গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে কি হয় - গর্ভাবস্থায় পানি কমে গেলে করণীয়
গর্ভাবস্থার শেষের দিকে বেশিরভাগ মেয়েদের অত্যন্ত কমন একটি সমস্যা দেখা দেয় , আর সেটি হল পানি কমে যায়। তাই গর্ভাবস্থায় এই পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবেলা করা যায় সে বিষয়ে উঠবে থেকেই সচেতন এবং পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখা উচিত। আর এ কারণে আজকে আপনাদেরকে জানাবো গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে কি হয় এবং গর্ভাবস্থায় পানি কমে গেলে করণীয় বিষয়ে গুলো সম্পর্কে।
সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে কি হয় - গর্ভাবস্থায় পানি কমে গেলে করণীয়
গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে কি হয়
পানি আমাদের শরীরে জন্য কতটা জরুরি তা আমরা সকলেই জানি এবং উপলব্ধি করতে পারি, তবে স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে গর্ভাবস্থায় শরীরে পানির চাহিদা এবং প্রয়োজনিয়তা বেড়ে যায় বহু গুনে।গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে বা শরীরে পানি কমে গেলে তা মা ও বাচ্চা দুজনের জন্য মারাক্তক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে কি হয় এই বিষয়ে সঠিক ধারণা খুব কম মানুষেরই আছে। গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর সুস্থতার জন্য ,আজকে আপনাদের জানাবো গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে কি হয়।
আপনাদের নিশ্চয়ই জানা আছে , গর্ভবতী মায়েদের ভিটামিন এবং পুষ্টিকর খাবার গুলো বেশি খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে কেননা গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীর থেকেই ভিটামিন এবং পুষ্টির মাধ্যমেই গর্ভে থাকা বাচ্চা পুষ্টি লাভ করে এবং সুস্থভাবে বেড়ে ওঠে।মায়ের শরীর থেকে খাদ্য পুষ্টিগুলো শিশুর শরীর পর্যন্ত পৌঁছানোর কাজটি সম্পন্ন হয় পানির মাধ্যমে। তাই গর্ভাবস্থায় যদি পানি কম খাওয়া হয় এবং শরীরে পানির চাহিদা থাকে তাহলে সেই ক্ষেত্রে মায়ের শরীর থেকে বাচ্চার শরীরে পুষ্টি সঠিকভাবে সরবরাহ হবে না যার ফলে গর্ভে বাচ্চার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হবে।
এছাড়াও গর্ভাবস্থায় শরীরকে ডিহাইড্রেট রাখা অত্যন্ত জরুরি , আর এই সময় যদি পানি কম খাওয়া হয় তাহলে শরীরে ডিহাইড্রেশন দেখা দিবে এবং যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা বা জটিলতার সৃষ্টি হবে।গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যে বেশি হওয়ার সাথে সাথে দেখা দিতে পারে পাইলসের সমস্যার। গর্ভাবস্থায় বেশিরভাগ নারীর ইউরিন ইনফেকশনের সমস্যা দেখা দেয় , ইউরিন ইনফেকশন দূর করতে এই সময় বেশি বেশি পানি পান করা প্রয়োজন। তাই গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদেরকে স্বাভাবিক অবস্থান তুলনায় আরো ৫০০ মিলিমিটার পানি অতিরিক্ত পান করতে বলা হয়।
আরো পড়ুনঃ ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ
গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে মিসক্যারেজের সম্ভাবনা থাকে সেই সাথে সাথে শিশু বিকলাঙ্গ হওয়ারও ঝুঁকি বেড়ে যায় কেননা বাচ্চা যখন মাতৃগর্ভে থাকে তখন এমনিওটিক ফ্লুইড নামক পানির মতন এক ধরনের তরল পদার্থের ভেতরে থাকে আর গর্ভে থাকা বাচ্চার জন্য প্রয়োজনীয় এই ফ্লুইড তৈরি হয় মায়ের পর্যাপ্ত পানি পানের মাধ্যমে। তাই গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে এই ফ্লুইডের পরিমাণ কমে যাবে এবং বাচ্চা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে , এমনকি গর্বে শিশুর মৃত্যুও ঘটতে পারে। পানি কম খেলে শিশুর বিকাশের সমস্যা , বাচ্চা শরীরে অক্সিজেন সরবরাহের মাত্রা কম হওয়া , জরায়ু ছোট বা সংকুচিত হয়ে যাওয়া , সঠিক সময়ের আগেই লেবার পেইন ও নরমাল ডেলিভারি না হওয়া এবং সিজারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে।
গর্ভাবস্থায় পানি কমে গেলে করণীয়
আপনারা হয়তো জেনে থাকবেন , মাতৃগর্ভে শিশু এমিনিউটিক ফ্লুইড নামক এক ধরনের তরল পদার্থের ভেতরে অবস্থান করে। আর এই তরল পদার্থ কি মাতৃ গর্ভে থাকা শিশুর প্রতিরক্ষা কবজ হিসেবে কাজ করে। সাধারণত দেখা যায় তৃতীয় ট্রাইমিস্টার এর আগ পর্যন্ত এই তরল ফ্লুইডের পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং মোটামুটি ৩৬ সপ্তাহের মধ্যে এর পরিমাণ এসে দাঁড়ায় প্রায় এক লিটারের আশেপাশে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর থেকে এই তরল পদার্থটির পরিমাণ কমতে থাকে , যে সমস্যাটিকে বলা হয় ওলিগোহাইড্রোমোনিওস।
ওলিগোহাইড্রোমোনিওস এই সমস্যাটি যখন ব্যাপক তীব্রভাবে দেখা দেয় তখন সেটিকে বলা হয় পলিহাইড্রোমোনিওস। এই সমস্যা গুলো মূলত গর্ভকালীন অবস্থায় তৃতীয় ট্রাইমিস্টারেরে দিকে বেশি হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থায় পানি কম থাকার বা পানি কমে যাওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে , তবে গর্ভাবস্থায় এই এমনিওটিক ফ্লুইড বাড়ানোর বিশেষ কিছু নিয়ম রয়েছে।গর্ভাবস্থায় যদি এমনিওটিক ফ্লুইড এর মাত্রা কমে যায় তাহলে সে ক্ষেত্রে,
বেশি বেশি তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে ও পান করতে হবে
সঠিক ডায়েট চার্ট মেনে চলতে হবে
গর্ভকালীন সময়ে নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম নিয়মিত করতে হবে
পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম নিতে হবে
কোলড্রিংস জাতীয় পানীয় গুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
এছাড়াও সর্বোপরি এইরকম পরিস্থিতি যদি সৃষ্টি হয় তাহলে অনতিবিলম্বে একজন ভালো
কোন গাইনি ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে এবং তার ইনস্ট্রাকশন অনুযায়ী চলার
হার্ড এন্ড সোল চেষ্টা করতে হবে।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url