দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণ - হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেলে করনীয়
দুই মাস মাসিক না হওয়া এটি মূলত অনিয়মিত মাসিকের একটি সমস্যা আর এস অবশ্যই অধিকাংশ নারীই আক্রান্ত। দুই মাস মাসিক বন্ধু থাকে যাদের অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা রয়েছে তাতে আর এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রথমে অবশ্যই জানতে হবে মাসিক নিয়মিত না হওয়ার কারণগুলো। আর আজকের এই পোস্টে আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
অনিয়মিত মাসিকের পেছনে থাকে সাধারণ কিছু কারণ , এসব সাধারণ কারণ ছাড়াও অনেক সময় দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণ হতে পারে বিশেষ কিছু জটিল রোগের লক্ষণ হিসেবে। আর যেহেতু অনিয়মিত মাসিক পেছনে থাকতে পারে বিশেষ কিছু জটিল রোগের হাত তাই এই বিষয় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখা প্রত্যেকটি মহিলারই উচিত এবং সময় মতন সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। আর যদি সাধারণ কারণগুলোর জন্য অনিয়মিত মাসিক হয় তাহলে এ সময় করণীয় বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার। আর পিরিয়ড সংক্রান্ত এ সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো থাকছে আজকের পোস্টে।
সূচিপত্রঃ দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণ - হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেলে করনীয়
অনিয়মিত মাসিক কেন হয়
নারীদের মধ্যে একটি বড় অংশ অনিয়মিত মাসিকের সমস্যায় ভোগেন। অথচ অধিকাংশ মহিলারাই জানে না নিয়মিত মাসিক না হওয়ার কারণ গুলো। মাসিকের হওয়ার সঠিক সময় হল ২১ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে ,আর এই নিয়মটির ব্যতিক্রম ঘটলে সেটাকে অনিয়মিত মাসিক বা অনিয়মিত মাসিক হিসেবে ধরা হয় আর এর পেছনে থাকতে পারে বিশেষ কিছু কারণ। অনিয়মিত মাসিক হওয়ার পেছনে যেই কারণগুলো দায়ী সেগুলো হলো,
- শারীরিক ওজন স্বাভাবিক না থাকা
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ , স্ট্রেস অথবা টেনশন
- থাইরয়েড হরমোনের তারতম্যতা
- পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম
- ব্রেস্ট ফিডিং
- অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা
- ফাইব্রয়েড অথবা জরায়ুর সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা
- জরায়ু টিউমার, ক্যান্সার বা ইনফেকশন
- প্রি মেনোপজ
শরীরের বিশেষ সমস্যাগুলো ছাড়া , যৌবনকালে বা প্রথম মাসিক শুরু হওয়ার কয়েক বছরে সাধারণত ১২ -২০ বয়সীদের ভেতরে এবং মেনোপজ হওয়ার আগে এ সমস্যাগুলো দেখা যায়। তবে যে কারণেই অনিয়মিত মাসিক এর সমস্যা হোক না কেন ,দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা উচিত।
দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণ
আলোচনার এই পর্যায়ে আমরা যে বিষয়টি জানবো সেটি হল দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণ সম্পর্কে। মেয়েদের মাসিক সাধারণত নির্ভর করে শারীরিক , মানসিক সুস্থতা এবং হরমোনাল ব্যালেন্সের উপর নির্ভর করে। সুতরাং দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণের পেছনে থাকতে পারে বেশ কিছু কারণ যেমন,
হরমোনাল ব্যালেন্সের তারতম্যতাঃ মেয়েদের মাসিক বা পিরিয়ডকে প্রভাবিত করে
হরমোনাল ব্যালেন্স। আর এ কারণে শরীরে যদি হরমোনাল ব্যালেন্সের তারতম্যতা দেখা
দেয় তাহলে সে ক্ষেত্রে অনিয়মিত মাসিক অর্থাৎ দুই মাস মাসিক বন্ধ থাকতে পারে।
মানসিক চাপ বা স্ট্রেসঃ মেয়েদের অতিরিক্ত মানসিক চাপ , দুশ্চিন্তা বা স্ট্রেস
অনেকটাই প্রভাবিত করে নিয়মিত মাসিক হওয়াকে। তাই যদি কোন কারনে মহিলারা মানসিক
চাপের মধ্যে থাকেন তাহলে সে ক্ষেত্রে দুই মাস অথবা এর চেয়ে বেশি সময় অর্থাৎ
অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পুষ্টিহীনতাঃ অনিয়মিত মাসিক বা দুই মাস মাসিক না হওয়ার পেছনে আরেকটি যে বড় কারণ কাজ করে সেটি হল মেয়েদের পুষ্টিহীনতা। প্রতি মাসে মেয়েদের মাসিকের সময় রক্তক্ষরণের মাধ্যমে শরীরের যে সকল পুষ্টি বের হয়ে যায় সেই চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টিযুক্ত খাবার না খেলে , ধীরে ধীরে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিতে পারে অথবা অন্য কোন কারণে ও যদি মেয়েদের শরীরে পুষ্টি ঘাটতি দেখা দেয় সে ক্ষেত্রে দুই মাস মাসিক বন্ধ থাকার সমস্যাটি দেখা দেয়।
আরো পড়ুনঃ জরায়ু ব্যাথার কারণ
অস্বাভাবিক ওজনঃ শারীরিক ওজন যদি স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত বেশি বা অতিরিক্ত
কম হয় সে ক্ষেত্রে মেয়েদের ইস্ট্রোজেন হরমোনের তারতম্যতা দেখা দেয়। আর
অস্বাভাবিক ওজন কম বা বেশি হওয়ার কারণে অনিয়মিত মাসিক অথবা দুই মাস পর পর মাসিক
হওয়ার সমস্যাটি লক্ষ্য করা যায়।
এই কারণগুলো ছাড়াও যারা বাচ্চাকে ব্রেস্ট ফিড করান তাদের ক্ষেত্রে ১/২ মাস পরপর অনিয়মিত মাসিকের সমস্যাটি হয়ে থাকে এবং মিসক্যারেজের পর কয়েক মাস অনিয়মিত মাসিক বা ২/৩ মাস পর মাসিক হতে পারে। আবার যাদের মেনোপজ হতে চলেছে বয়সের সাথে সাথে তাদের মাসিকের মাত্রা কমে যেতে থাকে এবং মাঝে মাঝে এরকম দুই মাস মাসিক বন্ধ থাকে। আশা করছি , দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণ এগুলো বুঝতে পেরেছেন।
হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেলে করনীয়
এবার জেনে নিন হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেলে করনীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে। কারণ মেয়েদের মাসিক সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মধ্যে হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার বিষয়টি একটি উল্লেখ করার মতন সমস্যা। তাই আজকে আমরা জেনে নেব হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেলে করনীয় এই বিষয়ে। আপনি যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন তাহলে হঠাৎ মাসিক বন্ধ হলে আপনার উচিত পূর্বে চেক করে নেওয়া আপনি প্রেগনেন্ট কিনা এ বিষয়টি।মেনপোজ এবং প্রেগনেন্সি ছাড়া যদি অন্য কোন কারনে হঠাৎ মাসিক বন্ধ হয় তাহলে,অবশ্যয় আপনাকে সচেতন হতে হবে,কারণ হতে পারে হঠাৎ মাসিক বন্ধ হওয়া হতে পারে শারীরিক কোন জটিলতার লক্ষণ। তাই হঠাৎ মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে প্রথমে আমাদের যে কাজটি করতে হবে সেটি হল মাসিক বন্ধ হওয়ার পেছনে যে কারণগুলো রয়েছে সেই কারণগুলো সমাধান চেষ্টা করতে হবে, যেমন-
আমরা জানি যে শরীরে অপুষ্টি এবং আয়রনের অভাব হলে মাসিক বন্ধ থাকতে পারে এই
জন্য আমাদের কে পুষ্টিকর খাবারগুলো খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে বিশেষ করে আইরন
জাতীয় খাবার গুলো। আয়রনের পাশাপাশি মাসিক নিয়মিত করার জন্য ভিটামিন সি
জাতীয় খাবার গুলো শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাসিক বন্ধ থাকার আরেকটি
উল্লেখযোগ্য কারণ হলো শরীরে হরমোনের ব্যালেন্স ঠিক না থাকা , এ কারণে
আমাদেরকে সেই সকল খাবার গুলো খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে যেগুলোর মাধ্যমে আমাদের
শরীরে হরমোনের ব্যালেন্স ঠিক হয়। হরমোনাল ব্যালেন্স ঠিক রাখার খাবার গুলোর
মধ্যে একটি আদর্শ হল অ্যালোভেরা রস। হঠাৎ মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যা
সমাধানের জন্য আপনি রেগুলার এলোভেরা রস পান করতে পারেন
হঠাৎ যদি মাসিক বন্ধ হয়ে যায় তাহলে এটি হতে পারে আপনার শরীরের
অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি অথবা ওজন হ্রাস। স্বাভাবিকের চাইতে শরীরের অতিরিক্ত বেশি
ওজন এবং কম ওজন দুটোই হতে পারে মাসিক বন্ধের কারণ , সুতরাং আপনার শারীরিক ওজন
যদি স্বাভাবিকের তুলনায় কম বা বেশি হয়ে থাকে তাহলে , শারীরিক ওজনকে স্বাভাবিক
আনার চেষ্টা করুন , এছাড়াও হঠাৎ যদি মাসিক বন্ধ হয়ে যায় তাহলে মাসিক রেগুলার
করার জন্য স্ট্রেস মুক্ত থাকা এবং নিয়মিত কিছু সময় শারীরিক ব্যায়াম বা শরীর
চর্চা করা অত্যন্ত জরুরি। এই নিয়মকানুন গুলো ফলো করলে আপনার মাসিক রেগুলার
হওয়ার আশা করা যায়।
আরো পড়ুনঃ অনিয়মিত মাসিকের লক্ষণ গুলো জেনে নিন
তবে মেনপোজ ছাড়া এই নিয়ম কানুন গুলো ফলো করার পরেও যদি আপনার মাসিক অনিয়মিত বা বন্ধ থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন এবং ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হন যে , জরায়ু সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা যেমন -ফাইব্রোয়েড , টিউমার অথবা ক্যান্সার রয়েছে কিনা। কারণ এই ধরনের বিশেষ কিছু জটিল রোগের কারণেও হঠাৎ মাসিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
মন্তব্য , এতক্ষণে আপনারা নিশ্চয়ই ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন অনিয়মিত
মাসিক বা হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি মোটেও স্বাভাবিক নয়।
তাই আপনি যদি এ ধরনের কোন সমস্যার সম্মুখীন হন তাহলে বিলম্ব না করে গাইনি
ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন এবং প্রয়োজনে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর
মাধ্যমে সঠিক রোগ উদঘাটনের ব্যবস্থা করুন।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url