সাদা স্রাব কি প্রেগন্যান্সির লক্ষণ - গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব হলে করণীয়

সাদা স্রাব মেডিকেল সাইন্সে যাকে বলা হয় লিউকোরিয়া। মেয়েদের সাধারণ সমস্যা গুলোর মধ্যে এই সাদা স্রাব অন্যতম। বয়সন্ধিকালের সময় থেকে মেনোপজ হওয়ার আগ পর্যন্ত সব মেয়েরই কম এবং বেশি সাদা স্রাব হয়। সাদা স্রাব কারো স্বাভাবিক ভাবে হলেও অনেকের ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, আর অতিরিক্ত সাদা স্রাব হওয়ার পেছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ। অনেকে আবার সঠিকভাবে জানেন না সাদা স্রাব প্রেগনেন্সির লক্ষণ কিনা।

যেহেতু সব মেয়েদেরই সাদা স্রাব হয়ে থাকে তাই সাদা স্রাব কেন হয় এবং কোন কারণ গুলোর জন্য এটি কম বেশি হয়ে থাকে তা জানতে হবে। কারণ সঠিক মাত্রাই সাদাস্রাব নির্গত হলে এটি যৌনাঙ্গকে একটিভ রাখে এবং জরায়ু এবং যৌনাঙ্গে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রোধ করতে সাহায্য করে, তবে অতিরিক্ত সাদা স্রাব অবশ্যই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। শরীরের কোন কারনে অতিরিক্ত মাত্রায় সাদা স্রাব হতে পারে তা জানাবো আজকের এবং গর্ভাবস্থায় যদি সাদা স্রাব হয় তাহলে করণীয় কি এই বিষয়েও কিছু আলোচনা করা হবে আজকে আপনাদের সাথে। তাহলে চলুন আর দেরি না করে সাদাস্রাব কি প্রেগনেন্সির লক্ষণ এবং গর্ভাবস্থায় যদি সাদা স্রাব হয় তাহলে করণীয় কি বিষয়গুলো জেনে নেওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ সাদা স্রাব কি প্রেগন্যান্সির লক্ষণ - গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব হলে করণীয়

সাদা স্রাব কি কারনে হয় 

মেয়েদের কমন শারীরিক সমস্যা গুলোর মধ্যে সাদা স্রাব হল একটি। বিভিন্ন বয়সী নারীদের মধ্যে এই সমস্যাটি লক্ষ্য করা যায়। এই সাদা স্রাবের মাত্রা কারো একটু কম থাকে আবার কারো একটু বেশি মাত্রায় দেখা যায় তবে কম হোক বা বেশি বিভিন্ন বয়সী মহিলাদের মধ্যে সাদা স্রাবের সমস্যাটি থাকেই। প্রায় সব মহিলারাই এই সমস্যাটি ফেস করলেও , বেশিরভাগ মহিলারাই জানে না এর কারণ কি। মেয়েদের সাদা স্রাব হওয়ার পিছনে বেশ কিছু কারণ থাকে , আর স্বাভাবিকভাবে সাদাস্রাব হওয়ার পেছনে যে কারণগুলো দায়ী সেগুলো হলো ,

পুষ্টির অভাবঃ শরীরে অপুষ্টিহীনতার কারনেও লিউকোরিয়া অর্থাৎ সাদাস্রাবের সমস্যা হয়ে থাকে। অধিকাংশ নারী শরীরেই দেখা যায় চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টি থাকে না , এর পেছনের মূল কারণ হলো নিজেদের শরীর সম্পর্কে নারীদের উদাসীনতা শরীরের সঠিক মাত্রায় বা চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টি না থাকা সাদা তাদের একটি স্বাভাবিক কারণ। সাদা স্রাব হতে পারে পুষ্টি হো না তা এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম না করার কারণে।

**

মানসিক চাপঃ শরীর ভালো থাকার জন্য মন ভালো রাখার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরী কেননা শরীর এবং মন দুটোই একে অপরের সাথে সম্পৃক্ত। মন ভালো না থাকলে এর প্রভাব অনেক অংশেই শরীরের উপরে পড়ে ।যে কোন কারনেই হোক মানসিক চাপে থাকলে তার প্রভাব শরীরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় আর নারীদের সাদা স্রাবও এর ব্যতিক্রম নয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে মানসিক চাপ , স্ট্রেস , দুশ্চিন্তা যাই বলেন না কেন এগুলোর সাথে সাদা স্রাব রিলেটেড অর্থাৎ কোন নারী যদি মানসিক চাপে বা দুশ্চিন্তায় থাকে তাহলে সাদা স্রাব হতে দেখা যায় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় মানসিক চাপে থাকলে স্বাভাবিকের তুলনায় এই সময় একটু বেশি সাদ স্রাব হয়ে থাকে।

**

শরীরবৃত্তিয় কারণঃ নারীদের বিশেষ কিছু শরীরবৃত্তীয় কারণে সময় বিশেষে সাদা স্রাব হয়ে থাকে, আর শরীরবৃত্তীয় এই চক্রগুলোর মধ্যে রয়েছে - বয়সন্ধিকালে অথবা পিরিয়ডের শুরুর আগে নারী শরীরের রক্ত চলাচল বেড়ে যাওয়া , দুই মাসিকের মাঝামাঝি সময় ডিম্বানু নিঃসরণ বেড়ে গেলে , যৌন আবেগ মুহূর্তে , গর্ভাবস্থার সময়কালে শরীরের রাসায়নিক সমতার ঠিক রাখতে এবং প্রজনন অঙ্গ সচল রাখার জন্য শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোন নিঃসরণের কারণে সাদা স্রাব হয়ে থাকে। এছাড়াও মেনোপজ হওয়ার আগ পর্যন্ত নারী শরীরে বিভিন্ন সময়ে হরমোনের তারতম্যতা দেখা দেয় , আর এর কারনেও সাদা স্রাবের সমস্যা হয়।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কি কি কাজ করা নিষেধ

কৃমির সংক্রামনঃ নারী শরীরে কৃমির সংক্রমণ থেকেও হতে পারে সাদাস্রাবের সমস্যা। কারণ শরীরে কৃমির সংক্রমণ থাকলে যতই পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা হোক না কেন , সেই পুষ্টিকর খাবার গুলো অধিকাংশই চলে যায় কৃমিদের পেটে , আর সেখান থেকে দেখা দেয় পুষ্টি ঘাটতি এবং পুষ্টি ঘাটতি থেকে হয় সাদা স্রাবের সমস্যা।

**

পরিচ্ছন্নতার অভাবঃ যথেষ্ট পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব থাকলেও ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে হতে পারে সাদা স্রাব। অন্যান্য সময়ের পাশাপাশি পিরিয়ডের সময় গুলোতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা মেন্টেন করে চলতে হবে এবং পরিধানের পোশাক ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে ব্যবহার করার অভ্যাস করতে হবে।

জন্মবিরতিকরণ পিলের প্রভাবঃ সাদা স্রাবের আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ হতে পারে জন্মবিরতিকরণ পিল এর প্রভাব। অনেক সময় জন্মবিরত কোন পিলগুলো সেবনের কারণেও সাদা স্রাব হয়ে থাকে

সাদা স্রাব কি প্রেগন্যান্সির লক্ষণ

গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে যেহেতু সাদা স্রাবের পরিমাণটা একটু বেশি দেখা যায় তাই অনেকেই জানতে চান সাদা স্রাব কি প্রেগনেন্সির লক্ষণ ? হ্যাঁ , কোমর ব্যথা , পেট ব্যথার মতন সাদা স্রাব হওয়াও প্রেগনেন্সির লক্ষণ গুলোর মধ্যে একটি। গর্ভাবস্থায় জরায়ুর আশেপাশে থাকা শিরা গুলোতে রক্ত চলাচল বেড়ে যায় এবং শরীরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন হরমোনের নিঃসরণ মাত্রা বৃদ্ধি পায় , এ ছাড়াই গর্ভাবস্থায় শরীরে পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় এবং গর্ভবতীর ওপরে বিভিন্ন কারণে মানসিক চাপ বেশি থাকে , আর এই সবকিছু মিলিয়েই গর্ভাবস্থার শুরুতে এবং শেষের দিকে সাদাস্রাবের মাত্রা বেড়ে যায়।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় তলপেট ব্যথা হয় কেন

তবে প্রেগনেন্সির ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হলে , শুধু সাদা স্রাবের বিষয়টি দেখলেই হবে না , প্রেগনেন্সির আরও যেসব লক্ষণ আছে সেগুলোও লক্ষ্য করতে হবে এবং সঠিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রেগনেন্সির ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হতে হবে। কারণ একমাত্র সাদা স্রাব প্রেগনেন্সি প্রমাণ করে না , আর প্রেগনেন্সি ছাড়াও সাদা স্রাবের পেছনে আরো অনেক কারণ থাকতে পারে যেগুলো আপনারা পোস্টের উপরের অংশে জেনেছেন। সাদা স্রাবের এই স্বাভাবিক কারণগুলো ছাড়াও অনেক সময় জরায়ু সংক্রান্ত কিছু সমস্যা , যেমন জরায়ু ইনফেকশন এর কারণেও স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি সাদা স্রাব হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব হলে করণীয়

গর্ব অবস্থায় শরীরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন হওয়ার কারণে এবং হরমোনের তারতম্যের জন্য এই সময় সাদা স্রাব হওয়া অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয় এবং প্রসবের আগ পর্যন্ত এই সাদা স্রাব সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করাও সম্ভব নয়। এছাড়াও সঠিক পরিমাণের সাদা স্রাব জরায়ুকে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং গর্ভে থাকা সন্তানকে সুরক্ষা দেয়। তবে যদি গর্ব অবস্থায় সাদা স্রাবের পরিমাণ অস্বাভাবিক বেড়ে যায় তাহলে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে যেমন,

  • পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা
  • মানসিক চাপ মুক্ত থাকার চেষ্টা করা এবং কোন বিষয়ে দুশ্চিন্তা না করা
  • সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় ব্যবহার করা
  • সুতি , ঢিলা ঢালা এবং কমফোর্টেবল কাপড় পরিধান করা
  • যৌনাঙ্গ পরিষ্কার এবং শুষ্ক রাখার চেষ্টা করা। যৌনাঙ্গ ও পরিষ্কার রাখার জন্য হালকা কুসুম গরম পানিতে সামান্য লবন অথবা বেকিং সোডা ব্যবহার করা।

গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক সাদা স্রাব হলে ভয় পাওয়ার বা চিন্তার কোন কারণ নেই তবে যদি , স্রাবে কোন অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা হয় তাহলে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। গর্ভাবস্থায় যদি দেখা যায় ,

  • স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি স্রাব নির্গত হচ্ছে
  • স্রাবে দুর্গন্ধ 
  • স্রাবের কারণে যৌনাঙ্গ ব্যথা , চুলকানি এবং জ্বালাপোড়া

এই লক্ষণগুলো সাধারণত ফাঙ্গাল ইনফেকশনের কারণে হয়ে থাকে , আর এরকম গুলো দেখলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে । ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট ঔষধ সেবনের ফলে এইসব সমস্যা দ্রুত দূর হয়ে যায়।

মন্তব্য, সাদা স্রাব নির্গত হওয়া মেয়েদের শরীরের অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি কারণ এবং লক্ষণ। তবে সাদাস্রাব যদি স্বাভাবিক মাত্রায় এবং স্বাভাবিক বর্ণের সাথে নির্গত হয় তাহলে এ নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই । কিন্তু যদি সাদাস্রাব অতিরিক্ত মাত্রায় নির্গত হয় এবং এর রং এবং গন্ধে পরিবর্তন আসে তাহলে অবশ্যই এটি চিন্তার বিষয় , আর এ বিষয়ে অবহেলা না করে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিত , সাদা স্রাবের রং এবং গন্ধে পরিবর্তন লেখা দিলে এবং অতিরিক্ত মাত্রায় সাদাস্রাব জরায়ু সংক্রান্ত সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই সাদা স্রাব এর ব্যাপারে বিস্তারিতভাবে সবকিছু জেনে নেওয়ার জন্য সকলকে অনুরোধ করা হলো।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url