আপেল সিডার ভিনেগার এর ২০টি উপকারিতা
আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা
আপেল সিডার ভিনেগার এর বেশকিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। শুধু স্বাস্থ্যকারিতা নয় ত্বক এবং চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে আপেল সিডার ভিনেগার। স্বাস্থ্য এবং রূপচর্চার যে সকল ক্ষেত্রে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহারে উপকারিতা পাওয়া সেগুলো হলো ,
১। কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়ঃ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার কোলেস্টেরলের
মাত্রাকে নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রাখতে সাহায্য করে। এই ভিনেগারের ভেতরে থাকা
এসিটিক অ্যাসিড রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে ।জাপানের একটি গবেষণায় দেখা
গেছে নিয়মিত অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পান করলে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে
রাখা যায়।
৩। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার শুধু ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণের জন্যই নয় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে
পারে। যেহেতু আপেল সিডার ভিনেগার পান করার ফলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম থাকে
তাই এই পানের ফলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রাখা যায়। উচ্চ
রক্তচাপের রোগীরা এই ভিনেগার পান করলে খুব দ্রুত উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের
চলে আসবে। তবে যাদের নিম্ন রক্তচাপ বা লো প্রেসার রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এই
ভিনেগার পান না করাই ভালো, কারণ লো প্রেসার এর রোগীরা এই ভিনেগার
পান করলে প্রেসার অতিরিক্ত লো হয়ে গিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ
৪। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করেঃ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার এর মধ্যে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এই ভিনেগার পান করলে ইমিউনিটি বৃদ্ধি পায়
এছাড়াও অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান যথেষ্ট
মাত্রায় থাকায় এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রেও
বিশেষভাবে সাহায্য করে। অ্যাপেল সিডার ভিনেগার এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং
এন্টিভাইরাল হওয়ায় এই ভিনেগার পানের ফলে শরীরের অভ্যন্তরে রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা গড়ে ওঠে যার কারণে বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে।
৫। হার্ট ভালো রাখেঃ নিয়মিত অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পান করারা
ফলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে না এবং
কোলেস্টেরল কম হয়, আর এ কারণেই অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পান করলে হার্ট ভালো থাকে।
অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে প্রচুর পরিমাণে অ্যাসিটিক অ্যাসিড থাকায় রক্তের
কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে থাকে এবং রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম
থাকার কারণে হার্ট ভালো থাকে।
৬। লিভার ভালো রাখেতে সাহায্য করেঃ লিভারের ফ্যাট কমাতে অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের গুরুত্ব অপরিসীম। অ্যাপেল সিডার ভিনেগার শরীর এবং লিভার থেকে অতি দ্রুত অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আর অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পান করলে লিভারে ফ্যাট জমতে পারে না
৭। শরীরে PH এর ভারসাম্য ঠিক রাখেঃ আমাদের শরীরে PH ভারসাম্য ঠিক রাখতেও যথেষ্ট অবদান রাখতে পারে আপেল সিডার ভিনেগার। আপেল সিডার ভিনেগার শরীরে সঠিকভাবে অক্সিজেন সরবরাহর কাজে সাহায্য করে এবং শরীরে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য দেহের স্ট্যামিনা বাড়ায়। এছাড়াও অ্যাপেল সিডার ভিনেগার শক্তি বাড়াতে এবং ক্লান্তি কমাতেও সাহায্য করে ।
৮। ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের ভেতরে থাকা
অ্যাসিটিক অ্যাসিড ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও অনেক সাহায্য করে। অ্যাসিটিক অ্যাসিড
ক্ষুধার তীব্রতা কে কমিয়ে দেয় যার ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কম হয়। আর
খাবার কম গ্রহণ করার ফলে রক্তে ক্যালরির পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে থাকুন , যা
শরীরে অতিরিক্ত ওজন কমানোর ক্ষেত্রে উপকার করে। ১৭৫ জনকে নিয়ে করা একটি
গবেষণার ফলাফলে দেখা গিয়েছে যে , সঠিক ডায়েট ফলো করার পাশাপাশি অ্যাপেল
সিডার ভিনেগার পান করলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে যে শরীরের ওজন কমাতে এবং পেটের মেদ
সাহায্য করে।
৯। ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট
থাকায় আপেল সিডার ভিনেগার পান করলে শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতা
গড়ে ওঠে এবং এই ভিনেগার ক্যান্সারের সেল ড্যামেজ করতে সাহায্য করে। বিশেষ কিছু
গবেষণায় দেখা গেছে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ক্যান্সার প্রতিরোধী হওয়ার
পাশাপাশি টিউমার ভালো করতেও সাহায্য করে। তবে ক্যান্সার এবং টিউমারের উপরে
অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের এখনো যথেষ্ট গবেষণা বাকি রয়েছে।
১০। হজম শক্তি ভালো করেঃ হজম শক্তি ভালো করার পাশাপাশি,পাকস্থলীর বিভিন্ন সমস্যা যেমন - পেটের পিড়া ,বদহজম, ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যার সমাধান দিতে পারে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার। খাবার গ্রহণের পরে পেট ভারি বোধ হলে অথবা রিচ ফুড জাতীয় খাবার খাওয়ার পরে পানির সাথে মিশিয়ে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার খেলে হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে দ্রুত খাদ্য হজমের ক্ষেত্রে এই ভিনেগার সাহায্য করবে।
১১। হাড় শক্ত ও মজবুত রাখেঃ আপেল সিডার ভিনেগারের মধ্যে থাকা উপাদান গুলো শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণের মাত্রা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে দেহের হাড় শক্ত ও মজবুত রাখতে সাহায্য করে। তাই নিয়ম করে আপেল সিডার ভিনেগার খেলে হাড় মজবুত ও শক্ত থাকে।
আরো পড়ুনঃ আপেলে কোন এসিড থাকে
১২। পায়ের পেশী টেনে ধরা রোধ করেঃ পায়ের পেশী টান ধরার সমস্যা অনেকের
মধ্যে দেখা যায় , আর এই সমস্যাটি বিশেষ করে রাত্রে বেলায় বেশি হয় এর কারণ হলো
শরীরে পটাশিয়ামের অভাব। আপেল সিডার ভিনেগারের মধ্যে প্রচুর
পরিমাণে পটাশিয়াম থাকাই, শরীরে পটাশিয়ামের ঘাটতি পূরণ করার মাধ্যমে পায়ের
পেশী টেনে ধরার সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে আপেলের রস থেকে তৈরি এই
ভিনেগার।
১৩। গলা ব্যথা কমায়ঃ গলা ব্যথা এবং গলা খুসখুস দূর করার জন্য
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার অনেক ভালো কাজ করে। অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান থাকায়
গলা ব্যথা কমাতে বিশেষ সাহায্য করতে পারে এই ভিনেগার। গলায় ব্যথা হলে হালকা গরম
পানির সাথে সমপরিমাণ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে এক আধ ঘণ্টা পর পর কুলকুচি ও
গার্গেল করলে গলা ব্যথা ও গলা খুসখুস কম হয় পাশাপাশি দাঁতে ব্যাকটেরিয়ার
সংক্রমণ থাকলে সেটিও রোধ হবে।
১৪। হেঁচকি ওঠা কমায়ঃ হঠাৎ হেঁচকি উঠতে শুরু করলে পড়তে
হয় বিব্রত করে পরিস্থিতিতে। স্নায়ুর অতিরিক্ত উত্তেজনা হল হেঁচকি ওঠার মূল
কারণ , আর এই সমস্যা সমাধানের জন্য পানির সাথে মিশিয়ে পান করুন অ্যাপেল সিডার
ভিনেগার।
১৫। নাক বন্ধ দূর করেঃ ঠান্ডা লাগা বা এলার্জির কারণে অথবা অন্য কোন কারণে
নাক বন্ধের সমস্যাই পড়লে ব্যবহার করুন আপেল সিডার ভিনেগার । আপেল সিডার
ভিনেগারে রয়েছে মিউকাসকে তরল করার ক্ষমতা এবং এতে রয়েছে পটাশিয়াম
ও এসিটিক অ্যাসিড যা জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করে। তাই নাক বন্ধের
এবং সাইনাস এর সমস্যা দূর করার জন্য কুসুম গরম পানিতে আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে
খেলে নাক বন্ধের সমস্যা দূর হয় এবং নাক থেকে পানি পড়া কমে।
১৬।মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করেঃ আপেল সিডার ভিনেগারে এন্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় এই ভিনেগার দিয়ে কুলকুচি করলে মুখের ব্যাকটেরিয়া এবং রোগ জীবাণু দূর হবে সাথে সাথে মুখের দুর্গন্ধ দূর করে সতেজ নিঃশ্বাসের সহায়তা করবে। এছাড়াও অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পানির সাথে মিশিয়ে মাউথ ওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহারের সময় যেন বেশি মাত্রায় না হয়ে যায় কারণ এসিড থাকায় এটি আপনার দাঁতের ক্ষতি করতে পারে।
আরো পড়ুনঃ আপেল সিডার ভিনেগারের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
১৭। স্কিন এলার্জি দূর করেঃ স্কিনের অ্যালার্জি দূর করতেও সাহায্য করে। পানির সাথে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে ত্বকে এলার্জির আক্রান্ত স্থানে হাত দিয়ে অথবা কটন বলের সাহায্যে ব্যবহার করুন , এই ভিনেগার আপনার স্কিনের অ্যালার্জি কমাতে অনেক ভালো সাহায্য করবে।
১৮। এন্টি ব্যাকটেরিয়ালঃ আপেল সিডার ভিনেগার এন্টি ব্যাকটেরিয়াল হিসেবেও কাজ করে , বিশেষ করে কোন জায়গায় যদি ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণ হয় তাহলে সেই সংক্রামিত স্থানে আপেল সিডার ভিনেগার লাগালে খুব তাড়াতাড়ি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ রোধ করা যায়।
১৯। ত্বকের যত্নেঃ রূপচর্চার কাজে বা ত্বকের যত্ন নিতেও ব্যবহার
করা যেতে পারে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার, এই ভিনেগার ত্বকের টোনার হিসেবে খুব ভালো
কাজ করে এছাড়াও ব্রণ দূর করতে , হাত পায়ের যত্ন নেয়ার জন্য পেডিকিওর বা
মেনিকিওর এর কাজে ব্যবহার করা যায় , পানির সাথে মিশিয়ে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার
ত্বকে ব্যবহার করলে রোদে পোড়া দাগ দূর হয়। তাছাড়াও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
থাকায় নিয়মিত অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পান করলে ত্বকের উপর থেকে বয়সের ছাপ দূর
হয়।
২০। চুলের যত্নেঃ শুধু ত্বকের নয় চুলের যত্নেও সমানভাবে কার্যকরী আপেল সিডার ভিনেগার। চুলের রুক্ষ ভাব দূর করতে , চুল সিল্কি করতে এবং চুল থেকে খুশকি দূর করতে বিশেষভাবে সাহায্য করতে পারে এই ভিনেগার। আপেল সিডার ভিনেগার শ্যাম্পুর সাথে মিশিয়ে তুলে লাগালে এটি কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করবে এবং দ্রুত চুল লম্বা করার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে , এছাড়াও এই পদ্ধতিটি মাথায় নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করবে।
মন্তব্য, আপেল সিডার ভিনেগার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হওয়ার পরেও এর
রয়েছে বিশেষ কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, তাই আপনাদের সকলকে অনুরোধ জানাবো আপেল
সিডার ভিনেগার খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা গুলো
এবং আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিবেন।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url