রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন মিরাজে গমন করেন তখন তিনি জান্নাতে উপস্থিত হয়ে "হাউযে-কাউযেরর" উৎস স্থল কোথায় তা জানার জন্য আল্লাহর কাছে আরজ করেন। আল্লাহ তায়ালার আদেশ হলো, " তুমি নহরটির কিনারা ধরে তার উৎস স্থলের দিকে অগ্রসর হও"। হযরত (সাঃ) বহুদূর চলেও তার উৎস স্থল দেখতে পেলো না। পুনরায় আরজ করলেন, "হে আমার রব! তুমি অনুগ্রহ করে আমাকে দেখিয়ে দাও, নতুবা আমি দেখতে পাবো না।" আদেশ হলো "তুমি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম বলে অগ্রসর হউ"। এবার রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সামান্য একটু অগ্রসর হতেই দেখতে পেলেন একটি প্রকাণ্ড বাক্সের মধ্য থেকে তা প্রবাহিত হচ্ছে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বাক্সের ভেতরে কি আছে তা জানার জন্য দুয়া করলেন। আদেশ হলো "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীমের পড়ে বাক্সের দরজায় আঘাত করো। " রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বাক্সের ধারে আঘাত করলে তা খুলে গেল। হযরত (সাঃ) দেখতে পেলেন ঐ বাক্সের মধ্য শুধু "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম" লিখিত রয়েছে। তাসমিয়াহ শরীফের "মীম" অক্ষরের প্রান্ত হতে হাউযে কাউছারের অমৃত ধারাটি বহির্গত হচ্ছে।
বিসমিল্লাহ বলার ফজিলত
১| হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ তায়ালা কোন নবীর প্রতি অহি পাঠিয়েছিলেন যে কেউ জীবনে ৪ হাজার বার বিসমিল্লাহ পড়েছে বলে তার আমলনামায় লেখা থাকলে হাশরের দিন তার পতাকা আরশের নিকট স্থাপিত হবে। (তাঃ কবীর)
২| হযরত উমর (রাঃ) কেবল বিসমিল্লাহ লিখিত একটি টুপী পাঠিয়ে রোম সম্রাটের শিরঃপীড়া আরোগ্য করেছিলেন। হযরত খালিদ (রাঃ) একজন অগ্নিপূজকের প্রস্তাব অনুসারে ইসলামের গৌরব প্রদর্শন কররার জন্য বিসমিল্লাহ বলে বিষ পান করিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কোন ক্ষতি হয়নি।
৩| হযরত নূহ (আঃ) এই আয়াতের কল্যাণে মহা প্লাবনের সময় রক্ষা পেয়েছিলেন। নমরুদের মেয়ে বিপির রহীমা তার গুণী ভীষণ অগ্নিকুণ্ড থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া তাঁর কল্যাণ ফুটন্ত তেলের মধ্যে নিরাপদে ছিলেন। ফিরাউনের প্রাসাদের দরজায় এই পবিত্র এটি রেখে রাখায় বহুদিন আল্লাহর গজব থেকে নিরাপদ ছিলেন। হযরত যায়েদ ইবনে হারিস এরই কল্যাণে এক ভীষণ দৃশমনের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন।
৪| হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, যখন বিসমিল্লাহ শরীফ নাযিল হয় তখন মেঘ প্রবল বেগে পশ্চিমা দিক থেকে পূর্ব দিকে ছুটতে থাকে। বায়ুপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। সমুদ্রের পানিতে প্রবল তরঙ্গে সৃষ্টি হয়। প্রাণীসমূহ কান লাগিয়ে শুনে। শয়তান পালায়। আল্লাহ তাআলা স্বীয় মর্যাদা ও শক্তির শপথ করে বলেন "যে কার্যে বিসমিল্লাহ পড়া হবে আমি তাতে অবশ্যই বরকত দিব।"
৫|যে ব্যক্তি বিসমিল্লাহ শরীফ ৬২৫ বার লিখে সাথে রাখবে মানুষের ওপর প্রভাব বাড়বে এবং কেউই তার বিরোধিতা করতে ও ক্লেশ দিতে পারবে না। (মুজাররাবাত)
৬| যে ব্যক্তি বিসমিল্লাহ শরীফ প্রতিদিন ৭৮৬ বার করে এক সপ্তাহ পর্যন্ত পড়বে সে, যে কাজের নিয়ত করে তিলাওয়াত করবে তাই পূর্ণ হবে । (মুজাররাবাত)
৭| কাকেও আপন ভালোবাসায় আবদ্ধ করতে হলে ৭৮৬বার বিসমিল্লাহ তিলাওয়াত করে এক পেয়ালা পানিতে ফুঁক দিয়ে যার সাথে ভালোবাসা স্থাপন করার উদ্দেশ্যে তাকে পান করতে দেবে। স্মরণ-শক্তিহীন ও মেধা-শক্তিহীন বালক-বালিকা কে উক্ত পানি সাত দিন পর্যন্ত পান করালে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়। (মুজাররাবাত)।
৮| যে ব্যক্তি প্রতিদিন অধিক পরিমাণ বিসমিল্লাহ তিলাওয়াত করবে আল্লাহ তা'আলা তার গুনা মাফ করে দিবেন এবং তারপর লোকগত পিতা-মাতার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।
৯ | অধিক সংখ্যার বিসমিল্লাহ তিলাওয়াত করলে রুজি বাড়বে এবং মানুষ তিলাওয়াতকারীর বাধ্য হবে
১০| এক হাজার বার বিসমিল্লাহ তিলাওয়াত করলে বৃষ্টির পানির ওপর ফুঁকের ৭ দিন পর্যন্ত সূর্যোদয়ের সময় এই পানি পান করলে স্মরণশক্তি ও মেধা শক্তি বাড়ে।
১১| একশতবার বিসমিল্লাহ তিলাওয়াত করলে ব্যাথারস্থানে বা জাদুগ্রস্থ ব্যক্তির উপর ৭ দিন পর্যন্ত ১০০ বার করে ফুঁ দিলে ব্যথা ও জাদু দূর হয়।
১২| যে ব্যক্তি ৪০ দিন পর্যন্ত ফজরের নামাজের পর ২৫০০ বার বিসমিল্লাহ তিলাওয়াত করলে আল্লাহ তা'আলা তার অন্তর খুলে দিবেন এবং বহু অতিষ্ঠ বস্তুর জ্ঞান লাভ করবে সে মানুষের কাছে ভক্তি ও শ্রদ্ধা পাবে.
১৩।প্রতি রবিবার সূর্যোদয়ের সময় কিবলামুখী হয়ে ৩১৩ বার বিসমিল্লাহ ও একশত বাদ দরুদ শরীফ পড়লে রূযী বাড়বে।
১৪| রাত্রিতে শোয়ার সময় ২১বার বিসমিল্লাহ পড়ে শুইলে সেই রাতে শয়তান, চোর, ডাকাত দৈবমৃত্যু, অগ্নিদাহ প্রভৃতি ধরনের বিপদ হতে নিরাপদ এ থাকবে।
১৫| দিন-রাত্র হাজার বার বিসমিল্লাহ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে বিপদ হতে উদ্ধার হবে এবং জেলে হতে মুক্তি পাবে।
১৬| বর্ণিত আছে যে, হযরত উমর (রাঃ) বিসমিল্লাহ লিখিত একটি টুপি প্রেরণ করে রোমের বাদশাহের শিরঃপীড়া আরোগ্য করেছিলেন।
১৭| কথিত আছে যে হযরত নূহ (আঃ) এ আয়াতের ফযীলতে প্লাবণের সময় রক্ষা পেয়েছিলেন।
১৮| মহাবীর খালিদ একবার জনৈক অগ্নিপূজকের প্রস্তাব অনুযায়ী ইসলামের গৌরব প্রদর্শন করার জন্য বিসমিল্লাহ বলে বিষ পান করিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কোন ক্ষতি হয়নি।
১৯| কিতাবে আছে কোন এক ব্যক্তির শেষ উপদেশ মত তার মৃত্যুর পর তার কপালে বুকে বিসমিল্লাহ লিখে দেওয়া হয়েছিল। ওই ব্যক্তি তার বরকতে কবরের আজাব হতে সম্পূর্ণ রক্ষা পেয়েছিল।
২০| বর্ণিত আছে যে ফিরাউনের প্রাসাদে দরজায় এ পবিত্র বাক্যটি লিখিত থাকায় অনেকদিন পর্যন্ত আল্লাহর গজব ওদের নিরাপদে ছিল।
২১| বিসমিল্লাহ শরীফ একচল্লিশ বার পড়ে পাগল, মৃগীগ্রস্ত, জিনে পাওয়া ব্যক্তির কানে ফু দিলে তার আসবে চৈতন্য ফিরে আসবে।
২২| ফজর ও ইশার নামাজের পর ৭২৭ বার বিসমিল্লাহ পড়লে মনের আশা পূরণ হবে এবং সকল প্রকার বিপদ হতে রক্ষা পাবে।
২৩| কথিত আছে ফিরাউনের স্ত্রী বিবি আছিয়া বিসমিল্লাহর বরকতে ফুটন্ত তেলের মধ্যে নিরাপদে ছিলেন
খতমে তাসমিয়াহ
এখন আপনাদের জানাবো খতমে তাসমিয়াহ বলে । কারণ আপনাদের মধ্যে অনেকেই জানে না খতমে তাসমিয়াহ বলে এবং খতমে তাসমিয়া কিভাবে পড়তে হয়। একজন বা কয়েকজন মিলে এক বৈঠকের সোয়া লক্ষবার বিসমিল্লাহ শরীফ পড়াকে "খতমে তাসমিয়াহ" বলে। খতম আরম্ভ করার সময় এবং খতম শেষ করার সময় অন্তত ১১ বার দরুদ শরীফ পড়বে। খতমে তাসমিয়াহর ফযীলত এই যে এর দ্বারা কোন কঠিন বসনা পূরণ হয়। সকল প্রকার বিপদ হতে ও কঠিন দূর হতে রোগ হতে আল্লাহ তায়ালা আরোগ্য করেন।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url