আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম - আপেল সিডার ভিনেগার কি হালাল
Apple Cider Vinegar এর নাম হয়তো অধিকাংশ মানুষই শুনে থাকবেন। এই অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে সুস্থ থাকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে। সঠিক নিয়ম এবং পরিমাণ বুঝে যদি এই দিনে তার পান করা হয় তাহলে অনেক ধরনের উপকারিতা পাওয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই এই দিনে আর পান করার পূর্বে এর সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া উচিত কেননা উপকারিতার পাশাপাশি এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে।
আপনারা যদি সঠিক সময় , সঠিক নিয়ম না জেনেই অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পান করেন
তাহলে এর কারণে হতে পারে উপকারের চাইতে অপকারের মাত্রাই বেশি কেননা
সঠিক সময় এবং সঠিক নিয়ম না জেনে পরিমাণ এর চাইতে বেশি এই ভিনেগার পান করলে দেখা
দিতে পারে বিশেষ কিছু দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক অসুবিধা। তাই আজকে আপনাদেরকে অ্যাপেল
সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম এবং এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানাবো এবং এই
বিষয়ের পাশাপাশি ক্লিয়ার ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করব এই ভিনেগার খাওয়া হালাল কিনা
এ বিষয়েও।
সূচিপত্রঃ আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম - আপেল সিডার ভিনেগার কি হালাল
- আপেল সিডার ভিনেগার কি
- আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম
- আপেল সিডার ভিনেগার কতদিন খাওয়া যায়
- আপেল সিডার ভিনেগার কি হালাল
- আপেল সিডার ভিনেগার এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
আপেল সিডার ভিনেগার কি
আপেল সিডার ভিনেগার এর নাম হয়তো আপনারা অনেকে শুনে থাকবেন এবং নামটি শুনে হয়তো বুঝতেও পারছেন এটি আপেল থেকে তৈরি ভিনিগার। আপেলের রসকে দুইবার গাঁজিয়ে অর্থাৎ ফার্মেন্টেশন করে এই ভিনেগার তৈরি করা হয়। দুই দফায় গাঁজানোর ফলে আপেলের রসে থাকা শর্করা অ্যালকোহলে পরিণত হয় এবং এর পরে কি অ্যাসিটিক এসিডে রূপান্তরিত হয়। আপেলের রস কে দ্বিতীয়বার ফার্মেন্টেশন করার ফলে এর ভেতরে অ্যালকোহল থাকে না। আপেল সিডার ভিনেগারের অনেক উপকারিতা রয়েছে। অ্যাপেল সিডার ভিনেগার জীবাণুন নাশক হিসেবে অনেক ভালো কাজ করে , এছাড়াও অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,অ্যাান্টিব্যাকটেরিয়াল ,এন্টিভাইরাল ,এন্টিফাঙ্গাল ,এন্টিসেপটিক হিসেবেও কাজ করে। এছাড়াও অ্যাপেল সিনের ভিনেগার ম্যাগনেসিয়াম , আয়রণ ,ফসফরাস ,ম্যাঙ্গানিজ ,ক্যালরি পাওয়া যায়।
আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম
আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ভালোভাবে এর নিয়ম এবং এর পরিমাণ জেনে
নিতে হবে কেননা পরিমাণের অতিরিক্ত আপেল সিডার ভিনেগার খেলে বেশ কিছু
শারীরিক জটিলতার সম্মুখীন হতে হয় যা কোন কোন ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব
ফেলতে পারে। অনেকেই দ্রুত উপকারিতা পাওয়ার জন্য দিনে একের অধিক বার
আপেল সিডার ভিনেগার পান করেন এ কাজটি করা মোটেই উচিত নয় কারণ এতে উপকারের চেয়ে
ক্ষতি হয় সম্ভাবনাই বেশি থাকে। অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পান করতে হবে দিনের মধ্যে
একবার।
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পান করার সময় সতর্ক থাকতে হবে এই ভিনেগার অবশ্যই পানির সাথে মিশিয়ে পান করতে হবে ,কখনো বা কোনভাবেই সরাসরি পান করা যাবে না। সরাসরি আপেল সিডার ভিনেগার পান করলে দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে গিয়ে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। আপেল সিডার ভিনেগার পান করতে হবে খাবার খাওয়ার ২০-৩০ মিনিট পূর্বে এতে করে হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
আরো পড়ুনঃ কেমোমাইল চায়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা
এক গ্লাস পানিতে ১ টেবিল চামচ অথবা সর্বোচ্চ ২ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খাওয়ার নিয়ম । ডায়াবেটিস রোগীরা রাতে ঘুমানোর ২০ মিনিট আগে ২৫০ml পানির সাথে এক অথবা দুই টেবিল চামচ ভিনেগার মিশিয়ে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে খুব দ্রুত ফল পাবেন। উপকারী বলে বা দ্রুত মেদ কমবে বলে কখনোই পরিমাণের বেশি আপেল সিডার ভিনেগার পান করা যাবে না।
আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহারের সময় কখনো এর গন্ধ শুকবেন না কেননা এর গন্ধে
ফুসফুসের ক্ষতি হতে পারে এমনকি ফুসফুস ডেমেজ হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে , বিশেষ করে
আপনার যদি ফুসফুস বা শ্বাসযন্ত্রের কোন সমস্যা তাহলে অবশ্যই এর ঘ্রাণ
নেয়া থেকে বিরত থাকবেন। আপেল সিডার ভিনেগার কখনোই ঘুমানোর একেবারে আগ
মুহূর্তে পান করা যাবে না , ঘুম বা খাওয়ার অন্ততপক্ষে ৩০ থেকে ৪০
মিনিট আগে পান করতে হবে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার।
আপেল সিডার ভিনেগার কতদিন খাওয়া যায়
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার একটানা দীর্ঘদিন পান না করার জন্যই পরামর্শ দেওয়া হয়ে
থাকে কেননা একটানা দীর্ঘদিন এই দিনে কার পান করার ফলে পুরুষত্বহীনতার
পাশাপাশি আরও বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে, তাই একটানা
দুই মাস নিয়মিতভাবে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পান করার পরে অন্ততপক্ষে এক
মাস এই ভিনেগার পান না করাই ভালো। সুতরাং অ্যাপেল সিডার
ভিনেগার নিয়মিত দুই মাস পান করার পর এক মাস গ্যাপ দিয়ে আবার আবার দুই
মাস নিয়মিত পান করতে পারেন , এভাবে এই দিনে কার পান করার ফলে শারীরিক ক্ষতি
হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে।
এছাড়াও একটা না দীর্ঘদিন আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করার সময় বারবার
বোতলের মুখ খোলার কারণে এর ভেতরে অক্সিজেন ঢোকার কারণে ভিনেগারের গুণগতমান অনেক
কমে যায়। অ্যাপেল সিডার ভিরেগাঁও সংরক্ষণের জন্য এর মধ্যে থাকে সাইট্রিক অ্যাসিড
ও সালফার ডাই অক্সাইড , তার বারবার বোতলের মুখ খোলার কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ
উপাদান দুটি বেরিয়ে যায় এবং নষ্ট হয়ে যায় যার ফলে দেখা যায় ভিনেগারের স্বাদও
গন্ধে পরিবর্তন তাই এই দিনে কার একটানা দীর্ঘদিন ব্যবহার না করাই ভালো।
আপেল সিডার ভিনেগার কি হালাল
অনেকের মনেই সংশয় থাকে আসল আপেল সিডার ভিনেগার পান করা কি হালাল নাকি হারাম ? আবার গাঁজানোর প্রক্রিয়ার কথা শুনে অনেকেই হয়তো আসল আপেল সিডার ভিনেগারকে আরাম ভাবতে পারেন তাই চলুন আজকে এই বিষয়টি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। আপেল সিডার ভিনেগার তৈরি হয় আপেলের রস থেকে তাই এই ভিনেগার হারাম নয়। আর আপেল সিডার ভিনেগার তৈরীর কাজে ব্যবহৃত উপাদান গুলো মদের পর্যায়ে পড়ে না এবং প্রথম পর্যায়ে ফার্মেন্টেশনের ফলে আপেল এর রস অ্যালকোহলে পরিণত হলেও , তৃতীয় দফায় ফার্মেন্টেশন এর ফলে এর ভেতরে অ্যালকোহলের কিছুই অবশিষ্ট থাকে না এবং এই ভিনেগার পান করার ফলে কোন ধরনের নেশা হয় না , তাই অ্যাপেল সিডার ভিনেগার হালাল হিসেবে গণ্য করা হয়।
আরো পড়ুনঃ দ্রুত ওজন কমানোর উপায়
তবে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে ধর্মবিদদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে ,
কারণ একদল ধর্মবিদ মনে করে প্রথমবার ফার্মেন্টেশন এর ফলে যেহেতু আপেলের
রসগুলো অ্যালকোহলে পরিণত হয় তাই এটি খাওয়া জায়েজ নয় , পক্ষান্তরে আরেক দল
ধর্মবিদদের মতে দ্বিতীয়বার ফার্মেন্টেশন এর ফলে যেহেতু অ্যালকোহল এর কোন কিছুই
অবশিষ্ট থাকে না এবং এটি নিজে নিজেই অ্যাসিটিক এসিডে পরিণত হয় সুতরাং এই ভিনেগার
খাওয়া হালাল কেননা এখানে অ্যাপেলের রসকে ভিনেগারে পরিণত করার জন্য
আলাদা করে কোন প্রকারের হারাম বস্তু , অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য মেশানো হয় না।
যদিও আপেল সিডার ভিনেগারে সামান্যতম অ্যালকোহল অবশিষ্ট থাকে না তাই এটি
সম্পূর্ণ হালাল হলেও যদি আপনি এ বিষয়ে বিধাদ্বন্ধে ভোগেন তাহলে সিরকা বা
আপেল সিডার ভিনেগার পান করার ব্যাপারটি Skip করতে পারেন।
আপেল সিডার ভিনেগার এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
আপেল সিডার ভিনেগার উপকারী হওয়ার সত্বেও এর বিশেষ কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা
অপকারিতা রয়েছে , আর এই ভিনেগার পান করার পূর্বে অবশ্যই সেইসব পার্শ্ব
প্রতিক্রিয়া গুলো ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত। আর বিশেষ কিছু পার্শ্ব
প্রতিক্রিয়া রয়েছে বলেই এই ভিনেগার পান করার পূর্বে ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করে
নেওয়ার অনুরোধ করা হয়। কেননা উপকারী বলে অনেকেই আপেল ফিডার ভিনেগার পরিমাণের
চেয়ে বেশি খেয়ে ফেলেন আর যার ফলে তৈরি হতে দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের শারীরিক
জটিলতা।
মাত্রাতিরিক্ত এই ভিনেগার পান করার ফলে হতে পারে দাঁতের সমস্যা , বদহজম এবং
হাড়ের ক্ষতি এছাড়াও অতিরিক্ত পান করলে স্টমাক লাইনিং এবং ইসোফেগার
এর সমস্যা হতে পারে পাশাপাশি দেখা দিতে পারে শরীরে পটাশিয়াম লেভেল কম
হওয়ার সমস্যা। স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক থাকার পরেও এই দিনের গান করলে লো
প্রেসারের রোগীরা করতে পারেন জটিলতায়। স্কিনের এলার্জি কমাতে সাহায্য করলেও কারো
কারো ক্ষেত্রে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহারে ত্বকে জ্বালাপোড়ার একটি হতে
পারে।
আরো পড়ুনঃ খালি পেটে রসুন খেলে কি হয়
বেশি মাত্রায় অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পান করলে দেখা দিতে পারে দাঁতের সমস্যা ,
এনামেল নষ্ট হয়ে গিয়ে দাঁতের ভঙ্গুরতা বেড়ে যেতে পারে। তাই পরামর্শ দেওয়া
হয়ে থাকে আপেল সিডার ভিনেগার পান করার সময় স্ট্র ব্যবহারের যাতে করে ভিনেগার
মিশ্রিত পানি দাঁত স্পর্শ না করে। এছাড়াও পরিমাণের তুলনায় বেশি পান করলে
দেখা দিতে পারে ত্বক , চোখ , চুল ঝরা , পুরুষত্ব হীনতা এবং হৃদপিন্ডের
ক্ষতি। ডায়াবেটিস বা অন্যান্য রোগের ওষুধ চলাকালীন সময়ে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার
পান করলে ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে যায় তাই কোন ট্রিটমেন্ট বা ঔষধ চলাকালীন সময়ে
অবশ্যই ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করে তারপর আপেল সিডার ভিনেগার পান করা করতে
হবে।
মন্তব্য, আশা করি পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে এতক্ষণে আপনারা অ্যাপেল
ফিডার ভিনেগার কিভাবে খেতে হবে তার নিয়ম , এই ভিনেগার পান করা হালাল কিনা এবং
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পান করার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জেনেছেন তারপরেও
আপনাদের সতর্ক এবং সাবধান করার জন্য আরো একবার বলতে চাই , কখনো এই ভিনেগার সরাসরি
পান করবেন না এবং আপনি যদি ডায়াবেটিস , হার্ট , কিডনি এইসব রোগের ট্রিটমেন্ট
চলাকালীন অবস্থায় থাকেন অথবা এসব রোগের কারণে ঔষধ গ্রহণ করেন তাহলে অবশ্যই
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পান করার পূর্বে একবার ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করে
নেবেন।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url