পুদিনা পাতার অসাধারণ ১৫টি উপকারিতা - পুদিনা পাতার অপকারিতা

শরীরের জন্য পুদিনা পাতার উপকারিতা অনেক। আজকের এই পোস্টটি আমরা জানবো পুদিনা পাতার অসাধারণ ১৫টি উপকারিতা সম্পর্কে। তবে পুদিনা পাতার অনেক উপকারিতা থাকলেও এর রয়েছে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে অপকারিতা। তাই পুদিনা পাতার অসাধারণ ১৫টি উপকারিতা জানার পাশাপাশি আমরা পুদিনা পাতার অপকারিতা গুলো জেনে নিব , কারণ পুদিনা পাতার অপকারিতা গুলো সম্পর্কে জানা না থাকলে এই রস পান করার ফলে উপকারিতার পরিবর্তে হতে পারে অপকারিতা।

পুদিনা পাতার যতই উপকারিতা থাকুক না কেন এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও কম নেই। তাই স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পুদিনা পাতার অসাধারণ ১৫টি উপকারিতা পাশাপাশি মনোযোগ সহকারে এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ার মাধ্যমে পুদিনা পাতার অপকারিতা গুলো সম্পর্কেও জেনে নিন।চলুন তাহলে পোস্টটি শুরু করা যাক এবং জেনে নেয়া যাক পুদিনা পাতার অসাধারণ ১৫টি উপকারিতা ও পুদিনা পাতার অপকারিতা গুলো।

সূচিপত্রঃ পুদিনা পাতার অসাধারণ ১৫টি উপকারিতা - পুদিনা পাতার অপকারিতা

পুদিনা পাতার উপকারিতা

পুদিনা পাতার নামের সাথে আমরা ছোট-বড় প্রায় সবাই পরিচিত এবং এর ঔষধি গুনের কথাও আমরা মোটামুটি অনেকেই জানি, কিন্তু পুদিনা পাতার সকল উপকারিতা গুলো কি আমরা জানি? অনেকেই হয়তো পুদিনা পাতার উপকারিতা গুলো বিস্তারিত ভাবে জানেন না।আজকে আমরা আলোচনা করবো পুদিনা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে।যারা ঔষধি গুনসম্পন্ন এই পুদিনা পাতার উপকারিতা গুলো জানেন না তারা অবশ্যই জেনে রাখুন পুদিনা পাতার উপকারিতা গুলো এবং সুস্থ্য থাকতে কাজে লাগান পুদিনা পাতাকে। আজকে আমরা জানবো পুদিনা পাতার অসাধারণ ১৫টি উপকারিতা ।তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে জেয়া যাক ,পুদিনা পাতার অসাধারণ ১৫টি উপকারিতা সম্পর্কে।

ইমিউনিটি বাড়ায়ঃ পুদিনা পাতার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি উপাদানের পাশাপাশি রয়েছে ভিটামিন।তাই পুদিনা পাতার রস বা পুদিনা পাতা খেলে শরীরের ইমিউনিটি বৃদ্ধি পায়। পুদিনা পাতা শরীরের ইউনিটির বৃদ্ধির মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ জীবাণু থেকে রক্ষা করে।

র‍্যাশ এবং ব্রণ দূর করেঃ পুদিনা পাতায় রয়েছে স্যালসাইলিক এ্যসিড এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। আর এই কারণে শরীরের র‍্যাশ এবং ত্বকের ব্রণ দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে পুদিনা পাতা। শুধু ত্বকের ব্রণ এর সমস্যায় নয় , ত্বকের মৃত কোষ দূর করতেও পুদিনা পাতা অত্যন্ত উপকারী।

দাঁত এবং দাঁতের মাড়ি ভালো রাখেঃ পুদিনা পাতার ভেতরে থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান গুলো দাঁত এবং দাঁতের মাড়িতে সংক্রামিত হওয়া ব্যাকটেরিয়া গুলো ধ্বংস করতে পারে। তাই নিয়মিত পুদিনা পাতার রস অথবা পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেলে দাঁত ও মাড়ির সংক্রমণ দূর হয় এবং দাঁত ভালো থাকে। আর দাঁতে এবং বাড়িতে যেহেতু কোনো সংক্রমণ থাকে না তাই পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেলে মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেও সাহায্য করে।

মাথা ব্যথা দূর করেঃ যেকোনো ধরনের মাথা ব্যথায় আরাম মেলাতে পারে পুদিনা পাতা , কারণ পুদিনা পাতার ভেতর রয়েছে মেন্থল।মাথা ব্যথা হলে কয়েকটি পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেলে অথবা পুদিনা পাতার পেস্ট তৈরি করে কপালে লাগালে অনেক আরাম পাওয়া যায়। বাজারে পুদিনা পাতার তৈরি বিভিন্ন মলমও পাওয়া যায় তবে এইসব কেমিকেল যুক্ত মলমের চাইতে সরাসরি পুদিনা পাতা বেটে ব্যবহার করলে বেশি ভালো ফল পাওয়া যাবে।

স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করেঃ নিয়মিত পুদিনা পাতার রস অথবা পুদিনা পাতা বিভিন্নভাবে খাওয়ার ফলে স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি করতে এই পাতা বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। নিয়মিত পুদিনা পাতার তেল ব্যবহারের ফলে মস্তিষ্কে স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি সেনসিটিভিটি বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করবে।

ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করেঃ নিয়মিত পুদিনা পাতা খেলে এটি আমাদের ইউনিয়ন সিস্টেম বা হজম প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করতে পারে। পুদিনা পাতার ভেতরে এন্টিঅক্সিডেন্ট , মেন্থল , ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট ইত্যাদি উপাদান গুলো হজম প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে  পেটে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে।

ফুসফুস ভালো রাখেঃ ফুসফস ভালো রাখতে বিশেষ করে হাঁপানি দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে পুদিনা পাতা। পুদিনা পাতার ভেতরে থাকা মেন্থল নামক উপাদানটি ফুসফুসের মিউকাজ দূর করতে সাহায্য করে । তাই রেগুলার পরিমাণ বুঝে পুদিনা পাতার রস খাওয়ার অভ্যাস থাকলে এটি ফুসফুস পরিষ্কার করে ফুসফুস ভালো রাখতে সাহায্য করে।

ঠান্ডা লাগা জনিত যে কোন সমস্যা এবং ফ্লু দূর করতেঃ ঠান্ডা লাগা জনিত বিভিন্ন ধরনের সমস্যাগুলো যেমন সর্দি , কাশি , জ্বর , নাক বন্ধ , গলা ব্যথা ইত্যাদি সমস্যাগুলো দূর করার মাধ্যমে শরীর সুস্থ রাখতে পুদিনা পাতার জুড়ি নেই। কাশি কমাতে এবং গলার ব্যথা দূর করতে পুদিনা পাতার উপকারিতার কথা জানা নেই এমন মানুষ আমাদের মধ্যে কমই রয়েছে। নাক বন্ধ দূর করতে এবং গলা ব্যথা কমাতে পুদিনা পাতার রস পান করলে যথেষ্ট উপকার পাওয়া যায় কারণ পুদিনা পাতার ভেতর রয়েছে মেন্থল নামক উপাদানটি। মেন্থল নামক উপাদানটি নাক বন্ধ দূর করতে এবং গলা ব্যাথা দূর করার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কার্যকরী।

অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করেঃ 'জান্থাইন আক্সাইড' নামক যৌগ আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে বিশেষ সহায়তা করে থাকে আর জান্থাইন আক্সাইড যৌগটি পুদিনা পাতার ভেতরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। তাই পুদিনা পাতার রস খেলে এটি আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।

আরো পড়ুনঃ সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

মাসিকের সময় শরীরের ফোলা ভাব দূর করেঃ প্রতিমাসে মেয়েদের মাসিক চলার সময় , শরীরে হরমোনের প্রভাবে ফোলা ভাব দেখা যায় ।মাসিক চক্রের সময় এই ফোলা ভাব কমাতে বিষের সাহায্য করতে পারে পুদিনা পাতা। শরীরের ফোলা ভাবের সাথে সাথে মাসিকের ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে পুদিনা পাতার রস।

স্ট্রেস কমায়ঃ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে পুদিনা পাতার ভেতরে থাকা বিভিন্ন উপাদান এবং যৌগগুলো শরীরের ক্লান্তি দূর করতে এবং স্ট্রেস কমাতে বিশেষ সাহায্য করে । এবং পুদিনা পাতার ভেতরে থাকা মেন্থল নামক কুলিং উপাদানটি শরীরের রক্ত চলাচল ঠিক রাখতে সাহায্য করে তাই পুদিনা পাতা স্ট্রেস এবং দুশ্চিন্তা কমাতেও বিশেষভাবে কাজ করে।

শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করেঃ পুদিনা পাতার ভেতরে থাকা উপাদান গুলো আমাদের শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। অসহ্য গরম থেকে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে হলে পুদিনা পাতার রস সেবন করলে অনেক ভালো উপকার পাওয়া যায় এছাড়াও গোসলের আগে সেই পানিতে বেশ কিছু পুদিনা পাতা রেখে দিলে এবং সেই পানি দিয়ে গোসল করলে অনেক আরাম পাওয়া যায় কারণ পুদিনা পাতায় থাকা মেন্থল নামক উপাদানটি আমাদের শরীর এবং মন সতেজ রাখতে সাহায্য করে।

অনিদ্রা দূর হয়ঃ পুদিনা পাতার ভেতরে থাকা বিভিন্ন ধরনের উপাদান গুলো আমাদের অনিদ্রার সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে। যাদের অনিদ্রার সমস্যা রয়েছে তারা যদি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পুদিনা পাতা রস সেবন করে তাহলে এর মধ্যে থাকা ক্যাফেইন নামক উপাদানটি ঘুম ভালো হতে সহায়তা করবে।

এলার্জির সমস্যা দূর করেঃ পুদিনা পাতার ভেতরে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট , অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান এবং রোজমারিনিক এসিড রয়েছে এই উপাদানগুলো আমাদের শরীরে এলার্জি দূর করতে সাহায্য করে এবং শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমা সমস্যাকে কমাতে সাহায্য করে।

মাথার ত্বকের সমস্যা দূর করে এবং চুল মজবুত করেঃ পুদিনা পাতার রসের ভেতরে এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান থাকায় এটি আমাদের মাথার ত্বকের বিভিন্ন ফাঙ্গাল সংক্রমণ রোধ করতে সাহায্য করে এবং মাথার চুল মজবুত করতে সাহায্য করে।

পুদিনা পাতা কিভাবে খাব

এবার আমরা জানবো পদিনা পাতা খাওয়ার নিয়মগুলো। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা পুদিনা পাতার উপকারিতা জানলেও বুঝতে পারেন এ পাতা কিভাবে খাবেন। তাই আজকে আমরা জানব পুদিনা পাতা কিভাবে খাব তা সম্পর্কে। আপনিও যদি না জেনে থাকেন তাহলে , জেনে নিতে পারেন পুদিনা পাতা কিভাবে খাব এই বিষয়টি। পুদিনা পাতা আমরা বিভিন্নভাবে খেতে পারি যেমন,

চাঃ চুলায় ভালোভাবে পরিমান মত পানি গরম করে এর ভেতরে কয়েকটি পুদিনা পাতা দিন। এবার পানি এবং পুদিনা পাতা ভালো ফুটাতে থাকুন। কিছুক্ষন পরে পানির রং পরিবর্তন হয়ে হালকা সবুজ আকার ধারণ করলে কাপে ঢেলে মধু মিশিয়ে নিন , এভাবে তৈরি করে পান করতে পারেন পুদিনা পাতার চা।

জুসঃ পুদিনা পাতা দিয়ে জুস বা শরবত বানিয়েও পান করতে পারেন। পুদিনা পাতার শরবত বানানোর জন্য প্রথমে ১০-১৫ একটি পাতা ভালোভাবে ধুয়ে বেটে নিল এবার একটি গ্লাসে সাদ মতন চিনি পানির সাথে মিশিয়ে নিয়ে আপনার পছন্দ অনুসারে সামান্য ভেজে নেওয়া জিরা গুড়া এবং সামান্য গোলমরিচ গুড়া এবং বেটে রাখা পুদিনা পাতা মিশিয়ে নিন। এইবার এর মধ্যে কয়েক টুকরা আইস কিউব দিয়ে বানিয়ে নিন পুদিনা পাতার শরবত।

সালাদঃ বিভিন্ন সালাদের মধ্যে পুদিনা পাতা দিয়েও আপনি খেতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের ভেজিটেবল সালাদের মধ্যেই কুচি করে পুদিনা পাতা কেটে , ভালোভাবে মিশিয়ে খেলে এতে  সবজি এবং পুদিনা পাতা দুটোরই পুষ্টিগুণ পাওয়া যাবে । 

ভর্তাঃ প্রথমে প্রয়োজন মত  পুদিনা পাতা ডাল থেকে আলাদা করে নিন , এবার এ পাতা হালকা আঁচে সামান্য একটু পানি দিয়ে সিদ্ধ করে নিন। এইবার সিদ্ধ করা পুদিনা পাতাগুলো ভালোভাবে চটকে নিয়ে কাঁচা মরিচ , পেঁয়াজ কুচি , সরিষার তেল ভালোভাবে মাখিয়ে ভর্তা তৈরি করে নিন। ভাত , রুটির সাথে খেতে বা পরিবেশন করতে পারেন এ ভর্তা।

চাটনিঃ বিভিন্ন মুখোরোচক তেলে ভাজা খাবার গুলো যেমন- পিয়াজু, বেগুনি ,বিভিন্ন চপ ইত্যাদির সাথে পুদিনা পাতা চাটনি হিসেবেও খেতে পারেন। প্রথমে কড়াইয়ে সামান্য তেল দিয়ে পেয়াঁজ , রসুন , শুকনা মরিচ , পুদিনা পাতা আলাদা আলাদা ভাবে হাল্কা ভাবে ভেজে নিন। এইবার সমস্ত উপকরণগুলো শিল্পাটাই অথবা ব্লেন্ডারে পেস্ট তৈরি করি চাটনি হিসেবে ব্যবহার করুন।

আরো পড়ুনঃ পেয়ারা পাতার উপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম

রান্নাঃ সবজি অথবা মাছ-মাংসের বিভিন্ন রেসিপিতে ব্যবহার করতে পারেন পুদিনা পাতা। সবজি অথবা মাছ ,মাংস যেই রেসিপিতে পুদিনা পাতা ব্যবহার করতে চান , সেই রান্নাটি শেষ করার আগ মুহূর্তে কিছু পুদিনা পাতা ভালোভাবে ধুয়ে তরকারির ভেতরে  দিয়ে ঢাকনা লাগিয়ে রাখুন এবং ৪-৫ মিনিট পর চুলার আঁচ বন্ধ করে দিন। এভাবে পুদিনা পাতা রান্নায় ব্যবহার করলে পুষ্টিগুণে ও ফ্লেভার দুটোই পাওয়া যায়।

চিবিয়েঃ পুদিনা পাতা আপনি কোন কিছু ছাড়াও চিবিয়ে খেতে পারবেন ,আর যদি খালি মুখে চিবিয়ে খেতে ভালো না লাগে তাহলে কুঁচি করে কেটে ঝাল মুড়ির সাথে খেতে পারেন।

পুদিনা পাতায় কোন ভিটামিন বিদ্যমান

অনেকেই জানতে চান পুদিনা পাতায় কোন ভিটামিন বিদ্যমান এ বিষয়ে। তাই আজ আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব পুদিনা পাতার পুষ্টিগুণ এবং পুদিনা পাতায় কোন ভিটামিন বিদ্যমান রয়েছে এ বিষয়টি। তাহলে চলুন আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক পুদিনা পাতায় কোন ভিটামিন বিদ্যমান। বিভিন্ন ঔষধি গুণের পাশাপাশি পুদিনা পাতায় রয়েছে ,

  • ভিটামিন এ
  • ভিটামিন বি কমপ্লেক্স
  • ভিটামিন সি

এছাড়াও পুদিনা পাতায় রয়েছে - ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম , ফসফরাস , আইরন ,বিটা ক্যারোটিন , ক্যালোরি , লৌহ , পটাশিয়াম , ম্যাঙ্গানিজ , মেন্থল , এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান সহ আরও বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান।

পুদিনা পাতার ছবি

অনেকেই রয়েছেন যারা পুদিনা পাতা চেনেন না। তাদের জন্য এই পোস্টে আজকে আমরা বেশ কয়েকটি পুদিনা পাতায় ছবি দেখব। এই পুদিনা পাতার ছবি গুলো সব কয়টি সংগ্রহ করা হয়েছে goole creative commons licenses এর আন্ডার থেকে। নিচে দেয়া ছবিগুলোর মাধ্যমে জেনে নিন পুদিনা পাতা দেখতে কেমন হয়।



পুদিনা পাতা দিয়ে রূপচর্চা

পুদিনা পাতার উপকারিতা নয় ত্বকের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রেও পুদিনা পাতা রাখতে পারে  বিশেষ অবদান। পুদিনা পাতা দিয়ে খুব সহজে ত্বকের এবং রূপচর্চা করা যেতে পারে। আজকে আপনাদের জানাবো পুদিনা পাতা দিয়ে কিভাবে রূপচর্চা করা যায়। অনেকেই হয়তো পুদিনা পাতা দিয়ে রূপচর্চার বিষয়টি প্রথমবার শুনেছেন, কিন্তু একটু অবাক করার মতন হলেও পুদিনা পাতা দিয়ে রূপচর্চা করার ক্ষেত্রে অনেক ধরনের বেনিফিট পাওয়া যায়। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক পুদিনা পাতা দিয়ে রূপচর্চার বিষয়ে।

ত্বক মশ্চারাইজ করতে সাহায্য করেঃ পুদিনা পাতা আমাদের ত্বক মশ্চারাইজ করতে অত্যন্ত ভালো কাজ করে ।মুখে পুদিনা পাতার পেস্ট ব্যবহারের ফলে তাকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং ত্বক  পরিষ্কার হয় পাশাপাশি ত্বকের আদ্রতা বৃদ্ধি পায়

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করেঃ স্কিন থেকে মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বকের লোমকূপে জমে থাকা ধুলোবালি পরিষ্কার করার মাধ্যমে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে পুদিনা পাতা। নিয়মিত পুদিনা পাতার পেস্ট ত্বকে লাগালে,ত্বকের  উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে পুদিনা পাতার এই প্যাকটি।

চোখের নিচের কালো দাগ দূর করেঃ আমাদের মধ্যে অনেকেরই চোখের নিচে কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেল থাকে।চোখের নিচের এই কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেল খুব সহজেই দূর করতে পারে পুদিনা পাতার পেস্ট।

র‍্যাশ ও ব্রণ দূর করেঃ পুদিনা পাতার ভিতরে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকের র‍্যাশ এবং ব্রণ দূর করতে  সাহায্য করে। ব্রণ দূর করার জন্য পুদিনা পাতার পেজ এর সাথে মধু মিশিয়ে ১৫-২০ মিনিট ত্বকে  লাগিয়ে রাখুন এবং এরপর নরমাল পানি দিয়ে ভালোভাবে ত্বক পরিষ্কার করে নিন। নিয়মিত কয়েকদিন ব্যবহারের ফলে এই প্যাকটি আপনার ব্রণ সারাতে সাহায্য করবে।

ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখেঃ পুদিনা পাতার ভেতরে থাকা বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে বিশেষ সাহায্য করে। প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পুদিনা পাতার ভেতরে থাকায় এটি আমাদের ত্বক থেকে রিংকেলস দূর করতে এবং বয়সের ছাপ কম করে।

টোনার হিসেবে কাজ করেঃ পুদিনা পাতাকে আমারা ত্বকের টোনার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারি। ত্বকের টোনার হিসেবে পুদিনা পাতা অনেক ভালো ফল দেয় এবং এই টোনার ত্বককে হাইড্রেট রাখতেও সাহায্য করে।

আরো পড়ুনঃ এলোভেরা দিয়ে রূপচর্চা এবং চুলের যত্ন নেওয়ার উপায়

ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ততা দূর করেঃ পুদিনা পাতার পেস্ট এর সাথে মুলতানি মাটি মিশিয়ে এই প্যাকটি ত্বকে ৩০ মিনিটের জন্য সপ্তাহে ২-৪ দিন ব্যবহারের ফলে, ত্বক থেকে অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব দূর হবে। তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নিতে পুদিনা পাতা বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে।

চুলের জন্য পুদিনা পাতার উপকারিতা

ওপরের অংশে আমরা এতক্ষন জানলাম পুদিনা পাতা দিয়ে রূপচর্চা করার উপায় গুলো সম্পর্কে তবে পুদিনা পাতা শুধু রূপচর্চার ক্ষেত্রেই নয় চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই আজকে আমরা রূপচর্চার পাশাপাশি চুলের জন্য পুদিনা পাতার উপকারিতা সম্পর্কেও আলোচনা করব। তাহলে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক চুলের জন্য পুদিনা পাতার উপকারিতা গুলো।

চুলের গোড়া শক্ত করেঃ সপ্তাহে ২-৩ দিন মাথায় পুদিনা পাতার রস ব্যবহারের ফলে চুলের গোড়া শক্ত এবং মজবুত হবে। চুল মজবুত করতে পুদিনা পাতার পেস্ট বানিয়ে চুলের গোড়াতে পারেন অথবা পুদিনা পাতার রস বের করেও চুলের গোড়াতে লাগালে চুল শক্ত এবং মজবুত হবে।

মাথার ত্বকের সমস্যা দূর করেঃ পুদিনা পাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান থাকায় , পুদিনা পাতার রস মাথায় ব্যবহারের ফলে মাথার ত্বকের যে কোন ধরনের ফাঙ্গাল ইনফেকশন গুলো দূর হয় এবং মাথার ত্বক ভালো থাকায় চুলের গোড়া শক্ত হয়।

মাথার উকুন দূর করেঃ মাথায় উকুনের সমস্যা অনেকেরই থাকে , আর এই উকুনের সমস্যা দূর করতে অনেক সময় হিমশিম খেতে হয়। পুদিনা পাতার রস মাথার উকুন দূর করতেও বিশেষ সাহায্য করে থাকে। সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন নিয়ম করে যদি পুদিনা পাতার রস মাথায় একমাস ব্যবহার করা যায় তাহলে মাথার উপর সম্পূর্ণরূপে দূর হয়ে যাবে। মাথায় পুদিনা পাতা রস মেখে হেয়ার ক্যাপ দিয়ে  চুলগুলো ঢেকে রাখুন ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট এরপর ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। খুব কম সময়ের মধ্যে দেখবেন আপনার মাথা থেকে সমস্ত উকুন দূর হয়ে গেছে।

পুদিনা পাতার অপকারিতা

এতক্ষণ ধরে আলোচনায় আমরা পুদিনা পাতার বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা কথা , চুলের যত্নের কথা ত্বকের যত্নের কথা সম্পর্কে জেনেছি। পুদিনা পাতার এত উপকারিতা সম্পর্কে জেনে অনেকে হয়তো ধারণা করতে পারে বুকেই এই পাতার শুধু মনেহয় উপকারিতায় রয়েছে , কিন্তু ব্যাপারটি মোটেও তেমনটি নয়। যতই স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকুক না কেন পুদিনা পাতারও কিছু অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। উপকারিতার কথা ভেবেই যদি মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করে থাকি তাহলে সে ক্ষেত্রে পুদিনা পাতার অপকারিতা গুলো আমাদেরকে সমস্যায় ফেলতে পারে। তাই ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই ভালোভাবে অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে পুদিনা পাতার অপকারিতা গুলো জেনে নিতে হবে।আজকে আমরা এই পোস্টটির পুদিনা পাতার অসাধারণ ১৫টি উপকারিতা জানার পাশাপাশি , পুদিনা পাতার অপকারিতা গুলো জেনে নেব। যারা পুদিনা পাতার অপকারিতা গুলো জানেন না তারা অবশ্যই ব্যবহারের পূর্বে পুদিনা পাতার অপকারিতা গুলো ভালোভাবে জেনে নিন।

অতিরিক্ত পুদিনা পাতার রস সেবনের ফলে শরীরে শর্করার মাত্রা কমে যেতে পারে যার কারণে ডায়াবেটিস রোগীরা পড়তে পারেন বিড়ম্বনায়, শুধু শর্করার মাত্রা কমানোই নয় পুদিনা পাতার রস ডায়াবেটিস রোগের ঔষধ এর সাথেও বিক্রিয়া করে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে তাই ডায়াবেটিস রোগীরা এই পাতার রস সেবনের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করবেন। শুধু ডায়াবেটিস রোগীরাই নয় রক্তচাপ , এবং যাদের পেটে অতিরিক্ত এসিডিটি হয় এবং এসিডিটি দূর করার জন্য ঔষধ সেবন করেন সে ধরনের রোগীরা অবশ্যই পুদিনা পাতার রস এড়িয়ে চলুন কারণ এইসব রোগের ওষুধের সাথে পুদিনা পাতা বিক্রিয়া করে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

আরো পড়ুনঃ কমলার খোসার উপকারিতা

অতিরিক্ত পুদিনা পাতা ত্বকে ব্যবহারের ফলে এলার্জি , মাথাব্যথা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং পুদিনা পাতা ছোট বাচ্চাদের শ্বাসকষ্ট এবং মুখে জ্বালাপোড়ার কারণ হতে পারে। এ কারণে পাতার যে কোন ব্যবহার বাচ্চাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার সময় অবশ্যই সতর্ক থাকবে। পারো তো পক্ষে শিশুদের ক্ষেত্রে পুদিনা পাতা ব্যবহার না করাই উত্তম। পুদিনা পাতার মাত্রাতিরিক্ত সেবনের ফলে হতে পারে ডায়রিয়ার সমস্যা। এছাড়াও যারা ব্রেস্ট ফিডিং করান এবং যারা লিভারের রোগী রয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে পুদিনা পাতার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

মন্তব্য, ঔষধি গুন সম্পন্ন যে কয়েকটি পাতা রয়েছে তার মধ্যে পুদিনা পাতা অন্য পুদিনা পাতায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা, এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা পুদিনা পাতার অসাধারণ ১৫টি উপকারিতা কথা জেনেছি । আশা করছি পুদিনা পাতার অসাধারণ ১৫টি উপকারিতা জানতে পেরে আপনারা উপকৃত হয়েছে , তবে উপকারিতার পাশাপাশি এই যেহেতু কিছু অপকারিতা রয়েছে তাই পুদিনা পাতা সেবনের পূর্বে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে না হলে হতে পারে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা। তাই পুদিনা পাতা সেবনের পূর্বে অবশ্যই এর অপকারিতা গুলো মনোযোগ দিয়ে করুন এবং জেনে নিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url