ভিটামিন এ জাতীয় খাবার - ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম
ভিটামিন এ হলো চর্বিতে দ্রবণীয় একটি ভিটামিন এবং এই ভিটামিনের কার্যকারিতা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে রয়েছে এবং এই ভিটামিন এ প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন ধরনের খাবারের মধ্যে থেকে পাওয়া যায়। ভিটামিন এ আমাদের চোখের রেটিনা গঠনে বিশেষভাবে কার্যকরী আর এ কারণে আমাদেরকে জানতে হবে ভিটামিন এ জাতীয় খাবার কোনগুলো এবং এই খাবারগুলো নিয়মিত খাদ্য তালিকায় নির্দিষ্ট মাত্রায় যুক্ত রাখতে হবে।
শরীরে যদি ভিটামিন এ এর পর্যাপ্ত ঘাটতি থাকে তাহলে , সেক্ষেত্রে নানান ধরনের
শারীরিক জটিলতা সম্মুখীন হতে হয়। তাই শরীরে ভিটামিন এ এর ঘাটতি পূরণের জন্য
অবশ্যই ভিটামিন এ জাতীয় খাবার গুলো খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে এবং এর পরেও যদি
ভিটামিন এ এর পর্যাপ্ত ঘাটতি থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী
ভিটামিন এ ক্যাপসুল গ্রহণ করতে হবে। তাহলে চলুন আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক
শরীরে ভিটামিন এ এর কাজ কি এবং কোন কোন খাবারে ভিটামিন এ পাওয়া যায় ও ভিটামিন এ
ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
সূচিপত্রঃ ভিটামিন এ জাতীয় খাবার - ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম
- ভিটামিন এ জাতীয় খাবার
- ভিটামিন এ এর অভাবজনিত রোগ
- ভিটামিন এ ক্যাপসুল এর উপকারিতা
- ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম
ভিটামিন এ জাতীয় খাবার
ভিটামিন এ আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শরীরে যদি ভিটামিন এর ঘাটতি
দেখা দেয় তাহলে, এর কারণে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা প্রকাশ পেতে থাকে ,যার
মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি সমস্যা হলো চোখের জ্যোতি কমে যাওয়া। তাই শরীরে ভিটামিন এ
এর চাহিদা পূরণ করার জন্য আমাদের উচিত দৈনিক খাদ্য তালিকায় নির্দিষ্ট পরিমাণ
ভিটামিন এ জাতীয় খাবার যুক্ত রাখা আর এই কাজটি করার জন্য জানা প্রয়োজন কোন
কোন খাবার গুলোর মধ্যে ভিটামিন এ থাকে। বিভিন্ন ধরনের খাবার থেকে আমরা ভিটামিন ই
পেতে পারি যেমন ,
- শাক-সবজি জাতীয় যেসব খাবার থেকে ভিটামিন এ পাওয়া যায় , সেগুলো হল - গাজর , ব্রকলি, পালং শাক , শসা ,স্পিনাচ , মিষ্টি আলু , কুমড়া , লালশাক , টমেটো , বাঁধাকপি , লেটুস পাতা , সরিষার শাক , সজনা পাতা , ধনিয়াপাতা , পাটের শাক , পুদিনা পাতা ,ডাটা শাক , ক্যাপসিকাম ইত্যাদি । এছাড়াও যে কোন ধরনের হলুদ ও সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ পাওয়া যায়।
- যেসব ফলে ভিটামিন এ থাকে , সেগুলো মধ্যে রয়েছে - আম , কাঁঠাল , পেঁপে , অ্যাভোকাডো।
- দুগ্ধ জাত খাবার গুলোর মধ্যে ভিটামিন এর উৎস হল -দুধ বা দুধের তৈরি যে কোন খাবার , দই , চিজ ,ঘি , মাখন ইত্যাদি।
- প্রাণিজ যেসব জাতীয় খাবার গুলোর মধ্যে ভিটামিন এ থাকে, সেগুলো হলো - গরু খাসির কলিজা, হাঁস মুরগির মাংস , ডিম।
- এছাড়াও মাছের তেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ পাওয়া যায়।
ভিটামিন এ এর অভাবজনিত রোগ
ছোট থেকে বড় যে কোন বয়সী মানুষের শরীরে ভিটামিন এ এর ঘাটতি দেখা দিতে পারে
।শরীরের যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ মজুদ না থাকে তাহলে , এর কারণে বেশ কিছু
রোগ শরীরে বাসা বাঁধে। আর ভিটামিন এ এর অভাবজনিত রোগ গুলোর মধ্যে রয়েছে,
- রাতকানা
- চোখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া
- দৈহিক বৃদ্ধি কমে যাওয়া
- শরীরের ক্ষত না শুকানো
- গলা এবং বুকের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া
- ত্বকের শুষ্কতা বৃদ্ধি পাওয়া
- বন্ধ্যাত্ব দেখা দেওয়া
- শরীরের রক্তস্বল্পতা দেখা দেওয়া
ভিটামিন এ ক্যাপসুল এর উপকারিতা
প্রতিবছরই সারাদেশব্যাপী ছয় মাস থেকে শুরু করে পাঁচ বছর বয়সী সকল শিশুকে
ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। শিশুদেরকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর
অনেক উপকারিতা আছে যেমন , ভিটামিন এ ক্যাপসুল খেলে
- রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করা যায়
- অন্ধত্ব রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না
- দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে
- বিভিন্ন ধরনের জীবাণুর সংক্রমণ থেকে দেহকে সুরক্ষা দেয়
- ত্বক ভালো থাকে
- দেহের অস্থি ও দাঁত গঠনে সহায়তা করে
- টিউমার ও ক্যান্সারের ঝুঁকি রোধ করে
- কোষ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে
- প্রযোজন ক্ষমতা ভালো রাখ
ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম
শরীরের জন্য উপকারী হলেও ভিটামিন এ ক্যাপসুল অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া যাবে না , বয়স ভেদে নির্দিষ্ট ডোজ এবং নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে খেতে হবে ভিটামিন এ ক্যাপসুল। তবে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়ে থাকেন বড়দের ক্ষেত্রে ভিটামিন এ ক্যাপসুল এর উপরে নির্ভরতা কমিয়ে খাদ্য খাবারের মধ্যে দিয়ে ভিটামিন এ গ্রহণ করাই ভালো। তবে যদি শরীরে অতিরিক্ত ভিটামিন এ এর ঘাটতি থাকে এবং এর কারণে চোখের দৃষ্টিশক্তির সমস্যা অথবা রাতকানা রোগের সম্ভাবনা দেখা দেয় তাহলে ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষেরা 3000 IU প্রাপ্তবয়স্ক মহিলারা 2333 IU এই মাত্রার ভিটামিন এ ক্যাপসুল গ্রহণ করতে পারেন, তবে অবশ্যই রেজিস্টার ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক।
আরো পড়ুনঃ ভিটামিন বি যুক্ত খাবার কোনগুলো এবং ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হয়
আর এছাড়াও ছোটদের ক্ষেত্রে ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী বাচ্চাদেরকে প্রতিবছরই , বছরের বিভিন্ন সময় ভিটামিন এ ক্যাম্পেইন গুলোর মাধ্যমে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়।শিশুদের ক্ষেত্রে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই ভরা পেটে খাওয়াতে হবে এবং ক্যাপসুলের সামনের অংশে সামান্য কেটে ভেতরের তরলটি খাওয়াতে হবে। তবে যেহেতু শুধুমাত্র লিকুইড টুকু বাচ্চাদের মুখে দেওয়া হয় এ কারণে বাচ্চা কান্নারত অবস্থায় না খাওয়ানোই ভালো , কারণ এতে লালা সাথে তরল অংশটি বেরিয়ে যেতে পারে।
মন্তব্য , আপনারা যদিও জানেন যে ভিটামিন এ আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত
উপকারী কিন্তু তারপরে অতিরিক্ত মাত্রায় ভিটামিন এ গ্রহণ করা যাবে না কারণ
অতিরিক্ত মাত্রায় ভিটামিন এ গ্রহণের ফলেও শরীরে বিশেষ কিছু প্রভাব পড়তে পারে
যার মধ্যে ডায়রিয়া , ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া , মাথা ব্যথা , লিভারের সমস্যা ,
হাড়ের সমস্যা সহ আরো নানান ধরনের অসুবিধা হতে পারে তাই সাপ্লিমেন্ট হিসেবে
ভিটামিন এ গ্রহনের সময় অবশ্যই রেজিস্টার ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে
নেবেন। আর মনে রাখবেন ভিটামিন এ এর ঘাটতি যে কোন বয়সী মানুষেরই হতে পারে তাই
সবসময় এ ব্যাপারে সচেতন থাকা উচিত।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url