হার্নিয়া থেকে মুক্তির ৭টি উপায় - হার্নিয়া কেন হয়
হার্নিয়া সাধারণত খুব জটিল এক ধরনের রোগ এবং এই রোগের বিশেষ কোনো নির্দিষ্ট বয়স নেই। যদিও নারী এবং পুরুষ উভয়েই রোগে আক্রান্ত হতে পারে তারপরেও এই রোগটি সাধারণত পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই রোগটির কথা প্রায় শোনা যায় এবং সঠিক সময়ে সার্জারির মাধ্যমে এই রোগটি না সারালে সে ক্ষেত্রে মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।
অধিকাংশ মানুষই হার্নিয়া রোগের কথা শুনলে ঘাবরে জান , তবে এই রোগের নাম শুনে ঘাবরালে চলবে না এর সম্পর্কে সঠিকভাবে এবং বিস্তারিত ভাবে জানতে হবে , তাই এ পোষ্টের মাধ্যমে আজকে হার্নিয়া রোগ সম্পর্কে আলোচনা করবো।এছাড়াও এই পোস্টে আপনারা আরো জানতে পারবেন হার্নিয়া অপারেশন না করালে কি হয় , হার্নিয়া কোথায় হয় এবং হার্নিয়া রোগের লক্ষণ সম্পর্কে। এই প্রশ্নের মাধ্যমে শেয়ার করা হার্নিয়া থেকে মুক্তির উপায় গুলো হার্নিয়া রোগ থেকে আপনাদেরকে মুক্ত থাকতে সাহায্য করবে। তাহলে চলুন আর দেরি না করে পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে জেনে নেয়া যাক হার্নিয়া থেকে মুক্তির উপায় এবং হার্নিয়া কেন হয় এ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত।
হার্নিয়া কেন হয়
হার্নিয়া রোগে অনেকে আক্রান্ত হলেও অথবা অনেকেই হার্নিয়ার রোগের নাম শুনে থাকলেও অধিকাংশ মানুষই জানেন না হার্নিয়া কেন হয়। ই বিষয়টি সকলের জেনে রাখা উচিত কেননা আপনি যখন এ বিষয়ে বিস্তারিত জানবেন তখন যে যেই কারণগুলোর জন্য হার্নিয়া হয়ে থাকে সেই কারণগুলো এড়িয়ে চলতে পারবেন। হার্নিয়া হল এক ধরনের জটিল সমস্যা। হার্নিয়া কেন হয় এই বিষয়টি বলার আগে সংক্ষেপে হার্নিয়া কি তা আপনাদের বলে নেয়া উচিত, সাধারণ এবং সংক্ষেপে হার্নিয়া বলতে বোঝায় ক্ষুদ্রান্তের কিছু অংশ পেটের দুর্বল অংশ দিয়ে পন্ডথলিতে এসে পড়ার সমস্যাকে হার্নিয়া বলে অথবা বলতে পারেন আমাদের পেট যে ক্লোজ ক্যাভেটি দিয়ে তৈরি তার কিছু দুর্বল অংশ ভেদ করে যখন চর্বি বের হয়ে আছে পেটের দেয়ালের ভেতরে সেই পরিস্থিতিকেই হার্নিয়া বলে । হার্নিয়ার বিভিন্ন ধরনের রয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের হার্নিয়া বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরনের হার্নিয়া হওয়ার পেছনে যে কারণ গুলো দায়ী সেগুলো হলো,
- দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত কাশি
- অতিরিক্ত হাঁচি
- কোষ্ঠকাঠিন্যের সময় অতিরিক্ত চাপ দেওয়া
- অতিরিক্ত ভারী জিনিস উঠানো
- আঘাত লাগা
- গর্ভাবস্থা
- অতিরিক্ত চাপ দিয়ে প্রসব করানো
- অতিরিক্ত শারীরিক ওজন
- অস্ত্রোপচার
- বমি
- প্রোস্টেট বা মূত্রাশইয়ের রোগ অথবা ক্যান্সার
- ধূমপান করা
- বার্ধক্য
হার্নিয়া রোগের লক্ষণ
এবার আপনাদের জানাবো হার্নিয়া রোগের লক্ষণ সম্পর্ক , হার্নিয়া কেন হয় এ বিষয়টি জানার পাশাপাশি হার্নিয়া রোগের লক্ষণ গুলো জেনে রাখা আপনাদের জন্য খুবই জরুরী কেননা সঠিক সময়ে হার্নিয়া চিকিৎসা করানোর জন্য হার্নিয়া রোগের লক্ষণ গুলো জেনে রাখা দরকার। তাই চলুন আর দেরি না করে এবার হার্নিয়া রোগের লক্ষণগুলো জেনে নিন। হার্নিয়া রোগ হলে যে সকল বা উপসর্গ গুলো প্রকাশ পায় সেগুলো হল,
- আক্রান্ত স্থানে পিন্ড হওয়া
- আক্রান্ত স্থান ব্যথা হওয়া এবং এর চারপাশে জ্বালা হওয়া।
- অন্ডকোষের চারপাশ খুলে যাওয়া ও ব্যথা হওয়া
- বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া
- পেটফোলা
- পেটে প্রচন্ড ব্যথা হওয়া
- পায়ের কুঁচকিতে ব্যথা হওয়া
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- মলত্যাগের সময় অসুবিধা হওয়া
- ভারী কিছু উঠানোর সময় স্থানে ব্যথা হওয়া
- খাবার গিলার সময় অসুবিধা হওয়া
- বুক জ্বালা করা
- হজমের সমস্যা
- নাভির কোন একপাশ অথবা চারপাশ ফুলে যাওয়া
- অধিক সময় দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হওয়া
- সব সময় পেট ভার অনুভব হওয়া
- আক্রান্ত স্থানের আশেপাশের পেশীতে দুর্বলতা অনুভব
- খাবারে অরুচি
- ওজন হ্রাস
আপনারা জানেন ,হার্নিয়া রোগের বিভিন্ন ধরণ রয়েছে। সব ধরনের হার্নিয়ার ক্ষেত্রে যে একই ধরণ লক্ষণ প্রকাশ পাবে এমন কোন কথা নেই । ভিন্ন ভিন্ন হার্নিয়া রোগের জন্য এর লক্ষণ গুলো ভিন্ন হয়ে থাকে। এবং এক এক ধরনের হার্নিয়া রোগের এক এক ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
হার্নিয়া কোথায় হয়
আপনারা জানেন যে ক্ষুদ্রান্তের কিছু অংশ পেটের দুর্বল প্রাচীর ভেদ করে বাইরে আশা অথবা অন্য থলিতে নেমে যাওয়ার রোগটিকে হার্নিয়া বলা হয় , আপনাদের মধ্যে অনেকেই হার্নিয়া কোথায় হয় এই বিষয়ে জানতে চেয়ে থাকে তাই এখন আপনাদেরকে হার্নিয়া কোথায় হয় তা জানাবে। হার্নিয়া নামক রোগটি সাধারণত নাভির আশেপাশে , পেট এবং উরুর সংযোগস্থানে , অন্ড থলিতে এবং পূর্বে পেটের কোথাও সার্জারি হয়েছে এমন স্থানে হয়ে থাকে।
হার্নিয়া থেকে মুক্তির উপায়
হার্নিয়া হলো জটিল এক ধরনের শারীরিক সমস্যা তাই চলুন এবার হার্নিয়া থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।হার্নিয়া রোগ থেকে মুক্ত থাকতে হলে অবশ্যয় হার্নিয়া থেকে মুক্তির উপায় গুলো জানতে হবে। হার্নিয়া থেকে মুক্তি থাকার জন্য যেসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে সেগুলো হলো,
খাদ্য তালিকায় বিশেষ নজর দেওয়াঃ হার্নিয়া রোগ থেকে বাঁচতে হলে খাদ্য তালিকার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে ,খাদ্য তালিকা প্রস্তুতের সময় এসে যুক্ত করতে হবে প্রচুর পরিমাণে টাটকা শাক সবজি এবং ফলমূল এবং নিয়মিত পরিণত পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। ফলমূল এবং শাকসবজি আমাদের শরীরে শক্তি যোগাতে তাই খাদ্য তালিকায় এ সকল খাদ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে যুক্ত করতে হবে।
অতিরিক্ত ভারী জিনিস না উঠানোঃ আপনারা আগে জেনেছেন যে অতিরিক্ত ভারী জিনিস উঠানো হার্নিয়া রোগের একটি কারণ, তাই অতিরিক্ত ভারী জিনিস উত্তোলন করা থেকে বিরত থাকতে হবে আর যদি কখনো ভারি কিছু উঠাতে হয় তাহলে অবশ্যই হাটু ভাঁজ করে উঠাতে হবে কোনভাবেই শুধুমাত্র কোমরের উপরে ভর দিয়ে তোলা যাবেনা।
আরো পড়ুনঃ বিলিরুবিনের মাত্রা কমানোর উপায়
পেশি শক্তিশালী করাঃ হার্নিয়া থেকে মুক্ত থাকতে হলে অবশ্যই আপনার পেশি শক্তিশালী করার চেষ্টা করতে হবে। বেশি শক্তিশালী করার জন্য বেশ কিছু ব্যয়াম আছে সেগুলো আপনি করতে পারেন এবং এর পাশাপাশি যেসব খাবারগুলো বেশি গঠনে সাহায্য করে সেই খাবারগুলোও আপনাকে খেতে হবে।
নিয়মিত শরীর চর্চা করাঃ নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে আপনি শরীরের বিভিন্ন সমস্যা কাটিয়ে ওঠার পাশাপাশি হার্নিয়া নামক রোগ থেকেও মুক্তি পেতে পারেন। নিয়মিত শরীর চর্চার ফলে এটি আমাদের পেশি গঠন বা পেশি মজবুত করার পাশাপাশি দেহের ওজন ঠিক রাখতেও সাহায্য করে। তাই হার্নিয়া থেকে মুক্ত থাকতে নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোঃ হার্নিয়া রোগের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো শরীরের অতিরিক্ত ওজন। তাই আপনার শারীরিক ওজন যদি বয়সের তুলনায় বেশি থাকে তাহলে অবশ্যই এই ওজনকে নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করুন।
প্রসাব পায়খানার অতিরিক্ত চাপ না দেয়াঃ প্রস্রাব বা পায়খানার সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করার কারণেও হতে পারে হার্নিয়া নামক এই রোগটি তাই, প্রস্রাব বা পায়খানার সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা বন্ধ করুন। যদি আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যে থাকে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব এটি দূর করার চেষ্টা করুন।
অন্ত্রের প্রদাহ দূর করার জন্য সাপ্লিমেন্ট গ্রহণঃ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় অন্ত্রের প্রদাহের কারণে হার্নিয়া রোগের সৃষ্টি হয় কারণ, প্রবাহের জন্য পেটের প্রাচীরের ওপরে চাপ সৃষ্টি হয় এবং একসময় এই প্রাচীর ছিড়ে যায় এবং ভেতর থেকে কিছু অংশ বেরিয়ে আসে। তাই আপনার অন্ত্রে যদি কোন প্রকার প্রদাহ সৃষ্টি হয় বা থেকে থাকে তাহলে এই প্রদাহ দূর করার জন্য অচিরেই সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন।
হার্নিয়া অপারেশন না করলে কি হয়
হার্নিয়া হল অত্যন্ত জটিল ধরনের একটি রোগ আর এই রোগ থেকে পুরোপুরি সেরে ওঠার জন্য অপারেশন অত্যন্ত জরুরি কারণ অপারেশন ছাড়া কোনোভাবেই এই রোগটি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। অনেকে যেহেতু অপারেশনের নাম শুনলে নার্ভাস হয়ে পড়ে এবং সার্জারি বা কাটাছেঁড়ার ভয়ে অপারেশনের দিকে এগোয় না তাদেরকে আজকে জানাবো হার্নিয়া অপারেশন না করলে কি হয় বা কোন ধরনের ক্ষতি হতে পারে। যারা হার্নিয়ার রোগী রয়েছে তাদের অবশ্যই জেনে রাখা উচিত হার্নিয়া অপারেশন না করলে কি হয় এই বিষয়টি। তাই চলুন আর দেরি না করে বিষয়টি জেনে নেওয়া যাক।
আরো পড়ুনঃ কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার ২টি উপায়
হার্নিয়া যদি ছোট অংশী হয়ে থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে খুব একটা সমস্যা না হলেও এই রোগটি যদি বড় আকারে দেখা দেয় তাহলে সে ক্ষেত্রে অপারেশন না করালে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। আপনারা আগেই জেনেছেন যে হার্নিয়া রোগটি হল , শরীরের দুর্বল স্থান ভেদ করে ক্ষুদ্রান্তের কিছু অংশ পেটের প্রাচীরের বাইরে অথবা অন্ডথলিতে নেমে যাওয়া , আর অপারেশনের মাধ্যমে যদি এই অবস্থাটিকে পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে না দেয়া যায় তাহলে সে ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রান্তের এই আক্রান্ত অংশটিতে সৃষ্টি হতে পারে এবং এর কারনে সৃষ্টি হতে পারে রক্ত প্রবাহের প্রতিবন্ধকতা , খাদ্য চলাচলে বাধা তৈরি হতে পারে এমনকি বন্ধ হয়ে যেতে পারে পায়খানা । এছাড়াও যদি আপনি সঠিক সময়ে হার্নিয়ার অপারেশন না করান তাহলে সেক্ষেত্রে মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই রোগটি মরণব্যাধি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
মন্তব্য , পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন হার্নিয়া কতটা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই এই রোগ থেকে মুক্ত থাকতে সব সময় সচেতনতা বজায় রাখুন এবং যদি আপনি হার্নিয়ায় আক্রান্ত হন তাহলে অবশ্যই ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত সার্জারি করার মাধ্যমে এই রোগ থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করুন।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url