সূরা ইয়াসিন এর ফজিলত
পবিত্র কুরআনের একটি সূরা রয়েছে যেই সুরাটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ এবং শক্তিশালী একটি সূরা আর এই সূরাটিকে বলা হয় কুরআনের অন্তর , এই সূরাটির নাম হল সূরা ইয়াসিন। সুরা ইয়াসিন পাঠের বা আমলের ফজিলত অনেক বেশি।
সুরা ইয়াসিন হলো মক্কায় অবতীর্ণ তাই এই সূরাটি হলো মাক্কী সূরা। মক্কার কাফিররা যখন নবীজি (সা) কে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ শুরু করে তখন আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে এই সূরাটি নাযিল হয়। আপনাদের আগেই বলেছি সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াতের ফজিলত অনেক বেশি তাই এখন আপনাদেরকে সুরা ইয়াসিন এর ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানাবো।
সূরা ইয়াসিন এর ফজিলত
সুরা ইয়াসিন নিয়মিত পাঠ করার ফলে ঈমান দৃঢ় হয় এবং অনেক সওয়াব পাওয়া যায়। সুরা ইয়াসিন এর ভেতরে আল্লাহর ইবাদত , আল্লাহর শক্তি এবং মহিমা , নবীজির নবুয়ত , রিসালাত , পরকাল , পুনরুত্থান সহ আরো বিভিন্ন বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে আর এই সুরা ইয়াসিন আমলের ফজিলত অনেক বেশি এখন আপনাদের জানাবো সুরা ইয়াসিন নিয়মিত তেলাওয়াত করলে বা এমন করলে অশেষ সওয়াবের অধিকারী ছাড়াও এই সূরার আরো কি কি ফজিলত রয়েছে।
(১) হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, নবী করিম (সঃ) ইরশাদ করেছেন, "সূরা ইয়াসিন একবার তিলাওয়াত করলে ১০ বার কুরআন মজীদ খতম করার সোয়াব লাভ করা যায়।" (তিরমিজি)
(২) অন্য এক হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, নবী করিম (সঃ) ইরশাদ করেছেন, "যে ব্যক্তি নিয়মিতভাবে সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করবে তার জন্য জান্নাতের ৮টি দরজা খোলা থাকবে। "
(৩) নবী করিম (সঃ) ইরশাদ করেছেন, "রাতে সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করলে ভোরবেলা নিষ্পাপ অবস্থায় ঘুম থেকে উঠতে পারা যায় এবং তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ হয়ে যায়। যে ব্যাক্তি এ সুরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করবে কিয়ামতের দিন তার জন্য এ সূরা আল্লাহর নিকট সুপারিশ করবে। "
(৪) সূরা ইয়াসিন লিখে রাখলে ভূত-প্রেত, জিন ইত্যাদির আছর হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
(৫)নির্জন পথে একাকী চলার সময় এই সূরা তিলাওয়াত করলে মনে সাহস ও শক্তি জন্ম এবং ভূত-প্রেত ইত্যাদির আক্রমণ থেকে বেঁচে থাকা যায়।
(৬) গ্রামে কলেরা, বসন্ত ইত্যাদি মহামারি দেখা দিলে সেখানে সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায় এবং রোগ দূর হয়।
(৭) কঠিন রোগাক্রান্ত ও বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির গলা সূরা ইয়াসিন লিখে তাবীয করে বেধে দিলে বিশেষ উপকার হয়।
(৮) এ সূরা তিলাওয়াত করে মনের কোন উদ্দেশ্য পূর্ণ হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তিনি তা পূর্ণ করবেন।
(৯) সূর্যোদয়ের সময় নিয়মিত খালেস হৃদয়ে এই সূরা তিলাওয়াত করলে যে কোন অভাব থাকলে আল্লাহ তায়ালা তা দূর করবেন।
(১০) মৃত্যুশয্যায় শায়িত ব্যক্তির পাশে বসে এই সূরা তিলাওয়াত করলে মৃত্যু যন্ত্রণা কমবে শয়তান সেখান থেকে দূর হবে এবং ঈমানের সাথে তার মৃত্যু হবে
(১১) কবরের নিকট এ সুরা তিলাওয়াত করে মৃতের জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করলে কবরের আজাব মাফ হবে।
(১২) হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, কোন ভীত ব্যক্তির ইয়াসিন সূরা পাঠ করলে তার ভয় দূর হবে, অসুস্থ রোগী ব্যাক্তি তিলাওয়াত করলে রোগমুক্ত, ক্ষুদার্ত ব্যক্তি তিলাওয়াত করলে খাদ্যের ব্যবস্থা হয়।(১৩) মনের উদ্দেশ্য পূরণ করতে হলে সুবহে সাদিকের (সূর্যাদয়ের পূর্বে) সময় উঠে ফজরের দু'রাকয়াত সুন্নাত নামাজ পড়বে। তারপর কিবলামুখি হয়ে ১১বার দরূদশরীফ পাঠ করে সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করবে। প্রত্যেক 'মুবীন' পর্যন্ত পড়ে পুনঃরায় প্রথম থেকে তিলাওয়াত করবে। এভাবে ৭মুবীন শেষ করে সমগ্র সূরা শেষ করবে। তারপর পুনরায় ১১বার দরুদশরীফ পাঠ করে ফজরের নামাজ আদায় করে সিজদায় যেয়ে নিজের উদ্দেশ্যে পূর্ণ করার জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে দুয়া করবে। এভাবে ৪০ দিন পর্যন্ত আমল করলে আল্লাহ তায়ালা উদ্দেশ্যে পূর্ণ করে দেবেন।
(১৪) পাগল ও জ্বিনগ্রস্ত রোগী ওপর সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করে ফুক দিলে আল্লাহ মেহেরবাণিতে সে আরোগ্য লাভ করবে।
(১৫) সুরা ইয়াসিন লিখে রাখলে বালা-মসিবত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। সূরা ইয়াসিনের এই আমল দ্বারা আমলকারীর সকল মনের আশা পূর্ণ হয়, সমস্ত সূরা ইয়াসিনের মধ্যে চার জায়গায় আর-রাহমান এবং তিন জায়গায় আল্লাহর শব্দ দুটি আছে।
(১৬) সুরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করার সময় আর-রাহমান শব্দের আছে আসলে ডান হাতে কনিষ্ঠ বন্ধ করবে এবং আল্লাহ শব্দের নিকট আসলে বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল বন্ধ করবে। সূরা শেষ হওয়া পর্যন্ত ডান হাতের এক একটি করে চারটি এবং বাম হাতে তিনটি আঙ্গুল বন্ধ করবে। অতঃপর সূরা মূলক পড়া আরম্ভ করবে । যখন আর-রাহমান শব্দের নিকট আসবে তখন ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙুল খুলে দিবে আর যখন আল্লাহ শব্দ তিলাওয়াত করবে তখন বাম হাতে কনিষ্ঠ আঙ্গুল খুলে দিবে। এভাবে সূরার শেষ হওয়া পর্যন্ত একে একে উভয় হাতের বন্ধ সব আঙ্গুলি খুলে দিবে। এভাবে ৪১ দিন পর্যন্ত আমল করতে পারলে আল্লাহর মেহেরবানীতে মনের উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে ইনশাআল্লাহ।
(১৭) সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করে ঘর হতে বের হলে অত্যাচারীর অত্যাচার হতে রক্ষা পাবে। কথিত আছে, কোন এক অত্যাচারিত ব্যক্তি জৈনিক বুযুর্গ আলেমের নিকট তার বিচার চাইলে তিনি তাকে এই সূরা তিলাওয়াত করে ঘর থেকে বের হতে বলেছেন। ওই ব্যক্তি এই আমলের বরকতে আমরণ অত্যাচার হতে বেঁচে যায়। এছাড়া সূরা ইয়াসিনে আরো বহু রকমের ফজিলত ও উপকার রয়েছে। এর আমলের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজে আশ্চর্যজনক ফল লাভ করা যায়। আল্লাহ তায়ালা এ সূরায় অসংখ্য ফযীলত, বরকত ও গুণ রেখেছেন।
এছাড়াও রীতিমতো তিলাওয়াত করলে ঈমান মজবুত হয়। গুনা মাফ হয় এবং অনেক সওয়াব লাভ হয়। নবী করীম (সা) এই সূরা তিলাওয়াত করতে। সাহাবাগণ (রাঃ) সূরা ইয়াসিন খুব বেশি পরিমাণে তিলাওয়াত করতেন। বুযুর্গ আলেমগণও এ সূরা মুখস্ত করতেন এবং অত্যন্ত ভক্তির সাথে তিলাওয়াত করতেন এর ফজিলত মর্যাদা সম্পর্কে আরো অনেক কিছু বর্ণনা করেছেন।
মন্তব্য, পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে এতক্ষণে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করার বা আমল করার ফজিলত তত বেশি। এই সূরা একবার পাঠ করলে দশ বার কোরআন খতমের সওয়াব পাওয়া যায় তাই আমাদের সকলেরই উচিত সকল ব্যস্ততার মধ্যেও প্রতিদিন কিছুটা সময় বের করে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াতের অভ্যাস গড়ে তোলা। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে নিয়মিতভাবে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াতের ফজিলত দান করুন (আমিন)।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url