প্রেসার লো হলে করণীয় ১৫টি কাজ - লো প্রেসার কত
অনেকেই লো প্রেসারের সমস্যায় ভুগে থাকেন। সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে লো প্রেসারও ডেকে আনতে পারে বড় ধরনের বিপদ। লো প্রেশার শুধু পানি শূন্যতা বা অপুষ্টির কারণেই নয় জটিল কিছু রোগের উপসর্গ হিসেবে প্রকাশ পেতে পারে। আজকে আপনাদের জানাবো প্রেসার লো হলে করণীয় ,লো প্রেসার কেন হয় এবং লো প্রেসার কত তা সম্পর্কে ।এ পোস্টে আপনারা জানতে পারবেন প্রেসার লো হলে করণীয় ১৫টি কাজ।
এখন আপনাদের জানাবো প্রেসার লো হলে করণীয় ১৫টি কাজ ছাড়াও আরো বেশ কিছু বিষয় যেমন - প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ,লো প্রেসার কেন হয়,লো প্রেসার কত ইত্যাদি।প্রেসার লো হলে করণীয় ১৫টি কাজ এর পাশাপাশি আপনি যদি লো প্রেশার সম্পর্কে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলো জানতে চান তাহলে অবশ্যয় পুরো পোস্ট মনোযোগ সহকারে পড়ুন।তাহলে চলুন আর দেরী না করে পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে জেনে নেয়া যাক প্রেসার লো হলে করণীয় ১৫টি কাজ।
সূচিপত্রঃ প্রেসার লো হলে করণীয় ১৫টি কাজ - লো প্রেসার কত
লো প্রেসার কেন হয়
লো পেশার হওয়ার পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। লো প্রেসার অধিকাংশ ক্ষেত্রে বংশগত কারণে হয়ে থাকিও এর পেছনে উল্লেখযোগ্য আরো বেশ কিছু কারণ দেখতে পাওয়া যায়। অনেক সময় লো প্রেসার দীর্ঘমেয়াদি অথবা জটিল কিছু রোগের লক্ষণ হিসেবেও প্রকাশ পেয়ে থাকে। এখন আপনাদের জানাবো লো প্রেসার কেন হয় তার সম্ভাব্য কারণ গুলো। তাহলে চলুন আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক লো প্রেসার কেন হয় তার কারণ, লো প্রেসার হওয়ার পেছনে থাকতে পারে
- পুষ্টির ঘাটতি
- হরমোনের সমস্যা
- ঘুমের সমস্যা
- ডিহাইড্রেশন
- মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা
- সময় মতন এবং পরিমাণ মতন খাবার না খাওয়া
- অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম
- হজমের সমস্যা
- ডায়রিয়া
- রক্তশূন্যতা
- হার্টের সমস্যা
- লিভারের অসুখ
- কিডনির সমস্যা
- নার্ভের সমস্যা
- নিউরোলজিক্যাল প্রবলেম
- বিভিন্ন ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- গর্ভকালীন অবস্থা
লো প্রেসার কত
আমাদের মাঝে লো প্রেশারের রোগী অনেকেই রয়েছেন ,যারা নাকি নিম্ন রক্তচাপের সমস্যায় ভুগে থাকেন। যারা এরকম লো প্রেসারে সমস্যাই রয়েছেন বা যাদের বাসায় লো প্রেসারে রোগী রয়েছে তাদের প্রত্যেকের জানা উচিত লো প্রশার কত অর্থাৎ রক্তচাপের কোন মাত্রাকে লো প্রেসার হিসেবে ধরা হয়।লো প্রেসার কত এই বিষয়ে সঠিক জ্ঞান রাখা এ কারণে প্রয়োজন কারণ সঠিক সময় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে লো প্রেসারও মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।তাই চলুন লো প্রেসার কত তা ভালোভাবে জেনে নেয়া যাক।
আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন যে প্রেসার মাপার সময় রক্তের সিস্টোলিক ও ডায়স্টলিক চাপ দুইটি লক্ষ্য করা হয়, তাই লো প্রেসার কত তা বোঝার জন্য সিস্টোলিক ও ডায়স্টলিক রক্তচাপ সম্পর্কে সাধারণ ধারনা থাকা দরকার। সিস্টোলিক ও ডায়স্টলিক রক্তচাপ বলতে যেটির বোঝায় সেটি হল- হৃদপিণ্ড সংকুচিত হলে রক্ত ধমনীতে প্রবেশ করে এবং প্রসারিত হলে রক্ত আবার হৃদপিন্ডে ফিরে আসে। হৃদপিণ্ড সংকোচনের ফলে রক্তচাপের যে অবস্থা সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় সিস্টোলিক চাপ এবং হৃৎপিণ্ড প্রসারণের ফলে যে চাপের ফলে রক্ত হৃৎপিণ্ডে ফিরে আসে তাকে বলা হয় ডায়াস্টলিক চাপ
আরো পড়ুনঃ ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ
প্রেসার মাপার সময় ওপরেরটাকে বলা হয় সিস্টোলিক এবং নিচের টাকে বলা হয় ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ। একজন সুস্থ বা স্বাভাবিক মানুষের সিস্টোলিক রক্তচাপের মাত্রা থাকা দরকার ১২০ মি.মি পারদের চেয়ে কম এবং ডায়স্টলিক রক্তচাপ থাকা দরকার ৮০ মি.মি পারদ।এখন আমাদের জানার বিষয় হল রক্তচাপের এই স্বাভাবিক মাত্রাটি কত কম হলে তাকে লো প্রেসার বলা যাবে। সাধারণত সিস্টোলিক রক্তচাপ যদি ৯০ মি.মি পারদ এর চেয়ে কম হয় ও ডায়স্টলিক রক্তচাপ ৬০ মি.মি পারদ এর চেয়ে কম হয় তাহলে রক্তের এ মাত্রাকে লো প্রেশার বা নিম্ন রক্তচাপ বলা হয়।
প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ
অনেক মানুষ আছে যাদের ক্ষেত্রে দেখা যাই প্রেশার সামান্য লো থাকলেও কোন সমস্যাই হয় না, আবার অনেকে আছে যাদের প্রেশার একটু লো হতেই দেখা যাই শারীরিক সমস্যা হতে।পেশার লো হলে সঠক সময় প্রয়জনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ গুলো জেনে রাখা দরকার।তাই এবার আপনাদের জানাবো প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ গুলো।এ সব লক্ষন গুলো অনুভব করলে দ্রুত ব্লাড প্রেশার চেক করা উচিত , প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ গুলো হলো
- মাথা ঘোরা ,বিশেষ করে বসা অবস্থ্যা থেকে উঠে দাঁড়ালে
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
- বেশি বেশি পিপাসা লাগা
- হার্ট বিট কমে যাওয়া
- চোখে ঝাপসা দেখা
- শরীর দূর্বল লাগা
- ঘন ঘন পিপাসা লাগা
- হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
- মাথা ব্যাথা
- ঘাড় ব্যথা বা ঘাড়ের রগে টান অনুভব করা
- মানসিক অবসাদে ভোগা
প্রেসার লো হলে করণীয়
এবার আপনাদের জানাবো প্রেশার লো হলে করনীয় কি সেই বিষয়ে কারণ লো প্রেশারের যেহেতু কোন ঔষধ নেই তাই ঘরোয়া উপায় গুলো ফলো করেই লো প্রেশারকে স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে হয়। আপনার অনেকেই হয়ত লো প্রেশার স্বাভাবিক করার উপায় গুলো মোটামুটি ভাবে জানেন।তবে সকলের এ বিষয় গুলো জানা নাও থাকতে পারে, যারা প্রেসার লো হলে করণীয় বিষয় সম্পর্কে জানেন না তাদের কে প্রেসার লো হলে করণীয় কিছু কার্যকরী টিপস জানাবো। তাই দেরী না করে চলুন জেনে নেয়া যাক প্রেসার লো হলে করণীয় কি।প্রেসার লো হলে করণীয় ১৫টি কাজ নিচে তুলে ধরা হলো।
খাবার স্যালাইন বা লবন পানি খাওয়াঃ লো প্রেশারকে দ্রুত স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারে খাবার স্যালাইন বা লবন পানি খাওয়া। প্রেশার লো হয়ে গেলে খাবার স্যালাইন বানিয়ে ঘন ঘন খেতে থাকুন।বেশ কয়েকবার খেলেই দেখবেন লো প্রেশার অনেকটাই স্বাভাবিকে চলে এসেছে ,খাবার স্যালাইনের পরিবর্তে আপনি লবন পানিও খেতে পারেন।
ক্যাফেইন যুক্ত খাবার খানঃক্যাফেইন যুক্ত খাবার যেমন - কফি ,সফট ড্রিংসা আথাবা হট চকলেট জাতীয় খাবার গুলো রক্তের চাপ বাড়াতে সাহায্য করে। এ কারণে রক্তচাপ স্বাভাবিকের তুলনায় নিচে নেমে গেলে ক্যাথাইন যুক্ত খাবার গুলো খাওয়ার চেষ্টা করুন, এই খাবারগুলো আপনার নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে।
পুদিনা পাতাঃ পুদিনা পাতাও রক্তচাপ বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে কারণ পুদিনা পাতায় রয়েছে ভিটামিন সি , প্যান্টথেনিক , ম্যাগনেসিয়াম , পটাশিয়াম জাতীয় খনিজ উপাদান , যে উপাদান গুলো রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। তাই প্রেসার লো থাকলে পুদিনা পাতার রসের সাথে মধুর মিশিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
কিসমিসঃ অনেকেই জানেন কিসমিস বা কিসমিস ভেজানো পানি খেলে লো প্রেশারের সমস্যা দূর হয়।প্রেসার লো হলে কিসমিস কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রেখে ভেজানো কিসমিস এবং পানি গুলো খেয়ে ফেলুন।
আরো পড়ুনঃ কিসমিসের উপকারিতা
দুধ ও মধুঃ লো প্রেশারের ঔষধ হিসেবে দুধ ও মধু দুটোই খুবই কার্যকরি উপাদান।হালকা গরম দুধের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে ,লো প্রেসার বাড়াতে এটি দ্রুত কাজ করবে।
ডিমঃ দ্রুত লো প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে আনতে খেতে পারেন ডিম। প্রেশার লো থাকলে ১/২টি সিদ্ধ খেলে খুব তাড়াতাড়ি প্রেসার এর চাপ বাড়াতে সাহায্য করে।
বিটঃ বিটের রস ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। যেহেতু বিটের রস ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে তাই উচ্চ রক্তচাপ বা নিম্ন রক্তচাপ যাই হোক না কেন তা স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে সাহায্য করতে পারে বিট। একারণে প্রেসারের সমস্যা থাকলে বিটের রস পান করলে প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
হাটাহাটি করুনঃ প্রেসার লো হলে এক জায়গাতে চুপচাপ শুয়ে বসে না থেকে
আস্তে আস্তে হাঁটাচলা করার চেষ্টা করুন। হাটাহাটি করলে রক্তচাপ বাড়ে এবং
লো প্রেসারে সমস্যা সমাধান হয়। তাই প্রেশার লোক থাকলো অবশ্যই ধীরে ধীরে
হাঁটাহাঁটি করুন ।
পানি পান করুনঃ অনেক সময় ডিহাইড্রেশনের কারণেও প্রেসার লো এর
মতন ঘটনা ঘটে এই কারণে প্রেসারের চাপ কম থাকলে বারবার পানি খাওয়ার চেষ্টা
করুন।
ডাবের পানি পান করুনঃ প্রেসার দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে পান করতে পারেন
ডাবের পানি। ডাবের পানি আপনার প্রেসার কে নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে নিয়ে আসার
পাশাপাশি শরীর থেকে পানি শূন্যতা দূর করবে এবং পুষ্টি চাহিদা পূরণ করব।
মানসিক চাপমুক্ত থাকুনঃ প্রেসার লো হওয়ার আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ
হতে পারে মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা। অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তার
কারণে প্রেসার লো হয়, তাই প্রেসার যদি স্বাভাবিক তুলনায় কম হয়ে যায়
তাহলে অবশ্যই চেষ্টা করুন মানসিক চাপমুক্ত থাকতে। মানসিক চাপমুক্ত থাকলে
দ্রুত প্রেসার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
পুষ্টিকর খাবার গ্রহণঃ দীর্ঘক্ষণ খাবার না খেয়ে থাকলে অথবা শরীরে
পুষ্টি ঘাটতি থেকেও লো প্রেসার এর সমস্যা দেখা দিতে পারি। তাই প্রেসার লো হলে
খালি পেটে না খেয়ে বারবার অল্প করে খাবার চেষ্টা করুন এবং মনে রাখবেন সেই
খাবারগুলো অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার হতে হবে।
ঘুমের ঘাটতি দূর করুনঃ পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বা দৈনিক যদি ঘুমের ঘাটতি
করতে থাকে তাহলে একসময় লো প্রেসার এর মতন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই প্রেসার
স্বাভাবিক রাখতে বা লো প্রেসারের সমস্যা দূর করতে ঘুমের ঘাটতি দূর করা একান্ত
প্রয়োজন। তাই প্রেসার লো হলে অন্যান্য নিয়মকানুন গুলো ফলো করার
পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুমের ব্যবস্থা করুন।
রক্তশূন্যতা দূর করুনঃ লো প্রেসার হলে খেয়াল রাখতে হবে শরীরের
রক্তশূন্যতা রয়েছে কিনা কেননা অনেক সময় শরীরে পর্যাপ্ত রক্ত না থাকলে অথবা
রক্তশূন্যতা থাকলেই প্রেসার লো হওয়ার মতন সমস্যা দেখা দিতে পারে তাই যেসব
খাবারে রক্তশূন্যতা দূর হয় সেই খাবারগুলো অবশ্যই খাদ্য তালিকায় যুক্ত
করার মাধ্যমে দ্রুত লো প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম না করাঃ অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করার ফলেও লো প্রেসার হয়। লো প্রেসার হলে অবশ্যই শারীরিক পরিশ্রম হয় এই জাতীয় কাজগুলো বন্ধ রাখতে হবে কারণ যেহেতু অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমের ফলের লোক প্রেসার হতে পারে তাই এই অবস্থায় যদি আবারো পরিশ্রম করা হয় তাহলে প্রেসার অতিরিক্ত নিচে নেমে গিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
আরো পড়ুনঃ হার্টের সমস্যার লক্ষণ
মন্তব্য, এতক্ষনের আলোচনায় আপনারা নিশ্চয় প্রেসার লো হলে করণীয় ১৫টি কাজ এবং লো প্রেসার কত এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জেনে নিয়েছন। যেহেতু বিস্তারিতভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রেসার লো হলে করনীয় বিষয় সম্পর্কে তাই অবশ্যই প্রেশার লো হলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। আপনারা জানেন প্রেসার লো এর অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে পানি শূন্যতা এবং পুষ্টির অভাব তাই নিম্ন রক্তচাপ দেখা দিলে অবশ্যই স্যালাইন বা তরল জাতীয় খাবার , এবং পুষ্টিকর খাবার নিয়মিত খাওয়ার চেষ্টা করুন।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url