আজকে আপনাদের সাথে সম্পূর্ণ পোস্টটি জুড়ে মাত্র একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব বিষয়টি হল , পড়া মনে রাখার উপায় কারণ এই বিষয়টি শিক্ষার্থীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।প্রায় সময়ই বিভিন্ন ক্লাসের স্টুডেন্টদের অর্থাৎ শিক্ষার্থীর ভাইবোনদের একটি অভিযোগ থাকে , আর অভিযোগটি হবে দীর্ঘক্ষণ পড়েও পড়া মনে না রাখতে পারার। এই বিষয়টি ঘটে থাকে সাধারণত পড়া মনে রাখার উপায় গুলো সঠিকভাবে না জানার কারণে। আপনারা যখন পড়া মনে রাখার উপায় হলো বা কৌশল গুলো ঠিকঠাক ভাবে ফলো করবেন তখন খুব সহজে এবং তুলনামূলক কম সময়ের মধ্যে পড়া মনে রাখতে পারবেন।আপনাদের পড়া মনে না রাখার এই সমস্যার সমাধান দিতে ,আপনাদের জানাবো পড়া মনে রাখার সহজ ২০টি উপায়।
আপনারা যারা বিভিন্ন বিষয়ের পড়া গুলো সহজে মনে রাখতে পারছেন না তারা এবং যারা পড়া মনে রাখার উপায় গুলো জানতে চাচ্ছেন তারা ,আজকের এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে করুন কেননা আপনাদের সমস্যার কথা চিন্তা করে আজকে আপনাদেরকে জানাবো পড়া মনে রাখার সহজ ২০টি উপায়। আর এই উপায় গুলো যদি আপনারা ঠিকঠাক মতন অনুসরণ করেন তাহলে , সহজেই কঠিন বিষয় গুলোও মনে রাখতে পারবেন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে পড়া মনে রাখার উপায় গুলো জেনে নিন।আর পড়া মনে রাখার উপায় গুলো জানতে হলে আপনাদের কে পড়া মনে রাখার সহজ ২০টি উপায় সম্পর্কিত এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
পড়া মনে রাখার উপায়
পড়া মনে রাখার জন্য শুধুমাত্র দোয়ার উপরে নির্ভরশীল হয়ে থাকলে চলবে না , দোয়া এবং আমলের পাশাপাশি কঠোর পরিশ্রম করতে হবে আর এই কাজটি করার জন্য পড়া মনে রাখার উপায় গুলো জানতে হবে। আর আজকে আপনাদেরকে পড়া মনে রাখার উপায় হিসেবে বেশ কিছু টিপস দেবো , যেগুলো ঠিকঠাক মতন অনুসরণ করলে শিক্ষার্থী ভাইবোনেরা পড়া মনে রাখার ক্ষেত্রে ভালো ফল পাবেন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে পড়া মনে রাখার উপায় গুলো জেনে নেওয়া যাক।নিচে পড়া মনে রাখার সহজ ২০টি উপায় আপনাদের কাছে শেয়ার করা হলো।
১। পড়াশুনায় কনসেনট্রেট স্থাপন করুনঃ পড়াশুনা মনে রাখার জন্য সর্বপ্রথমেই যেই বিষয়টির খেয়াল দিতে হবে সেটি হল মনোযোগ অর্থাৎ পড়াশোনার দিকে কনসেনট্রেট করা। ব্যতিব্যস্ত দিনের সকল চিন্তা , টেনশন, ভাবনা ইত্যাদি সবকিছু দূরে ঠেলে পড়তে বসার আগে নিজেকে পড়াশুনার দিকে কন্সেন্ট্রেট করতে হবে। আর আপনি যখন পড়াশোনা ব্যাপারে মনোযোগী হয়ে উঠবেন তখন যে কোন বিষয়ের পড়াগুলো মনে রাখতে সুবিধা হবে। তাই পড়া মনে রাখার প্রথম যে উপায়টি সেটি হলো কন্সেন্ট্রেট অর্থাৎ মনোযোগ। আপনি যদি পড়তে বসেও যদি সারা দিনের বিভিন্ন বিষয়গুলো চিন্তা করতে থাকেন তাহলে সেক্ষেত্রে আপনি যতই পড়ুন আপনার পড়া কোনোভাবেই মনে থাকবে না। তাই পড়তে বসার আগে অবশ্যই মনোযোগকে পড়ার দিকে নিয়ে আসতে হবে এবং সারাদিনের ঝুট ঝামেলা মাথা থেকে দূরে রাখতে হবে।
২। জোরে জোরে পড়ুনঃ পড়াশোনা মনে রাখার ক্ষেত্রে আরেকটি উপায় ম্যাজিকের মতন সাহায্য করতে পারে আর সেটি হল জোরে জোরে পড়া। শুনতে অবাক লাগলেও এই কথাটি সত্যি যে , পড়ার নির্দিষ্ট বিষয়টি জোরে জোরে পড়লে এটি আমাদের ব্রেনের সহজে গেছে যাই এবং খুব সহজে মনে রাখতে সাহায্য করে। মানুষ বড় হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে জোরে জোরে পড়ার বিষয়টি প্রায় ছেড়ে দেয় কিন্তু যে কোন শিক্ষার্থী দের ক্ষেত্রে পড়া মনে রাখার বিশেষ কার্যকরী একটি উপায় জোরে জোরে পড়া। আর তাই অল্প সময়ে যদি পড়া মনে রাখতে চান তাহলে জোরে জোরে পড়ুন।
৩। নির্দিষ্ট পাঠকে ছোট অংশে বিভক্ত করে মুখস্থ করাঃ সহজে পড়া মনে রাখতে হলে সাবজেক্টের নির্দিষ্ট পাঠকে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করে নিয়ে মুখস্ত করা শুরু করতে হবে। কেননা আপনি যদি কোন বড় বিষয় একেবারে সম্পূর্ণ মুখস্থ করার চেষ্টা করেন তাহলে সে ক্ষেত্রে সহজে মুখস্থ হবেনা এবং মনে রাখতেও অসুবিধা হবে। তাই যে বিষয়টি পড়ছেন বা মুখস্ত করছেন অবশ্যই সেটিকে ছোট ছোট অংশের ভাগ করে নিয়ে অল্প করে মুখস্ত করুন। ছোট একটি অংশ মুখস্ত হয়ে গেলে , তারপরের অংশটি মুখস্ত করুন এতে অল্প টাইম এর মধ্যে মুখস্ত করতে পারবেন এবং সেই পড়াটি মনে রাখতেও আপনার সুবিধা হবে।
৩। বুঝে পড়ুনঃ আপনি জিএফ সাবজেক্ট নিয়ে বা সাবজেক্ট এর যে নির্দিষ্ট অংশটি পড়তে বা মুখস্ত করতে চাচ্ছেন , সেই অংশটি শুধু মনে রাখার জন্য না পড়ে বুঝে পড়ার চেষ্টা করুন। আপনি যখন কোন বিষয়েই বোঝার মাধ্যমে করবেন তখন অবশ্যই বিষয়টি মনে রাখতে সহজ হবে। তাই পড়া বা মুখস্ত করার অংশটুকু অবশ্যই বুঝে পড়ুন।
৪। মুখস্ত অংশটুকু বার বার লিখাঃ পড়া মনে রাখার জন্য নির্দিষ্ট বিষয়টি শুনি মুখস্ত করলেই চলবে না এর পাশাপাশি মুখস্ত করা অংশটুকু বেশি বেশি লিখতে হবে। আপনি যখন যে বিষয়টি মুখস্ত করেছেন বা মুখস্ত করার চেষ্টা করছেন সে বিষয়টি বারবার লিখবেন তখন দেখবেন আপনি নির্দিষ্টভাবে বুঝতে পারছেন কোন স্থানে আপনার সমস্যা বা কোন স্থানে গিয়ে আপনি আটকে যাচ্ছেন , আর যখন এই বিষয়টি উপরে আরো বেশি মনোযোগ দেবেন তখন এটি আপনার আয়ত্তে চলে আসবে। তাই মুখস্ত করা জিনিসটি পড়ার পাশাপাশি বেশি বেশি লিখুন। এতে বিষয়টি মনে রাখতে সুবিধা হবে এবং দীর্ঘস্থায়ী হবে।
৫। অন্যকে শেখানোঃ পড়া মনে রাখার জন্য আপনি যে বিষয়টি শিখছেন বা মুখস্ত করছেন সেই বিষয়টি অন্যকে শেখানো বা বোঝানোর চেষ্টা করুন। আপনি যখন আপনার মুখস্ত করা বা শেখা বিষয়টি অন্যকে বোঝাতে বা শেখাতে যাবেন দেখবেন অটোমেটিকালি এটি আপনার একেবারে আরবতে চলে আসছে । সুতরাং আপনি যে বিষয়টি করছেন সেটি আপনার বন্ধুবান্ধবকে , ছোট ভাইবোনদেরকে অথবা যে কাউকে বোঝানোর চেষ্টা করুন আর যদি একান্তই কাউকে পাওয়া না যায় তাহলে নিজেকে নিজে বোঝানোর চেষ্টা করুন অথবা বলতে পারেন নিজের শিক্ষক হয়ে নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করুন তাহলে দেখবেন বিষয়টি মনে রাখতে অনেক সহজ হচ্ছে।
৫। বিরতি নিয়ে পড়াঃ পড়ার সময় একটানা দীর্ঘক্ষণ না পড়ে থাকে কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে তারপরে আবার পড়তে বসুন এতে আপনার পড়া মনে রাখতে সহজ হবে কেননা জার্মানের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, আমরা যখন কোন কিছু করি তখন এর ঘন্টাখানেক পর আমরা সেই বিষয়ে কেবলমাত্র ৪৪/৪৫ শতাংশ মনে রাখতে পারি তাই এক্ষেত্রে আপনি যদি কিছুক্ষণ পড়ার পরে বিরতি দিয়ে তারপরে আবার পড়া শুরু করেন তাহলে সে ক্ষেত্রে পড়া মনে রাখতে আপনার অনেক সুবিধা হবে। এছাড়া একটানা বেশিক্ষণ পড়লে একঘেয়েমি চলে আসে এবং আমাদের মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে আর মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে গেলে কোন কিছুই সহজে মনে রাখা বা মনে করা সম্ভব হয় না। তাই মেন্টাল রিফ্রেশমেন্ট এর জন্য পড়ার ফাঁকে ফাঁকে কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে পড়া উচিত এবং এই বিরতি সময়টি আপনি বিশ্রাম নেয়ার কাজে ব্যবহার করতে পারেন এবং পুনরায় নতুন উদ্যমে , এবং মনোযোগের সাথে পড়তে বসতে পারেন। এই বিষয়টি আপনাকে পড়া মনে রাখতে যথেষ্ট সাহায্য করবে।
৬। পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম নিনঃ পড়াশোনা মনে রাখার জন্য আপনার শরীর ভালো থাকা অত্যন্ত জরুরি দিন আর আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রামের। আপনি যদি শরীরকে রেস্ট না দিয়ে সারাদিন রাত বই খাতা বা পড়ার মধ্যেই ডুবে থাকেন ,তাহলে পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার কারণে আপনার শরীর দিন দিন দুর্বল এবং অসুস্থ হয়ে পড়বে আর শরীর ভালো না থাকলে আপনি পড়াশোনায় কনসেনট্রেট করতে পারবেন না , আর আপনি যদি পড়াশোনায় সঠিকভাবে মনোযোগ দিতে না পারেন তাহলে সে ক্ষেত্রে পড়া মনে রাখতেও পারবেন না। আরে ছাড়াও পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে আমাদের শরীরের ক্লান্তি দূর হয় , মস্তিষ্কের কোষ পুনর্গঠন হয় এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায় ,আর এই কারণে পড়া শোনা মনে রাখার জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম নেয়ার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরী।
৭। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুনঃ পড়াশোনা করার জন্য যথেষ্ট এনার্জি দরকার শরীর এবং ব্রেনে যদি পর্যাপ্ত এনার্জি না থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে পড়াশোনা মনে রাখার ক্ষেত্রে অসুবিধায় পড়তে হবে। আর এ কারণে পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রামের পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে এবং শরীর ভালো রাখার জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে সাথে সময় মতন খাবার খেতে হবে। এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকবে ,স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং পড়াশোনা মনে রাখতে সাহায্য করবে। পড়াশুনা মনে রাখার জন্য পুষ্টিকর খাদ্য এই জন্য জরুরী কারণ শরীরে পুষ্টি ঘাটতি দেখা দিলে সেক্ষেত্রে সুস্থ থাকা কোন ভাবেই সম্ভব না আর শরীর সুস্থ না থাকলে শুধু পড়াশোনা না কোন কাজই আপনি ঠিক ভাবে করতে পারবেন না।
৮। শরীর চর্চা করুনঃ পুষ্টিকর খাবার , পর্যাপ্ত ঘুম ও বিস্তানের পাশাপাশি পড়া মনে রাখার জন্য শরীরচর্চা বিশেষ ফল প্রদান করতে পারে , কেননা নিয়মিত শরীর চর্চা করলে আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বেড়ে যায় পায় এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। তাই পড়াশোনা মাঝখানে প্রতিদিন একটি টাইম বের করুন যেই সময়টি আপনি শরীর চর্চার কাজে ব্যয় করবেন। নিয়মিত শরীর চর্চা করলে আপনার মস্তিষ্কে মেমোরি ধরে রাখার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং পাশাপাশি পড়াশোনা মনে রাখার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে । শরীর চর্চা করলে কর্টিসোল হরমোনের নিঃসরণ হয়ে যায় আর এই হরমোনটি মানসিক চাপ সৃষ্টি করার জন্য দায়ী তাই শরীর চর্চা করলে যেহেতু এই বিশেষ হরমোনটির নিঃসরণ কমে যায় সেক্ষেত্রে মস্তিষ্ক চাপমুক্ত থাকতে পারে এবং পড়াশোনা মনে রাখতে সাহায্য করে।
৯। কোন বিষয়গুলো মনে রাখতে অসুবিধা সেগুলো ফাইন্ড আউট করুনঃ পড়া মনে রাখার আরেকটি সহজ উপায় হল যে বিষয়গুলোতে আপনার সমস্যা বা যেই বাক্য বা বা শব্দ মনে রাখার ক্ষেত্রে অসুবিধা হচ্ছে সেই শব্দ বাক্যগুলো ফাইন্ড আউট করুন এবং এগুলোকে বার বার পড়ুন ও লিখুন। দেখবেন চিহ্নিত করা এই বিষয়গুলো খুব সহজে আপনি মনে রাখতে পারছেন।
১০। গ্রুপ স্টাডি করাঃ পড়া মনে রাখার জন্য একা একা না পড়ে গ্রুপ স্টাডি করতে পারেন। এতে আপনি যে বিষয়টি বুঝতে পারছেন না সেটি আপনার ফ্রেন্ড বা সহপাঠীদের থেকে বুঝে নিতে পারবেন অথবা তারা যে বিষয়গুলো সঠিকভাবে বুঝতে পারছেনা সেই বিষয়গুলি আপনি তাদের বুঝিয়ে দিতে পারবেন। আর আপনি যখন কোন বিষয়ে অন্যকে বোঝাবেন তখন সেই বিষয়টি আপনার ব্রেনে গেঁথে যাবে এবং আপনি সেটি সহজেই মনে রাখতে পারবেন। আর তাই গ্রুপ স্টাডি করলে পড়া মনে রাখার ক্ষেত্রে অনেক ফল পাওয়া যায়।
১১। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ঘুমের আগে পড়াঃ শুনতে অবাক লাগলেও , এই কথাটি সত্য যে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পড়লে এই পড়াটি মনে থাকে। সাধারণত গবেষণায় দেখা যায় যে ঘুমাতে যাওয়ার আগে যে বিষয়টি নিয়ে বেশি পড়াশোনা করা হয় বা চিন্তা ভাবনা করা হয় সেই বিষয়টি মনে রাখা সহজ হয়। এছাড়াও আমরা যখন রাতে ঘুমায় তখন ব্রেন আমাদের সারাদিনের কাজগুলোকে মস্তিষ্কে সাজিয়ে রাখে এবং ঘুমের আগ মুহূর্তে করা বা পড়া গুলো সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়। তাই যে বিষয়গুলো আপনি মনে রাখতে পারছেন না বা বারবার ভুলে যাচ্ছেন অথবা পরীক্ষার আগের রাতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ঘুমাতে যাওয়ার আগে করে নিতে পারেন এতে এই বিষয়গুলো মনে রাখা আপনার জন্য অনেক সহজ হবে।
১২। সাবজেক্টের তালিকা তৈরি করুনঃ পড়তে বসার আগে আপনাকে অবশ্যই কখন কোন বিষয়গুলো পড়বেন সেই বিষয়ে একটি তালিকা প্রস্তুত করুন অথবা সাবজেক্টের কোন কোন অধ্যায়গুলো পড়বেন সেগুলোর আগে একটি তালিকা তৈরি করে ফেলুন। একটি লিফটের মধ্যে দিনের কোন অংশে কোন সাবজেক্টগুলো বা সাবজেক্টের বিষয়বস্তুগুলো আপনি পড়বেন তার তালিকা পড়া থাকলে সেই সময়ে ওই বিষয়গুলো আপনি করতে পারবেন এটি একবারে পড়ার উপরে বেশি চাপ পড়বে না। আর পড়ার একটি নির্দিষ্ট তালিকা করা থাকলে সময়ের আগেই আপনি আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো হাতের কাছে রাখতে পারবেন আর যার কারণে নির্দিষ্ট সাবজেক্ট গুলো করতে বসে আপনার মনোযোগ অন্যদিকে যাবে না।
১৩। পড়তে বসার নির্দিষ্ট টাইম বেছে নিনঃ পড়া মনে রাখার জন্য নির্দিষ্ট টাইম ব্যবহার করুন। দিনের যেকোনো সময় রেনডোমলি করতে না বসে পড়ার জন্য নির্দিষ্ট টাইম বেছে নিয়ে। অথবা যে সময়গুলো পড়া মনে রাখার ক্ষেত্রে উপযুক্ত টাইম সেই টাইমগুলোকে নির্দিষ্ট করুন এবং রুটিন মাসিক ভাবে এই সময় পড়তে বসুন। আপনি যখন নির্দিষ্ট টাইম গুলোতে পড়তে বসার একটি অভ্যাস তৈরি করে ফেলবেন কখন এই সময়গুলোতে আপনার মেমোরি পড়াশোনার দিকে মনোযোগী হবে এবং যার ফলে আপনার পড়া মনে রাখা সহজ হবে। মনে রাখার জন্য পড়তে বসার নির্দিষ্ট টাইম হিসেবে আপনি বেছে নিতে পারেন যে সময়গুলোতে মস্তিষ্কের উপরে চাপ কম থাকে এবং যে সময় পড়লে পড়া দ্রুত মনে থাকে ,যেমন - ঘুমাতে যাওয়ার আগে , সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে ইত্যাদি সময়ে।
১৪। পড়ার সময় মোবাইল , ল্যাপটপ , দূরে রাখুনঃ আপনি যখন পড়তে বসবেন তখন আশেপাশে মোবাইল ফোন , ল্যাপটপ বা পিসি এগুলোর আশেপাশে থেকে দূরে বসুন , কেননা এই জিনিসগুলো আপনার পড়াশোনার মনোযোগ নষ্ট করতে পারে। আমরা বর্তমানে যে কোন বয়সী মানুষ এই ধরনের ইলেকট্রিক ডিভাইস গুলো উপরে বিভিন্নভাবে নির্ভরশীল এবং সোশ্যাল মিডিয়াম মাধ্যমিক গুলোতে আমরা অনেক সময় অযথাই ঘোরাফেরা করি। মোবাইল , ল্যাপটপ হাতের কাছে থাকলে পড়া থাকে হয়তো আপনার মনে হতে পারে একবার সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যম গুলো থেকে ঘুরে আসে আর এই বিষয়টি সাময়িক বা দীর্ঘক্ষণের জন্য আপনার পড়াশোনা থেকে মনোযোগ দিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে। এছাড়াও মোবাইল ফোন হাতের কাছে থাকলে পড়ার ফাঁকে বিরতি টাইমটা হয়তো আমরা অযথা ফেসবুক ,ইনস্টাগ্রাম বা এই জাতীয় সোশ্যাল মিডিয়াতে গিয়ে টাইম নষ্ট করে ফেলব। কিন্তু এই কাজটি করা মোটেও উচিত নয় , আর অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা সাধারণত এই কাজটি করে থাকে যার ফলে পড়া থাকে যে বিরতিটা গ্রহণ করা হয় সেটি কোন কাজে লাগে না বা তার আগে মনোযোগ সহকারে আমরা যে বিষয়টি আনার চেষ্টা করি সেই বিষয়টি খুব একটা আমাদের মেমোরিতে থাকে না। এর কারণে বিরতিটিতে মোবাইল ফোন ইউজ না করে বিশ্রাম , ঘুম , ব্যায়াম বা অন্যান্য কাজে ব্যবহার করুন।
১৫। পড়ার উপযোগী স্থান তৈরি করুনঃ পড়া মনে রাখার জন্য পড়তে বসার উপযোগী স্থান খুবই জরুরী। প্রত্যেকটি কাজেরই একটি নির্দিষ্ট পরিবেশ দরকার হয় আর পড়াশোনা এর ব্যতিক্রম নয়। আপনি যদি পড়াশোনার উপযোগী স্থান স্থান বা পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারেন তাহলে সে ক্ষেত্রে পড়াশোনা মুখস্থ করতে বা মনে রাখতে আপনার অনেকটাই অসুবিধা হবে , কারণ পড়াশোনা করার জন্য শান্ত , ঠান্ডায় একটি পরিবেশ বা স্থান দরকার যে স্থানটি কোলাহলমুক্ত থাকবে। আপনি যদি কোন কোলাহলমুক্ত স্থানে পড়তে বসেন বা যে স্থানটি পড়াশোনা করার উপযোগী নয় সে স্থানে করতে বসেন তাহলে আপনার মনোযোগ এক জায়গায় স্থির থাকবে না এবং আপনি যেই বিষয়টি করছেন সেটি আপনার ব্রেনে ভালোভাবে ক্যাচ করবেন আর সেই ক্ষেত্রে দেখা যাবে দীর্ঘ সময় একই বিষয়ে পড়ার পরেও সে বিষয়টি মনে থাকছে না। আবার অনেক সময় দেখা যায় , আপনি যে স্থানটিকে পড়তে বসবেন সেই স্থানটি শান্ত পরিবেশে হলেও পর্যাপ্ত আলো বাতাস নেই সে ক্ষেত্রেও পড়াশোনা মনে রাখার ক্ষেত্রে আপনার অনেকটাই অসুবিধা হবে কারণ এই স্থানটি আপনার ভালো লাগবে না আর যার ফলে পড়াশোনা মনোযোগ নষ্ট হবে। তাই অবশ্যই করতে বসার আগে আপনার বাড়ির বা ঘরের যে স্থানটি আপনার পছন্দ এবং পড়াশোনার জন্য উপযোগী এমন একটি স্থান বেছে নিন , সেখানে আপনার পড়ার টেবিল সেট করুন , এর আশপাশ পড়া/লেখায় ব্যবহৃত উপকরণ আপনার মনের মনের মতন করে সাজিয়ে ফেলুন , তাহলে দেখবেন এই স্থানটি আপনাকে প্রশান্ত দেবে এবং পড়তে বসার আগ্রহ সৃষ্টি।
১৬। নির্দিষ্ট স্থানে পড়তে বসুনঃ যখন তখন ঘরে যে কোন জায়গায় পড়তে না বসে পড়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান ব্যবহার করুন। কেননা সব ধরনের স্থানে পড়াশোনা সহজে মুখস্ত হয়নি এই যেমন ধরুন , বিছানাতে হেলান দিয়ে বা উপর হয়ে শুয়ে অনেকে সিরিয়াল বিষয়গুলো পড়ার এবং মনে রাখার চেষ্টা করে এক্ষেত্রে পড়াশোনা মুখস্ত হয় ঠিকই তবে তুলনামূলকভাবে বেশ অনেকটাই সময় লাগে অথবা অনেক সময় দেখা যায় কিছুক্ষণ পর পরে একটা আলসেমি চলে আসে। তাই পড়তে বসার একটি নির্দিষ্ট স্থান বেছে নিন এবং নিয়মিত এই একই স্থানে পড়তে বসুন , চাইলে আপনি আপনার পড়তে বসার নির্দিষ্ট স্থানটি এবং এর আশপাশ পড়া লেখার উপকরণ ,দু-একটা ইনডোর প্ল্যান্ট ইত্যাদি জিনিসপত্র রাখার মাধ্যমে নিজের মনের মতন করে সাজিয়ে নিন তাহলে দেখবেন , পড়তে বসার এই নির্দিষ্ট স্থানটিতে আসলে আপনার মেমোরি অটোমেটিক্যালি পড়াশোনার দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং পড়াশোনার মনোযোগ তৈরি হচ্ছে কেননা আপনি যখন এই এই নির্দিষ্ট স্থানটিতে আসবেন তখন আপনার মেমোরি আগে থেকেই বুঝতে পারবে এটি পড়তে বসার স্থান আর এই বিষয়টি পড়াশোনায় মনোযোগ তৈরি হতে সাহায্য করবে।
১৭। চর্চা করুনঃ সহজে পড়াশোনা মনে রাখার আরেকটি কৌশল হলো চর্চা অর্থাৎ আপনি যে বিষয়টি শিখছেন , জানছেন বা মুখস্ত করছেন এই বিষয়টি শুধুমাত্র কোনভাবে একবার আয়ত্তে চলে আসলে এই বিষয়টি পড়া ছেড়ে দিবেন না বরঞ্চ বারবার চর্চা করতে থাকুন। আপনি যখন একই বিষয়ে কয়েকদিন মাঝে মাঝেই চর্চা করবেন তখন এই বিষয়টি আপনার জন্য মনে রাখা সহজ হয়ে যাবে।
১৮। গল্প , ছড়া বা বাস্তবের সাথে মিলিয়ে পড়ুনঃ গল্প , ছড়া বা বাস্তবের সাথে মিলিয়ে পড়ুন , কথাটি শুনে হয়তোবা বুঝতে পারছে না , ভাবছেন এটি আবার কি ধরনের পড়া , উদ্ববেগের কোন কারণ নেই বিষয়টি এখুনি আপনাদের কাছে ক্লিয়ার করছি। আপনি যে বিষয়টি মুখস্ত করার বা বোঝার চেষ্টা করছেন সেই বিষয়টি আপনার পরিচিত কোন গল্প , বাস্তব কোন কাহিনী , কোন স্থান এগুলোর সাথে মিলিয়ে পড়ার চেষ্টা করুন তাহলে দেখবেন পড়া মনে রাখতে অনেক সহজ হবে এবং কোন সূত্র বা গঠন প্রণালী মনে রাখার সময় ছড়া আকারে করুন এই বিষয়টির মাধ্যমে আপনি খুব সহজে পড়া মনে রাখতে পারবেন। অথবা কোন বিষয়ে পড়বেন সেই বিষয়টি গল্পের মতন করে পড়ুন , এতে আপনার নির্দিষ্ট বিষয়গুলো মনে রাখতে সহজ হবে।
১৯। নোট তৈরি করে পড়ুনঃ আমরা সাধারণত ক্লাশে টিচার যে বিষয় গুলো শেখায় , অধিকাংশ সময় সেই বিষয়গুলো না বুঝেই খাতায় বা বইয়ের কোনায় টুকে রাখি। কিন্তু এই কাজটি না করে ক্লাসে যে বিষয়টি শিক্ষক আপনাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে অথবা আপনি নিজে নিজেই সেই বিষয়টি বোঝায় বা মুখস্ত করার চেষ্টা করছেন সেই বিষয়টি ভালোভাবে বুঝে এবং সহজ ভাষায় নিজের মতন করে নোট তৈরি করে ফেলুন। আপনি যখন কোন বিষয়ে বোঝার মাধ্যমে নিজের মতন করে নোট করবেন তখন এই বিষয়টি মনে রাখার ক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করবে।
২০। পড়তে বসার আগে হাটাহাটি করুনঃ আপনার পড়তে বসার নির্দিষ্ট টাইমে লাগে অথবা আপনি যখন পড়তে বসবেন ভাবছেন তার পাঁচ দশ মিনিট আগে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করেনিন। হাঁটাহাঁটি ফলে আপনার শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির সাথে সাথে মনে রাখার ক্ষমতা বেড়ে যাবে। গবেষণায় দেখা গেছে যারা পড়তে বসার আগে অন্ততপক্ষে ১০ মিনিট হাটাহাটি করে তাদের ক্ষেত্রে পড়া মনে রাখা অনেক সোজা হয়ে যায়। আর পড়তে বসার আগে এই হাটাহাটি করা সময়ের মধ্যে আপনি নিজেকেও পড়তে বসার জন্য মেন্টালি প্রিপারেড করতে পারবেন।
মন্তব্য , আজকের এ পোস্টে মূলত একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি এক বিষয়টি হল পড়া মনে রাখার উপায়। আশা করছি আজকের পোস্টের মাধ্যমে শেয়ার করা পড়া মনে রাখার সহজ ২০টি উপায় জানতে পেরে আপনারা অনেক উপকৃত হয়েছেন এবং এই বিষয়গুলো আপনাদের শিক্ষা জীবনের অতিথি ক্ষেত্রে অনেক উপকারে আসবে এবং আপনাদের শিক্ষা জীবনকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে যথেষ্ট সাহায্য করবে।এছাড়াও , পড়া মনে রাখার সহজ ২০টি উপায় সঠিকভাবে অনুসরণ করার পাশাপাশি পড়া মনে রাখার এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর ইসলামের যে সকল আমল বা দোয়া আছে সেগুলো বেশি বেশি আমল করতে পারেন। তবে শুধু দোয়া বা আমলের উপরে ভরসা করলে চলবে না এর পাশাপাশি নিজের দিক থেকে সঠিক এবং জোরালো প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url