সিজারের পর খাবার তালিকা - সিজারের কতদিন পর ভারী কাজ করা যাবে

সিজারের পর রোগীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় যে সঠিক খাদ্য তালিকা না জানার কারণে এবং সিজারের কতদিন পরে ভারী কাজকর্ম করা যাবে এই বিষয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে রোগী সহজে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন না। সিজারের সময় একদিকে যেমন শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় , তাই এরপরে শরীরের এই ঘাটতি পূরণের জন্য খাবারের উপরে বিশেষ নজর দিতে হয় , অপরদিকে এটি যেহেতু এক ধরনের অপারেশন তাই নির্দিষ্ট সময়ের আগে যদি ভারী কাজ বা লং জার্নি করা হয় সে ক্ষেত্রেও কিন্তু এর বিরুপ প্রতিক্রিয়া পড়ে রোগীর শরীরের উপরে।

আসলে সিজারের কতদিন পর ভারী কাজ করা যাবে এই বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠার উপরে। আর সিজারের পরে রোগী সুস্থ হওয়ার ব্যাপারটি নির্ভর করে সিজারিয়ান মায়ের খাবার তালিকা কেমন হচ্ছে তার উপরে এবং সিজারের কাটা স্থানের প্রোপার টেক কেয়ার হচ্ছে কিনা এর উপর। আর আজকের এই পোস্টে আপনাদেরকে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোই জানাবো।

সূচিপত্রঃ সিজারের পর খাবার তালিকা - সিজারের কতদিন পর ভারী কাজ করা যাবে

সিজারের পর খাবার তালিকা

সিজার পরবর্তী সময় রোগীর খাদ্য তালিকার ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। সিজারের পর খাবার তালিকা প্রস্তুতে যদি যত্নবান হওয়া যায় তাহলে এর মাধ্যমে রোগী প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও শক্তি ফিরে পাবে এবং দ্রুত ছেরে উঠতে পারবে। যারা সিজার এর রোগী রয়েছেন অথবা যারা সিজার করাতে চাচ্ছেন তাদের জন্য আজকে জানাবো সিজারের পর খাবার তালিকা সম্পর্কে। তাহলে চলুন এবার সিজারের পর খাবার তালিকা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

তরল খাবার খাওয়াঃ সিজারের পর খাবার তালিকা তৈরির সময় খেয়াল রাখতে হবে খাদ্য তালিকায় যেন তরল জাতীয় খাবার থাকে। এই তরল খাবার গুলো রুগীর শরীরে পানি শূন্যতা দূর করবে , বুকের দুধ উৎপাদনে সাহায্য করবে।

**

দুধ এবং ডিম জাতীয় খাবার খাওয়াঃ সিজারের পরে রোগীকে দুধ অথবা দুধ তৈরি খাবার খেতে দেওয়া প্রয়োজন কারণ এর মধ্যে থেকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও প্রটিন পাওয়া যাবে যা রোগীর জন্য এবং বাচ্চার জন্য হাড় ও দাঁত গঠনে সহায়তা করবে।

ফলমূল ও শাক সবজিঃ সিজারের পরে রোগীকে প্রচুর পরিমাণে টাটকা ফলমূল এবং শাকসবজি খাওয়াতে হবে এতে করে শরীরের পুষ্টি ঘাটতি দূর হবে এবং দুটি সহজে সেরে উঠতে পারবে।

ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারঃ সিজারের পরে খাবার তালিকায় অবশ্যই ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারগুলো যুক্ত করতে হবে কারণ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গুলো হজমে সহায়তা করে করে যার ফলে পেটে গ্যাসের সমস্যা হয় না এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্ত থাকা যাবে।

**

আইরন সমৃদ্ধ খাবারঃ সিজারের পরে রক্তশূন্যতা বা রক্তস্বল্পতা দূর করার জন্য অবশ্যই আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গুলো খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে হবে।

ঝাল মসলাযুক্ত খাবার না খাওয়াঃ ঝাল মসলাযুক্ত খাবার এবং অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার এই সময় পরিহার করতে হবে। কারণ এই ধরনের খাবার গুলো পেটে গ্যাসের সমস্যা তৈরি করা ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।

আরো পড়ুনঃ কতটুকু সাদা স্রাব হওয়া স্বাভাবিক

চা বা কফি কম খাওয়াঃ সিজারের পরে কয়েকদিন চা এবং কফি জাতীয় খাবার গুলো কম খাওয়াই ভালো কারণ এ ধরনের খাবার গুলো শরীরে পানি শূন্যতা সৃষ্টি করতে পারে এবং এর ফলে অনিদ্রার সমস্যা তৈরি হতে পারে তাই কয়েক দিন চা বা কফি এড়িয়ে চলাই ভালো আর যদি খেতেই হয় তবে অল্প পরিমাণে খেতে হবে।

**

কালোজিরাঃ সিজারের পরে খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে পারেন কালোজিরা , কারণ কালোজিরার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রোগের সমাধান এর পাশাপাশি বুকের দুধ উৎপাদন করতে এটি ভীষণ কার্যকর। তাই কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস করলে , বুকের দুধ উৎপাদন বেশি হবে যার ফলে বাচ্চার দুধের ঘাটতি পরবেনা ।

এক কথায় বলতে গেলে বলতে হয় সিজারের পর খাবার তালিকা তৈরি করার সময় মাথায় রাখতে হবে, যেন রোগী সকল ধরনের পুষ্টি উপাদান গুলো খাবারের মাধ্যমে পেয়ে যায় বিশেষ করে আইরন , ক্যালসিয়াম , ভিটামিন ইত্যাদি। কারণ মায়ের খাদ্যের পুষ্টি উপাদান গুলো শুধু মায়ের শরীরের নয় শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন। তাই খাবার তালিকায় যদি সব বিভিন্ন পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার গুলো যুক্ত করা যায় তবে মা এবং শিশু উভয়ের শরীরে পুষ্টি ঘাটতি পূরণ হবে এবং মা দ্রুত ছেড়ে উঠতে পারবে ও শিশু সুস্থ থাকবে।

সিজারের পর কাটা স্থানের যত্ন

অনেক মায়েরাই জানেন না সিজারের পরে কাটা স্থানের যত্ন কিভাবে নিতে হয়।কিন্তু সিজারের পরে কাটা স্থানের বিশেষ যত্ন নিতে হয় বলে ,সিজারের পর কাটা স্থানের যত্ন সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।যদিও সিজারের পর ক্লনিক বা হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়ার সময় সিজারের পর কাটা স্থানের যত্ন সম্পর্কে আপনাকে নির্দেশ্না দিয়ে দিবে তারপরেও,আপনাদের সুবিধার জন্য এ বিষয় গুলো উল্লেখ করে রাখছি।

  • কাটা স্থানে বার বার হাত দেয়া যাবে না ,এতে বিভিন্ন রোগ জিবানুর সংক্রামন ঘটতে পারে।
  • প্রথম কিছুদিন পানি ও সাবান ব্যাবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে,না হলে ইনফেকশান হতে পারে।
  • প্রতিদিন savlon , povisep অথবা এ জাতিও লিকুইড গুলে দিয়ে কাটা স্থান জিবানু মক্ত  করতে হবে।
  • সিজারের কাটা স্থানে উঠা বসা,হাঁচি- কাশির সময় যাতে বেশি চাপ না লাগে এ ব্যাপারে আচেত্ন থাকতে হবে।
  • বেশ কিছুদিন সহবার বন্ধ রাখতে হবে।

সিজারের কতদিন পর ভারী কাজ করা যাবে


ডাক্তাররা সাধারণত সিজারের পর ক্ষতস্থান ভালোভাবে শুকানোর আগে পর্যন্ত, যেকোনো ভারী কাজ না করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সিজারের মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করে কৃত্রিমভাবে সন্তান ভূমিষ্ঠ করানো হয়। বর্তমানে সিজারের অপারেশন কে সাধারণ মনে করা হলেও এটি অত্যান্ত সেনসিটি ব্যক্তি অপারেশন। সিজারের সময় রোগীর তলপেটে বেশ অনেকখানি জায়গা কাটা হয় বিধায় এখানে ক্ষত সৃষ্টি হয় বা হতে পারে।
পুষ্টিকর খাবার , ভিটামিন সি জাতীয় খাবার এবং ডাক্তারি নির্দেশনা মোতাবেক চললে অল্প সময়ের মধ্যেই কাটায় স্থান স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়ার আশা করা যায়। কিন্তু তারপরেও সকলের শরীরের বৈশিষ্ট্য গুলো যেহেতু ভিন্ন ভিন্ন তাই দেখা যায় অনেকের ক্ষেত্রে খুব দ্রুত বা দুই এক সপ্তাহের মধ্যেই কাটা স্থান অনেকটাই ইম্প্রুভ করে আবার অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় দু-তিন সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও কাটার স্থানে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। আর কাঁটা স্থানে ব্যথা অথবা অন্য যেকোনো ধরনের অসুবিধার অর্থ হল সেই স্থানটি ভেতর থেকে ভালোভাবে না শুকানো। তবে সিজার করার পরে সাধারণত ৪-৫ মাস বেশি ভারী কাজগুলো না করাই ভালো তবে ২-৩ মাস পরে থেকে স্বাভাবিক কাজগুলো সবই করা যেতে পারে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন সিজারের কতদিন পর ভারী কাজ করা যাবে এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনার শরীর কত তাড়াতাড়ি ক্ষতস্থান হারিয়ে উঠতে পারছে তার উপরে।
মন্তব্য , পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা নিশ্চয়ই সিজারের পরে রোগীর সুস্থ ও হয়ে ওঠার ব্যাপারটি ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। আপনাদেরকে আবারো বলি একজন সিজারিয়ান রোগীর প্রপার টেক কেয়ার করার পাশাপাশি তার খাদ্য তালিকার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। না হলে রোগী কখনোই সম্পূর্ণভাবে সেরে উঠতে পারবে না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url