নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং - ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য কিসের প্রয়োজন
অর্থনৈতিকভাবে নিজেদের অবস্থান উন্নতি করা এবং স্বাবলম্বী হওয়ার অন্যতম একটি মাধ্যম হল freelancing. এই ফ্রিল্যান্সিং করার মাধ্যমে বর্তমানের অনেক বেকার যুবক সহ চাকুরীজীবীরাও নিজেদের নির্দিষ্ট পেশার পাশাপাশি পার্ট টাইম জব হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং করে থাকেন। ফ্রিল্যান্সিং করা অসাধ্য কিছু না হলেও এ ব্যাপারে বেশ কিছু টিপস বা গাইডলাইন অত্যন্ত জরুরী নতুনদের জন্য এবং এর পাশাপাশি ফ্রেন্ড কাজ করার জন্য কিসের প্রয়োজন এ বিষয়েও জানা দরকার।
অর্থনৈতিক স্বনির্ভরশীলতা বাড়ানোর উৎসাহ প্রদানের জন্য এবং ফ্রিল্যান্সিং
সেক্টরে যারা নতুন তাদেরকে সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে আজকে আপনাদের জানাবো নতুনদের
জন্য ফ্রিল্যান্সিং করার কিছু গুরুত্বপূর্ণ গাইডলাইন এবং যারা নতুন তারা কিভাবে
ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ শুরু করতে পারে এই বিষয়ে। আশা করছি যারা নতুন
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে যাচ্ছেন তাদের জন্য আজকের এই পোস্টটি অনেকটা হেল্পফুল
হবে।
সূচিপত্রঃ নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং - ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য কিসের প্রয়োজন
- ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য কিসের প্রয়োজন
- নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং
- কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবো
ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য কিসের প্রয়োজন
- অনলাইন কাজের সম্পর্কে ন্যূনতম দক্ষতা
- ভালো মানের কম্পিউটার বা ল্যাপটপ
- ইন্টারনেট সংযোগ
- ইংরেজি ভাষার উপরে মোটামু দক্ষতা থাকতে হবে
- অনলাইনে কাজ করার বিভিন্ন কৌশল জানতে হবে
- এবং সবশেষে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি জরুরী সাহা হলো পর্যাপ্ত টাইম দিতে হবে এবং ধৈর্য ধরে কাজ করে যেতে হবে।
নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং
নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগেই বেশ কিছু গাইডলাইনের প্রয়োজন পড়ে
, তাই যারা ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে একেবারে নতুন তারা পোষ্টের এই অংশটি
ভালোভাবে পড়ে নিতে পারেন কেননা , এতে আপনাদের জন্য রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ বেশ
কিছু টিপস।
যারা ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে একেবারে নতুন , তাদের অবশ্যই বেশ কিছু বিষয় জেনে
রাখা উচিত। যেমন অনেকে আছে যারা নাকি অন্যদের দেখে
নিজেদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য এই সেক্টরে আসেন তবে তাদের
ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরী কেননা ফ্রিল্যান্সিং সাইটে
রাতারাতি উন্নতি বা টাকা পয়সা আসে না এর জন্য প্রচুর ধৈর্যের প্রয়োজন।
ফ্রিল্যান্সিং করতে চাইলে অথবা ফ্রিল্যান্সিং শিখতে চাইলে প্রথমেই আপনার যে
জিনিসটি প্রয়োজন হবে সেটি হলো প্রচুর ধৈর্য। কারণ ফ্রিল্যান্সিং করার সময়
মার্কেটপ্লেসের কাজগুলোতে প্রথম অবস্থাতে সহজে কোন অফার পাওয়া যায় না এবং
এক্ষেত্রে অনেকেই ডিপ্রেশনে চলে যান এবং ফ্রিল্যান্সিং সাইটে কাজ ছেড়ে দেয়
যার কারণে বেশিরভাগ মানুষের এই সেক্টরের সফলতা অর্জন করতে পারে না। তবে যারা
ধৈর্য ধরে নিয়মিত কাজ করতে থাকেন তারা অবশ্যই একসময় সফলতার মুখ দেখেন। তাই
আবারও বলছি ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য আপনার প্রচুর ধৈর্যের প্রয়োজন হবে।
ধৈর্য ধরে কাজ করার পাশাপাশি আপনাকে পর্যাপ্ত টাইম এর পেছনে ব্যয় করতে হবে।
ফ্রিল্যান্সিং সাইটে উন্নতির চাবিকাঠি হলো মূলত ধৈর্য এবং টাইম ।আপনি যদি ধৈর্য
ধরে পর্যাপ্ত সময়ের পেছনে ব্যয় করতে পারেন তাহলে অল্প সময়ের মধ্যেও আপনি
হয়ে উঠতে পারেন একজন সফল ফ্রিল্যান্সার।
আর আপনি যদি একজন সকল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান তাহলে ,
শ্রম এবং সময়ের পাশাপাশি আপনার একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করতে হবে। আপনার
যদি কোন নির্দিষ্ট বা স্থির লক্ষ্য না থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনি কখনোই সফলতা
পাবেন না। এই ফর্মুলাটি শুধু ফ্রিল্যান্সিং এর জন্যই নয় যে কোন কাজের
জন্যই প্রযোজ্য। অন্যান্য যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে লক্ষ্য স্থির করার
বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি হলেও , ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য এর প্রয়োজনীয়তা আরো
অনেক বেশি কারণ এলোমেলো বা রেনডম ভাবে কাজ করে কখনোই ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে
সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয় । তাই যারা ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের নতুন তাদেরকে
অবশ্যই প্রথমে লক্ষ্য স্থির করতে হবে এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য পর্যাপ্ত
শ্রম এবং সময় দিয়ে , ধৈর্য সাথে এগিয়ে যেতে হবে।
আরো পড়ুনঃ ঘরে বসে ইনকাম করার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে
একজন প্রতিষ্ঠিত বা সফল ফ্রিল্যান্সার হতে কোন কোন ক্ষেত্রে প্রায়
২/৩ বছরের সময় লেগে যেতে পারে তাই অবশ্যই আপনার ইচ্ছাশক্তি প্রবল হওয়া
লাগবে ,এই সেক্টরের কাজ করতে হবে। কারণ আপনি যদি কয়েক মাসের মধ্যে ইনকাম
না করতে পারেন বা কোন বায়ার খুজে না পান তাহলে সে ক্ষেত্রে মনোবল হারিয়ে
ফেললে চলবে না। এছাড়াও এ ধরনের বেসিক জিনিসগুলো ছাড়াও ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে
কাজ করার জন্য আপনার থাকতে হবে ,
- মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে মৌলিক ধারণা বা কিভাবে কাজ করতে হয় সে বিষয়ে জ্ঞান রাখতে হবে।
- মার্কেটপ্লেসে কাজ করার সময় সেই ধরনের কাজগুলোকেই চুজ করতে হবে যে ধরনের কাজগুলোর উপরে আপনার স্কিল রয়েছে।
- ইংরেজি ভাষার উপরে বেসিক জ্ঞান রাখতে হবে। অন্ততপক্ষে বায়ার কি চাচ্ছে বা কি বলতে চাচ্ছে এই বিষয়ে বুঝতে পারার মতন ইংরেজি জানা প্রয়োজন ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য।
- ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অবশ্যই আপনাকে এ বিষয়টি বুঝতে হবে যে বায়ার আপনাকে কি বলতে চাচ্ছে বা তিনি কি ধরনের কাজ করাতে চাচ্ছেন। অর্থাৎ আপনি যদি মাইন্ড রিডার না হতে পারেন তাহলে সে ক্ষেত্রে , বায়ারের চাহিদাগুলো বুঝতে পারবেন না এবং তার পছন্দ মতন কাজগুলো আপনি সম্পূর্ণ করতে পারবেন না।
- মার্কেটপ্লেসে কাজ করার সময় এবং বায়ারদের সাথে কথাবার্তা সময় আপনার ব্যবহার অবশ্যই মার্জিত হতে হবে এবং ভদ্রতা মেইনটেইন করতে হবে। এতে করে বায়ার আপনার কাজ এবং ব্যবহারের মুগ্ধ হয়ে পরবর্তীতে আবার আপনাকে দিয়ে কাজ করানোর জন্য আগ্রহ প্রকাশ করবে।
- মার্কেটপ্লেসে কাজ করার জন্য আপনার থাকতে হবে সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট। প্রফেশনাল সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট না থাকলে কোনভাবেই আপনি সফল ফ্রিল্যান্সার হয়ে উঠতে পারবেন না।
- ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য বিভিন্ন ধরনের মার্কেটপ্লেস রয়েছে যেমন - ফাইবার , আপওয়ারক ইত্যাদি । এই ধরনের মার্কেটপ্লেস গুলোতে কাজ পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই একটি প্রফেশনাল প্রোফাইল তৈরি করে নিতে হবে। যে প্রোফাইল গুলো দেখে বায়ার আপনাকে কাজ দেয়ার জন্য উৎসাহ প্রকাশ করবে এবং এই প্রোফাইল গুলোতে আপনার সকল ধরনের স্কিল গুলো তুলে ধরতে হবে।
- ফ্রিল্যান্সিং করার সময় একটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে যেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজগুলো ভালোভাবে বায়ারকে হ্যান্ড ওভার করা যায়। কারণ আপনি যখন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আপনার সকল কাজগুলো ভালোভাবে বায়ার খেয়ে হ্যান্ডওভার করবেন তখন আপনার ওপরে বায়ারের একটি আস্থা তৈরি হবে এবং পরবর্তীতে তিনি আপনাকে ভালো মানের কাজ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করবে।
- অনেক সময় দেখা যাবে আপনি একসাথে বেশ অনেক কয় ধরনের কাজের অফার পেয়েছেন কিন্তু সব অফার গুলোই একসাথে এক্সেপ্ট করা যাবে না কারণ এ ক্ষেত্রে আপনি যদি সময় মতন কাজগুলো হ্যাংওভার দিতে না পারেন তাহলে পরবর্তীতে , বায়ানরা আপনাকে কাজ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করবে না । তাই আপনি সময়ের মধ্যে যতটুকু কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন ঠিক ততটুকু কাজের ডিল করুন , এতে করে কাজের ব্যাপারে আপনার গুড উইল তৈরি হবে।
- বায়ারের দেয়া কাজগুলো সম্পন্ন করার পরে , সে কাজগুলো বায়ারকে হ্যান্ডওভার করার পূর্বে একবার ভালোভাবে চেক করে নিন। এতে করে কাজের ভেতরে কোন ভুল ত্রুটি থাকলে সেটি আপনি শুধরে নিতে পারবেন এবং বায়ার আপনার কাজের কোন ত্রুটি খুঁজে পাবে না।
- বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া বুস্টিংয়ের জন্য এবং বিদেশি বায়ার থেকে পাওয়া পেমেন্ট দেশীয় টাকায় ট্রান্সফার করার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ড অ্যাকাউন্ট থাকা আবশ্যক।
কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবো
ফ্রিল্যান্সিং কাজ শুরু করার জন্য প্রথমেই আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং এর উপরে কোর্স
করতে হবে। এই কোর্সগুলো আপনি অনলাইনে এবং অফলাইনে দুইটি উপায়ে করতে পারেন।
অথবা বিভিন্ন ওয়েবসাইটগুলো পড়ার মাধ্যমেও এই বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারেন
কিংবা ইউটিউবে অনেক ধরনের ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার ভিডিও দেওয়া থাকে
যেগুলো দেখার মাধ্যমে আপনি মৌলিকভাবে এর ধারণা নিতে পারেন। বেশ কিছু ওয়েবসাইট
বা ইউটিউব চ্যানেল পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে যখন আপনার
মোটামুটি ভালো একটি ধারণা চলে আসবে তখন এই বিষয়ে অগ্রসর হওয়ার জন্য বিভিন্ন
মার্কেটপ্লেস গুলোতে একাউন্ট ক্রিয়েট করবেন। এবং এই অ্যাকাউন্টগুলোতে আপনার
স্কিল গুলো তুলে ধরার মাধ্যমে সুন্দর একটি গিগ তৈরি করবেন।
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার প্রথমে দিকেই বড় বড় কাজগুলো করতে যাবে না প্রথম
অবস্থাতেই ছোট এবং স্বল্পমূল্যের কাজগুলো ভালোভাবে করার চেষ্টা করবেন। এবং
প্রথমে যেসব কাজের উপরে আপনার স্কিল রয়েছে বা যেসব কাজগুলো আপনি ভালোভাবে
সম্পন্ন করতে পারবেন সে কাজগুলো হাতে নিবেন এবং সময়ের মধ্যে সেই কাজগুলো
হ্যান্ডওভার করার চেষ্টা করবেন। ছোট ছোট কাজগুলো করতে করতে আপনার মধ্যে বেশ
ভালো অভিজ্ঞতা চলে আসবে তারপরে আপনি আস্তে আস্তে বড় কাজগুলোতে ইন্টারফেয়ার
করবেন।
মন্তব্য , আশা করি আজকের ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কিত এই পোস্টটির মাধ্যমে
আপনারা অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে কিভাবে কাজ
শুরু করতে হবে সে ব্যাপারে মৌলিক ধারণাও পেয়েছেন। ফ্রিল্যান্সিং সাইটে যদি
আপনার প্রতিষ্ঠিত হতে চান এবং নিজেদেরকে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে
গড়ে তুলতে চান তাহলে অবশ্যই ধৈর্য ধরে কাজ করার পাশাপাশি পর্যাপ্ত টাইম দিন।
আপনারা যদি ধৈর্য্য এবং শ্রম দিয়ে যথেষ্ট পরিমাণ সময় এই সেক্টরে দেন তাহলে ,
এর থেকে অর্থ উপার্জন করা কঠিন কোন কাজ নয়।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url