মেয়েদের তলপেটে ব্যথা কিসের লক্ষণ - মেয়েদের তলপেটে ব্যথা হলে কি করনীয়
মেয়েদের কমন সমস্যা গুলোর মধ্যে একটি হল তলপেট ব্যথা হওয়া। কিন্তু আপনি কি জানেন কি কারনে মেয়েদের তলপেটে ব্যথা অনুভব হয়, আসলে এর পেছনে একটি নয় একাধিক কারণ থাকতে পারে এবং তলপেট ব্যথা অনেক সময় কিছু সাধারণ কারণে হয়ে থাকলেও, এটা কিন্তু অনেক সময় জটিল রোগের লক্ষণ হিসেবেও প্রকাশ পেতে পারে।
যেহেতু মেয়েদের তলপেট ব্যথার পেছনে জটিল কারণ থাকতে পারে , তাই এ ব্যাপারে
অবহেলা না করে, ঘন ঘন ব্যথা হলে এর সঠিক কারণ উদঘাটন করার মাধ্যমে এর সমাধানের
চেষ্টা করা উচিত। আর তলপেটে ব্যথা মেয়েদের কমন সমস্যা গুলোর মধ্যে একটি তাই এই
ব্যথা কিসের লক্ষণ এবং তলপেটে ব্যথা হলে করণীয় কি এ বিষয়ে বেসিক কিছু জ্ঞান
রাখা দরকার।
সূচিপত্রঃ মেয়েদের তলপেটে ব্যথা কিসের লক্ষণ - মেয়েদের তলপেটে ব্যথা হলে কি করনীয়
মেয়েদের তলপেটে ব্যথা কিসের লক্ষণ
তলপেট ব্যাথার সমস্যা নারী পুরুষ উভয়েরই হলেও ,নারীদের ক্ষেত্রে এ সমস্যাটি বেশি দেখা যায়।কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের কারণ একই হলেও ,বেশ কয়েকটি বিভিন্ন কারণে মেয়েদের তলপেটে ব্যথা হয়ে থাকে। তাই আজকে আমরা জানবো মেয়েদের তলপেট ব্যাথা কিসের লক্ষন হতে পারে সে ব্যাপারে। মেয়েদের তলপেট ব্যথার কিছু সাধারণ এবং কিছু জটিল কারণ রয়েছে, যে সকল সাধারণ কারণে জন্য মেয়েদের তলপেট ব্যথা হয় সেগুলো মাঝে মাঝে অনেক তীব্র আকার ধারণ করলেও এতে ভয়ের কিছু নেই কারণ এটি প্রাকৃতিক ভাবে। তবে মেয়েদের তলপেট ব্যথা যেসব জটিল কারণ রয়েছে , সেগুলোর জন্য অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। চলুন এবার তাহলে দেরি না করে আমরা জেনে নেই মেয়েদের তলপেট ব্যথা কিসের লক্ষণ সেই বিষয়ে।
মাসিকের কারনেঃ মেয়েদের তলপেট ব্যথার স্বাভাবিক কারণ গুলোর মধ্যে
প্রধান উল্লেখযোগ্য কারণ হলো মাসিক, মাসিকের আগে এবং মাসিকের সময়ে তলপেট ব্যথা
হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি কারণ। কারো কারো ক্ষেত্রে এই সময় প্রচন্ড তলপেট
ব্যথা হতে দেখা যায়।
আরো পড়ুনঃ অনিয়মিত মাসিকের কারণ
লুব্রিকেশনের অভাবেঃ যৌন মিলনের সময় মেয়েদের যৌনাঙ্গ থেকে এক ধরনের পিচ্ছিল পদার্থ বের হয়, এই পিচ্ছিল পদার্থ বের হওয়ার প্রক্রিয়াকে লুব্রিকেশন বলা হয়। কোন কারণে যদি এই লুব্রিকেশনের অভাব দেখা দেয় তাহলে এর জন্য সহবাসের পরে তলপেটে ব্যথা হয়।
জরায়ুর বিভিন্ন সমস্যাঃ জরায়ু রিলেটেড বিভিন্ন ধরনের সমস্যার কারণে মেয়েদের তলপেটে ব্যথা হয়ে থাকে। জরায়ুর সমস্যা গুলো হল -জরায়ুতে ইনফ্লামেশন , ইনফেকশন , ফাইব্রোয়েড , ক্যান্সার , টিউমার ইত্যাদি থাকলে মেয়েদের তলপেটে রাখা হয়।
**
ডিম্বোনালি ফেটে গেলেঃ কোন কারনে যদি ভ্রুণ জরায়ুর জায়গায়
ডিম্বনালীতে ঢুকে যায় এবং এর ফলে ডিম্বনালি ফেটে যায় তাহলে , প্রচুর
রক্তক্ষরণের সাথে সাথে প্রচন্ড তলপেট ব্যথা হয়।
অ্যাপেন্ডিসাইটিসঃ মেয়েদের পেটে অ্যাপেন্ডিসাইটিস থাকলে এর
কারণে তলপেট ব্যথা হয়ে থাকে। এপেন্ডিসাইটিসের কারণে তলপেটে ব্যথার পাশাপাশি
গায়ে মৃদু জল ও বমি ভাব থাকে।
ক্যান্সারঃ যদি কোলন ক্যান্সার , মূত্রথলির ক্যান্সার , জরায়ু
ক্যান্সার এই জাতীয় ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার কারণে মেয়েদের তলপেট
ব্যথা হয়।
**
এছাড়াও মেয়েদের তলপেটে ব্যথা হওয়ার পেছনে রয়েছে ইউরিন ইনফেকশন , ওভারিতে সিস্ট থাকলে শারীরিক মিলনের সময় সেক্স পজিশন ঠিক না থাকার ফলে সহবাসের পরে তলপেটে ব্যথা হওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য হলে তলপেট ব্যথা হয় , গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত হাঁটাচলা ও কাজকর্ম করা। মেয়েদের তলপেট ব্যথা হওয়ার আরেকটি লক্ষণ হল সন্তান প্রসব, অর্থাৎ সন্তান তো সব সময় ঘনিয়ে এলে লেবার পেইন হিসেবে প্রচন্ড তলপেট ব্যথা হয়। মেয়েদের তলপেট ব্যথা কিসের লক্ষণ আশা করছি বুঝতে পেরেছেন। তবে মেয়েদের তলপেট ব্যথা সাধারণ কারণ গুলো ছাড়া যদি তলপেটে ব্যথা হয় তাহলে এই ব্যাথাকে মোটেও অবহেলা করা উচিত নয় ,কারণ এই ব্যথাগুলো হতে পারে জটিল কোন রোগের লক্ষণ। এ কারণে প্রাকৃতিক নিয়ম ছাড়া যদি তলপেটে ব্যথা হয় তাহলে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।
তলপেটে ব্যথা হলে কি করনীয়
তলপেট ব্যথার অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্য ঘরোয়া উপায় রয়েছি। তবে
ঘরোয়া এ পদ্ধতি গুলো তলপেট ব্যথায় সাময়িক আরাম দিলেও জটিল যেসব কারণে তলপেট
ব্যথা হয়ে থাকে সেগুলোর ক্ষেত্রে স্থায়ী সমাধান দিতে পারে না। এই কারণে জটিল
যেসব রোগের জন্য তল থেকে অসুস্থ ব্যথা বা যন্ত্রণা হয় সেগুলোর ব্যাপারে আপনাকে
দ্রুত ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে, তবে তলপেটে ব্যথার অসহনীয়
পরিস্থিতিতে একটু স্বস্তি পেতে নিচের এই ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো এপ্লাই করতে
পারেনি এতে আপনার স্থায়ী সমাধান না হলেও অনেকটাই আরাম দেবে। তলপেট ব্যথা হলে কি
করনীয় এইসব ঘরোয়া পদ্ধতি সম্পর্কে অনেকেরই অজানা। তাই চলুন আজকে আমরা তলপেটে
ব্যথা হলে কি করনীয় সেই বিষয়গুলো জেনে নিই।
আদাঃ আদা আমাদের নিত্য দিনের রান্নার কাজে ব্যবহৃত খুব পরিচিত একটি মসলা জাতীয় দ্রব্য, এই আদার ভেতর রয়েছে এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান যা শরীরের যেকোনো ব্যথা বা প্রদাহ থেকে উপসম দিতে সাহায্য করে। এ কারণে তলপেট ব্যথা হলে সামান্য কাঁচা আদা মধুর সাথে মিশিয়ে অথবা আদা চা পান করলে তলপেট ব্যথায় অনেকটা ভালো বোধ হয়।
**
অ্যাপেল সিডার ভিনেগারঃ এক গ্লাস হালকা কুসুম গরম পানিতে এক
চামচ অথবা হাফ চামচ এপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করুন। অ্যাপেল সিডার
ভিনেগার তলপেটে ব্যথা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারেন। আপনি হালকা গরম
পানিতে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার দিয়ে এর সাথে সামান্য মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
পুদিনা পাতাঃ পুদিনা পাতার ভেতরের রয়েছে অসংখ্য ওষধি গুন, পুদিনা
পাতার বহু গুণের ভেতরে পেট ব্যথা বা তলপেট ব্যথা কমানোর আশ্চর্যজনক ক্ষমতা
রয়েছে। প্রাকৃতিক ব্যথা নাশক বা প্রবাহ নাশক হিসেবে পুদিনা পাতার ব্যবহার হয়ে
আসছে অনেক আগে থেকে। তাই আপনি তলপেট ব্যথা হলে পুদিনা পাতার তৈরি করে অথবা কাঁচা
পুদিনা পাতা কোন কিছুর মধ্যে দিয়ে বা এমনি চিবিয়েও খেতে পারে না। এই পাতা
আপনার তলপেটের ব্যথা অনেকটাই কমাতে সাহায্য করবে।
কলা ও আপেলঃ তলপেট ব্যথার সময় কলা ও আপেল এই দুইটি ফল খেলেও ব্যাথা
থেকে অনেকটা উপশম পাওয়া যায়। তাই আপনার তলপেট ব্যথা হলে ফাইবার ও ভিটামিন সি
সমৃদ্ধ কলা ও আপেল এই ফল দুটি খেতে পারেন। পেট ব্যথার সময় কলা ও আপেল খেলে দেখার
সাথে সাথে বমি বমি ভাব কমাতেও এই ফল দুটি যথেষ্ট সাহায্য করতে পারে।
আরো পড়ুনঃ কলা খাওয়ার উপকারিতা
তবে এই ঘরোয়া টোটকা গুলো আপনাকে সাময়িক আরাম দিলেও স্থায়ী বা দীর্ঘমেয়াদির কোন সমাধান দিতে পারবে না। এই কারণে আপনার যদি জটিল কোন রোগের কারণে অল্পের ব্যথা হয় বা মেয়েদের তলপেট ব্যথার স্বাভাবিক কারণগুলো ছাড়া , তলপেটে ব্যথা অনুভব করেন তাহলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করুন এবং আলট্রাসনোগ্রাফি মাধ্যমে তলপেট ব্যথার সঠিক কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হন।
মন্তব্য , আশা করছি পোস্টটি পড়ে আপনারা বুঝতে পেরেছেন যে, তলপেটে
ব্যথার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে , আর এ কারণগুলোর মধ্যে কিছু কারণ
রয়েছে স্বাভাবিক আবার কিছু কারণ হতে পারে জটিল রোগের বহিঃপ্রকাশ। তাই মেয়েদের
তলপেট ব্যথাকে অবহেলা না করে অবশ্যই প্রথমে এর সঠিক কারণ অনুঘাটন করুন , কেননা
অনেক সময় ছোট ছোট সমস্যাগুলো একসময় গিয়ে বড় আকার ধারণ করে জটিল সমস্যার
সৃষ্টি করে ফেলতে পারে।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url