ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ ও ভাইরাস জ্বর হলে করণীয়
বর্তমান সময়ে খুব কম মানুষই আছে যারা নাকি ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হয়নি এমন মানুষ খুব কমই রয়েছে। আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করব এই ভাইরাস জ্বর নেই আর এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানাবো ভাইরাস জ্বর হলে কি ঔষধ খাওয়া উচিত এবং ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত।
আপনারা অনেক সময় অনেকেই ভাইরাস জ্বর হলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং ভাইরাস জ্বর
সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন করে থাকেন তাই আজকের প্রশ্নের মাধ্যমে আপনাদের সেই
কাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের উত্তর গুলো দেয়ার চেষ্টা করব। এই পোস্টের মাধ্যমে আপনারা জ্বর
হলে কি ঔষধ খাওয়া উচিত ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ গুলো জানার পাশাপাশি আরো জানতে পারবেন
ভাইরাস জ্বর কেন হয় , ভাইরাস জ্বর প্রতিরোধের উপায় , ভাইরাস জ্বর হলে করণীয়
ইত্যাদি বিষয়ে সম্পর্কে। চলুন তাহলে আর দেরি না করে ভাইরাস জ্বর সম্পর্কিত এই
পোস্টটি পড়ে নেয়া যাক।
সূচিপত্রঃ ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ ও ভাইরাস জ্বর হলে করণীয়
ভাইরাস জ্বর কেন হয়
ছোট থেকে বড় এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না যাদের জ্বর হয়নি বা হয় না।
বিশেষ করে ঋতু পরিবর্তনের সময় , শীতের আগে ও পরে এমনকি যে কোন সময়ই মানুষ
জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। ইদানিংকালে ডেঙ্গু , করোনা সহ বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস
জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা মানুষের মধ্যে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে ,তাই অনেকেই
জানতে চেয়ে থাকেন ভাইরাস জ্বর কেন হয় এ বিষয়টি জানতে।ভাইরাস জ্বর কেন হয় এই
কথাটি শুনে হয়তো বা আপনারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করতে পারছেন যে , বিভিন্ন
ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে যেই জ্বর হয় সেটাকে ভাইরাস জ্বর হতে বলে।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে , বিভিন্ন ভাইরাস দ্বারা খুব
সহজেই শরীরে আক্রান্ত হতে পারে আর শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ হলে শরীরের তাপমাত্রা
অনেক বেড়ে যায়। ভাইরাসের কারণে শরীরের এই তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াতেই আমরা
সাধারণভাবে ভাইরাস জ্বর হলে থাকি।
ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ
এবার আসা যাক ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ এর কথাই। আপনাদের মধ্যে অনেকেই ভাইরাস জ্বরের
লক্ষণ কি কি তা জানতে চান। অনেকেই করোনা, ডেঙ্গু নাকি সাধারণ ভাইরাস দ্বারা
আক্রান্ত সে বিষয়ে বুঝতে না পারার কারণে জানতে চেয়ে থাকবেন ভাইরাস জ্বরের
লক্ষণ গুলো কি এই বিষয়ে। তাই এখন আপনাদেরকে ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ গুলো জানাবো।
ভাইরাস জ্বর হলে সাধারণত দেখা দেয়,
- মাথা ব্যথা
- সারা শরীর এবং প্রতিটি গিরায় ব্যথা
- খাবারে অরুচি
- দুর্বলতা
- ক্লান্ত লাগা
- চোখ ও নাক দিয়ে পানি পড়ে
- শরীরে এলার্জির প্রবণতা বেড়ে যাওয়া
- কাশি
- গলা ব্যথা
- ডায়রিয়া
- অনিদ্রা
- পেট ব্যথা
ভাইরাস জ্বর হলে করণীয়
বর্তমান সময়ে যেহেতু ভাইরাস জ্বরের প্রাদুর্ভাব অনেক বেড়েছে , আর এ কারনে আজকে আপনাদের
সাথে ভাইরাস জ্বর হলে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করব। অনেকেই ভাইরাস জ্বর এই
আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন , এই অবস্থায় আতঙ্কিত না হয়ে ভাইরাস জ্বর
হলে করণীয় বিষয়গুলো জেনে নিয়ে সে অনুযায়ী নিয়মকানুন মেনে চললে খুব দ্রুত
এই জব থেকে সেরে ওঠা যাবে। কিন্তু আপনাদের মধ্যে অনেকেই সঠিকভাবে জানেন না
ভাইরাস জ্বর হলে করণীয় বিষয় সম্পর্কে তাই আপনাদেরকে এই বিষয়ে বিস্তারিত
জানাতে এখন আলোচনা করব ভাইরাস জ্বর হলে করণীয় কি ।
তরল খাবার খানঃ ভাইরাস
জ্বরে আক্রান্ত হলে তরল খাবার গুলো বেশি খাওয়ার চেষ্টা করুন কারণ এই সময় শরীর
থেকে পানি বের হয়ে যায় যার ফলে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে তাই এই
পরিস্থিতিতে তরল খাবার খাওয়া খুবই জরুরী।
ভিটামিন সি যুক্ত ফলঃ ভাইরাস
জ্বর থেকে দ্রুত সেরে ওঠার জন্য ভিটামিন সি যুক্ত ফলগুলো খেতে পারেন। কারণ
ভিটামিন সি যুক্ত ফল বা খাবার গুলো আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
সাহায্য করে। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভিটামিন সি যুক্ত
খাবার গুলো ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য খুব জরুরি।
মাল্টিভিটামিনঃ
সাধারণত ভাইরাস জ্বরে কোন ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না , তবে আপনি যদি
প্রচন্ড শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করেন তাহলে খেতে পারেন মাল্টিভিটামিন। এ ছাড়াও
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এবং দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য ভাইরাস
জ্বরের আক্রান্ত ব্যক্তিরা ঔষধ হিসেবে মাল্টিভিটামিন খেতে পারেন।
মাস্ক
পরিধান করাঃ ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিরা অবশ্যই হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় অথবা
ঘরের বাইরে যাওয়ার সময় এমনকি ঘরের ভেতরেও মাস্ক পরিধান করুন। কারণে এসব
ভাইরাস জ্বর যেহেতু ছোয়াচে তাই , ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিদের উচিত মাস্ক পরিধান
করা না হলে হাচিঁ কাশির মাধ্যমে এই ভাইরাসে আশেপাশের মানুষ আক্রান্ত হতে
পারে।
আলাদা ঘরে থাকুনঃ আপনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সুরক্ষার করার
কথা চিন্তা করে , ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিদেরকে অথবা নিজেও যদি ভাইরাস আক্রান্ত
হন তাহলে আলাদা ঘরে থাকার চেষ্টা করুন বা রাখার চেষ্টা করুন। কারণ এই ভাইরাস
জ্বরের আক্রান্ত ব্যক্তির আশেপাশে বা সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তিরাও এই জ্বরে
আক্রান্ত হতে পারে। তাই ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিদেরকে আলাদা ঘরে রাখার চেষ্টা
করুন।
ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর স্পঞ্জ করাঃ ভাইরাস আক্রান্ত জ্বর হলে বা
অন্য যেকোনো জ্বরের ক্ষেত্রেই ভেজা কাপড় দিয়ে যদি বারবার শরীরের স্পঞ্জ করা
যায় তাহলে সে ক্ষেত্রে শরীরের তাপমাত্রা কম হয় এবং রোগী অনেকটাই আরাম বোধ
করেন। তাই ভাইরাস আক্রান্ত জ্বরের ক্ষেত্রেও ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিতে
পারেন
গরম পানিতে গোসলঃ শরীরের তাপমাত্রা অনেক বৃদ্ধি পেলে এই তাপমাত্রা
কমানোর জন্য ভাইরাস আক্রান্ত জ্বরের রোগীরা কুসুম গরম পানিতে গোসল করতে পারে।
কুসুম গরম পানিতে গোসল করলে শরীরের তাপমাত্রা সহজেই বের হয়ে যায় তবে মনে
রাখবেন এই অবস্থায় কখনোই ১৫ মিনিটের বেশি গোসল করা উচিত নয়।
চিকিৎসকের
পরামর্শঃ আপনি যদি ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কারণে কারণ সমস্যাগুলো ছাড়াও
বিশেষ কোনো জটিলতা অনুভব করেন বা এইসব সাধারন সমস্যা বা লক্ষণ গুলো যদি আপনার
তীব্র আকারে দেখা দেয় তাহলে সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে
পারেন।
ভাইরাস জ্বর কত দিন থাকে
ভাইরাস জ্বর কত দিন থাকে এই বিষয়েও অনেকে জানতে চান তাই এখন আপনাদের জানাবো
ভাইরাস জ্বর কত দিন থাকে। ভাইরাস জ্বর এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের শারীরিক তাপমাত্রা
অনেক সময় ১০৩ - ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট এ পৌঁছে যাই , আর এক্ষেত্রে অনেকেই জ্বর
দুই থেকে তিন দিন স্টে করলেই ঘাবড়ে যান। তবে ভাইরাস জলে আক্রান্ত ব্যক্তিদের
ক্ষেত্রে ভয় পাওয়া বা ঘাবড়ে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই কেননা এই ভাইরাস জ্বর
ছাড়তে প্রায় পাঁচ থেকে সাত দিন এমনকি অনেকের ক্ষেত্রে ১০ দিনও লেগে যেতে
পারে।
ভাইরাস জ্বর হলে কি খেতে হবে
ভাইরাস জ্বর হলে কি খেতে হবে চলুন এবার এই বিষয়টি জেনে নেওয়া যাক। ভাইরাস
আক্রান্ত হলে রোগীকে তরল জাতীয় খাবার যেমন স্যুপ , পাতলা করে রান্না করা সুজি
, পাতলা খিচুড়ি , আদা চা , ডাবের পানি , সেদ্ধ ডিম , টক দই ইত্যাদি খাবার গুলো
খেতে দেওয়া উচিত এবং এর সাথে সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এবং
দুর্বলতা কাটানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি ভিটামিন সি
যুক্ত খাবার এবং মাল্টিভিটামিন খেতে দেওয়া যেতে পারে।
ভাইরাস জ্বর প্রতিরোধে করণীয়
বেশ কিছু পদক্ষেপ রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে আপনি বর্তমানে চলা ভাইরাস থেকে নিজেকে
নিরাপদে রাখতে পারেন, তবে এই কাজটি করার জন্য আপনাকে প্রথমে জানতে হবে ভাইরাস
জ্বরে প্রতিরোধে করণীয় বিষয়গুলো,
মাস্ক পরিধান করাঃ বর্তমানের এই আবহাওয়াতে
যেহেতু প্রায় মানুষের ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন তাই ঘরের বাইরে বা
জনসমাগমে যেতে হলে মাস্ক পরিধান করুন।
ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে না
যাওয়াঃ আপনি যদি ভাইরাস জ্বর প্রতিরোধ করতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনার উচিত
হবে ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে না যাওয়া এবং পরিবারের কেউ ভাইরাসে
আক্রান্ত হলে তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সহ তাকে আলাদা ঘরে রাখার চেষ্টা
করা।
ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গ্রহণঃ ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গুলো আমাদের
শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে , আর শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা
বেশি থাকলে শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ কম হয়। তাই ভাইরাস জ্বর থেকে মুক্ত থাকার
জন্য ভিটামিন সি জাতীয় খাবার এবং ফলগুলো খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
মন্তব্য,
ভাইরাস সম্পর্কিত এই প্রশ্ন আজকে আপনাদেরকে বিস্তারিত ভাবে জানিয়েছি আশা করছি উপরের দেওয়া এই টিপস গুলো
ফলো করে আপনারা খুব সহযেই ভাইরাস জ্বর প্রতিরোধ এবং প্রতিকার করতে পারবেন।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url