কুরআনের ফজিলত পূর্ণ সূরা গুলোর মধ্যে সূরা কাহাফ একটি। আর আজকে আপনাদেরকে সূরা কাহাফ এর ফজিলত এবং আজহাবে কাহাফের ঘটনা জানাবো। আসহাবে কাহাফের একটি অলৌকিক ঘটনা রয়েছে যেই ঘটনাটি অনেকেই হয়তো জানে না। যারা আসহাবে কাহাফ এর ঘটনা জানেন না তারা এই পোষ্টের মাধ্যমে এই অলৌকিক ঘটনাটি সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন এবং এর পাশাপাশি সূরা কাহাফ এর ফজিলত সম্পর্কেও জানতে পারবেন।
আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা সূরা কাহাফ এর ফজিলত এবং আসাবে কাহাফ এর ঘটনাটি জেনে নেওয়ার পাশাপাশি আরো জানতে পারবেন সূরা কাহা কুরানের কততম সূরা এবং এই সূরাটি কুরআনের কত পারায় রয়েছে। তাহলে চলুন আর দেরি না করে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে সূরা কাহাফ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
সূরা কাহাফ নাযিল হওয়ার শানে নযুল
দুষ্ট প্রকৃতির কুরাইশগণ ইয়াহূদীদের কাছে হাজির হয়ে বলেছিল যে, আমাদের এমন এক অজানা ঘটনা বলে দাও যা সাধারণ লোক জানে না। আমরা হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে ওই ঘটনার বিষয় জিজ্ঞাসা করে তার নবুয়তের সত্যতা সম্পর্কে পরীক্ষা করব অথবা ইয়াহুদিরা আসহাবে কাহফ অর্থাৎ গুহাবাসী যুবকদের ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার কথা শিখিয়ে দেয় এবং এ কথা বলে দেয় যে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) নিরক্ষর হয়েও যদি ওই ঘটনা সঠিকভাবে বলতে পারে তবে তাকে সত্য নবী বলে বিশ্বাস করবে। তারা নবী করীম (সঃ)এর কাছে এসে আসহাবে কাহাফ এর ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে এর উত্তরে আল্লাহ তায়ালা এই সুরা অবতীর্ণ করেন। আল্লাহ তায়ালার অসীম কুদরতের অলৌকিক ঘটনা সম্পর্কে বর্ণনা করে হয়েছে বলে এ সূরার আমল দ্বারা আশ্চর্যজনক বহু ফজিলত লাভ ও অসাধারণ কাজ সমাধা হয়েছে এই সূরাকে করুন মাজিদের ছুরি বলা হয়। এজন্য এই আমল দ্বারা খুব তাড়াতাড়ি ফল পাওয়া যায় ও জ্বীন হাসিল করা যায়।
আসহাবে কাহাফের ঘটনা
আসহাবে কাহাফ এর একটি অলৌকিক ঘটনা রয়েছে , আজকে আপনাদেরকে আসহাবে কাহাফের ঘটনা জানাবো। কেননা অনেকেই হয়তো আসহাবে কাহাফের ঘটনা জানেন না এবং একজন মুসলমান হিসেবে কুরআনের এই ফজিলত পূর্ণ সূরাটির ঘটনা জেনে রাখা উচিত। তাহলে চলুন আর দেরি না করে আসহাবে কাহাফের ঘটনা এর বর্ণনা জেনে নেওয়া যাক। নিচে আসহাবে কাহাফের ঘটনা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
আফসুন শহরের দাকিয়ানুস নামে এক মূর্তিপূজক রাজা ছিল। সে তার রাজ্যের লোকেদেরকে মূর্তি পূজা করার জন্য অত্যাচার করত। নিম্নোক্ত সাত জন ধর্মপরায়ণ যুবক তার অত্যাচার হতে মুক্তি লাভ করার জন্য আল্লাহ তায়লার কাছে দোয়া করেন। তিনি আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করে তাদেরকে এক পাহাড়ের গুহায় ৩০৯ বছর কাল যাবত ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে দেন। তারা পুনরায় জাগ্রত হয়ে আবার মৃত্যুবরণ করেন। কারো কারো মতে তারা কিয়ামতের পূর্বে পূনঃজাগ্রিত হয়ে হযরত ইমাম মাহদীর সাথী হবেন। একটু কুকুরও তাদের সাথে ছিল। কুকুর সহ আটজনকে আসহাবে কাহফ বা গুহাবাসী বলে এ ঘটনাকে অবলম্বন করে এই সূরা নাযিল হয়। কথিত আছে যে হযরত আবু সাঈদ মুহাম্মদ মুফতি (রঃ) দেখে দেখে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে আমরা বরকত হাসিলের জন্য আপনার নাম গুলো লিখে রাখি, কিন্তু কোন ফল পায় না কেন। তার এ প্রশ্নের উত্তর বলেছিল যে বরকত হাসিলের জন্য আমার নাম গুলো বৃত্তাকারে লিখতে হয় এবং মধ্যস্থলে কুকুরটির নাম লিখতে হয়। আসহাবে কাহফের নামসমূহঃ
মাকসেলাইনিয়া
মাসলিনিয়া
কাফশাততাইয়ুশ
শাযনূশ
মারনূশ
ইয়ামলীখা
দাবাররূশ
কিত্বমীর (কুকুরটার নাম)
আসহাবে কাহফের ঘটনায় আল্লাহ তায়ালা মানব সমাজের সম্মুখে তাঁর অসীম এক কুদরত ও শক্তির এক উজ্জ্বল তুলে ধরেছেন। আসহাবে কাহফের যুবকগণ ৩০৯ বছর যাবত ঘুমন্ত অবস্থায় থাকার পর যখন তাঁরা জাগ্রত হয়েছিল তখন তাঁরা মনে মনে ধারণা করছিল যে, ঘুমন্ত অবস্থায় তারা একদিন বা একদিনের কিছু অংশ ব্যয় করেছে। ঘুম থেতে ওঠার পর সাধারণত মানুষ যেমন ক্ষুধা পায় তেমন আসহাবে কাহফের লোকেরজনেরাও ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছিল । তাই তাড়াতাড়ি সাথী এক যুবককে দাকিয়ানুছ বাদশার আমলের এক মুদ্রা নিয়ে বাজার হতে কিছু খাদ্য ক্রয় উদ্দেশ্যে পাঠালো । যুবকটি বাজারে গিয়ে খাদ্যবস্তু ক্রয় করে বিক্রেতাকে ওই মুদ্রাটি দিলে সে ঐ মুদ্রাটি গ্রহণ করতে অস্বীকার করলো এবং বলল, এ বাদশাহের আমল অতিবাহিত হয়ে গেছে আজ প্রায় তিনশত বছর পূর্বে। এখন এ মুদ্রা বাজারে চলে না।
যুবকটি এটা জানতে পেরেছি পাহাড়ের গুহায় তাদের সাথীদের কাছে গিয়ে জানালো। আল্লাহর ইচ্ছায় তারা আবার ঘুমিয়ে পরল। এ ঘুমে তারা আল্লাহ তায়ালার অসীম কুদরত ও রহমতের ওই পাহাড়ের গুহায় কিয়ামত পর্যন্ত অবস্থান করবেন। যেহেতু তারা আল্লাহর নিরাপত্তা ও রহমতপ্রাপ্ত, তাই তাদের নামসমূহ নিরাপত্তা ও রহমত আনয়ন করে। এ নামসমূহ যেখানে থাকে সেখানে আল্লাহ তায়ালা রহমত অবতীর্ণ হয়। তাই এ নামসমূহ দ্বারা বিপদ আপদ হতে নিরাপদ থাকা চাই এবং অশান্তি বিদূরিত হয়। এ সূরায় লিখে বোতলে ভরে রাখলে এই যে যেহেতু পাহাড়টির গুহায় আল্লাহ তায়ালার বিশেষ হেফাজতের নিরাপত্তায় আছেন। তাই তাদের নামসমূহ ঘটনা বর্ণিত বর্ণনা লিখে হেফাজত করে রাখলে বিশেষ। আশা করি আসহাবে কাহাফের ঘটনা জানতে পারলেন।
সূরা কাহাফ এর ফজিলত
আসহাবে কাহাফের ঘটনা জানার পরে এবার চলুন সূরা কাহফের ফযীলত জেনে নেওয়া যাক। কিন্তু সূরা কাহাফ এর ফজিলত অনেক। আমাদের মধ্যে অনেকেই সূরা কাহাফ এর ফজিলত জানেন না। এবং অনেকে হয়তো সূরা কাহাফ এর ফজিলত না জানার কারণে এই সূরাটি নিয়মিত আমলও করেননা। তাই আজকে আপনাদেরকে সূরা কাহাফ এর ফজিলত জানাবো কারণ, তাহলে হয়তো আপনারা বুঝতে পারবেন এই সূরাটি আমল করা কেন প্রয়োজন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে সূরা কাহাফ এর ফজিলত জেনে নেওয়া যায়।সূরা কাহাফ এর ফজিলত বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক বেশি।
(১) প্রতি শুক্রবার জুমুয়ার নামাযের পর এ সূরা তিলাওয়াত করলে রূযীতে বরকত লাভ হয়।
(২) এই সূরা লিখে বোতলে ভরে রাখলে অভাবের চিন্তা থেকে নিশ্চিন্তে থাকা যায় এবং ওই ঘরের লোককে কেউ কোনদিন ক্ষতি করতে পারে না ।
(৩) হযরত ইবনে আব্বাস (আঃ) হতে বর্ণিত যে কোন ঘরে আগুন লাগলে একখানা কাপড়ে আসহাবে কাহফের নামগুলো লিখে নামগুলো কাপড়খানা অগুনের মধ্যে ফেলে দিলে নিভে যায়।
(৪) এই নাম গুলো লিখে স্ত্রীলোকের বাম পাশের বাজুতে বেঁধে দিলে সহজে সম্মান প্রসব হয় ও তাবিজ বানিয়ে দিয়ে রাখলে প্রাণনাশ হতে রক্ষা পাওয়া যায়। নৌকায় বেঁধে রাখলে নৌকার পানিতে ডুবে না, সাথে রাখলে টাকা-পয়সার সচ্ছলতা আসে সম্মান বাড়ে।
(৫) শিশু কাঁদতে থাকলে এই নামগুলো লিখে তার বালিশের নিচে রেখে দিলে কান্না বন্ধ হয়ে যায়।
(৬) জ্বীন বাধ্য করার জন্য এই সূরার আমলে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। কিন্তু জ্বীন হাসিল করার চেষ্টা করা বিপদজনক বলে, ইচ্ছা থাকলেও অনেকে এ কঠিন কাজে অগ্রসর হতে চাই না। নিয়মের ব্যতিক্রম হলে কিংবা খুব সাহস না থাকলে এ বিপদ সংকুল কাজ করা উচিত নয়।
কোন বিজ্ঞ আলেম কিংবা পীরের তত্ত্বাবধান ও নির্দেশ ব্যতীত এই আমল চেষ্টা না করতে নিষেধ করা হচ্ছে। এ আমল করতে হলে ৪০ দিন পর্যন্ত অজুর সাথে প্রতি রাতে নির্জন ঘরে বসে ৭৫ আয়াত হতে শেষ আয়াত পর্যন্ত তিলাওয়াত করতে হবে। অর্থাৎ "ক্বালা আলাম আকুল"। পারার প্রথম আয়াত হতে সূরার শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করবে। আয়াতসমূহের মধ্যে হযরত খিযির (আঃ)-এর অসাধারণ শক্তির বর্ণনা, যুলক্বারনাইনের এয়াজুজ মাজুজ দমন করার ঘটনাসমূহ ও বিস্তারের বর্ণনা করার গুলো এত বেশি ফযিলত পূর্ণ হয়েছে এই আয়াতগুলো ১৪ দিন আমলের পর বিভিন্ন নিদর্শন দেখতে হবে ও সাহসের পরীক্ষা শুরু হবে এ সময় সাহসের সাথে উত্তীর্ণ হতে পারলে দিন হাসিল সম্ভব অন্যথায় বিপদের সম্মুখীন হওয়া রয়েছে আশঙ্কা রয়েছে।
সূরা কাহাফ কত নম্বর সূরা
আপনাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না সূরা কাহাফ কত নম্বর সূরা অথবা কুরআনের সূরা গুলোর ক্রম অনুযায়ী সূরা কাহাফ কত তম সূরা। আপনারা জানা জানেন না সূরা কাহাফ কত নম্বর সূরা তাদের জন্য আজকে এই বিষয়টি জানাবো। সূরা কাহাফ হলো কুরআনের ১৮ তম সূরা।
সূরা কাহাফ কত পারায় আছে
এবার জানুন সূরা কাহাফ কত পারায় আছে। সূরা কাহাফ কত পারায় আছে এই বিষয়টি জানা থাকলে , আমল করার সময় দ্রুত এই সূরাটি খুঁজে পেতে আপনাদের সাহায্য হবে তাই এবার আপনাদেরকে জানাবো সূরা কাহাফ কত পারায় আছে। সূরা কাহাফ শুরু হয়েছে কুরআনের ১৫ পারায় এবং ১৬ পারাতেও এর অংশ বিশেষ রয়েছে।
মন্তব্য, উপরিক্ত উপস্থিত পড়ার মাধ্যমে আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই সূরা কাহাফের ফজিলত সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন এবং জানতে পেরেছেন এই সূরা ফজিলত কত বেশি। তাই ফজিলতপূর্ণ এই সূরাটিকে আপনাদের আমলের তালিকায় রাখতে পারেন এবং এর আমলের মাধ্যমে অশেষ সব হাসিল এবং দুনিয়াবী বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে নিতে পারেন। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াতের তৌফিক দান করুন (আমিন)।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url