নিম পাতা মুখে দিলে কি হয় - ব্রণের জন্য নিম পাতার ব্যবহার
নিম পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতার ধারণা প্রায় সবাই জানি। কিন্তু নিম পাতা শুধু স্বাস্থ্যের জন্যই নয় , রূপচর্চার কাজেও রাখতে পারে অসাধারণ অবদান। আমাদের চুল , ত্বক এবং ব্রণের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের সহজ এবং কার্যকরী সমাধান দিতে পারে এই নিম পাতা। কিন্তু আমরা অনেকেই নিমপাতা মুখে দিলে কি হয় এবং ব্রণ এবং ত্বকের উপরে এই নিম পাতার কি প্রভাব রয়েছে তা অনেকেই জানিনা।
আমরা আমাদের ত্বক বিশেষ করে মুখের ত্বক ভালো করতে , চুল এবং ব্রনের সমস্যা দূর করতে কত কিছুই না করে থাকে এবং অনেক সময় এসব সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। কিন্তু আমরা অনেকেই হয়তো জানি না যে আমাদের স্কিনের বিভিন্ন সমস্যা এবং চুলের সমস্যা দূর করার জন্য আমাদের হাতের কাছে থাকা নিমপাতায় যথেষ্ট। স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হওয়ার পাশাপাশি নিমপাতা কিন্তু রূপচর্চার ক্ষেত্রেও রাখতে পারে অসাধারণ অবদান , আর আজকে আপনাদের জানাবো নিমপাতা মুখে দিলে কি উপকারিতা পাওয়া যাবে এবং ব্রণের সমস্যা দূর করার জন্য কিভাবে নিম পাতা ব্যবহার করতে হবে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে।সূচিপত্রঃ নিম পাতা মুখে দিলে কি হয় - ব্রণের জন্য নিম পাতার ব্যবহার
- চুলের জন্য নিম পাতার উপকারিতা
- ত্বকের যত্নে নিম পাতার উপকারিতা
- ব্রণের জন্য নিম পাতার ব্যবহার
- নিম পাতা মুখে দিলে কি হয়
চুলের জন্য নিম পাতার উপকারিতা
চুলের জন্য নিমপাতা অত্যান্ত উপকারী। চুলের অথবা মাথার যেকোনো সমস্যা দূর করতে
নিম পাতার উপকারিতা পাওয়া যায়। মাথার ত্বকে বিভিন্ন সময় ফাঙ্গাস বা
ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটে, মাথার ত্বকের এই ধরনের সমস্যাগুলো দূর করতে নিম পাতা
বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। চলুন এবার তাহলে জেনে নেই চুলের জন্য নিম পাতার
উপকারিতা গুলো।
চুলের গ্রোথ বৃদ্ধি করেঃ মাথার ত্বকে অথবা চুলের যদি কোন
সমস্যা থাকে তাহলে চুলের বৃদ্ধি কমে যায়। নিম পাতার রস বা নিমপাতা বাটা মাথার
ত্বকে লাগালে চুলের বিভিন্ন সমস্যা এবং মাথার ত্বকে কোন ব্যাকটেরিয়াজনিত
সমস্যা থাকলে সেটি দূর হয় এবং এর ফলে চুলের গ্রোথ বৃদ্ধি পায়।
চুলের রুক্ষতা দূর করেঃ সূর্যের তাপ , ধুলোবালি ইত্যাদি
বিভিন্ন ধরনের কারণে আমাদের চুল দিন দিন রুক্ষ হয়ে যায়। সপ্তাহে যদি ২-৩
নিমের পাতা পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে চুল ধোয়া যায় তাহলে চুলের
রুক্ষতা দূর হয় এবং চুলের উজ্জ্বলতা ফিরে আসে।
হেয়ার ফল রোদ করেঃ হেয়ার ফল বা চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেন না এমন
ধরনের মানুষ খুব কমই খুঁজে পাওয়া যাবে। তবে হেয়ার ফল এর এই সমস্যাটি আমরা খুব
সহজে সমাধান করতে পারি নিমপাতা ব্যবহার করে। চুল পড়া রোধ করতে নিম পাতার রস
চুলের গোড়ায় লাগাতে পারেন অথবা নিমের প্যাক বানিয়ে সেটি চুলে এবং মাথায়
ব্যবহার করতে পারেন এছাড়াও নারিকেল তেলের সাথে কয়েকটি নিমপাতা গরম করে সেই
তেলটি একটু ঠান্ডা হওয়ার , কুসুম গরম থাকতে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করলে
এটি খুব দ্রুত চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করবে।
আরো পড়ুনঃ হরমোনের সমস্যা দূর করার উপায়
চুলের আগা ফাটা দূরঃ করতে নিমপাতা চুলের আগা ফাটা দূর করতেও বিশেষ
ভূমিকা পালন করে। নিম পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে কয়েক মিনিট চুলের গায়ে
লাগিয়ে রাখলে একদিকে এটি চুল সিল্কি হতে সাহায্য করে এবং অন্যদিকে চুলের আগা
ফাটা রোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন। করে চুলের আগা ফাটা রোধ করতে পাতার রস এর
সাথে অলিভ অয়েল , লেবুর রস ও টক দই মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়।
নতুন চুল গজাতে এবং খুশকি দূর করতেঃ মাথাই নতুন চুল গজাতে এবং
চুলের খুশকি দূর করতে সাহায্য করে নিম পাতার রস। নারিকেল তেলের সাথে বা অন্য
যেকোনো তেলের সাথে নিম পাতার রস মিশিয়ে এটি চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করলে মাথার
ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এছাড়াও নিম
পাতার রস মাথায় ব্যবহার করার ফলে খুশকি সমস্যা থেকে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে
সমাধান পাওয়া যায়।
মাথার উকুন দূর করতেঃ করতে মাথা থেকে উকুন দূর করতে নিম পাতার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উকুন দূর করার ক্ষেত্রে নিম পাতার সাথে তুলনা করা যায় এমন দ্বিতীয় কোন উপাদান হয়তো বা নেই। নিয়মিত কিছুদিন নিমপাতা ফুটানো পানি ঠান্ডা করে সেই পানি দিয়ে চুল ধুলে অথবা নিমপাতা বেটে মাথা এবং চুলে কিছুদিন ব্যবহার করলে খুব তাড়াতাড়ি মাথা থেকে সকল উকুন গায়েব হয়ে যাবে।
ত্বকের যত্নে নিম পাতার উপকারিতা
পোস্টের উপরের অংশে আমরা চুলের জন্য নিম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে
জেনেছি। কিন্তু আমরা জানি নিমপাতা শুধু জন্য না ত্বকের জন্য বিশেষ উপকারী। তাই
এবার আমরা ত্বকের যত্নে নিম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া
যাক , ত্বকের যত্ন নিতে কিভাবে নিম পাতা ব্যবহার করা যায়।
ত্বক উজ্জ্বল করতেঃ গ্লোয়িং স্কিনের জন্য নিমপাতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্কিনে বয়সের ছাপ পড়তে যদি না দিতে চান তাহলে নিয়মিত নিম পাতার রস তোকে ব্যবহার করুন। যেকোনো ধরনের ত্বকের যত্ন নিতে তুলসী পাতা , নিমপাতা , পুদিনা পাতা একসাথে পেস্ট করে এর সাথে একটু লেবুর রস মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন চাইলে এর মধ্যে হলুদ গুঁড়া মেশাতে পারেন। এই প্যাকটি সপ্তাহে ২ দিন ত্বকে লাগালে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে এবং ত্বকে কোন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থাকলে সেটি দূর হবে।
ব্রণের সমস্যা দূর করতেঃ ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য নিম পাতার রস বা নিম পাতার গুড়ার সাথে গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে এই প্যাক টি চেহারায় লাগাতে পারেন এতে খুব দ্রুত আপনার চেহারা থেকে ব্রণের সমস্যা দূর হবে। ত্বক থেকে রোদের কালো দাগ দূর করার জন্য নিম পাতার রসের সাথে কাঁচা দুধ এবং লেবুর রস মিশিয়ে নিয়মিত ১০-১৫ মিনিটের জন্য ব্যবহার করলে , রোদে পোড়া দাগ দূর হবে এবং চেহারা উজ্জ্বল দেখাবে। এছাড়াও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য নিম পাতার রসের সাথে টক দই অথবা অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে সপ্তাহে ৩-৪ দিন ত্বকে লাগাতে পারেন।
ফেসপ্যাকঃ ত্বকের যত্ন নিতে নিম পাতার ফেসপ্যাক অতুলনীয়। নিম পাতার ফেসপ্যাক তৈরি করার জন্য, নিমপাতা ভালোভাবে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে গুড়া করে নিন। এরপর নিম পাতার গোড়ার সাথে টক দই , গোলাপ জল ,চন্দন পাউডার মিশিয়ে আপনার ত্বকের ব্যবহার করুন। এই ফেস প্যাকটি ভ আপনার ত্বকে মশ্চারাইজ করতে এবং ত্বক থেকে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করবে।
আরো পড়ুনঃ শুষ্ক ত্বকের যত্ন নেওয়ার উপায়
প্রাকৃতিক ক্লিনজারঃ আমাদের স্ক্রিনে এবং লোমকূপে জমে থাকা ধুলো
ময়লা দূর করতে নিম পাতা প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে। ত্বক পরিষ্কার
করার জন্য নিম পাতার রস একটু তুলায় মাখিয়ে, ত্বকে আলত করে ঘষতে
থাকুন এতে আপনার স্কিন থেকে ধুলোবালি এবং ময়লা দূর হবে পাশাপাশি
ব্রণের সমস্যাও কেটে যাবে।
প্রাকৃতিক টোনারঃ প্রাকৃতিক টোনার হিসেবেও নিম পাতার কাজ অতুলনীয়। নিমপাতার টোনার তৈরির জন্য , বেশ কিছু নিম পাতা ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার পানিতে সিদ্ধ করতে দিন। পানি কি সবুজ না হওয়া পর্যন্ত চুলায় গিয়ে ফুটাতে থাকুন। নিমপাতা সেদ্ধ করা পানি যখন সবুজ রং ধারণ করবে সেই সময় তোলা থেকে নামিয়ে ভালোভাবে ঠান্ডা করে স্প্রে বোতলে ভর্তি করে এটি আপনার ত্বকে টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন ।
ব্রণের জন্য নিম পাতার ব্যবহার
হরমোনাল তারতম্যের কারণে টিনেজারদের থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী মানুষের মুখে
ব্রণ উঠা অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। তবে ছোট একটি ব্রণ আমাদের চেহারার
সৌন্দর্য অনেকটাই নষ্ট করে দেয়। এই ব্রণ থেকে ত্বক বা চেহারাকে রক্ষা করতে
আমরা কত কিছুই না করে থাকি। কিন্তু আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা যে যেই ব্রণ
সারানোর জন্য আমরা এত কষ্ট করি সেটি খুব সহজে এবং আমাদের আশেপাশে থাকা অতি
পরিচিত নিম পাতা ব্যবহার করে খুব সহজে এবং অল্প সময়ের মধ্যে ব্রণ দূর করে
ফেলতে পারি।
আরো পড়ুনঃ চুল সিল্কি করার উপায়
ব্রণের সমস্যা দূর করার জন্য নিম পাতার পেস্ট তৈরি করে এর সাথে কাঁচা দুধ এবং
লেবুর রস মিশিয়ে সম্পূর্ণ মুখে অথবা ব্রণের স্থানগুলোতে ১৫- ২০ মিনিট লাগিয়ে
রাখুন। অথবা নিম পাতা সিদ্ধ করে নিয়ে সেটি বেটে কিছুক্ষণের জন্য চেহারায়
লাগিয়ে রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই পদ্ধতির দুটো অনুসরণ করলে
আপনার ত্বকে থেকে শুধু ব্রণের সমস্যা দূর হবে না ত্বক উজ্জ্বল এবং দাগ মুক্ত
করতেও সাহায্য করবে।
ব্রণ দূর করার জন্য নিমপাতা ভালোভাবে শুকিয়ে ব্লেন্ডারে অথবা সিল-পাটায়
গুড়া করে পাউডার তৈরি করুন, এরপর এই নিম পাতার গুড়ার সাথে গোলাপজল ও লেবুর রস
ভালোভাবে মিশিয়ে ব্রণের উপর ব্যবহার করুন সপ্তাহে ৩-৪ দিন এইভাবে ব্যবহার করলে
দেখবেন ৭-১০ দিনের মধ্যেই ড্রোনের সমস্যা দূর হয়ে গেছে। আপনার কাছে যদি
নিমপাতার ঘোরার সাথে ব্যবহার করার মতন গোলাপ জল অথবা লেবুর রস না থাকে তাহলে
নিম পাতার গুড়ার সাথে হলুদ গুঁড়া ও সামান্য দুধ মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করেও
ব্রণে লাগাতে পারেন।
ব্রণ দূর করতে বেসন, নিম পাতার গুঁড়া বা পেস্ট , টক দই একসাথে করে মিশিয়ে প্যাকটি আপনার পুরো মুখে লাগিয়ে 20 মিনিটের জন্য অপেক্ষায় থাকুন এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি আপনার মুখের ব্রণ দূর করার পাশাপাশি ব্রণের কালো দাগও দূর দূর করে ফেলবে। ব্রণের সমস্যা বা ব্রণের দাগ দূর করার জন্য আরেকটি অত্যন্ত ফলদায়ক পদ্ধতি হলো এলোভেরা জেল এর সাথে নিমপাতার পেস্ট মিক্স করে ব্যবহার করা। নিমপাতা এবং অ্যালোভেরা জেল দুটি উপাদানই ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে , তাই এই দুটি উপাদান যখন একসাথে মিশ্রণ করে ব্রণের সমস্যা দূর করার জন্য এপ্লাই করা হয় তখন খুব দ্রুত এবং কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায়। আশা করছি ব্রণের জন্য নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন।
নিম পাতা মুখে দিলে কি হয়
আপনি জানেন কি যে নিমপাতা কে আমরা অত্যন্ত সাধারণ মনে করি সেই নিমপাতা
মুখে দিলেই কি অসাধারণ প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে? যদি জানা না থাকে তাহলে বিষয়টি
আপনাদের এখনই জানিয়ে দিচ্ছি। নিমপাতা মুখে দিলে কি হয় এই বিষয়টি আপনাদের
আজকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেবো। আমরা ত্বকের যত্ন নিতে বা ত্বক সুন্দর করতে
প্রায়ই বাজারে কেমিক্যাল যুক্ত প্রোডাক্ট এর উপরে নির্ভর করি , বাজারে কেমিকাল
গুরুত্ব প্রোডাক্টগুলো কখনো আমাদের আশানুরূপ ফল দেয় আবার কখনো কখনো কোনো ফল
দেয় না বরঞ্চ স্কিনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু আপনি আপনার হাতের
কাছে থাকা এই নিমপাতা দিয়ে ত্বকের কোনো ক্ষতি ছাড়াই করে নিতে পারেন ত্বকের
যত্ন। তাহলে চলুন এবার আপনাদের জানিয়ে দিই নিমপাতা মুখে দিলে কি হয়। নিম পাতা
মুখে দিলে বেশ কিছু উপকারিতা আপনি পাবেন যেমন,
- আপনার ত্বক উজ্জ্বল হবে
- রোদে পোড়া দাগ সহ যেকোনো দাগ দূর হবে
- ব্রণ দূর করবে
- প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে কাজ করবে
- প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে কাজ করব
- ত্বক মশ্চারাইজ করবে
- বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে তথ্যের রক্ষা করবে
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url