তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম - তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল
রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত গুলোর মধ্যে মাসের তারাবির নামাজ অন্যতম। তারাবির নামাজের গুরুত্ব এতটাই বেশি যে কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে এই নামাজ আদায় না করে তাহলে তাকে গুনাহগার হতে হবে। আর তারাবির নামাজ যথাযথভাবে পড়ার জন্য পূর্বে এই নামাজ কত রাকাত এবং তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে।
রমজান মাসের চাঁদ দেখা এলে এশার নামাজের পরে এবং বেতের নামাজের পূর্বে তারাবির
নামাজ আদায় করা হয় এবং এই নামাজ আদায় করতে হয় পুরো রমজান মাস জুড়ে অর্থাৎ
শাওয়াল মাস শুরুর আগ পর্যন্ত। অনেকের মধ্যেই তারাবির নামাজের রাকাত সংখ্যা এবং
তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল এই বিষয়ে মতবিরোধ থেকেই যায় , আর আজকে
আপনাদের এই দ্বিধাদ্বন্দ দূর করার জন্য জানাবো তারাবির নামাজ কয় রাকাত ও তারাবির
নামাজ সুন্নত নাকি নফল এই বিষয়ে।
সূচিপত্রঃ তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম - তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল
তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল
রমজান মাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিদিন এশার নামাজের পরে ২০ রাকাত তারাবির
নামাজ পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা। অনেকে এই নামাজকে নফল বলে থাকা। কিন্তু তারাবির
নামাজ আসলে সুন্নতে মুয়াক্কাদা। তারাবির নামাজ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিলে তাকে
অবশ্যই গুনাগার হতে হবে।
হুজুরে পাক (সা) বলেছেন-নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতিটি রোজা কে ফরজ করেছেন ,
এবং আমি তোমাদের জন্য তারাবিকে সুন্নত করেছি। পুরো রমজান জামায়াতের সাথে নবীজি
যদি তারাবির নামাজ আদায় করতেন তাহলে এটি ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল, এই
আশঙ্কায় নবীজি মাত্র তিন দিন জামাতের সাথে নামাজ আদায় করেছিলেন এবং পরবর্তী
তারাবির নামাজ নিজ গৃহে আদায় করেছিলেন।
তারাবির নামাজ কয় রাকাত
তারাবির নামাজ কয় রাকাত এ সম্পর্কেও বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন
তারাবির নামাজ ৮ রাকাত কেউ মনে করে ১২ রাকাত আবার কারো মতে তারাবির নামাজ ২০
রাকাত। বিভিন্ন সূত্র থেকে এটি জানতে পারা যায় যে হুজুর (সা) সাহাবীদের নিয়ে
২০ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করতেন। এখন পর্যন্ত কোন মসজিদেই ২০ রাকাতের কম
তারাবির নামাজ আদায় করতে দেখা যায় না, এ থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে
তারাবির নামাজ ২০রাকাত।
তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম
দুই রাকাততারাবির নামাজ পড়ার নিয়মঃ তারাবীহ নামাজের নিয়ত করে প্রথমে
সোবহানাকা, আউযু বিল্লাহ, বিসমিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ পাঠান্তে যেকোনো একটি সূরা
মিলাইয়া প্রথমে এক রাকাত পড়বে। দ্বিতীয় রাকাতে আলহামদুর পরে পূর্ববর্তী
রাকাতের যে সূরা পড়ে গেছে তাহা বাদ দিয়ে একটি সূরা পড়ে সালাম ফিরাবে যেকোনো
একটি দুরুদ শরীফ একবার অথবা তিনবার পড়ে নামাজ শেষ করবে।
তারাবীর নামজে সূরা পড়ার নিয়মঃ প্রথম রাকাতে আলহামদুর পর আলাম তারা, দ্বিতীয়
রাকাতে আলহামদূর পর লিঈলাফে, এরূপে দুই রাকাত শেষ হলো। আবার দাড়াইয়া দুই রাকাত
নামাজের নিয়ত করে প্রথম রাকাতে আরা-আইতাল্লাযী, পরবর্তী রাকআতে ইন্না
আত্বোয়াইনা, এরূপে দুই রাকাত শেষ করবে দুই দুই রাকাআত পড়তে পড়তে সূরা নাস
পর্যন্ত মোট দশ রাকাত শেষ করবে পুনঃ ঐরকম পূর্বের ন্যায় প্রথম দুই রাকাতে আলাম
তারা ও লিঈলাফি পরবর্তী রাকাতে ওই নিয়মেই শেষ করে মোট বিশ রাকাত সমাপ্ত
করবে।
তা ছাড়া প্রথম রাকতে আলাম তারা, দ্বিতীয় রাকাতে কুল হু আল্লাহু, এভাবে দুই
রাকাত শেষ করে আবার দুই রাকাতের নিয়ত করবে প্রথমে লিঈলাফি, দ্বিতীয় রাকাতে কুল
হু আল্লাহু, এভাবেও ২০ রাকাত নামাজ পড়া যায়। প্রতি চার রাকাত শেষে কিছুক্ষন বসা
ও দোয়া-দরুদ পাঠ করা ও একটু আরাম করা সুন্নত। চারি রাকআত পর পর মোনাজাত করা
যায়। তবে নামাজ শেষ করে একত্রে একবার মোনাজাত করাই উত্তম। স্ত্রী-পুরুষ সকলের
পক্ষে তারাবীহ নামাজ পড়া আবশ্যক, তবে স্ত্রীলোকগণ পুরুষের ন্যায় সূরা-কেরাআত,
দোয়া-দরুদ ইত্যাদি জোরে না পড়ে চুপে চুপে পড়বেন। অন্যান্য নামাজের ন্যায়
পুরুষদের তারাবীহ নামাজ জামাআতে পড়া উত্তম।
তারাবীহ নামাজ পাঠ করার নিয়ম: দুই রাকাতে নিয়ত করিয়া তাহরীমা বেঁধে সানা,
তাসমিয়া পড়ে সূরা ফাতেহা ও তাহার সাথে অন্য সূরা মিলিয়ে যথা নিয়মে রুকু সেজদাসহ
প্রথম রাকাত শেষ করে দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতেহা ও অন্য সূরা বা আয়াত পড়ে রুকু
সেজদাহ করবে। এভাবে দুই রাকাত আদায় করে একবার কিংবা তিনবার দরুদ শরীফ পাঠ করত
উঠিয়ে দাঁড়িয়ে আবার দুই রাকাত ঐরূপে নিয়তসহ পড়বে। আর প্রতি চারি রাকআত আস্তে
নির্দিষ্ট দোআ পড়বে ও নির্দিষ্ট মোনাজাত করবে, রাকআত শেষ একবারে মোনাজাত করলে
অথবা একেবারে না করিলেও কোন গোনাহ হবে না।
'তারাবীহ' অর্থ বিরতিসহ নামাজ। খুব দ্রুত না করে ধীরে-সুস্থে এই নামাজ আদায়
করতে হয়। বোখারি ও মুসলিম শরিফে আছে, হুজুরে পাক (সাঃ) বলেছেন "যে ব্যক্তি
রমজানের রাত্রে তারাবি নামাজ পড়লো, তার সবগুলি দোয়া মাফ করে দেওয়া হবে।" যখন
রমজান শরিফের চাঁদ দেখা যায় সে রাত হতে শাওয়ালের চাঁদ দৃষ্ট হওয়ার পূর্ব রাত
পর্যন্ত প্রত্যেক রাত্রে এশার নামাজের পর ও বেতেরের পূর্বে বিশ রাকাআত নামাজ
দুই রাকআত করিয়া দশ সালাম আদায় করতে হয়। ইহাকে তারাবীহ নামাজ বলে।
এই নামাজ সুন্নতে মোআক্কাদা । ইহা জামাআতসহিত পড়িলে অধিক সওয়াব পাওয়া যায়।
স্ত্রী-পুরুষ রোযাদার বা বে-রোযাদারের প্রতিও ইহা পড়িবার হুকুম রয়েছে। এশার
ওয়াক্তের সঙ্গে সঙ্গেই এই তারাবির ওয়াক্ত শুরু হয় ও এশার ওয়াক্তের সাথে সাথেই
তারাবির ওয়াক্ত শেষ হয়। এই নামাজ একা একা বা জামাআতে দুইভাবে পড়ারই বিধান
আছে। তারাবিহ নামাজে ইমাম সূরা-কেরাআত উচ্চ স্বরে পড়তে হয়।
আরো পড়ুনঃ রোজা ভঙ্গের কারণ
রমযান মাসে তারাবির সাথে যদি বেতেরের নামাজ জামাআতের সাথে আদায় করা হয় তাহা
হলে সূরা-কেরাতও আওয়াজ করে পড়তে হবে। তারাবিহ নামাজে ত্রিশ পারা কোরআন শরিফ
খতম করা ইহা এক অসীম সওয়াবের কাজ, ইহা সুন্নত। একাকি তারাবির নামাজ পড়িলে
সূরা-কেরাআত এবং তাকবীরাদি উচ্চ স্বরে বা নীচু স্বরে পড়া যায়। তারাবীর নামাজ
এশার ফরয ও সুন্নতের পরে পড়তে হয়। শুরুতে এশার চারি রাকআত ফরয ও দুই রাকআত
সুন্নত নামাজ আদায় করে তারপর তারাবির নামাজে শামিল হতে হবে।
মন্তব্য , যেহেতু তারাবির নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা এ কারণে উপযুক্ত কারণ ছাড়া
কোন অবস্থাতেই এ নামাজ ছেড়ে দেওয়া যাবে না তাহলে কঠিন গুনাগার হতে হবে ,
তারাবির নামাজ রমজান মাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত আর এ নামাজ সম্পর্কে
নবীজী (সা) বলেছেন - যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি
অর্জনের যথাযথভাবে তারাবির নামাজ আদায় করে , তার পূর্ববর্তী গুনাহ আল্লাহ পাক
মাফ করে দেন।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url