ফুসফুস ভালো রাখার ১৫টি উপায়
সূচিপত্রঃ ফুসফুস ভালো রাখার উপায়
ফুসফুস কি
আমাদের বেঁচে থাকর জন্য ফুসফুসের ভূমিকা অপরিসীম, ফুস্ফুস নামটির সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত,কিন্তু আপনর কি জানা আছে ফুসফুস কি? যদি জানা না থাকে তাহলে এ প্রশ্নের উত্তরটি এখুনি জেনে নিন। সকল মেরুদন্ডী প্রাণীদের শরীরে একটি বিশেষ অঙ্গ রয়েছে ,যে অঙ্গের মাধ্যমে মেরুদন্ডি প্রানীরা শ্বাস - প্রশ্বসের কাজ সম্পন্ন করে, সেই অঙ্গটিকে ফুসফুস বলে। অর্থাৎ ,শ্বসনতন্ত্রের প্রধান অঙ্গের নাম হচ্ছে ফুসফুস। ফুসফুসের ভেতরে অনেকগুলো বায়ুথলি , শ্বাসনালী এবং রক্তনালী থাকে। বিভিন্ন অঙ্গের মতন সয়সের সাথে সাথে ফুসফুসও বৃদ্ধি পায়, তবে ফুসফুস বড় হতে থাকলে এর শক্তি কমতে থাকে। একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের ফুসফুসের ওজন থাকে প্রায় ১০০০ গ্রাম এবং একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের ফুসফুসের আয়তন প্রায় ৬০০০ মি.লি। ফুসফুস স্পঞ্জের মতন নরম ও সামান্য লালচে খইরি রঙের হয়
ফুসফুস ভালো রাখার উপায়
যারা ফুসফুল ভালো রাখার উপায় জানেন না তারা অবশ্যই, শ্বসন পরিচালনা করার অঙ্গ ফুসফুস ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে জেনে নিন। ঘরোয়া উপায়ে ফুসফুস ভালো রাখার পদ্ধতি গুলো হলো, নিয়মিত
গরম পানির ভাঁপ নেওয়াঃ নিয়মিত গরম পানির ভাঁপ নিলে ফুসফুস
ভালো থাকে , কারণ গরম পানির ভাঁপ নিলে ফুসফুসের ভেতরে জমে থাকা শ্লেষ্মা দূর
হয় যার ফলে নিঃশ্বাস বাধা প্রাপ্ত হয়না। এবং এটি গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন
জার্নাল অফ পালমোনারি এন্ড রেসপিরেটরি এর গবেষকরা। প্রায় ১৬ জন ফুসফুসের
সমস্যায় ঠিক মতন নিঃশ্বাস নিতে না পারা ব্যক্তিকে নিয়ে তারা এই গবেষণাটি
পরিচালনা করেন এবং গরম পানির ভাপ নেওয়ার প্রক্রিয়ায় কার্যকরী সুফল
পান।
ব্রেথ এক্সারসাইজ এবং শরীর চর্চা করাঃ ফুসফুস ভালো রাখার আরেকটি কার্যকরী উপায় হল নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম বা শরীর চর্চা করা। নিয়মিত শরীর চর্চার ফলে অন্যান্য অসুখ থেকে দূরে থাকার পাশাপাশি ফুসফুস ভালো রাখতেও শরীর চর্চা বিশেষ অবদান রাখে। ফুসফুসের রোগীদের জন্য অথবা ফুসফুস ভালো রাখতে ব্রেথ এক্সারসাইজ অত্যন্ত কার্যকর এতে দেহে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ে।
দূষিত ও ঠান্ডা বাতাস এড়িয়ে চলুনঃ ফুসফুস ভালো রাখতে অবশ্যই দূষিত বায়ু পরিহার করে চলতে হবে, দূষিত বায়ু আমাদের ফুসফুসের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর তাই ভূষিত বায়ুর স্থানে এড়িয়ে চলুন অথবা এই স্থানগুলোতে মাস্ক ব্যবহার করুন। ঠান্ডা বাতাস খেতে অনেকেই পছন্দ করেন, কিন্তুু বেশি ঠান্ডা বাতাস ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর।তাই ফুসফুস ভালো রাখতে হলে ঠান্ডা বাতাস খাওয়া বন্ধ করতে হবে। খুব বেশি অসুবিধা না থাকলে মুখের বদলে নাক দিয়েই শ্বাস নিন কারন নাক দিয়ে শ্বাস নিলে বাইরের বাতাস তাড়াতাড়ি গরম হয়ে শরীরে প্রবেশ করে।
AB
স্মোকিং বর্জন করুনঃফুসফুস ভালো রাখতে হলে আপনাকে অবশ্যয় স্মোকিং বা ধুমপান ছাড়তে হবে।কারণ ফুসফুসের খারাপ হওয়ার পেছনে প্রায় ৪০-৫০% দায়ী থাকে ধূমপান।
গ্রিন টি পান করাঃ গ্রিনপির অন্যান্য উপকারিতার পাশাপাশি এটি আমাদের
ফুসফুস ভালো রাখতে সাহায্য করে। যারা ধূমপান পরে তাদের ফুসফুসকে ধূমপানের
ক্ষতি থেকে বাঁচাতে কাজ করে গ্রিন টি।tbsnews.net নামক ওয়েবসাইট থেকে জানতে
পারা যায় যে -হাজার প্রাপ্তবয়স্ক কোরিয়ান নাগরিকের ওপর একটি গবেষণার করে দ্যা
জার্নাল অফ নিউট্রিশনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে যারা
নিয়মিত গ্রিন টি পান করে তাদের তুলনায় যারা গ্রিন টি পান করে না তাদের ক্ষেত্রে
ফুসফুসে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। তাই ফুসফুস ভালো রাখতেই নিয়মিতভাবে দিনে দুইবার
গ্রিন টি পান করা উচিত।
আরো পড়ুনঃ গ্রিন টি পানের উপকারিতা
পুদিনা পাতাঃ ঔষধি গুন সম্পন্ন পুদিনা পাতার বিভিন্ন উপকারিতার কথা
আমরা অনেকেই জানি। সর্দি-কাশি সারাতে পুদিনা পাতা বিশেষ অবদান রাখতে পারে। শুধু
সর্দি কাশি নয় ফুসফুসের যেকোনো ধরনের সংক্রমনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে
তুলতেও সাহায্য করে পুদিনা পাতা। তাই ফুসফুস ভালো রাখতে প্রতিদিন অল্প পরিমাণে
হলেও পুদিনা পাতা খাওয়ার চেষ্টা করুন , এটি আপনার ফুসফুস এর পাশাপাশি শরীরের
অন্যান্য সমস্যার থেকেও রক্ষা করবে।
তুলসি পাতাঃ কাশি কমাতে তুলসি পাতার গুনের কথা আমরা কে না জানি।বাতাসের মধ্যে থাকে ধূলো বালি শোষণ করে নিয়ে ফুসফুসকে সুরক্ষা দিতে পারে তুলসি পাতা। আর এ কারনে রেগুলার তুলসি পাতার রস খাওয়ার অভ্যাস করেলে এটি আমাদের ফুসফুসে সুরক্ষা দিতে বিশেষ সাহায্য করবে। এছাড়াও তুলসি পাতায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ফুসফুস ভালো রাখতে এবং ফুসফুস ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে
AB
আদাঃ শ্বসতন্ত্রের ভেতরের শাখা বর্জ্য পদার্থ দূর করে ফুসফুস ভালো
রাখতে সাহায্য করে আদা। আদার ভেতরে থাকা পটাশিয়াম , ম্যাগনেসিয়াম
, বিটা ক্যারোটিন সহ বিভিন্ন উপাদান গুলো ফুসফুস পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও আদার ভেতরে থাকে উপাদান গুলো ক্যান্সারের সেল ড্যামেজ করতে সাহায্য করে
বিধাই আদা খেলে ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকে।তাই প্রতিদিন এক টুকরো আদা
চিবিয়ে অথবা অন্য কিছুর সাথে কিংবা আদা চা খাওয়ার চেষ্টা করুন।
রসুনঃ ফুসফুস ভালো রাখার মসলা জাতীয় দ্রব্য গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো
রসুন। ফুসফুস এবং শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখতে সেলিনিয়াম ও অ্যালসিন উপাদান দুটি
বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর এই দুইটি প্রাকৃতিক উপাদান প্রচুর পরিমাণে পাওয়া
যায়। এছাড়াও রসুনের ভেতরে এন্টিভাইরাল উপাদান থাকায় ভাইরাসজনিত ক্ষতিকর
উপাদান গুলো থেকে ফুসফুস কে রক্ষা করতে সাহায্য করে রসুন।
AB
হলুদঃ ফুসফুসের ভেতরে থাকা দূষিত বা বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে যথেষ্ট সাহায্য করে হলুদ এছাড়াও হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সর্দি কাশি সহ ফুসফুসের যেকোন সমস্যা দূর করেতে এবং ফুসফুস ভালো রাখতে সাহায্য করে। ফুসফুসের সমস্যা দূর করতে ঘুই বা মাখনের সাথে কাঁচা হলুদের রস খাওয়ার চেষ্টা করুন।
কালোজিরাঃ মহাঔষধি গুন রয়েছে কালোজিরাতে এবং মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআনে বলা আছে মৃত্যু ছাড়া সকল অসুখ দূর করার ক্ষমতা রাখে কালোজিরা ও মধু। আর তাই সুস্থুর ভালো রাখতে নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস করতে করুন। কালোজিরাই রয়েছে দুটি অক্সিজেন ও আন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান যা ফুসফুসের প্রদাহ দূর করতে এবং ফুসফুস ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ড্রাই ফ্রুটসঃ ফুসফুস ভালো রাখতে খাদ্য তালিকায়
রাখুন কাজুবাদাম , পেস্তা বাদাম , চিনা বাদাম, আখরোট জাতীয় ড্রাই ফ্রুটস
গুলো। কারণ এই জাতীয় ড্রাইভ ফুড গুলো ফুসফুস ভালো রাখতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুন ঃ বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
ভিটামিন ই ও ওমেগা থ্রি যুক্ত খাবারঃ ফুসফুস ভালো রাখতে ড্রাই ফুডসের
পাশাপাশি খেতে পারেন ভিটামিন ই যুক্ত এবং ওমেগা থ্রি যুক্ত খাবার গুলো। ভিটামিন ই
যুক্ত খাবারের মধ্যে মিষ্টি কুমড়ার বীজ এবং ওমেগা থ্রি যুক্ত খাবার সামুদ্রিক
মাছ অত্যান্ত সাহায্য ফুসফুস ভালো রাখতে
ভিটামিন ডি ও সি যুক্ত খাবারঃ ফুসফুস ভালো রাখতে খেতে হবে ভিটামিন ডি এবং সি যুক্ত খাবার গুলো।ভিটামিন ডি শিশু দের শ্বাস কষ্ট দূর করতে সাহায্য করে আর অ্যান্টঅক্সিডেন্ট থাকায়ে ফুসফুস ভালো রাখতে সাহায্যকরে।
আপেলঃ ফুসফুস ভালো রাখতে নিয়মিত আপেল খাওয়ার চেষ্টা করুন, কারণ আপেলের ভেতরে থাকা ভিটামিন এবং বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদানগুলো ফুসফুস থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলো বের করে দিয়ে ফুসফুস ভালো ও পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
মন্তব্য , আশা করি ফুসফুস ভালো রাখার উপায়গুলো যদি আপনি ঠিকঠাক মতন
ফলো করেন এবং নিয়মিত এ বিষয়ে পরিচর্যা করতে থাকেন তাহলে , শ্বাস-প্রশ্বাস
পরিচালনা করার এই গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রটি ভালো থাকবে এবং এখানে জটিল রোগ বাসা
বাধার সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমে যাবে। যেহেতু স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল তাই শত
ব্যস্ততার মাঝেও আপনার স্বার্থের ব্যাপারে সচেতন হন।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url