হজম শক্তি বৃদ্ধির ২০টি উপায় - হজম শক্তি কমে গেলে কি কি সমস্যা হয়
সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য হজম প্রক্রিয়া ভাল থাকার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খাবার সম্পূর্ণরূপে ডাইজেস্ট না হলে সেখান থেকে ওজন বেড়ে যাওয়া , ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়া , পাতলা পায়খানা , কোষ্ঠকাঠিন্য, এসিডিটি রক্তের শর্করা মাত্রা এবং লিপিড প্রোফাইল বেড়ে যাওয়াসহ নানান ধরনের শারীরিক জটিলতা এবং সমস্যা তৈরি হতে পারে। খাবার সঠিকভাবে হজম হলে খাদ্যে থাকা পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরে ভালোভাবে শোষিত হয় না যার কারণে শরীরে পুষ্টি ঘাটতিসহ শিশুদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ ও বাধাগ্রস্ত হয়। তাই হজম শক্তি বৃদ্ধির ব্যাপারে আমাদের অবশ্যই সিরিয়াস হতে হবে।
আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থেকে পুষ্টিহীনতার সবকিছু ওপরেই প্রভাব
বিস্তার করতে পারে হজম প্রক্রিয়া অর্থাৎ হজম যদি ঠিকঠাক মতন না হয় তাহলে সেখান
থেকে শরীর সঠিকভাবে পুষ্টি এ্যাবজার্ভ করতে পারে না এবং এর থেকে নানান ধরনের
অসুবিধার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকে। শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে অবশ্যই হজম
প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে হবে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা করতে হবে। হজম শক্তি
বৃদ্ধির করার জন্য খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন হয় না , শুধুমাত্র নিজেদের কিছু
সচেতনতা বৃদ্ধি এবং লাইফ স্টাইল ঠিক করার মাধ্যমেই এই কাজটি করা সম্ভব। আর আজকে
আপনাদের জানাবো কিভাবে আপনারা খুব সহজভাবে নিজেদের হজম শক্তি বাড়াতে পারেন
ঘরোয়া ভাবে কয়েক টিপস অবলম্বন করার মাধ্যমে।
সূচিপত্রঃ হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায় - হজম শক্তি কমে গেলে কি কি সমস্যা হয়
- হজমের সমস্যা কেন হয়
- হজম শক্তি কমে গেলে কি কি সমস্যা হয়
- হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায়
- কি খেলে হজম শক্তি বাড়ে
হজম শক্তি কমে যাওয়ার কারণ
আমরা যে খাবারগুলো খাই সেই খাবারগুলো ভালোভাবে ডাইজেস্টিভ হলে তবে সেখান থেকে
পুষ্টি গ্রহণ করে শরীর শক্তি অর্জন করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়।
কিন্তু খাবার যদি সঠিকভাবে হজম না হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে নানান ধরনের অসুবিধা
সম্মুখীন হতে হয়। অনেকেই বলে থাকেন তাদের খাবার সঠিকভাবে হজম হয়
না, এর কারণ মূলত হজম শক্তি ভালো না থাকা। বার্ধক্য জড়িত কারণ ছাড়াও হজম
শক্তি কমে যাওয়ার পেছনে বেশ কিছু রিজন রয়েছে আর এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো
,
- পর্যাপ্ত পানি পান না করা
- রাতে দেরি করে ঘুমানো এবং দৈনিক রাতে ৭-৮ ঘন্টা না ঘুমানো
- সময় মতন খাবার না খাওয়া
- ফাইবার ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার কম খাওয়া
- অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা , মানসিক চাপ
- ডাইবেটিস
- বিভিন্ন ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- ধূমপান এবং অ্যালকোহল সেবন
- অতিরিক্ত চা ও কফি পান করা
- প্রতিদিন অতিরিক্ত তেল মশলাযুক্ত এবং ঝাল যুক্ত খাবার খাওয়া
- প্যানকেয়ার , লিভার এর সমস্যা
- দীর্ঘদিন ধরে পাকস্থলীর অসুখে ভোগা
- অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া যেমন - বাইরের ভাজাপোড়া ,ফাস্টফুড ইত্যাদি
- বাজারের কৌটাজাতকরণ এবং প্যাকেটজাতকরণ খাবার অতিরিক্ত খাওয়া
- সব সময় শুয়ে বসে থাকা কিংবা শারীরিক ব্যায়াম না করা
- অতিরিক্ত শারীরিক ওজন
হজম শক্তি কমে গেলে কি কি সমস্যা হয়
আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার বিষয়টি অনেকাংশই নির্ভর করে হজম প্রক্রিয়া
ভালো হওয়ার উপরে। কারণ হজম প্রক্রিয়া ভালো না হলে আমাদের শরীর খাদ্য থেকে
ভালোভাবে পুষ্টি শোষণ করতে পারে না আর সেখান থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে
যাওয়ার পাশাপাশি দেখা যায় আরো নানান সমস্যা। শরীরের হজম শক্তি কমে গেলে যেসব
সমস্যাগুলো ফেস করতে হয় সেগুলো হলো ,
- বদহজম
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- ডায়রিয়া
- পেটে এসিডিটি
- পেট ভারী হয়ে থাকা
- বমি বমি ভাব অনুভব হওয়া
- বুক জ্বালাপোড়া করা
- পেটব্যথা
- পেট ফুলে যাওয়া
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
- শারীরিক ওজন বেড়ে যাওয়া অথবা কমে যাওয়া
- শরীরে অপুষ্টি সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেওয়া
- খাবারের অরুচি ও ক্ষুধা মন্দা তৈরি হওয়া
- দুর্বলতা অনুভব হওয়া
হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায়
অনেকেই দেখা যায় হজম সংক্রান্ত সমস্যায় ভোগে থাকেন। যাদের হজম শক্তি কম অথবা
হজম সংক্রান্ত সমস্যায় প্রতিনিয়ত তারা , হজম শক্তি বৃদ্ধির জন্য ঘরোয়া ভাবে
কিছু টিপস অনুসরণ করে পারেন। হজম শক্তি বৃদ্ধির এই ঘরোয়া উপায়গুলো বেশ
দ্রুত এবং কার্যকরী ফলাফল প্রদান করে থাকে। সাধারণ কয়েকটি নিয়ম কানুন ফলো করার
মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই আপনার হজম শক্তিকে উন্নত করতে পারেন ।ডাইজেস্টিভ সিস্টেম
উন্নত করার উপায় গুলোর মধ্যে রয়েছে,
ফিজিক্যাল এক্সারসাইজঃ হজম শক্তি বৃদ্ধি করার সেরা উপায় গুলোর মধ্যে
রয়েছে ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ। সারাদিন শুয়ে বসে থাকার ফলে আমাদের ডাইজেস্টিভ
সিস্টেমে সমস্যা দেখা দেয় এবং আমরা প্রতিনিয়ত যে খাবারগুলো খাই সেগুলো হজম করতে
বেশ অনেকটা সময় লেগে যায় , এইসব সমস্যাগুলোর সমাধান দিতে পারে ফিজিক্যাল
এক্সারসাইজ। নিয়মিত যদি ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ করা হয় তাহলে আমাদের শরীরের
মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায় , এটি আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করবে।
ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ বলতে যে শুধু ভারী ব্যায়ামগুলো করতে হবে বিষয়টি এমন নয় ,
দৈনিক ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করলেও আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
ব্রিথিং এক্সারসাইজঃ ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ এর পাশাপাশি ব্রিদিং এক্সারসাইজও হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে বিশেষভাবে সহায়তা করতে পারে। কারণ ব্রিদিং এক্সারসাইজ করার ফলে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহের মাত্রা বেড়ে যায় আর এই বিষয়টি হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই হজম শক্তি বাড়াতে নিয়মিত ফিজিক্যাল এক্সারসাইজের পাশাপাশি কিছুক্ষণ ব্রিদিং এক্সারসাইজের অভ্যাস করতে পারেন।
সময় মতন পর্যাপ্ত ঘুমানোঃ সময় মতন পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের সুস্থ থাকার
জন্য অপরিহার্য একটি বিষয়। কারণ আপনি যতই পুষ্টিকর খাবার এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ
খাবার খান না কেন পাশাপাশি যদি পর্যাপ্ত ঘুমের ঘাটতি থাকে অথবা সময় মতন যদি আপনি
পর্যাপ্ত না ঘুমান তাহলে সে ক্ষেত্রে কখনোই সুস্থ থাকতে পারবেন না। আর ঘুমের সাথে
জড়িত রয়েছে হজম প্রক্রিয়ার বিষয়টিও। ভালো ঘুম হলে হজম প্রক্রিয়া ভালো থাকে
আর যদি আপনি সময় মতন পর্যাপ্ত না ঘুমান তাহলে সে ক্ষেত্রে দেখা যায় হজম শক্তি
কমে যাওয়া , পেটে এসিডিটি , কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি সমস্যা আর এইসব সমস্যাগুলোই
ডাইজেস্টিভ সিস্টেম এর সাথে রিলেটেড। তাই হজম প্রক্রিয়াকে ঠিক রাখতে এবং শক্তি
বাড়ানোর জন্য দৈনিক সময় মতন অর্থাৎ রাতে ৭-৮ ঘন্টা নিরবিচ্ছিন্ন
ঘুমের কোন বিকল্প নেই।
পর্যাপ্ত পানি পান করাঃ আমাদের বেঁচে থাকার জন্য পানি অপরিহার এই
কথাটি ছোট থেকে বড় আমরা সবাই জানি। পানি শুধু আমাদের বেঁচে থাকার জন্য নয়
আমাদের ডাইজেস্টিভ সিস্টেমকে অর্থাৎ হজম প্রক্রিয়াকে ভালো রাখতে এবং হজম শক্তি
উন্নত করতেও জরুরী। আপনি যতই ভালো খাবার খান না কেন বা যতই সহজপাচ্য খাবার খান না
কেন যদি পর্যাপ্ত পানি পান না করেন তাহলে সঠিকভাবে খাবার হজম হবে না। আর সঠিকভাবে
খাবার হজম না হলে সেক্ষেত্রে বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় দেখা দিবে গন্ডগোল আর এর থেকে
সৃষ্টি হবে বদহজম , ডায়রিয়া ইত্যাদি সহ বিভিন্ন সমস্যা। সুতরাং বুঝতেই পারছেন
খাদ্য সঠিকভাবে হজম করতে হলে অবশ্যই পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলাঃ আমাদের হজম শক্তি কমে যাওয়ার অন্যান্য
একটি প্রধান কারণ হলো সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে না চলা অর্থাৎ সময় মতন খাবার
গ্রহণ না করা। অনেকেই দেখা যায় সকালের নাস্তা করতে করতে প্রায় ১০ টা ১১ টা
বাজিয়ে ফেলেন , এই সময় যদি নাস্তা করা হয় তাহলে দুপুরে লাঞ্চের
টাইম হওয়া পর্যন্ত খাবারগুলো ভালোভাবে হজম হওয়ার সুযোগ পায়
না, এক্ষেত্রে হজমের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। হজম শক্তি বাড়ানোর
জন্য অবশ্যই সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা জরুরী সময় মতন পরিমিত খাদ্য গ্রহণ করলে
তবেই হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
খাওয়ার পরে লেবু বা টক দই খাওয়াঃ সঠিক খাদ্যাভাস মেনটেন করার পাশাপাশি
খাবারের সাথে যদি লেবু অথবা খাদ্য গ্রহণের পরে দই খাওয়া যায় তাহলে খাদ্য
হজম ভালো হয় এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও খাবার হজমের আরেকটি উপায়
হিসেবে দেখা যায় , খাবার গ্রহণের পূর্বে জিহ্বায় সামান্য লবণ লাগিয়ে
নিলে এটি হজমে বেশ সহায়তা করে।
খাওয়ার পরে মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়াঃ যে কোন কিছু খাওয়ার পরে যদি
মিষ্টি জাতীয় সামান্য কিছু খাওয়া যায় তাহলে এই টপসটি হজম শক্তি বাড়াতে
বিশেষভাবে সহায়তা করে। খাওয়ার পরে মিষ্টি খেলে খাদ্য হজমে সহায়তা করার
পাশাপাশি এর মাধ্যমে মুসলমানদের একটি সুন্নত পালন হয়ে যায়।
ফাইবার যুক্ত খাবার গ্রহণঃ ফাইবার যুক্ত খাবার গুলো আমাদের হজম শক্তি
বাড়াতে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে। তাই খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন ফাইবার সমৃদ্ধ
খাবারগুলো রাখার চেষ্টা করুন। হজম শক্তি বাড়াতে ফাইবার জাতীয় খাবার গুলোর ভেতরে
খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন শাকসবজি , ফল , বীজ এবং বাদাম জাতীয় খাদ্যগুলো
এগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায় যা আমাদের হজম শক্তি বাড়াতে
সাহায্য করে।
ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়াঃ দৈনিক খাদ্য তালিকায় কিছু পরিমাণ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার রাখতে পারেন। ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার গুলো আমাদের হাড়ের স্বাস্থ্য মজবুত করতে এবং দাঁত ভালো রাখার পাশাপাশি হজম শক্তি বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে থাকে। দুধ হল ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের বড় একটি উৎস, তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় দুধ অথবা দুগ্ধ জাত খাবার গুলো রাখতে পারেন , এতে আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর হওয়ার পাশাপাশি হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
আরো পড়ুনঃ ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হয় এবং ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার কি কি
খাদ্য তালিকায় ফল রাখুনঃ বেশ কিছু ফল রয়েছে যেগুলো আমাদের হজম
শক্তি বাড়াতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। এ ধরনের ফল গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো
পেঁপে , কলা , আপেল ইত্যাদি। এই ফলগুলো যদি নিয়মিত খাদ্য তালিকায় পরিমাণ মতো
যুক্ত করা হয় তাহলে , এই ফলগুলোও আমাদের দেহে শক্তি যোগাতে এবং হজম শক্তিকে
উন্নত করতে সাহায্য করতে।
গ্রিন টিঃ গ্রিন টি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আর গ্রিন টি এর মধ্যে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর পাশাপাশি গ্রীন টি পান করলে কেটেচিন নামের এক ধরনের খনিজ উপাদান পাওয়া যায় যা কিনা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে যথেষ্ট সাহায্য করে আর এই কারণে নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
পেয়ারাঃ হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে পেয়ারা কারন পেয়ারার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি , ক্যালসিয়াম , অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা কিনা খাদ্য হজমের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। হজমের সহায়তার পাশাপাশি পেয়ারা রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ঠিক করতে এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে।
অ্যালোভেরাঃ অ্যালোভেরার গুণের কথা আমরা অনেকেই জানি , অ্যালোভেরার ভেতরে
রয়েছে একাধিক ঔষধি গুণ যার মধ্যে হজম প্রক্রিয়া উন্নত করাও অ্যালোভেরার
বিশেষ গুণ গুলোর মধ্যে একটি। নিয়মিত এলোভেরার রস পান করার ফলে আমাদের হজম
প্রক্রিয়া ভালো থাকে ও ডাইজেস্টিভ সিস্টেম শক্তিশালী হয়। হজম প্রক্রিয়া
শক্তিশালী হওয়ার জন্য অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার বেশি থাকা খুবই জরুরী আর
অ্যালোভেরা জুস পানির ফলে আমাদের অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায় যার
কারণে হজম শক্তি তুলনামূলকভাবে অনেক বেড়ে যায়।
পুদিনা পাতার রসঃ নিয়মিত পুদিনা পাতা খেলে এটি আমাদের ইউনিয়ন সিস্টেম বা হজম প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করতে পারে। পুদিনা পাতার ভেতরে এন্টিঅক্সিডেন্ট , মেন্থল , ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট ইত্যাদি উপাদান গুলো হজম প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে পেটে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে।
মধুঃ মধু আমাদের শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। নিয়মিত মধু পান করলে এটি যেমন আমাদের শরীর সুস্থ রাখে , ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং এর পাশাপাশি হজম শক্তি বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। পাকস্থলীর সমস্যা দূর করার জন্য নিয়মিত মধু পান করতে পারেন। যাদের হজমে সমস্যা রয়েছে তারা যদি নিয়মিতভাবে মধু পান করেন তাহলে হজমের সমস্যা থেকে দ্রুত সরে উঠতে পারবেন। কারণ মধু হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
আপেল সিডার ভিনেগারঃ হজম শক্তি ভালো করার পাশাপাশি,পাকস্থলীর বিভিন্ন সমস্যা যেমন - পেটের পিড়া ,বদহজম, ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যার সমাধান দিতে পারে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার। খাবার গ্রহণের পরে পেট ভারি বোধ হলে অথবা রিচ ফুড জাতীয় খাবার খাওয়ার পরে পানির সাথে মিশিয়ে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার খেলে হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে দ্রুত খাদ্য হজমের ক্ষেত্রে এই ভিনেগার সাহায্য করবে।
চিয়া সীডঃ খাদ্য আঁশ অর্থাৎ ফাইবার - এই উপাদানটি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় চিয়া সিডে। আর ফাইবার হল হজমে সহায়তাকারী একটি উপাদান , আর এই কারণে চিয়া সিড হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে ও খাদ্য হজমে সহায়তা করতে সাহায্য করে।
অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহারঃ হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে হলে কিংবা
হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে হলে অবশ্যই অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করে চলতে
হবে কারণ অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে আমাদের ডাইজেস্টিভ সিস্টেমের উপরে চাপ পড়ে এবং
হজম শক্তি কমে যায়। আমরা বর্তমানে বাজারের কৌটা জাতকরণ এবং প্যাকের জাতকরণ
খাবারের উপরে বিভিন্নভাবে আসক্ত এবং একটু প্রয়োজন হলেই আমরা বাইরে থেকে খাবার
কিনে ক্ষুদা নিবারণের চেষ্টা করি কিন্তু বাইরের এই প্যাকেট জাত , কৌটা জাত ,
ফাস্টফুড , ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার গুলো আমাদের হজম প্রক্রিয়ার জন্য খুবই
ক্ষতিকর। এই খাবারগুলো শুধু আমাদের হজম শক্তি বা হজম প্রক্রিয়াকে নষ্ট করে দেয়
না সাথে সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমিয়ে দেয়।
মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করাঃ মানসিক চাপ , দুশ্চিন্তা এগুলো
আমাদের বিপাকীয় প্রক্রিয়ার উপরেও বিশেষ প্রভাব বিস্তার করতে পারে। আর এই
কারণেই দেখা যায় মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তা আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে নষ্ট করে
দেয়। যেহেতু হজম প্রক্রিয়াটি আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কার্যকলাপের
সাথে তাই মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তায় থাকলে হজম শক্তি কমে যায় এবং খাদ্য হজমের
সমস্যা হয় । গবেষণায় দেখা যায় মানসিক চাপে থাকলে হজমশক্তি কমে যাওয়ার
পাশাপাশি ঘুম কম হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
ধূমপান এবং অ্যালকোহল বর্জনঃ হজম শক্তি কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ হলো ধূমপান এবং অ্যালকোহল। গবেষণায় দেখা যারা ধূমপান করে এবং অ্যালকোহল সেবন করে অন্যদের তুলনায় তাদের হজম শক্তি অনেকটাই কম থাকে। হজম প্রক্রিয়া শক্তিশালী করার জন্য অবশ্যই ধূমপান এবং অ্যালকোহল সেবন বর্জন করতে হবে। শুধু ধূমপান এবং অ্যালকোহল বর্জনই নয় হজম প্রক্রিয়া শক্তিশালী করার জন্য অতিমাত্রায় চা ও কফি থেকেও দূরে থাকতে হবে। চা এবং কফি অবশ্যই আপনি খেতে পারেন তবে এর মাত্রা বুঝি নির্দিষ্ট মাত্রায় চা এবং কফি কোন সমস্যা সৃষ্টি না করলেও এগুলো যদি অতিরিক্ত পান করা হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে হজম শক্তি কমে যাওয়ার আরো কিছু সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
কি খেলে হজম শক্তি বাড়ে
আপনারা জানেন শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে, হজম শক্তি ভালো থাকতে হবে। বেশ কিছু খাবার
রয়েছে যে খাবারগুলো আমাদের হজম শক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে। ইতোমধ্যে আপনারা
হজম শক্তির বৃদ্ধির বিভিন্ন উপায় এগুলোর মধ্যে থেকে কোন কোন খাবারগুলোতে হজম
শক্তি বৃদ্ধি করে তার কিছু ধারনা পেয়েছেন। যদিও আপনারা এই বিষয়ে ধারণা পেয়েছেন
তার পরেও সংক্ষেপে আরো একবার আপনাদেরকে জানিয়ে দিতে চাই কি খেলে হজম শক্তি বাড়ে
সেই খাবার গুলোর নাম।
আরো পড়ুনঃ তলপেট ব্যথা কিসের লক্ষণ ও মেয়েদের তলপেট ব্যথা কেন হয়
আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার এবং ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবারগুলো এর পাশাপাশি ভিটামিন সি , অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার গুলো খাদ্য হজমে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে থাকে। এই খাবারগুলো খাদ্য তালিকায় রাখার পাশাপাশি আরো যেসব খাবার আপনার হজম প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে -আদা , রসুন , পুদিনা পাতা , মধু , এলোভেরা , লেবু , পেঁপে , কলা , আপেল , আপেল সিডার ভিনেগার , মিষ্টি কুমড়া এবং কুমড়া বীজ , বাদাম , দুধ , প্রবায়োটিক যুক্ত খাবার , দই , দারুচিনি , লবঙ্গ , বিট রুট , ব্রকলি , বাঁধাকপি ইত্যাদি খাবার গুলো আমাদের হজম শক্তি বাড়াতে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে তবে অবশ্যই এই খাবারগুলোর পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে পর্যাপ্ত পানি পান করা ছাড়া কোন খাবারই ভালোভাবে হজম হবে না এবং হজম প্রক্রিয়া ভালোভাবে কাজ করবে না।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url