পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ১২টি উপায় - পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর খাবার
মেয়েদের প্রতি মাসেই নির্দিষ্ট কয়েকটা দিন পিরিয়ডের সময় পেট ব্যথার কারণে এবং শরীরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন পরিবর্তনের কারণে বিশেষ যন্ত্রণা পোহাতে হয়। কারো কারো ক্ষেত্রে এই যন্ত্রণা অনেক বেশি হয়ে থাকে। পিরিয়ডের এই সেনসিটিভ সময়টাই পেট ব্যথার অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আজকে আমরা এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব এবং জানবো পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে আর এই পাশাপাশি আরো জানবো পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর খাবার গুলোর নাম।
পিরিয়ডের এই ব্যথা কমবেশি সব মেয়েদের ক্ষেত্রে হয়ে থাকলেও এর মাত্রা সবার ক্ষেত্রে সমান হয় না। পিরিয়ডের সময় শুধু পেটেই নয় এর কারণে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা অনুভব হয়। কারো কারো ক্ষেত্রে পিরিয়ডের ব্যথা এতটাই বেশি হয় যে স্বাভাবিক জীবন যাপন অনেক ক্ষেত্রেই বাধাগ্রস্ত হয়। যারা পিরিয়ডের সময় এ ধরনের অসুবিধা ফেস করেন তাদের জন্য আজকে জানাবো পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় এবং পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর খাবার সম্পর্কে। আজকের এই পোস্টে আপনারা জানতে পারবেন পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ১২টি উপায় আর এই উপায় গুলো সঠিকভাবে ফলো করলে পেন কিলার ছাড়াই এই সময়ের পেট ব্যথা দূর করতে পারবেন।তাহলে চলুন আর দেরি না করে পোস্টটি পড়ে পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় গুলো জেনে না যাক।
সূচিপত্রঃ পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ১২টি উপায় - পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর খাবার
পিরিয়ডের ব্যথা কেন হয়
অনেক মহিলা বা কিশোরীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় পিরিয়ডের সময় পেটে অসহ্য যন্ত্রণা হতে। কিন্তু আপনি জানেন কি পিরিয়ডের ব্যথা কেন হয় ? আমার মনে হয় অধিকাংশ মেয়েরাই জানে না পিরিয়ডের ব্যথা কেন হয়। পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যথা সাধারণত জরায়ুর সংকোচন বা প্রসারণ এর কারণে হয়ে থাকে। পিরিয়ডের সময় এই ব্যথা অনেক সময় পেটে পেট থেকে কোমর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে , সাধারণত পিরিয়ডের এই ব্যথাকে পেভলিক পেইন বলা হয়। পিরিয়ডের সময় মেয়েদের জরায়ুর ওপরে অনেক চাপ পড়ে এবং এই চাপের ফলে জরায়ুর বেশি সম্পোচিত ও প্রসারিত হওয়ার কারণে এই সময় পেটে ব্যথা অনুভব হয়ে থাকে।
পিরিয়ডের সময় দেখা যায় প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামক হরমোন উৎপাদনের কারণে জরায়ু সংকুচিত হয়ে আসে আর যাদের ক্ষেত্রে এই হরমোনটি অনেক বেশি মাত্রায় মিশরিত হয় তাদের ক্ষেত্রেই পেটে তীব্র ব্যথা হতে দেখা যায়। এছাড়াও পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যথা হওয়ার আরেকটি কারণ হতে পারে যারা ও বড় হয়ে যায় যাতে মেডিকেল সাইন্সে বলা হয় অ্যাডেনোমায়োসিস। বিভিন্ন বয়সে মহিলাদের শরীরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন ঘটতে থাকে যার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হলো পিরিয়ডের সময়।
আরো পড়ুনঃ জরায়ু ব্যাথার কারণ এবং জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ
পিরিয়ডের শুরু হওয়ার আগে এবং পিরিয়ড শুরু হওয়ার পরে পেটের এই তীব্র যন্ত্রণাকে আমরা অনেক সময় স্বাভাবিক বলে এড়িয়ে যাই কিন্তু এ বিষয়টি আসলে মোটেই উচিত নয়। পিরিয়ডের সময় মেয়েদের পেট ব্যথা স্বাভাবিক একটি বিষয় হলে , যদি এই ব্যথা অতিরিক্ত হয় তাহলে ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত কেননা এই অতিরিক্ত ব্যথা হতে পারে অভ্যন্তরীণ কোন রোগের লক্ষণ। পিরিয়ডের সময় পেটে স্বাভাবিক তুলনায় অতিরিক্ত ব্যথা হওয়া হতে পারে - এন্ডোমেট্রিওসিস , ফাইব্রয়েড , সার্ভাইকাল স্টেনোসিস , অ্যাডেনোমায়োসিস , পেভলিক ইনফেকশন , পলিসিস ওভারি সিনড্রোম এর কারণে।
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়
পিরিয়ডের দিনগুলোতে পেটে ব্যথা হওয়া মেয়েদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত স্বাভাবিক হলেও , কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় এই ব্যথা অনেক তীব্র আকার ধারণ করে। আর সেই তীব্র ব্যথা সহ্য করতে না পেরে অনেকেই ব্যথা না শোক ওষুধ গুলো সেবন করে, কিন্তু এই ব্যাথা নাশক ওষুধগুলো ব্যথা থেকে সাময়িক মুক্তি দিলেও শরীরের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। তাই ওষুধগুলো ছাড়াই যদি ঘরোয়া উপায় গুলো ফলো করার মাধ্যমে এই বিশেষ দিনগুলোতে হওয়া পেট ব্যথা কমানো যায় তাহলে এটিই বেটার। তাই আজকে আপনাদেরকে পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় জানাবো। আপনারা যারা পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় গুলো জানেন না তারা অবশ্যই এই বিষয়টি জেনে নিন। এখন আপনাদের জানাবো পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ১২টি উপায় সম্পর্কে। পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে যে কাজগুলো আপনি করতে পারেন সেগুলো হলো ,
আদা চা পান করুনঃ আদার ভেতরে থাকা এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান পিরিয়ডের সময় হওয়া পেট ব্যথা সহ যেকোনো ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তাই পিরিয়ডের সময় হওয়া পেট ব্যথা কমানোর জন্য ঘন ঘন আদা চা পান করতে পারেন।
ক্যামোমাইল টি পান করাঃ ক্যামোমাইল টি এর ভেতরে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি এবং আন্টি স্প্যাসমোডিয়্যাক উপাদান। এই চা পান করার ফলে কিছু সময়ের জন্য স্নায়ু নিস্তেজ হয়ে যায় এবং এ কারণে ক্যামোমাইল টি পান করলে পিরিয়ডের সময় হওয়া ব্যথা ব্যথা থেকে অনেকটাই আরাম পাওয়া যায়।
এ্যালোভেরার রসঃ আমরা সবাই জানি এলোভেরার ভেতরের রয়েছে অনেক ধরনের ঔষধি গুণ। এলোভেরার বিভিন্ন ধরনের উপকারিতার মধ্যে আরেকটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য উপকারিতা হলো , এর রস পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। পিরিয়ডের সময় কয়েকবার যদি অ্যালোভেরার রস পান করা যায় তাহলে খুব দ্রুত পেটের ব্যথা দূর হবে। যারা এলোভেরার রস এমনি খেতে পারেন না তারা এর সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
হট ওয়াটার ব্যাগ ইউজ করাঃ পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর একটি জনপ্রিয়
কৌশল হলো হট ওয়াটার ব্যাগ ইউজ করা। হট ওয়াটার ব্যাগ এর সাহায্যে
পেট ও কোমরে সেঁক দিলে , পিরিয়ডের ব্যথা থেকে অনেকটাই স্বস্তি পাওয়া যায়।
অনেকের কাছে হট ওয়াটার ব্যাগ নাও থাকতে পারে , আপনার কাছে যদি হট ওয়াটার ব্যাগ
না থাকে সে ক্ষেত্রে আপনি ব্যবহার করতে পারেন পানির বোতল , বোতলে গরম পানি ভরে
এটি ওয়াটার ব্যাগের মতন ব্যথার স্থানে ব্যবহার করতে পারেন।
পর্যাপ্ত ঘুমের ব্যবস্থা করুনঃ আর পিরিয়ডের সময় ছড়িয়ে অভ্যন্তরে
বিভিন্ন পরিবর্তনের কারণে এবং জরায়ুর চাপের কারণে পেট ব্যথা হয়ে থাকে , এই পেট
ব্যথা কমাতে অনেক অংশে সাহায্য করতে পারে ঘুম।
শরীরকে হাইড্রেট রাখুনঃ শরীরকে হাইড্রেটে রাখার
বিষয়টি পিরিয়ডের সময় অত্যন্ত জরুরী। এই সময় শরীরকে হাইড্রেট রাখতে
পারলে এই সময় হওয়া পেটের ব্যথা থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকা যায়।
আরো পড়ুনঃ অনিয়মিত মাসিকের কারণ এবং নিয়মিত মাসিকের কুফল
কুসুম গরম পানিতে গোসল করুনঃ পিরিয়ডের ব্যথায় কষ্ট পেতে থাকলে হালকা
কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন। হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করলে পিরিয়ডের
সময় পেট ব্যথা ও কমানোর ক্ষেত্রে অনেকটা উপকার পাওয়া যায়।
ডার্ক চকলেট খানঃ পিরিয়ডের সময় পেট ব্যথার পাশাপাশি মুড
সুইং এর ব্যাপারটি অত্যন্ত স্বাভাবিক। ব্যথা এবং মেজাজ দুটো ভালো রাখতেই এই
সময় খেতে পারেন ডার্ক চকলেট। ডার্ক চকলেটও পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে অনেকটা সাহায্য
করে।
ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করুনঃ পিরয়োডের সময় পেটের ব্যথা থেকে স্বস্তি
পেতে টাইট ফিটিং পোশাকের পরিবর্তে ঢিলেঢালা পোশাক পরিধানের চেষ্টা
করুন। আরামদায়ক পোশাক পরিধানের ফলেও এই বিশেষ সময় গুলোতে অনেক ক্ষেত্রে পেটের
ব্যথা থেকে আরাম পাওয়া যায়।
কাঁচা পেঁপেঃ পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে কাঁচা পেঁপে ,
তাই পিরিয়ডের সময় কাঁচা পেঁপে খেলে এই ব্যথা থেকে উপশম পাওয়া
যায়।
চর্বি, ভাজাপোড়া , অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইনযুক্ত যুক্ত খাবার এড়িয়ে
চলুনঃ পিরিয়ডের এই বিশেষ দিনগুলোতে অসহ্য পেট ব্যথা কমাতে তেল চর্বি ও
ভাজাপোড়া যুক্ত এবং অ্যালকোহল ও ক্যাফিন যুক্ত পানিওগুলো পরিহার করে চলুন।
কারণে এই জাতীয় খাবার গুলো শরীরের ডিহাইড্রেশন তৈরি করে আর যার কারণে পেট
ব্যথা বেড়ে যেতে পারে তাই এই সময়গুলোতে এই ধরনের খাবারগুলো না খাওয়াই ভালো।
ব্যায়ামঃ পিরিয়ডের এই বিশেষ দিনগুলোতে পেট ব্যথা কমানোর জন্য হালকা
ব্যায়ামগুলোকে বেছে নিতে পারেন। সব সময় শুয়ে বসে না থেকে হালকা
স্ট্রেচিং অথবা হাঁটাহাঁটি করার মতন সহজ কিছু ব্যায়ামের সাহায্য নিতে পারেন
তবে এই সময় ভারী ব্যায়ামগুলো করা থেকে বিরত থাকুন। পিরিয়ডের সময় হালকা
ব্যয়ামগুলো পেটব্যথা কমাতে সাহায্য করবে।
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর খাবার
পিরিয়ডের সময় জরায়ুর সংকোচন ও প্রসারনের কারণে যে ব্যথা হয়ে থাকে এই ব্যথা কমানোর জন্য খাদ্য তালিকায় বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। কেননা বেশ কিছু খাবার রয়েছে যে খাবারগুলো পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে বিশেষ সাহায্য করতে পারে। কিন্তু আপনাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর খাবার গুলোর নাম জানেন না , তাই আজকে আপনাদেরকে জানাবো পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর খাবার গুলোর নাম। যে খাবারগুলো খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে পিরিয়োডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে সেগুলো হলো - আদা , কমলা , কলা , আনারস , কাঁচা পেঁপে , ব্রকলি , বিট , পালং শাক, বাদাম , ক্যামোমাইল টি , গ্রিন টি , সবুজ শাকসবজি ,ওটস , ডার্ক চকলেট ইত্যাদি।
আরো পড়ুণঃ হরমোনের সমস্যা দূর করার উপায়
মন্তব্য, আজকের এই সম্পূর্ণ পোস্টটি জুড়ে আপনাদের জানিয়েছি পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় গুলো আর আপনারা যদি এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে এতক্ষণে নিশ্চয়ই পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ১২টি উপায় সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিয়েছেন। আশা করছি আপনি যদি ঠিকঠাক মতন পিরিয়ডের সময় ব্যথা কমানোর এই টিপস গুলো ফলো করেন তাহলে এই বিষয়ে সময়টিতে হওয়া পেট ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারবেনা। যদিও পিরিয়ডের সময় পেট ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক একটি ব্যাপার কিন্তু এই ব্যথা যদি অতিমাত্রায় হয় তাহলে অবশ্যই এই বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত কেননা পিরিয়ডের সময় মাত্রাঅতিরিক্ত পেট ব্যথা হতে পারে বিশেষ কোনো রোগের লক্ষণ। তাই অবশ্যই এ ব্যাপারে অবহেলা না করে যদি এই বিশেষ সময়টিতে অসহ্য পেট ব্যথা অনুভব করেন তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url