রোজা ভঙ্গের কারণ - রোজার নিয়ত বাংলায় - রোজার নিয়ত আরবি
মুসলিম উম্মাহের জন্য রহমতে ভরপুর একটি মাস হলো রমজান। এই রমজান মাস
হলো দোয়া কবুলের এবং জাহান্নাম থেকে মুক্ত হওয়ার একটি মাস মুসলমানদের জন্য এই
মাসে রোজা রাখা ফরজ। তবে শুধু এই পানাহার বর্জন করে থাকলেই চলবে না সঠিক
নিয়মে রোজা রাখতে হবে আর সঠিকভাবে রোজা রাখার জন্য ভালোভাবে জানতে হবে রোজা
ভঙ্গের কারণগুলো এবং রোজার নিয়ত।
রোজা ভঙ্গের কারণ গুলো যদি জানা না থাকে তাহলে দেখা যাবে আমাদের অজান্তে
আমাদের রোজা গুলো হবে না এবং এর কারণে আমাদেরকে কঠিন গুনাগার হতে হবে। এছাড়াও
রোজা রাখার পূর্বে অবশ্যই রোজার নিয়ত জেনে নিতে হবে কেননা রমজানের রোজা রাখতে
হলে অবশ্যই রোজার নিয়ত করতে হবে। তবে যারা রোজার আরবি নিয়ত জানে না তারা
বাংলাতে নিয়ত করলে রোজার কোন অসুবিধা হবে না। তবে বাংলায় বা আরবি যেটাই
হোক না কেন রোজা রাখার সময় নিয়ত করার ব্যাপারটি অত্যন্ত জরুরী।
সূচিপত্রঃ রোজা ভঙ্গের কারণ - রোজার নিয়ত বাংলায় - রোজার নিয়ত আরবি
রমযানের রোজা
রমজানের চাঁদ দেখা গেলে অথবা কোন অসুবিধা জন্য চাঁদ দেখতে না পেলে শাবানের চাঁদ
পুরা ৩০ দিন পূর্ণ হইয়া গেলে পরদিন হতে রমজানের রোজা রাখা প্রত্যেক জ্ঞানসম্পন্ন
বালেগ, নর-নারীর উপর ফরজ। শেষ রাতে সুবেহ সাদিকের পূর্বে পানাহারের পর দাঁত ও মুখ
পরিষ্কার করিয়া রোজার নিয়ত করতে হয়। রোজার নিয়ত করার পর আর কিছুই মুখে রাখার
চটিবে না। রমজান হল সেই পবিত্র মাস যেই মাসে আল্লাহর পক্ষ থেকে পবিত্র গ্রন্থ
আল-কোরআন নাযিল হয় এবং রমজান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যেই রাত হাজার মাসের
অপেক্ষা উত্তম। রমজান মাসে রোজা রাখা মুসলিম উম্মাহের উপর ফরজ আর রমযান মাসকে বলা
হয় সংযমের মাস। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন রোজা রেখে -ঝগড়া বিবাদ, মিথ্যা ,
গালাগালি করা ইত্যাদি কাজ থেকে বিরত থাকতে আর কেউ যদি জোরপূর্বক ভাবে ঝগড়া
বিবাদে জড়াতে চাই তাহলে তাকে বলে - আমি রোজা আছি বা আমি একজন
রোজাদার( বুখারী , মুসলিম)। রমজানের রোজা রাখার অনেক ফজিলত রয়েছে আর কেউ
যদি ইচ্ছাকৃতভাবে এই রোজা বর্জন করে তাহলে কঠিন গুনাগার হতে হবে।
রোযাদারের মর্যাদা
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- ছববরের অর্ধেক এবং ছবর ইসলামের অর্ধেক।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- রোজার মধ্যে অনাবশ্যক কথা বার্তার দরুন অযথা
বাক্যলাপ দরিদ্রের খাদ্যের জন্য ফিতরাজে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ
(সা.) বলেছেন- রমজানের প্রতি রাত্রিতে কয়েক লক্ষ মানুষ দোযখ থেকে মুক্তি পেয়ে
থাকে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি ইফতারের জন্য তাড়াতাড়ি করে সে
আল্লাহর খুব পেয়ারা বান্দা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- যখন রমযানের মাস আরম্ভ
হয় তখন হতে আসমানের রহমতের দরজা সমূহ খুলিয়া দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের সমুদয়
দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। শয়তান গুলিকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে দেওয়া হয়। রাসূলুল্লাহ
(সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও মিথ্যার বশবর্তী (মিথ্যা বলার অভ্যাস)
পরিত্যাগ না করবে ঐ ব্যক্তির পানাহার পরিত্যাগ করাকে আল্লাহ তায়ালা কোন মূল্য
দিবেন না। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- ছাহরী খাও ছাহরীতে বরকত আছে। রাসূলুল্লাহ
(সা.) বলেছেন- রমজানের শেষ রাত্রির ভিতর যে কোন বেজোড় রাত্রে শবে কদর তালাস
করো।
রোজার নিয়ত আরবি
نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ
فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ
الْعَلِيْم
রোজার নিয়ত বাংলায়
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন আসুমা গাদাম মিন শাহ্রি রামাজানাল মোবারা'কি ফারদাল্লাকা
ইয়া আল্লাহু ফাতকাব্বাল মিন্নি ইন্নাকা আনতাসসামীউল আ'লীম
অর্থ: আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের ফরজ রোজা রাখিবার নিয়ত করিলাম। হে আল্লাহ,
তুমি শ্রবণকারী ও জ্ঞানী, উহা আমার নিকট হইতে গ্রহণ করো। [যদি কোন কারনে রাতে
নিয়ত না করা হয়, তবে পরের দিন দ্বিপ্রহরের পূর্বে করা হইলে সেইস্থলে ''গাদাম''
না বলে সেখানে ''আল-ইয়াওমা'' (অর্থ- অদ্য) বলতে হবে]
রোজা ভঙ্গের কারণ
রোজা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত , রোজা রাখা অবস্থায় বেশ কিছু কাজ
রয়েছে যেগুলো করলে রোজা ভঙ্গ হয়। এখন আপনাদেরকে জানাবো রোজা রাখা অবস্থায়
ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত কোন কাজগুলো করলে রোজা ভঙ্গ হয়। রোজা ভঙ্গের কারণগুলো
হলো,
- ইচ্ছাকৃতভাবে কোন কিছু খেলে বা পান করা
- ধূমপান করা
- সহবাস করা
- হস্তমৈথুন করা হলে
- স্বপ্নদোষ অথবা বীর্যপাত হওয়া
- ইচ্ছা বা অনিচ্ছাই মুখ ভরে বমি করলে
- বমি ওঠার পরে তা ইচ্ছা করে গিলে ফেললে
- শরীরে ইনজেকশন বা স্যালাইন দিলে
-
শরীর থেকে রক্ত নিলে বা শরীরে রক্ত দিলে
-
ভুল করে কোন কিছু খাওয়ার পরে রোজা ভেঙ্গে গেছে মনে করে ইচ্ছা করে কোন কিছু
খেলে
-
জোর করে কেউ কোন কিছু খাওয়ায়ে দিলে
- কোন ক্ষতস্থান থেকে রক্ত বের হয়ে গড়ে পড়লে
-
নাক বা কান দিয়ে ওষুধ প্রবেশ করালে
- ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা অবস্থায় কুলি বা নাক পরিষ্কার করার সময় কণ্ঠনালীতে পানি প্রবেশ করালে
- রাত আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পরে সেহরি খেলে অথবা সূর্যাস্ত হয়ে গেছে মনে করে সময়ের আগেই ইফতার করলে
মন্তব্য , রমজান মাস হল মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র একটি মাস এবং এই
মাসেটি হলেও গুনাহ মাফ করানোর সর্বশ্রেষ্ঠ মাস কেননা এই মাসের প্রথম দশ
দিন রহমতের , দ্বিতীয় দশদিন মাগফিরাতের এবং শেষের ১০ দিন নাজাতের। এই রমজান
মাসে জান্নাতের দরজা গুলো খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে
দেওয়া হয় তাই আমাদের সকলের উচিত এই পবিত্র মাসেটি যথাযথভাবে ইবাদত বন্দেগি ,
ইস্তেগফার , সকল প্রকার ভালো কাজ এবং আমাদের উপরে অর্পিত ফরজ রোজা পালনের
মাধ্যমে অতিবাহিত করা।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url