মানসিক সমস্যা থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়
প্রায় মানুষদের মধ্যেই মানসিক রোগের মৃদু এবং তীব্র লক্ষণগুলো থাকে কিন্তু হয়তো বা সব সময় এই বিষয়গুলো আমরা বুঝতে পারিনা। মানসিক রোগ দূর করার জন্য সর্বপ্রথমে আমাদের জানতে হবে মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে , কারণ যখন আমাদের মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় গুলো জানা থাকবে তখন আমরা সেই অনুযায়ী বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করতে পারব এবং মানসিক রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারবো।
আমাদের ভেতরে বেশিরভাগ মানুষই যেহেতু কোনো না কোনোভাবে মানসিক রোগে আক্রান্ত তাই, অনেকেই মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় জানতে চেয়ে থাকেন। আর আজকে আপনাদের এই বিষয়টি জানানোর জন্যই এখন আলোচনা করব মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় এবং এই আলোচনার মাধ্যমে আপনারা মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বেশ কিছু কার্যকরী টিপস যাবেন।
মানসিক সমস্যা থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়
আমরা অনেকেই মানসিক রোগ বা মানসিক সমস্যা বলতে পাগল ভেবে থাকে আসলে বিষয়টি একেবারে এইরকম নয়। আর অন্যদের এ ধরনের নিচু মন-মানসিকতার কারণে , অনেক সময় আমাদের সামান্য কিছুটা মানসিক সমস্যা থাকলেও এগুলো নিয়ে কারো সাথে বিশ্বাস করতে বা সাইক্রিয়াটিস্টের পরামর্শ গ্রহণ করতে হেজিটেড ফিল করে থাকে। তাই আজকে আপনাদের জানাবো কিভাবে আপনারা মানসিক সমস্যা গুলো ঘরোয়া ভাবে নিজেরাই হারিয়ে ফেলতে পারেন। লাইফস্টাইল এর সামান্য কিছু পরিবর্তন করার মাধ্যমে কিন্তু আপনি ঘরোয়া ভাবে মানসিক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন , যেমন -
পর্যাপ্ত ঘুম বা বিশ্রামঃ আমাদের শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম দুটোই অত্যন্ত জরুরী। শরীরে পর্যাপ্ত ঘুম অথবা বিশ্রামের ঘাটতি থাকে , এটি যেমন শারীরিক স্বাস্থ্যের উপরে প্রভাব ফেলে ঠিক একইভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের উপরেও বিশেষ প্রভাব ফেলে। আর তাই মানসিক রোগ থেকে মুক্তির জন্য পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রামের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরী।
আরো পড়ুনঃ ঘুম না হলে করণীয়
পুষ্টিকর খাবার গ্রহণঃ শরীরে যখন বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি ঘাটতি দেখা দেয় তখন এর থেকে সৃষ্টি হয় নানান ধরনের রোগ, আর বিভিন্ন রোগের উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয় অতিরিক্ত মানসিক চাপের মতন সমস্যা যেমন শরীরে পুষ্টি ঘাটতি বা বিভিন্ন ভিটামিনের দেখা দিলে সেখান থেকে হতে পারে অনিদ্রার সমস্যা যা কিনা আপনার মানসিক চাপ বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করতে পারে আর আপনারা জানেন মানসিক চাপ বেড়ে গেলে তা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরে প্রভাব ফেলে এবং আমাদেরকে মানসিক রোগীতে পরিণত করতে সাহায্য করে।
একাকীত্ব দূর করাঃ মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার আরেকটি সহজ উপায় হলো একাকীত্ব দূর করা, কারণ মানুষ যখন একা একা থাকে তখন বিভিন্ন ধরনের দুশ্চিন্তা ঘিরে ধরে আর এই বিষয়টি মানসিক স্বাস্থ্যর ওপরে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। আর এই কারণে মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে একাকীত্ব দূর করতে হবে , একাকীত্ব দূর করার জন্য পরিবারের সাথে সময় দিতে হবে অথবা বন্ধু বান্ধবের সাথে আড্ডা , ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে হবে কিংবা আপনি একাকীত্ব দূর করার জন্য বই পড়া চেয়েও বেশি নিতে পারেন।
সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের চিন্তা করাঃ মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার আরেকটি বিশেষ উপায় হল সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে চিন্তাভাবনা করা অর্থাৎ নতুন কিছু করার চিন্তা করা। আপনি যখন সৃজনশীল কিছু অথবা নতুন কিছু তৈরির চিন্তা করবেন তখন আপনার মনোযোগ সেদিকে থাকবে এবং আপনি অতীত এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে কম চিন্তা করবেন। আর আপনি যখন সৃজনশীল কাজের সাথে জড়িত হয়ে যাবেন বা নিজেকে ব্যস্ত রাখবেন তখন বিভিন্ন ধরনের দুশ্চিন্তা আপনাকে ঘিরে ধরতে পারবে না।
শরীর চর্চাঃ মানসিক রোগ কমানোর উপায় হিসেবে আপনি বেছে নিতে পারেন শরীরচর্চাকে , কেননা নিয়মিত শরীফ চর্চা করলে এটি আমাদের মানসিক চাপ , দুশ্চিন্তা কমাতে সাহায্য করে যার ফলে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে আর এই কারণে মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিয়মিত শরীর চর্চা করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ শরীর চর্চার উপকারিতা
ধর্মীয় কাজে মনোযোগী হওয়াঃ ভেতরের ধর্মীয় অনুভূতি জাগ্রত করার মাধ্যমেও আপনি অনেক ক্ষেত্রেই মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিজ নিজ ধর্মীয় কাজগুলো করার চেষ্টা করুন অর্থাৎ আপনি যে ধর্মের মানুষ সেই ধর্মের ধর্মীয় কাজগুলো বেশি বেশি করতে থাকলে এর মাধ্যমে আপনি মানসিক শান্তি পাবেন এবং মানসিক রোগ থেকে অনেক ক্ষেত্রেই মুক্ত থাকতে পারবেন।
রুটিন মাফিক জীবন যাপন করাঃ মানসিক রোগ থেকে মুক্ত থাকার জন্য রুটিন মাফিক জীবন যাপন করার চেষ্টা করুন। আপনি যখন আপনার দৈনন্দিন কাজগুলোকে রুটিন মাফিক সাজিয়ে নেবেন তখন দেখবেন সময় মতন একটার পর একটা কাজ করতে গেলে দুশ্চিন্তা অথবা মানসিক চাপগুলো অনেকাংশেই কমে গেছে , কেননা আপনি যখন রুটি চলবেন তখন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করার সময় পাবেন না , কারণ মানুষ যখন কাজে-কর্মে ব্যস্ত থাকে তখন দুশ্চিন্তাগুলো ঘিরে ধরতে পারেনা আর যখন কাজকর্মহীন বা অবসর সময় কাটাতে থাকে বিভিন্ন ধরনের দুশ্চিন্তাগুলো ঠিক তখনই ঘিরে ধরে।
কোন কিছু নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা না করাঃ মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই যে কোন বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা বা দুশ্চিন্তা করা পরিহার করতে হবে , কারণ আপনি যখন কোন কিছু নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা বা দুশ্চিন্তা করবেন তখন এই বিষয়গুলো আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উপরে প্রভাব ফেলবে। তাই যে কোন কিছুকে স্বাভাবিকভাবে এবং পজেটিভ ভাবে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
আত্মবিশ্বাস বা মনোবল তৈরি করাঃ আমাদেরকে দৈনন্দিন জীবনে পারিবারিক এবং সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, বিপদের সময় বা সমস্যায় পড়লে নিজেদের ওপরে আত্মবিশ্বাস বা মনোবল তৈরি করার চেষ্টা করতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা দুশ্চিন্তায় বা স্ট্রেস লেবেল বেড়ে যায় প্রধান কারণ হলো নিজেদের ওপরে আত্মবিশ্বাস না থাকা এবং মনোবল ভেঙ্গে যাওয়া।তাই যে কোন সমস্যাই করলে সেটি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের দুশ্চিন্তা না করে , সমস্যা বা বিপদ মোকাবেলা করার জন্য নিজের উপরে আত্মবিশ্বাস এবং মনোবল দৃঢ় রাখতে হবে।
সবার সাথে কমিউনিকেশন রাখুনঃ আপনারা জানেন একাকীত্ব আমাদের মানসিক রোগ বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে এ কারণে, মানসিক রোগ থেকে বা মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সবার সাথে কমিউনিকেশন রাখার চেষ্টা করুন। নিজের ভেতরের চাপ গুলো অথবা সমস্যার কথাগুলো অন্যের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করুন এতে আপনার মানসিক চাপ এবং স্ট্রেস অনেকটা কম হবে যা আপনাকে মানসিক রোগ থেকে মুক্ত থাকতে সাহায্য করবে।
ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করুনঃ আপনারা জানেন যে মানসিক রোগ একটি জটিল সমস্যা তাই আপনি যদি নিজের ভেতরে অথবা আপনার কাছের মানুষদের ভেতরে মানসিক রোগের লক্ষণ গুলো দেখেন তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার উচিত হবে দ্রুত ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করা এবং সেই পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ এবং সাইকেল থেরাপি নেওয়ার মাধ্যমে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার চেষ্টা করা।
মন্তব্য , আপনাদেরকে আবারো জানিয়ে রাখি যে মানসিক সমস্যা বলতেই পাগল বোঝায় না। জরিপ করলে দেখা যাবে যে আমাদের মধ্যে দুই এক রুম ছাড়া প্রায় সকলেই আমরা কোন না কোন ভাবে মানসিক রুগী। তাই মানসিক রোগ সম্পর্কে অন্যের কথায় কান না দিয়ে বা অন্যেরা কি ভাবল এটাই চিন্তা না করে, সমস্যা হারানোর জন্য নিজের মতন চেষ্টা করুন অথবা প্রয়োজনে সাইকেটিস্ট পরামর্শ গ্রহণ করুন।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url