জন্ডিস হলে কি ঔষধ খাব - জন্ডিস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে
জন্ডিস হলে আমাদের দেশের খুব কমন রোগ গুলোর মধ্যে একটি আর জন্ডিস হলে ওষুধ খাওয়া যাবে কিনা এই দ্বিধাদ্বন্দ্বে অনেকের থেকে। জন্ডিস খুব সাধারণ রোগ হলেও সময় মতন যদি এই রোগ কাটিয়ে উঠা না যায় বা জন্ডিস যদি ক্রনিক আকার ধারণ করে তাহলে সেখান থেকে লিভারের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই জন্ডিস হলে ঔষধ খাওয়ার ব্যাপারে এবং এই সময় করণীয় বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত।
জন্ডিসকে আমরা রোগ হিসেবে চিহ্নিত করলেও এটি আসলে কোন রোগ নয় বরঞ্চ এটিকে বলা যেতে পারে উপসর্গ। শরীরে যখন বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায় তখন একে জন্ডিস বলা হয়। পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং তরল জাতীয় খাবার গ্রহণের ফলে জন্ডিস হেরে গেলেও এই সমস্যাটির ব্যাপারে সচেতন থাকা উচিত কেননা জন্ডিস যদি ক্রনিক আকার ধারণ করে তাহলে থেকে হতে পারে লিভারের জটিল রোগ। অনেকেই হয়তো জানেন যে জন্ডিস থেকে লিভারের জটিল সমস্যা হতে পারে আর এই ভয় থেকেই অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন জন্ডিস হলে ওষুধ খাওয়া যাবে কিনা , ডিম খাওয়া যাবে কিনা এই বিষয়গুলো। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর গুলো দেওয়ার জন্যই পোস্ট ভেতরে জন্ডিস সম্পর্কিত এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।সূচিপত্রঃজন্ডিস হলে কি ঔষধ খাব - জন্ডিস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে
- জন্ডিস হলে কি ঔষধ খাব
- জন্ডিস হলে করণীয় কি
- জন্ডিস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে
জন্ডিস হলে কি ঔষধ খাব
অনেকের মাঝেই একটি প্রশ্ন থেকেই যায় সেটি হল জন্ডিস হলে ঔষধ খাওয়া উচিত কিনা
।তাই আপনাদেরকে আজকে সহজভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছি জন্ডিস হলে কি ঔষধ খাব এই
বিষয়টি। এই পোষ্টের ওপরে অংশে আমরা আগেই জেনেছি যে জন্ডিস আসলে কোন রোগ নয়, এটি
হলো রোগের একটি উপসর্গ। যেহেতু জন্ডিস কোন রোগ নয় সেই জন্য এর কোন নির্দিষ্ট
ঔষধও নেই। সাধারণ জন্ডিস হলে ৭ থেকে শুরু করে ২৮ দিন রেস্ট নিলে অথবা কিছু নিয়ম
কানুন মেনে চললে ,কোন ঔষধ ছাড়াই জন্ডিস ভালো হয়ে যায়। আর যদি এই সময়ের মধ্যে
জন্ডিস সেরে না যায় তাহলে, অবহেলার না করে দ্রুত ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ
করুন।
জন্ডিস হলে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের গাছ গাছড়ার রস বিভিন্ন ঔষধ খেয়ে থাকেন
তবে এই বিষয়টি একেবারেই উচিত নয় এতে করে উপকারের চাইতে অপকার হওয়ার সম্ভাবনা
থেকে যায়। পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম এবং তরল জাতীয় খাবার বেশি বেশি খাওয়ার
পরেও যদি এক মাসের মধ্যে ভালো না হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারি পরামর্শ
মোতাবেক চলা এবং সেই অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ করা উচিত।
জন্ডিস হলে করণীয় কি
শুধুমাত্র জন্ডিস কেন হয় এবং এর লক্ষণ সম্পর্কে জানলে চলবে না আমাদেরকে জানতে
হবে জন্ডিস হলে করণীয় কি সেই বিষয় সম্পর্কেও। ঔষধের পরিবর্তে কিছু
নিয়ম-কানুন এবং কিছু খাবার খাদ্য তালিকায় যুক্ত করার মধ্যে দিয়ে আমরা
জন্ডিস থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি। তাহলে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক জন্ডিস হলে
করণীয় বিষয়গুলো।
বিশ্রাম গ্রহণ করাঃ লিভার বা যকৃতের যে কোন সমস্যায় শারীরিক পরিশ্রম
বা ভারী কাজকর্ম করলে এর সমস্যাগুলো আরো বেড়ে যায় এবং জটিল আকার ধারণ করে।
জন্ডিস যেহেতু লিভার রিলেটেড একটি সমস্যা এই কারণে জন্ডিসের সময় অতিরিক্ত
কাজকর্ম , চলাফেরা এবং শারীরিক পরিশ্রম না করে পর্যাপ্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা করা
প্রয়োজন। সম্পূর্ণরূপে বিশ্রাম নিলে খুব তাড়াতাড়ি জন্ডিসের সমস্যা থেকে সেরে
ওঠা সম্ভব।
তরল খাবার বেশি খাওয়াঃ জন্ডিস হলে তরল জাতীয় খাবার গুলো বেশি
খাওয়া প্রয়োজন যেমন বিভিন্ন ফলের রস , লেবুর শরবত , ঘোল ইত্যাদি।
কুশলের রসঃ কুসর বা আখের রস জন্ডিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত ফলদক। আখের
রস পান করার মধ্যে দিয়ে খুব সহজেই জন্ডিস থেকে সেরে উঠা যায়। তবে অবশ্যই আখের
রস খাওয়ার সময় খেয়াল রাখবেন সেটি যেন রাস্তার ধারে ফুটপাতে বিক্রি করা ফসলের
রসগুলো না হয় কারণ এতে বিভিন্ন ভাইরাস দ্বারা সংক্রমণ করতে পারে আর যেটি জন্ডিস
রোগীদের ক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনবে না।
লেবুর শরবতঃ আখের রসের পাশাপাশি লেবুর শরবত লিভারের পোস্ট কে ভালো
রাখতে ভীষণ কার্যকরী। আপনি যদি জন্ডিসের আক্রান্ত হন তাহলে বেশি বেশি লেবুর শরবত
খাওয়ার চেষ্টা করুন, কারণ লেবুর শরবত আপনাকে দ্রুত জন্ডিস থেকে সেরে উঠতে
সাহায্য করবে।
মুলার রসঃ জন্ডিস রোগীদের এ রোগ থেকে ছেড়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত
সাহায্যকারী হতে পারে, মুলার রস।
চর্বি এবং ভাজাপোড়া খাবার না খাওয়াঃ জন্ডিস রোগীদের জন্য চর্বি এবং
ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার গুলো না খাওয়াই উত্তম। বিশেষ করে বাইরের ফাস্টফুড জাতীয়
খাবার অত্যন্ত মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে জন্ডিস রোগীদের জন্য।
টাটকা শাকসবজি খাওয়াঃ জন্ডিস রোগীদের জন্য প্রচুর পরিমাণে টাটকা
শাকসবজি খাওয়া উচিত কারণ এর মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান গুলো শরীরে
পাওয়া যায় যার ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং সবজি জাতীয়
খাবার গুলোতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় হজমিও সহায়তা করে। তাই লিভার অথবা
জন্ডিস রোগীদের জন্য ভিটামিন এবং বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার গুলো অত্যন্ত
জরুরী।
আরো পড়ুনঃ পেটের গ্যাস কমানোর উপায়
এগুলো ছাড়াও দ্রুত জন্ডিসের সমস্যা থেকে সেরে ওঠার জন্য পেঁয়াজের রস এবং টমেটোর
রস গোলমরিচের সাথে মিশিয়ে খেলে অত্যন্ত দ্রুত ফল পাওয়া যায়। জন্ডিসের সমস্যা
সারাতে শুধু এই খাবার গুলোর উপরে নির্ভর করে থাকলে চলবে না পাশাপাশি ভিটামিন
সমৃদ্ধ খাবারগুলো গ্রহণ করতে হবে। জন্ডিস রোগের ক্ষেত্রে বেশ কিছু মানুষের কিছু
ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যেমন হলুদ খেলে জন্ডিস বেড়ে যায়-কিন্তু আসলে এ ধারণাটি
একেবারেই ভুল হলুদের সাথে জন্ডিসের কোন সম্পর্ক নেই এ কারণে হলুদ খেলে এর
প্রভাব জন্ডিস রোগের উপরে কোনভাবেই পড়ে না।
জন্ডিস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে
জন্ডিস নিয়ে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মতামত রয়েছে তাই এ বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা
নেয়ার জন্য অনেকেই জানতে চান জন্ডিস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে। সঠিক জ্ঞানের অভাবে
আমাদের অনেকেরই জন্ডিস থেকে সেরে উঠতে অনেক দেরি লাগে বা অসুবিধা হয়।
সাধারণত জন্ডিস রোগীদেরকে সহজে হজম হয় অর্থাৎ সহজ পাচ্য খাবারগুলো খাওয়ানো
পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞগণ। এবং জন্ডিস রোগীদেরকে ফ্যাট বা চর্বি
জাতীয় জাতীয় খাবার গুলো জন্ডিস থেকে সেরে না উঠা পর্যন্ত খাদ্য তালিকা থেকে
দূরে রাখতে বলা হয়।
ডিমের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং ফ্যাট। উচ্চমাত্রায় প্রোটিন এবং ফ্যাট থাকায় অনেক সময় সুস্থ অবস্থাতেও ডিম খেলে অনেকেরই এটি হজমে অসুবিধা সৃষ্টি করে। আর লিভারের প্রদাহ ও পিত্তথলি র সমস্যা জনিত কারণে এমনিতেই যেহেতু হজম প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় আর জন্ডিস যেহেতু লিভার ও পিত্তথলি বিষয়ক একটি সমস্যা এই কারণে জন্ডিস এর সময় যদি ডিম খাওয়া হয় তাহলে এটি আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে আরো দুর্বল করে তুলতে পারে এবং এর কারণে সৃষ্টি হতে পারে নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা। তাই জন্ডিসের সমস্যায় ভোগা কালীন অবস্থায় ডিম না খাওয়াই ভালো। জন্ডিস থেকে সম্পূর্ণরূপে সেরে ওঠার পরেই ডিম খাওয়া উচিত।
মন্তব্য , পোস্টটি পড়ে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে জন্ডিস খুব কমন একটি
রোগ হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে জটিল আকার ধারণ করতে পারে তাই জন্ডিস হলে এই
বিষয়ে উদাসীন না থেকে অবশ্যই সচেতন হন এবং ঘরোয়া উপায় গুলো মেনে চলার পরেও যদি
জন্ডিস থেকে না সেরে উঠতে পারেন তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ
করুন।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url