পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে মাগরিবের নামাজ হলো একটি। অন্যান্য সব ওয়াক্তের মতন
এই অক্সেরেও বিশেষ কিছু ফজিলত রয়েছে। আর আজকে আপনাদের জানাবো মাগরিবের
নামাজ সম্পর্কে। মুসলমান হিসেবে অধিকাংশ মানুষেরই এসব বিষয়ে জ্ঞান থাকলেও ,
সবারই যেসব বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকবে এর কোন মানে নেই। তাই আজকের এই পোস্টের
মাধ্যমে আপনাদেরকে জানাবো মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত এবং মাগরিবের নামাজের
নিয়ত সহ মাগরিবের নামাজের পরের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তাসবিহ এবং আমল।
নামাজ তো আমরা অনেকেই পড়ি কিন্তু কোন ওয়াক্তের নামাজ সর্বপ্রথম কোন নবী
পড়েছিলেন এবং প্রতি ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত সম্পর্কে আমরা খুব কম মানুষই জ্ঞান
রাখি। প্রতি ওয়াক্ত নামাজের প্রত্যেকটি বিষয়ে জানা উচিত। তাই আজকে
আপনাদের মাগরিবের নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানাবো। আপনারা
যারা মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত , মাগরিবের নামাজের নিয়ত , মাগরিবের নামাজের
ফজিলত সহ মাগরিবের নামাজ সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সঠিকভাবে জানতে চান তারা
পোস্টটি মনোযোগ ও গুরুত্ব সহকারে পড়ুন।
প্রত্যেকটি নামাজের আলাদা আলাদা ইতিহাস আছে , আপনাদের কি মাগরিবের নামাজের
ইতিহাস জানা আছে ? অনেকেই হয়তো মাগরিবের নামাজের ইতিহাস জানেন না। অনেকেই হয়তো
বলতে পারবেন না সর্বপ্রথম কোন নবী এই নামাজ পড়েছিলেন এবং কি কারণে পড়েছে। তাই
চলুন আজকে মাগরিবের নামাজের ইতিহাস জেনে নেওয়া যাক।
এই নামাজ প্রথমে হযরত ইসা (আঃ) পড়েছিলেন। নাসারাগণ যখন তাঁকে দোষারোপ করেছিল তখন
আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। আল্লাহর এই ক্ষমার শোকরিয়া আদায় করতে তিনি
সর্বপ্রথম তিন রাকাত এই মাগরিবের নামাজ পড়ে ছিলেন। ইয়াকুব (আঃ)-ও মাগরিবের নামাজ
পড়েছিলেন। হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর কনিষ্ঠ পুত্র হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর জন্য দিন-রাত
কান্না করতে করতে তার দুই চোখই নষ্ট হয়ে গেছিল। অনেকদিন পর যখন হযরত ইউসুফ (আঃ)
তাঁর চোখে হাত বুলান এবং হযরত ইউসুফ (আঃ) পুনরায় দৃষ্টি শক্তি ফিরে পান তখন তিনি
আল্লাহর কাছে থেকে তিনটি নিয়ামন পাওয়ার শোকরিয়া আদায়ের জন্য এই মাগরিবে তিন রাকাত
নামাজ পড়েছিলেন। এবং এই তিনটি নিয়ামতগুলো হলো: (১)তার চোখ ভালো হয়ে যাওয়ায়।
(২)জীবিতরূপে হযরত ইউসুফ (আঃ) ফিরে পাওয়ায়। (৩)ইসলামের উপরই হযরত ইউসুফ (আঃ)-কে
ফিরে পাওয়ায়। তাই মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের অর্থাৎ উম্মতে মুহাম্মদীদের জন্য এই
মাগরিবের তিন রাকাত নামাজ ফরজ করেছিলেন।
মাগরিবের নামাজের ফজিলত
কুরআন এবং হাদিসে মাগরিবের নামাজ গুরুত্ব সহকারে পড়ার তাগিদ রয়েছে।
অন্যান্য ওয়াক্তের মতন মাগরিবের নামাজেরও আলাদা ফজিলত আছে। ফজর ও মাগরিবের
নামাজের ওপরে গুরুত্ব আরোপ করে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেছেন - আর
তোমরা সকল এবং সন্ধ্যায় তোমার রবের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর (সূরা আল ইমরান ,
আয়াত-৪১)। ফজর এবং মাগরিবের নামাজের গুরুত্ব এজন্য বেশি যে এই দুই সময়
প্রকৃতির একটি বড় পরিবর্তন ঘটে।
একটি হাদিসের বর্ণনায় পাওয়া যায় যে নবীজি বলেন - আমার উম্মতেরা ততদিন
পর্যন্ত কল্যাণের পথে থাকবে যতদিন পর্যন্ত তারা মাগরিবের নামাজ আদায় করবে
( আবু দাউদ)। রাসূল(সা) আরো বলেছেন-মাগরিবের ফরজ নামাজের পর যে ব্যক্তি
দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করবে তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হবে
(তিরমিজি)।
মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত
আপনারা অনেকেই বিভিন্ন সময় এবং বিভিন্ন কারণে জানতে চেয়ে
থাকেন মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত। তাই এখন আপনাদের সঠিকভাবে জানাবো মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত। যারামাগরিবের নামাজ কয় রাকাত এ নিয়ে
দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন তারা মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত তা সঠিকভাবে জেনে নিন।
মাগরিবের নামাজ মোট সাত রাকাত। এর মধ্যে প্রথমে তিন রাকাত ফরজ নামাজ , তারপর
দুই রাকাত সুন্নত নামাজ এবং সবশেষে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে
হয়।
মাগরিবের নামাজের নিয়ত
প্রতি ওয়াক্ত নামাজ পড়ার পূর্বে অবশ্যই ভালোভাবে নামাজের নিয়ত গুলো জেনে
নেওয়া উচিত ।আর আমরা যেহেতু আজকে মাগরিবের নামাজ নিয়ে আলোচনা করছি
তাই এখন আপনাদের মাগরিবের নামাজের নিয়ত সম্পর্কে জানাবো। যারা মাগরিবের
নামাজের নিয়ত গুলো সঠিকভাবে জানেন না তারা অবশ্যই নামাজ পড়ার পূর্বে নিয়ত
জেনে নিন। মাগরিবের নামাজের নিয়ত গুলোর আরবি এবং বাংলা উচ্চারণ দেয়া
হলো। মাগরিবের নামাজের নিয়ত গুলো নিম্নরূপ
এবার জেনে নিন মাগরিবের নামাজের পর আমল করা সম্পর্কে অর্থাৎ মাগরিবের নামাজের
পর কি কি আমল করতে হয় সেগুলো।এ আমল গুলো করলে অশেষ সওয়াব লাভ করা যায় এবং
আল্লাহর ইচ্ছায় গুনাসমূহ মাফ হয়। তাহলে চলুন আর দেরী না করে মাগরিবের নামাজের
পর আমল।
মাগরিবের ফরজ নামাজের পরে আয়াতুল কুরসি পাঠ করতে হবে। শুধু মাগরিবের নামাজের
পরে কোন ফরজ নামাজের পরে করার আয়াতুল কুরসি পড়ার কথা বলা রয়েছে হাদিস।
আমাদের প্রিয় নবী নিজেও প্রতি ফরজ নামাজের পর এই আমলটি করতেন। হাদিস থেকে
জানতে পারা যায় যে , নবীজি বলেছেন -যে ব্যক্তি প্রতি ফরজ নামাজের পর আয়াতুল
কুরসি পাঠ করবে মৃত্যু ব্যতীত কোন কিছুই তাকে জান্নাতে যাওয়া থেকে আটকাতে
পারবে না।
মাগরিবের নামাজের পরে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো - সূরা হাশরের শেষে তিন
আয়াত। কেউ যদি মাগরিবের নামাজের পরে সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করে
তাহলে তার জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা ফজর পর্যন্ত মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকে।
কেউ যদি অভাব অনটনে থেকে থাকে তাহলে প্রতিদিন মাগরিবের নামাজের পর সূরা
ওয়াকিয়া পাঠ করলে, খুব তাড়াতাড়ি আল্লাহর আদেশে তার অভাব অনটন দূর
হবে।এছাড়াও মাগরিবের নামাজের পরে , দশবার দরুদ শরীফ , দশবার সূরা ইখলাস
পড়ার আমল করতে হয়।
মাগরিবের নামাজের পর তাসবিহ
উপরের অংশে আপনারা মাগরিবের নামাজের পর আমল গুলো জেনেছেন আর এবার আপনাদের
জানাবো মাগরিবের নামাজের পর তাসবিহ সম্পর্কে। মাগরিবের নামাজের পর তাসবিহ গুলো
পাঠ করলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায়।
ইয়া গাফুরুর রাহিম - ১০০ বার
সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার
আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার
আল্লাহু আকবার ৩৪ বার পড়তে হয়।
শুধু মাগরিবের নামাযের পর না ৫ ওয়াক্ত নামাযের পরই সুবহানাল্লাহ,
আলহামদুলিল্লাহ, আল্লহু আকবার পড়তে হয় এবং এরপর ১ বার পড়তে হয় -"লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু হয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া
আলা কুল্লি শাই ইন ক্বাদির"।
মন্তব্য , আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা নিশ্চয়ই
ভালোভাবে মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত এবং মাগরিবের নামাজের নিয়ত
সম্পর্কে জেনে নিয়েছেন। এ পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা যেহেতু মাগরিবের নামাজের ফজিলত
সম্পর্কেও জেনেছেন সুতরাং সকলেই উপযুক্ত কারণ ছাড়া এই নামাজ বাদ দিবেন না।
আল্লাহপাক আমাদের সকলকে যথাযথভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের তৌফিক দান করুন (আমিন)।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url