হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে - হিমোগ্লোবিন নরমাল রেঞ্জ
শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকলে কখনো এই বিষয়টি অবহেলা করা উচিত নয় ,
তাই সঠিকভাবে জানতে হবে হিমোগ্লোবিন কম হওয়ার লক্ষণ , হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন
খাবারে এবং হিমোগ্লোবিন নরমাল রেঞ্জ কত ও হিমোগ্লোবিন কমে গেলে করণীয়
বিষয়ে সম্পর্কে। আর এ সকল প্রত্যাবশ্যকীয় বিষয়গুলো আপনি জানতে পারবেন
এই পোস্টটি ভালভাবে পড়ার মাধ্যমে। তাই হিমোগ্লোবিন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ
তথ্যগুলো জানতে হলে অবশ্যই পোস্টটি পড়ুণ।
সূচিপত্রঃ হিমোগ্লোবিন কি - হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে - হিমোগ্লোবিন নরমাল রেঞ্জ
- হিমোগ্লোবিন কি
- হিমোগ্লোবিন কম হওয়ার লক্ষণ
- হিমোগ্লোবিন কমে গেলে করণীয়
- হিমোগ্লোবিন নরমাল রেঞ্জ
- হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে
হিমোগ্লোবিন কি
হিমোগ্লোবিন এই নামটা আমরা অনেকেই শুনেছি , কিন্তু নাম শুনে থাকলেও হিমোগ্লোনিব কি এটি আমরা অনেকেই জানিনা।তাই আজকে আমরা ভালোভাবে জেনে নেব হিমোগ্লোনিন কি।হিমোগ্লোবিন আমাদের শরীরের জন্য খুবই জরুরি তাই হিমোগ্লোবিন কি এ ব্যপারে জেনে রাখা দরকের। চলুন তাহলে দেরী না করে জেনে নেয়া যাক হিমোগ্লোবিন কি জেনে নেয়া যাক।
**
আমাদের শরিরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় একটি ধরনের প্রোটিন হলো হিমোগ্লোবিন আর মেডিক্যাল সাইন্সে একে বলে মেটালোপ্রোটিন। হিমোগ্লোবিন থাকে লোহিত রক্ত কণিকায়। এই হিমোগ্লোবিনের কারণেই আমাদের রক্ত লাল দেখায়। হিমোগ্লোবিনকে অন্যভাবে বলা যেতে পারে , লৌহযুক্ত এক ধরনের বিশেষ প্রোটিন জাতীয় রঞ্জক কনাকে হিমোগ্লোবিন বলা হয়।হিমোগ্লোবিন আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরী টারশিয়ারী ও কোয়াটার্নারী প্রোটিন দ্বয়ের স্থায়িত্ব ধরে রাখে।ফুসফুস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে শরীরের বিভিন্ন কলা বা টিস্যুতে অক্সিজেন পরিবহন করাই হলো হিমোগ্লোবিনের প্রধান কাজ এছাড়াও কার্বন-ডাই-অক্সাইড পরিবহন করার ক্ষেত্রেও হিমোগ্লোবিন কিছুটা অবদান রাখেতে পারে।হিমোগ্লোবিন কম হওয়ার লক্ষণ
হিমোগ্লোবিনের অভাবে আমাদের শরীরে যে সমস্যাটি প্রকটভাবে দেখা দেয় সেটি হল
রক্তশূন্যতা। শুধু রক্তশূন্যতায় নয় হিমোগ্লোবিন কম হওয়ার কারণে শরীরে আরো বেশ
কিছু জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়। আর এই কারণে আমাদেরকে জানতে হবে হিমোগ্লোবিন কম
হওয়ার লক্ষণ গুলো এবং শরীরে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দূর করার যথাসাধ্য চেষ্টা করতে
হবে। তাই আজকে আমরা জানবো হিমোগ্লোবিন কম হওয়ার লক্ষণ গুলো সম্পর্কে। শরীরে
হিমোগ্লোবিন সঠিক মাত্রায় না থাকলে বা হিমোগ্লোবিন কমে গেলে এর কারণে বেশ কিছু
লক্ষণ প্রকাশ পায় , আর এই লক্ষণ গুলো হল
- রক্তস্বল্পতা
- শরীর ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া
- শরীরের কোষগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহের সমস্যা
- শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুবিধা
- শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
- চোখে কম দেখা
- হার্টবিট বেড়ে যাওয়া
- সব সময় ক্লান্ত লাগা এবং দুর্বলতা অনুভব করা
- মাথাব্যথা
- মাথা ঘোরা
- হজম সমস্যা দেখা দেওয়া
- হাত পা ঠান্ডা হওয়া
- পা এবং শরীর খোলা
- কর্মশক্তি কমে যাওয়া
- ঠিক মতন ঘুম না হওয়া
হিমোগ্লোবিন কমে গেলে করণীয়
ছোট-বড় , নারী-পুরুষ এক কথায় যেকোন বয়সের মানুষের যেকোন সময় হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে, আর শরীরে আয়রনের ঘাটতি থেকে দেখা দেয় রক্তস্বল্পতা।শরীরে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা দিলে খাদ্য তালিকার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি যেহেতু যে কোন বয়সে এবং যেকোনো সময় হতে পারে তাই হিমোগ্লোবিন কমে গেলে করণীয় বিষয় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখা অত্যন্ত জরুরী। তাই আজকে আমরা হিমোগ্লোবিন কমে গেলে করণীয় বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করব। শরীরে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা দিলে ,
আরো পড়ুনঃ
হিমোগ্লোবিন কম হওয়ার ১৫ টি কারণ
আয়রন যুক্ত খাবার খেতে হবেঃ শরীরে যদি আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয় তাহলে
অবশ্যই খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে হবে আয়রন জাতীয় খাবার গুলো । আর শরীরে
হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণের জন্য আয়রন জাতীয় খাবার হিসেবে খাদ্য তালিকায় রাখতে
পারেন -পালং শাক , ব্রকলি , ডিম , বাদাম , আপেল , কিসমিস , কুমড়ো বীজ
ইত্যাদি। এই জাতীয় খাবার গুলোর মধ্যে থেকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন পাওয়া যায় যা
শরীরের আয়রনের ঘাটতি এবং হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণ করতে যথেষ্ট সাহায্য করে।
**
প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করাঃ দ্রুত হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণের
জন্য প্রোটিন জাতীয় খাবার গুলো অত্যন্ত জরুরী। এই প্রোটিন জাতীয় খাবার গুলো
শরীরে আইরনের যোগান দেয়ার পাশাপাশি হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে অত্যন্ত কার্যকরী। তাই
হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণের জন্য রেডমিট , ডিম , মুরগির মাংস ,
কলিজা
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স জাতীয় খাবারঃ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স জাতীয়
খাবার গুলো লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে বিশেষ অবদান রাখে এ
কারণে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা দিবে খাদ্য তালিকায় ভিটামিন বি কমপ্লেক্স
জাতীয় খাবার গুলো যুক্ত করতে হবে।
ভিটামিন সি ঃ হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণের জন্য ভিটামিন সি জাতীয়
খাবার গুলো যথেষ্ট ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে
গেলে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স জাতীয় খাবারের পাশাপাশি ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গুলো
যুক্ত করুন।
ফিজিক্যাল এক্সারসাইজঃ শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত ফিজিক্যাল এক্সারসাইড বা শরীর চর্চা করা অত্যন্ত জরুরী। নিয়মিত শরীর চর্চা করলে প্রত্যেক অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এবং হজম প্রক্রিয়া সঠিকভাবে কাজ করার সুযোগ পায় এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক থাকে। ব্লাড সার্কুলেশন এবং শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ সঠিকভাবে হয়।
**
কুমড়ো বীজ ঃ হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণের জন্য আদর্শ একটি খাবার হলো কুমড়ো বীজ, কারণ কুমড়ো বীজ থেকে প্রচুর পরিমাণে আইরন পাওয়া যাবে এবং এই আয়োজন রক্তের হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করবে । শারীরিক চাহিদার ৮৩% আইরনের ঘাটতি পূরণ করতে পারে ১০০ গ্রাম কুমড়ো বীজ।
ড্রাই ফ্রুটঃ শরীরে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা দিলে খাদ্য তালিকায় জাতীয়
খাবার গুলো যুক্ত করার চেষ্টা করুন। হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি মেটাতে কিসমিস
, বাদাম , খেজুর এ জাতীয় খাবার গুলো বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
কফি ও কোমল পানীয় বর্জন করুনঃ আর শরীরে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা দিলে ক্যাফেইন যুক্ত খাবার গুলো এবং কোমল পানীয় পান করা সম্পূর্ণ রূপে বাদ দিতে হবে কারণ এই জাতীয় খাবার গুলো শরীর থেকে আয়রন শুষে নেয়। যার ফলে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি ,রক্তশূন্যতার পাশাপাশি পানি শূন্যতাও দেখা দেয়।
হিমোগ্লোবিন নরমাল রেঞ্জ
হিমোগ্লোবিন নরমাল রেঞ্জ জানা অত্যন্ত জরুরী কারণ শরীরে যদি হিমোগ্লোবিন সঠিক
মাত্রায় না থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা সম্মুখীন হতে
হয়। তাই হিমোগ্লোবিন নরমাল রেঞ্জ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকলে সহজে ই
হিমোগ্লোবিন কম এবং বেশি হলে সহযেই বুঝতে পারা যাবে আর প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা গুলো গ্রহণ করার যাবে। আমরা অনেকেই হয়তো হিমোগ্লোবিন নরমাল রেঞ্জ
সম্পর্কে জানি না। তাই এখন আমরা হিমোগ্লোবিন নরমাল রেঞ্জ কত এই বিষয়টি জানবো।
আরো পড়ুনঃ
ফুসফুস ভালো আছে বোঝার উপায়
ছোট বড় সকল ধরনের মানুষের রক্তে হিমোগ্লোবিন থাকে। তবে শরীরে রক্তের হিমোগ্লোবিন নরমাল রেঞ্জ বয়স ভেদে কম বেশি হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক , কোন বয়সে হিমোগ্লোবিন নরমাল রেঞ্জ কত।
- ১ দিনের শিশুর শরীরে হিমোগ্লোবিন নরমাল রেঞ্জ, ১৭- ২২ ডেসিলিটার
- ৭ দিনের শিশুর রক্তে হিমোগ্লোবিন নরমাল রেঞ্জ, ১৫- ২০ ডেসিলিটার
- ১ মাসের বাচ্চার হিমোগ্লোবিন নরমাল রেঞ্জ, ১১- ১৫ ডেসিলিটার
- কিশোর কিশোরীদের হিমোগ্লোবিনের নরমাল রেঞ্জ প্রায় , ১২ - ১৫ ডেসিলিটার
- প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের নরমাল রেঞ্জ , ১৪ - ১৮ ডেসিলিটার
- মাঝ বয়সী পুরুষদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের নরমাল রেঞ্জ , ১২.৪ - ১৪.৯ ডেসিলিটার
- প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের হিমোগ্লোবিনের নরমাল রেঞ্জ , ১২ - ১৬ ডেসিলিটার
- মাঝ বয়সীমহিলাদের হিমোগ্লোবিনের নরমাল রেঞ্জ , ১১.৭ - ১৩.৮ ডেসিলিটার
যে কোন বয়সই মানুষের ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিন নরমাল রেঞ্জের একটি ধারণা দেওয়া
হয়েছে , তবে শারীরিক গঠন এর ওপরে ভিত্তি করে ক্লিনিক্যালি হিমোগ্লোবিনের নরমাল
রেঞ্জের কিছুটা তারতম বা কম বেশি হতে পারে। তবে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক
রেঞ্জ থেকে যদি অতিরিক্ত কম বা বেশি হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতামূলক
পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।
হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে
রক্তে হিমোগ্লোবিন যদি স্বাভাবিক না থাকে তাহলে অবশ্যই হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর
জন্য প্রাথমিকভাবে নজর দিতে হবে হিমোগ্লোবিন বাড়ে এই ধরনের খাবার গুলো খাদ্য
তালিকায় যুক্ত করার প্রতি। আর হিমোগ্লোবিন কম থাকলে খাদ্য তালিকা প্রস্তুত এর
আগে অবশ্যই জেনে নিতে হবে হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে সেই খাবারগুলোর
নাম। যেসব খাবারে হিমোগ্লোবিন বাড়ে সেই খাবারগুলো হল ,
- ফল জাতীয় খাবারের মধ্যে - আপেল , বেদানা , স্ট্রবেরি , তরমুজ , পেয়ারা ,পেঁপে , কমলা , আঙ্গুর , কলা , জলপাই ইত্যাদি।
- ড্রাই ফ্রুট জাতীয় খাবারের মধ্যে - কিসমিস , খেজুর , বিভিন্ন ধরনের বাদাম , এপ্রিকট
- সবজি জাতীয় খাবারের মধ্যে - ব্রকলি , আলু , কুমড়ো , বিটরুট , টমেটো
- বীজ জাতীয় খাবারের মধ্যে - কুমড়ো বীজ , সিমের বিচি , ছোলা , সয়াবিন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য
- শস্যজাতীয় খাবারের মধ্যে - চাল , গম , বার্লি , ওটস
- ডার্ক চকলেট
- প্রোটিন জাতীয় খাবারের মধ্যে - দুধ , ডিম , রেডমিট , মুরগির মাংস , কলিজা
- সামুদ্রিক মাছ যেমন - চিংড়ি , কাকড়া , এছাড়া অন্যান্য সামুদ্রিক খেলে শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ানোর জন্য , ভিটামিন বি কমপ্লেক্স , ভিটামিন সি ,
আইরন , ফলিক অ্যাসিড যুক্ত খাবার গুলো খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। উপরে উল্লেখিত
খাবার গুলো ছাড়াও বিভিন্ন খাদ্যে রয়েছে যেগুলো খেলে শরীরে হিমোগ্লোবিনের
মাত্রা বৃদ্ধি পায় । তবে এই পোস্টটি আপনাদের জন্য , শরীরে হিমোগ্লোবিন
উৎপাদনকারী বিশেষ উল্লেখযোগ্য খাদ্যগুলোর নাম উল্লেখ করা
হয়েছে।
আরো পড়ুনঃ
ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ
মন্তব্য, শরীরে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি অনুভব করলে অবশ্যই এই ব্যাপারে অবহেলা না করে
সচেতন হন কারণ হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি রক্তশূন্যতার অন্যতম প্রধান কারণ । আরে
রক্তশূন্যতা থেকে হতে পারে বড় ধরনের কোন সমস্যা।
This comment has been removed by the author.
https://banglabishoi.com/himoglobin-kom-hoyar-lokkhon