মাশরুম খাওয়ার বিশেষ ৯টি উপকারিতা - মাশরুম খাওয়ার নিয়ম
মাশরুম আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি খাদ্য। কারণ এতে রয়েছে মিনারেল,
ভিটামিন, অ্যামাইনো এসিড, প্রোটিন, অ্যান্টিবায়োটিক এবং এন্টি অক্সিডেন্টে
ভরপুর। আবার এতে রয়েছে বিভিন্ন প্রকারের ঔষধি গুন। যেগুলো আমাদের দেহের জন্য
খুবই উপকারী হিসেবে ভূমিকা পালন করে।
আপনি যদি নিয়মিত মাশরুম খেতে পারেন তাহলে শরীরের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, হজম
শক্তি বৃদ্ধি, রক্তশূন্যতা দূরীকরণে, ত্বকের উপকারে সহায়তা করে থাকে। এমনকি
মরণব্যাধি ক্যান্সার প্রতিরোধেও সাহায্য করে। তাই মাশরুমের পুষ্টিগুন, উপকারিতা
এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে রাখতে হবে।
সূচিপত্রঃ মাশরুম খাওয়ার উপকারিতা - মাশরুম খাওয়ার নিয়ম
- মাশরুমের পুষ্টিগুণ
- মাশরুম খাওয়ার উপকারিতা
- মাশরুম খাওয়ার নিয়ম
- মাশরুম এর অপকারিতা
- মাশরুম খাওয়ার উপযুক্ত সময় কখন?
মাশরুমের পুষ্টিগুণ
মাশরুম হচ্ছে উচ্চ পুষ্টি সম্পন্ন একটি খাদ্য। এই খাদ্যটি আমাদের শরীরের
পুষ্টির যথেষ্ট চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে। আপনি হয়তো জানলে অবাক হবেন যে
এই খাবারে কোনরকম ক্ষতিকর ফ্যাট নেই। যার ফলে মাশরুম নিয়মিত খেলে হৃদরোগ,
হাই প্রেসার সহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে।
মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে এর পাশাপাশি সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম,
পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এর মতো উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য
অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এক গবেষণাগারের প্রেক্ষাপটে প্রতি ১০০ গ্রাম মাশরুমে
রয়েছে-
- শর্করা (৪-৬ গ্রাম)
- চর্বি (৪-৬ গ্রাম)
- প্রোটিন (২৫-৩৫ গ্রাম)
- মিনারেল (৫-৬ গ্রাম)
- ভিটামিন (৫৭-৬০ গ্রাম)
- আঁশ (১০-২৮ শতাংশ)
এর পাশাপাশি এতে রয়েছে অন্যান্য পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। এ ছাড়াও মাশরুম
আজযুক্ত খাবার হওয়ার ফলে এর উপকারিতাও অনেক রয়েছে। তাহলে চলুন মাশরুমের কি
কি স্বাস্থ্য উপকারিতা হয়েছে সেগুলো জেনে নেই।
মাশরুম খাওয়ার উপকারিতা
অত্যন্ত পুষ্টি সম্পন্ন এই মাশরুমে রয়েছে নানান ধরনের উপকারিতা। যেগুলো
আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ভূমিকা পালন করে। চলুন কথা না বাড়িয়ে
মাশরুমের উপকারিতা গুলো জেনে নেই।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে: আমাদের শরীরে শর্করা বা চিনির পরিমাণ
নিয়ন্ত্রণ করতে মাশরুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মাশরুমে বিদ্যমান
প্রোটিন, ভিটামিন এবং ফাইবারসমৃদ্ধ পুষ্টি উপাদান যা ডায়াবেটিস আক্রান্তদের
জন্য অনেক উপকারী।
এছাড়াও এতে রয়েছে বিভিন্ন এনজাইম রয়েছে যেগুলো সাধারনত প্রাকৃতিক ইনসুলিন
হিসেবে পরিচিত। এই এনজাইম রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমাণ স্বাভাবিক রাখতে
সহায়তা করে। যার ফলে আমাদের শরীরের ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে: স্তন ক্যান্সার, প্রোটেস্ট ক্যান্সারসহ নানান
রকমের ক্যান্সার প্রতিরোধে মাশরুম বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এতে রয়েছে
ফাইটোক্যামিক্যাল (Phytochemicals) যা যেকোনো টিউমা্রের বৃদ্ধি হওয়াকে বাঁধা
দেয়। যার ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়।
এছাড়াও এই মরণব্যাধি ক্যান্সার রোগের পাশাপাশি যেগুলো টিউমারজনিত রোগ
রয়েছেসেগুলো রোগ নিরাময়েও মাশরুম বেশ কার্যকর। সুতরাং বলা যায়, মাশরুম খেলে
ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। এর পাশাপাশি টিউমার হওয়ার
আশঙ্কাও অনেক কম থাকে।
হজম শক্তি বৃদ্ধিকরণে: মাশরুমে রয়েছে প্রচুর এনজাইম ও ফাইবার। এগুলো
আমাদের শরীরের হজমশক্তি বৃদ্ধি করে সহায়তা করে। এর পাশাপাশি অন্ত্রে বিদ্যমান
ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলোকে ধ্বংস করে কার্যকরী ব্যাকটেরিয়ার কাজ বাড়াতে
সাহায্য করে। এজন্য দেহের পাকস্থলীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
ওজন নিয়ন্ত্রণে: মাশরুমে অনেক পরিমাণে ফাইবার থাকায় আমাদের দীর্ঘ
সময় পেট ভরা থাকে। যার ফলে অনেক বেশি খাওয়ার প্রবণতা অনেকটাই কমে যায়। এর
পাশাপাশি এটিতে ক্ষতিকর চর্বি না থাকার কারণে এটি শরীরের চর্বির পরিমাণও
বৃদ্ধি করে না। যার ফলে আমাদের দেহের ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণে: মাশরুম মানুষের দেহের রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বৃদ্ধি কারণে অনেক কার্যকর ভূমিকা রাখে। এতে রয়েছে আমাদের শরীরের
জন্য প্রয়োজনীয় সেলেনিয়াম, পলিফেনল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা হৃদরোগ,
ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরণের স্নায়ুতন্ত্রের রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়। এছাড়াও
এই খাদ্যে বিদ্যমান প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল এবং
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারণে
কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।
হাই প্রেসার ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে: মাশরুমে বেশ কিছু উপাদান থাকে
যেমন কিটিন, লোভাষ্টটিন, লোভাষ্টটিন, ইরিটাডেনিন,লোভাষ্টটিন ইত্যাদি। এগুলো
উপাদান আমাদের শরীরের কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে।
যার ফলে মাশরুম খাওয়ার ফলে শরীরের হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়াও
এতে প্রচুর পরিমাণে উচ্চ মাত্রার ফাইবার ও পটাশিয়াম থাকার ফলে দেহের রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণ রাখার পাশাপাশি হৃদপিণ্ডকেও সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
হাড়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণে: অবাকের বিষয় হলো মাশরুম কিন্তু মানব দেহের
বিভিন্ন হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে থাকে। কেননা এতে রয়েছে
পর্যাপ্ত পরিমাণে উপকারি ভিটামিন-ডি যা আমাদের শরীরের হাড়ের জন্য খুবই
উপকারী। এছাড়াও মাশরুমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম। ভিটামিন ডি ও
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেলে তা মানব দেহের হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করতে অনেক
কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
ত্বকের উপকারে: মাশরুমের দুটি ভিটামিন উপাদান রয়েছে প্রথমটি
রিবোফ্লাবিন এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে নিয়াসিন। যা মানবদেহের ত্বকের ক্ষেত্রে
খুবই উপকারী। এর পাশাপাশি এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি থাকার ফলে আমাদের ত্বককে
কোমল নরম রাখার পাশাপাশি ত্বকের আর্দ্রতাও বৃদ্ধি পায়। তাই যারা ত্বক নিয়ে
বেশ যত্নশীল তারা চাইলে ত্বকের সুস্থতার জন্য মাশরুম খেতে পারেন।
রক্তশূন্যতা দূরীকরণে: মাশরুমে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন থাকার কারণে
আমাদের দেহের রক্তের পরিমাণ অনেকটা বৃদ্ধি পায়। যাদের রক্তশূন্যতা রয়েছে বা
মাঝেমধ্যে রক্তশূন্যতায় ভোগেন তারা ঘরোয়া উপায় হিসেবে বেশি বেশি মাশরুম
খেতে পারেন। এতে আপনার দেহের রক্তশূন্যতাও কমে যাবে এর পাশাপাশি আপনার শরীরে
রক্তের পরিমাণ বেড়ে যাবে। আয়রন আমাদের শরীরের রক্তকে পরিষ্কার রাখতেও
সহায়তা করে।
মাশরুম খাওয়ার নিয়ম
সাধারণত মাশরুম বিভিন্ন নিয়মে খাওয়া যায় যেমন স্যুপ, নুডুলস, চপ অথবা তরকারি
হিসেবে রান্না করেও খাওয়া যায়। আবার অনেকে মাশরুম তেলের মধ্যে ভাজি কিংবা
ফ্রাই করেও খেয়ে থাকে। এটি খুবই সুস্বাদু একটি খাবার।
আপনারা চাইলে যেকোনো খাবারের সাথে খেতে পারেন। আপনি যদি এই অধিক পুষ্টি
সম্পন্ন উপকারী খাদ্যটি কোনো তরকারির সাথে সংযুক্ত করেন তাহলে দেখবেন আপনার
খাবারের স্বাদ বেড়ে যাবে। এছাড়াও বর্তমান বাজারে মাশরুম এর পাউডার পাওয়া
যাচ্ছে আপনারা চাইলে এর পাউডারও খেতে পারেন।
মাশরুমের খাওয়ার অপকারিতা
আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি যে মাশরুম হচ্ছে অত্যন্ত পুষ্টিকর ও উপকারী খাবার। তবুও
এর সামান্য অপকারিতাও আছে। প্রথমত এর জটিল কোন অপকারিতা নাই। কিন্তু, আমরা
জানি যেকোনো খাবার অতিমাত্রায় বা পরিমাণে বেশি খেলে ক্ষতি হওয়ার প্রবণতা
থাকে। এজন্য ভালো ফলাফল পেতে হলে প্রতিটা খাবার পরিমিত পরিমাণেই খাওয়া
উত্তম।
তবে মাশরুম খাওয়ার ক্ষেত্রে আগে একটা বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে সেটি হচ্ছে,
যেগুলো মাশরুম চাষ করা হয় কেবলমাত্র সেগুলো মাশরুমই খাওয়া উচিৎ। চাষ করা
মাশরুম ব্যতিত মাশরুম খাওয়া একদমই ঠিক নয়। এক্ষেত্রে উপকার না হয়ে ক্ষতির
প্রবণতা থেকে যায়। কারণ চাষ করা ব্যতিত মাশরুমে বিষাক্ত প্রক্রিয়া থাকে যা
খেলে মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে। তাই এই বিষয়ে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে।
মাশরুম খাওয়ার উপযুক্ত সময় কখন?
মাশরুমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে হাই-ফাইবার। এই ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার আপনি
সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত খেতে পারেন। আর কেউ যদি সন্ধ্যার পরে ফাইবার বা মাশরুম
খায় তাহলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাদের ইতিমধ্যে
গ্যাস্ট্রিকজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের পেট ফাঁপা বা পেট ফোলা বা পেট ফাঁপা ভাব
দেখা দিতে পারে।
আসলে এইটা খাবারের কোনো সমস্যা না বরং এটা সময়ের সমস্যা। তাই আমরা যদি ভালো
খাবার গুলো সময়মতো খেতে পারি তাহলে অবশ্যই সেই খাবারের সাহায্যে আমরা সুস্থ
সবল থাকতে পারবো।
মন্তব্যঃ পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা
নিশ্চয়ই মাশরুম খাওয়ার উপকারিতা ও মাশরুম খাওয়ার নিয়ম ভালোভাবে জানতে
পেরেছেন। আমাদের বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব কমানো ও স্বাস্থ্য সচেতনতাও
বাড়ানো সম্ভব। তাই আমাদের সকলেরই উচিৎ এই খাদ্যটি সতর্কতার সহিত খাওয়া এবং
এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলো যথাসময়ে গ্রহণ করা।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url