জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান ভাবসম্প্রসারণ
বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য "জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান" এই শিরোনামের ভাবসম্প্রসারণ তিন রকম ভাবে লিখে দেয়া হলো, এগুলোর মধ্যে থেকে আপনারা আপনাদের প্রয়োজন ও পছন্দ অনুসারে ভাবসম্প্রসারণ গুলো বিভিন্ন পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য পড়তে পারেন।
জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান
জীব জগতে পশু-পাখির যেমন জ্ঞান-বুদ্ধি, বিচার-বিবেচনা ও বোধশক্তি নেই তেমন, শিক্ষা-দীক্ষাহীন লোকেরও জ্ঞান, বিবেক-বিবেচনা নেই। জ্ঞান মানুষের জীবনে এক অন্যন্য মানবীয় গুণ। জ্ঞান আছে বলেই মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব জীবনের নানামুখী অভিজ্ঞতা থেকে মানুষের জ্ঞানের উন্মেষ ঘটে। অর্জিত জ্ঞানের বলেই মানুষ ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় বিচারবোধের অধিকারী হতে পারে। হীরা, মণি-মানিক্যের চেয়ে জ্ঞানের মূল্য বেশি। জ্ঞানের পরশে মানুষ তার জীবনে উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম হয়। জ্ঞান মানুষকে কলুষমুক্ত জীবনের সন্ধান দেয়। জ্ঞান মানুষকে সাফল্যের সোনালি শিখরে পৌছাতে সাহায্য করে। জ্ঞান ব্যতীত কেউ জীবনে সাফল্য লাভ করতে পারে না। জ্ঞান, মানুষের অন্তর্নিহিত পাশবিক শক্তির বিনাশ করে পূত পবিত্র জীবন গঠনে সহায়তা করে। পক্ষান্তরে কাণ্ডজ্ঞানহীন মানুষ তার অন্তর্নিহিত পাশবিক শক্তির কারনে জীবনকে কুপথে ধাবিত করে। তার মধ্যে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, বিচার বোধ থাকে না। পশুসুলভ আচরণ অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। জ্ঞানহীন মানুষ সর্বদা হিংসা-বিদ্বেষ, কামনা-বাসনা, প্রভৃতি কুপ্রবৃত্তি দাসত্ত্বে নিমগ্ন থাকে। এরা নিজের, নিজের দেশ ও জাতির নূন্যতম কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। জ্ঞানীব্যক্তি সবকিছু বিবেচনা করতে পারে। পক্ষান্তরে জ্ঞানহীন লোকের সে বিষয়ে কোনো বোধশক্তি থাকে না। জ্ঞানহীন ব্যক্তির জীবন তাই পশুর মতই অভিশপ্ত।
জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান
জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষ প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠে। মানুষ হিসেবে বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় জ্ঞানের অধিকারী হলে। অন্যদিকে জ্ঞানহীন মানুষ পশুত্ত্বের পর্যায় থেকে উন্ননি, করতে পারে না। তাই মানুষকে সবসময় জ্ঞান সাধনে নিয়োজিত হতে হবে। শুধু মানুষ হয়ে জন্ম নিলে মানুষের জীবন মানবিক গুণসম্পন্ন হয় না। মানুষকে মনুষ্যত্ব অর্জন করতে হয়। শিক্ষা-দীক্ষা ও অভিজ্ঞতা প্রভাবে মানুষের জীবন ক্রমেই জ্ঞান দ্বারা সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। জ্ঞান মানুষকে যোগ্যতা দান করে। নানা বিদ্যায় সে পারদর্শী হয়ে থাকে। জ্ঞানের আলোকেই মানুষের জীবন বিকাশিত হয়। জ্ঞান মানুষকে বিশ্বজগতের সঙ্গে পরিচিত করে। মানুষ হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব লাভের জন্য জ্ঞানের সহায়তা অপরিহার্য। অন্য প্রাণীর সঙ্গে মানুষের পার্থক্য এখানে। বিশ্বের তাবৎ প্রানীর উপর মানুষ প্রভুত্ত্ব করছে জ্ঞানের শক্তিতেই। বিশ্ব সভ্যতার বিকাশ ঘটেছে জ্ঞানের অবদানের ফলে। বিশ্বজগতের বর্তমান উন্নতির পেছনে দাঁড়িয়ে আছে মানুষের জ্ঞানের সাধনা। অপরদিকে শিক্ষা-দীক্ষার অভাবে জ্ঞানের সঙ্গে যেসব মানুষ পরিচিত হতে পারেনি। তারা অজ্ঞানতার অন্ধকারে চিরদিন আবদ্ধ হয়ে আছে। তারা যোগ্যতাহীন। কিছু অবদান রাখার মতো সামর্থ্য তাদের নেই। তারা উন্নত জীবনের সন্ধান পায়নি। জ্ঞানের অভাবে তারা আধুনিক জীবনের সম্পদও ভোগ করতে পারে না। তাদের জীবনের সঙ্গে পশুর জীবনের কোন পার্থক্য নেই। মানুষ ও পশুর মধ্যে জ্ঞানই ভেদরেখা টেনে রাখে। তাই জ্ঞান অর্জিত না হলে মানুষ আর পশুর মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না।
জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান
পৃথিবীতে মানুষ জ্ঞানের সাধনা করে বলে তার তারা সেরা জীব হিসেবে পরিচিত। তাই জ্ঞান মানবজীবনের এক হিরণ্ময় দ্যুতির নাম। শিক্ষা অর্জনের ফলে মানুষ জ্ঞানী হয় এবং তার সমস্ত পাশবিক সত্তা বিনষ্ট হয়, তার অন্তর হয়ে ওঠে পূত-পবিত্র। তাই বিশ্বব্যাপী অদ্যাবধি শিক্ষার জন্য মানুষের এত আয়োজন। প্রাচীনকালে মানুষ উপসনালয়ে যেতেন, ধর্মগুরু কিংবা কোন মহৎ ব্যক্তির কাছে থেকেও শিক্ষা-দীক্ষা লাভ করতেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় যে, কিছু সম্প্রদায় আছে; যারা তাদের ধর্মগুরু বা মুর্শিদের কাছ থেকে শিক্ষা-দীক্ষায় গ্রহণ করে জ্ঞানার্জনের পথ সুগম করে। জ্ঞানার্জনের বিষয়কেই সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়ে মানুষ তাই গড়ে তুলেছে পাঠশালা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা-দীক্ষা বস্তুত জ্ঞান অর্জন সম্ভব হয় না আল্লাহ তায়ালা শিক্ষার গুরুত্ব প্রতিপন্ন করার জন্য মহানবী (সা)- এর উপর পবিত্র কুরআনের প্রথম বাণী নাজিল করেন 'ইকরা' অর্থ পড়। আর হযরত মুহাম্মদ (সা.) জ্ঞানার্জনের জন্য সদূর চীনেও যেতে বলেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো বিশ্বে শিক্ষা-দীক্ষা আর জ্ঞানার্জনের জন্য মানুষ অপরিসীম ত্যাগ তিতিক্ষার সত্ত্বেও পৃথিবীতে এত শান্তি কেন? প্রকৃতপক্ষে যে শিক্ষায় কিংবা জ্ঞানার্জনে মানুষের মনুষ্যত্ব জাগ্রত হবে না; সেখানে পশুসত্তা প্রবল হওয়াই স্বাভাবিক। আর পশু সত্তা অর্থাৎ পাশবিক জ্ঞানার্জনের বড় অন্তরায়। তাই জ্ঞানহীন মানুষের অন্তরের পশুশক্তি তাড়নায় নানা ধরনের কুকর্মে জড়িয়ে পড়ে। তার কাছে ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ ইত্যাদি বিচার-বিবেচনা মূল্যহীন। মানুষের মধ্যে পশু শক্তি সরিয়ে ফেলে বিবেককে জাগ্রত করতে হবে। বিশ্বশান্তির প্রয়োজনে প্রকৃত জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে তা করা সম্ভব।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url