ সম্পর্কে
জানলেও এই এই ঔষধ গুলো সেবনের পূর্বে তাকে অবশ্যই কোন রেজিস্টার ডাক্তারের
পরামর্শ গ্রহণ করে নিতে হবে। কারণ যে কোনো অসুখের ক্ষেত্রেই , অনভিজ্ঞ অথবা নিজে
নিজে ওষুধ সেবনের ফলে শারীরিক জটিলতা সহ মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। আপনাদের
আগেই জানিয়েছি যে সঠিক সময়ে যদি গনোরিয়া রোগটি শনাক্ত করা যায় তবে এক্ষেত্রে
হোমিওপ্যাথি ও অ্যালোপ্যাথিক দুই পদ্ধতিতেই ভালো চিকিৎসা রয়েছে। তাই আজকে আমরা
একে একে হোমিওপ্যাথিক ও এলোপ্যাথিক ঔষধ গুলোর নাম জেনে নেব
গনোরিয়ার এলোপ্যাথিক ঔষধঃ বিভিন্ন লক্ষণগুলো পর্যালোচনা করে যদি আপনার
মনে হয় যে আপনি, কোন গনোরিয়ায় আক্রান্ত তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের
শরণাপন্ন হল। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে বিভিন্ন
পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে আপনাকে এই রোগ থেকে সেরে ওঠার জন্য
অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হবে। গনোরিয়া রোগ থেকে সেরে ওঠার জন্য সাধারণত
,
- পেপসিন
- সেফিক্সিম
- টেট্রাসাইক্লিন
- ডক্সিসাইক্লিন
- এরিথ্রোমাইসিন
- সিপ্রোফ্লোক্সাসিন
এই জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক গুলো প্রদানের জন্য সাজেস্ট করা হবে , রেজিস্টার
ডক্টর রোগের তীব্রতা ও প্রকারভেদ অনুযায়ী এই ওষুধগুলো সেবন করার জন্য অথবা
ইনজেকশন আকারে শরীরে প্রয়োগের নির্দেশনা দিতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ
কোলন ক্যান্সার ও কোলন ইনফেকশনের লক্ষণ
গনোরিয়ার হোমিওপ্যাথি ওষুধঃ গনোরিয়ার চিকিৎসার জন্য আপনি যদি হোমিও
পদ্ধতি অনুসরণ করতে চান তাহলে রাখি সেক্ষেত্রে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন
হোমিও ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে এবং এই ক্ষেত্রে ডাক্তার আপনার
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য , রোগের ধরণ , পছন্দ অপছন্দ , রোগের তীব্রতা ইত্যাদি
বিষয়ের উপরে ভিত্তি করে এই রোগের ক্ষেত্রে কার্যকরী ওষুধগুলো প্রয়োগ
করবেন। গনোরিয়া রোগের ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিতে কার্যকরী ওষুধ গুলো হল ,
- মেডোরিনাম
- থুজা
- মার্ক কর
- এসিড নাইট্রিক
- মার্কসল
- হাইড্রাস্টিস
- আর্জেন্ট নাইট্রিকাম
- সিপিয়া
- পালসেটিলা
- নেট্রাম সলফ
- হিপার সালফ
- ক্যালি সালফ
- জিঙ্ক
- স্যাবাল সেরু
- এপিসমেল
- টেলুরিয়াম
- ক্রিয়জুট
গনোরিয়ার ছবি
আপনাদের সুবিধার জন্য , গনোরিয়া রোগের ভাইরাস কেমন হয় এবং এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে স্কিনে এবং অন্যান্য যে সমস্যাগুলো হয় সে সমস্যাগুলোর সংগৃহীত ছবি নিচে দেয়া হলো।
মন্তব্য, এই পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার মাধ্যমে এতক্ষণে নিশ্চয়ই
গনোরিয়া রোগ থেকে মুক্তির উপায় এবং মহিলাদের গনোরিয়া রোগের লক্ষণ সহ এই
রোগ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে সবকিছু জেনে নিয়েছেন। এবং এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে
পেরেছেন এই রোগ থেকে মুক্ত থাকতে হলে অবশ্যই সর্তকতা এবং সাবধানতা অবলম্বন করতে
হবে । তাই সব সময় সতর্ক সাবধান এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন আর
অবশ্যই এই রোগ ভয়াবহতা সম্পর্কে অন্যকে জানতে সাহায্য করুন।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url