বিভিন্ন গুনাগুন সম্পন্ন বা বলতে পারেন গুণে ভরপুর এলোভেরা খাওয়ার উপকারিতা অনেক
বেশি । নিয়মিত যদি অ্যালোভেরা খাওয়া যায় তাহলে শরীরের বিভিন্ন অসুখ সারাতে এটি
অসাধারণ কাজ করে । আমাদের বিভিন্ন ধরনের অসুখের সমাধান আসলে আমাদের হাতের কাছেই
বা আমাদের বাড়ির আনাচে কানাচে রয়েছে । আজকে আমরা জানবো অতি সাধারণ কিন্তু অতি
মূল্যবান একটি উপকরণ যার নাম অ্যালোভেরা এটি খাওয়ার উপকারিতা ।
সূচিপত্রঃ এলোভেরা খাওয়ার উপকারিতা - অ্যালোভেরা খাওয়ার নিয়ম
এলোভেরা খাওয়ার উপকারিতা
এলোভেরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে হয়তো সবার নাও জানা থাকতে পারে এই কারণে
আজকে সকলের উদ্দেশ্যে এলোভেরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বর্ণনা করা হবে । আপনি
যদি এলোভেরা খাওয়ার উপকারিতা গুলো না জানেন তাহলে এই পোস্টটি পড়ুন এবং জেনে
নিন এলোভেরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে । চলুন তাহলে আর দেরি না করে এলোভেরা
খাওয়ার উল্লেখযোগ্য উপকারিতা গুলো জেনে নেওয়া যাক।
ওজন কমাতে সাহায্য করে ঃ শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমানোর জন্য অত্যন্ত
কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে অ্যালোভেরা । এলোভেরা রস খাওয়া একটু কষ্টকর
হলেও, এটি যদি নিয়মিত খাওয়া যায় তাহলে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে আপনার শরীরের
অতিরিক্ত মেয়ের কমাতে আপনি সক্ষম হবেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেঃ এলোভেরা জেল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও অত্যন্ত
ভালো কাজ করে । গাছ থেকে এলোভেরার পাতা সংগ্রহ করার পরে পাতার নিচে অংশে হলুদ
যে আঠালো পদার্থটি রয়েছে এটি কোষ্ঠকাঠিন্যর দূর করার ওষুধ হিসেবে খুব ভালো
কাজে দেয় । নিয়মিত যদি কিছুদিন এই তরলটি খাওয়া যায় তাহলে আপনার
কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করেঃ শরীরের শর্করার মাত্রা বা চিনির মাত্রা কি
কম করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে এলোভেরার ভূমিকা বর্ণনাতিত। নিয়মিত
অ্যালোভেরা থেকে রস বের করে সেটি পান করলে শরীরের শর্করার মাত্রা কম হয় এবং
যার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকে তাই ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়ম করে এলোভেরা
রস খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
হরমোনের তারতম্য ঠিক রাখেঃ অ্যালোভেরা জেল খাওয়ার আরেকটি বড় উপকারিতা
হলো এটি আমাদের শরীরের বিভিন্ন হরমোনের মাত্রা কে ঠিক রাখতে সাহায্য করে । এই
কারণে যারা নিয়মিত এলোভেরার রস খান তাদের ক্ষেত্রে হরমোনের তারতম্য হওয়ার মতন
সমস্যা বা দটিলতা দেখা দেয় না।
বিভিন্ন ধরনের ক্ষত বা ইনফেকশন সারাতেঃ যেকোনো ধরনের ইনফেকশন অথবা শারীরিক কোনো
ক্ষত সারাতে অ্যালোভেরা ভূমিকাও কম নয়। এলোভেরা জেল এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর
পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বিভিন্ন ধরনের ক্ষত সারাতে ভীষণ উপকারী।
লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধি করেঃ এলোভেরা জেল শরীরের লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধি
করতে সাহায্য করে এই কারণে যারা রক্তস্বল্পতার রুগী রয়েছেন তারা শরীরে
রক্তকণিকা বৃদ্ধি করার জন্য নিয়মিত এলোভেরা রস খাওয়ার অভ্যাস করুন কারণ
এলোভেরার মধ্যে যেসব পুষ্টি উপাদান রয়েছে সেগুলো আপনার শরীরের লোহিত রক্ত
কণিকা বৃদ্ধি করতে কাজ করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ অ্যালোভেরার মধ্যে বিভিন্ন ধরনে
পুষ্টিগুণ থাকায় নিয়মিত এর রস খেলে এটি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। অ্যালোভেরার রস আমাদের শরীর থেকে বিভিন্ন খারাপ
উপাদান বা টক্সিক পদার্থ গুলো বের করে দিতে সাহায্য করে আর যেহেতু শরীরের
টক্সিক উপাদান গুলো থাকে না এই কারণে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি
থাকে ।
হার্ট সুস্থ রাখতেঃ হার্ট কে সুস্থ রাখতেও অ্যালোভেরা বিশেষ ভূমিকা পালন
করে থাকে , কারণ এলোভেরা খেলে শরীরের রক্ত চলাচলের মাত্রা ঠিক থাকে যা কিনা
হার্ট কে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং এলোভেরা যেহেতু শরীরের পলিস্টার কমাতে
সাহায্য করে , তাই শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমে না এবং হার্টের বিভিন্ন অসুবিধা বা
হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কম থাকে।
অন্যান্যঃ এছাড়াও এলোভেরা খেলে শরীরের পানি শূন্যতা দূর করে এবং
এলোভেরার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকায় এটি আমাদের শরীরের বিভিন্ন
পুষ্টি ঘাটতি দূর করতে সাহায্য করে। অ্যালোভেরার মধ্যে ক্যালসিয়াম
ম্যাগনেসিয়াম ফলিক এসিড থাকায় এটি আমাদের দাঁত গঠন বিশেষ ভূমিকা পালন করতে
পারে।
অ্যালোভেরা খাওয়ার নিয়ম
উপরের আলোচনায় আমরা এতক্ষন এলোভেরা খাওয়ায় উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি
কিন্তু শুধু এলোভেরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানলেই হবে না জানতে হবে
এলোভেরা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। আপনি যদি না জেনে থাকেন এলোভেরা খাওয়ার
নিয়ম হলো তাহলে এখনই জেনে নিন এবং এই পুষ্টিগুনে ভরপুর উপাদানটি নিয়মিত
অল্প পরিমাণে হলেও খাওয়ার চেষ্টা করুন। অ্যালোভেরা বা অ্যালোভেরার রস আপনি
বিভিন্ন উপায়ে খেতে পারেন ।
অ্যালোভেরার পাতা থেকে রেল বা রস সংগ্রহ করে সকালবেলা হালকা কুসুম গরম পানি
মিশিয়ে , সেই পানিটি পান করতে পারেন । এই পানি অতি সাথে আপনি ইচ্ছা করলে
দু-এক চামচ মধু এড করে নিতে পারেন। অ্যালোভেরার রস হালকা গরম পানির সাথে
মিশিয়ে এর মধ্যে কয়েক চামচ লেবুর রস এড করেও খাওয়া যায়। যদি অ্যালোভেরার
রস বা জুস আকারে অ্যালোভেরা খেতে আপনার অসুবিধা হয় তাহলে আপনি সবজির সাথে
মিশিয়ে রান্না করেও খেতে পারে। আপনি যেকোনো সময়েই অ্যালোভেরার রস বা জুস
খেতে পারেন তবে সকালবেলা খালি পেটে খেলে এর সবচাইতে বেশি সুফল পাওয়া যায়।
অ্যালোভেরা জেল সংরক্ষণের উপায়
এই পুষ্টিগুণে ভরা এবং ঔষধি গুন সম্পন্ন উপাদানটি হয়তো বা সবসময় আমাদের
হাতের কাছে নাও থাকতে পারে অথবা সবসময় অ্যালোভেরার পাতা থেকে জেল
সংগ্রহ করে এটি ব্যবহার করার মতন সময় সবার হাতে সব সময় নাও থাকতে পারে এই
কারণে চলুন আজকে আমরা জেনে নিয়ে এলোভেরা জেল সংরক্ষণ করার সহজ
কিছু পদ্ধতি সম্পর্কে। আসুন তাহলে এবার জেনে নিন এলোভেরা জেল সংরক্ষণের
উপায় এবং এই পুষ্টিগুণে ভরা উপাদানটি সংগ্রহ করুন ও আপনার প্রয়োজন অনুসারে
ব্যবহার করুন। বেশ কয়েকটি উপায়ে আপনি অ্যালোভেরা জেল সংরক্ষণ করতে পারেন।
অ্যালোভেরা জেল সংরক্ষণের উপায় গুলো হলো,
অ্যালোভেরার পাতা থেকে জেল সংগ্রহ করে , সেই জেলের সাথে কয়েক চামচ মধু
মিশিয়ে রেফ্রিজারেটরে দীর্ঘদিনের জন্য সংরক্ষণ করতে পারবেন । এবং এই জেলটি
আপনি রূপচর্চা সহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। আপনি যদি ১ মাসের জন্য
এলোভেরা জেল সংরক্ষণ করতে চান তাহলে, অ্যালোভেরার পাতা থেকে জেল সংগ্রহ
করে এর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে রেফ্রিজারেটরে রেখে দিন। এ পদ্ধতিতে
অনায়াসে আপনি পুরো এক মাস অ্যালোভেরার জেল সংরক্ষণ করতে পারবেন। এছাড়াও
ভিটামিন ই তেল এর সাথে এলোভেরা জেল মিশিয়ে একটি এয়ারটাইট ব্যয়মে
দীর্ঘদিনের জন্য রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করতে পারবেন।
এছাড়া আপনি অ্যালোভেরার পাতা সংগ্রহ করে পাতার উপরে সবুজ অংশটি বাদ
দিয়ে ফেলে ভেতরের সাদা অংশটি কুচি করে কেটে পানির মধ্যে দিয়ে কিছুক্ষণ
ফুটিয়ে সেই পানিতে ঠান্ডা করে এয়ারটাইট কাঁচের জারে এটি সংরক্ষণ করে রাখতে
পারেন। অ্যালোভেরার পাতা সংগ্রহ করে সেটি কিউব আকারে অথবা স্লাইস করে কেটে
জিপ লক ব্যাগে করে ডিপ ফ্রিজে ৬ মাসের মতন সংরক্ষণ করা যায়।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url