আযানের জবাব - আযানের জবাব দেওয়ার গুরুত্ব
নামাজের জন্য আযান একটি অত্যন্ত গুরুত্বের বিষয়। আজান অর্থ আহবান করা বা ডাকা। আযান দেওয়া সর্বপ্রথম মদিনাতে চালু করা হয়েছেলো। আযানের মাধ্যমে আল্লাহর মহত্ত্ব ও বড়ত্ব তুলে ধরা হয়। আজকে এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা জানবো আজানের দোয়া , আযানের দোয়ার উচ্চারণ এবং আযানের জবাব দেওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে। একজন মুসলমান হিসেবে প্রত্যেকেরই এই বিষয়গুলো জানা অত্যন্ত জরুরী।
সূচিপত্রঃ আযানের দোয়া - আযানের দোয়ার উচ্চারণ - আযানের জবাব দেওয়ার গুরুত্ব
- আজান
- আজান দোয়া
- আযানের দোয়ার উচ্চারণ
- আযানের দোয়ার অর্থ
- আযানের জবাব
- আযানের জবাব দেওয়ার গুরুত্ব
- যে যে অবস্থায় আযানের জবাব দেওয়া যাবে না
আজান
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে আযান দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আজান
অর্থ নামাজের জন্য আহ্বান করা। তবে অনেকের হয়তো আযান দেওয়ার অথবা আযানের
মধ্যে যে বাক্যগুলো বলা হয় সেগুলো জানা নাও থাকতে পারে, কিংবা অনেকে হয়তো
বা আযান দেওয়া শিখতে চান এবং আযানের কোন বাক্য গুলো কতবার বলতে হয় সেটি জানতে
চান তাদের জন্য নিচে আযানের বাক্যগুলো তুলে ধরা হলো।
আজান দেয়ার সময় -'আল্লাহু আকবার' এই বাক্যটি প্রথমে চারবার বলতে হবে। তারপর পর্যায়ক্রমে দুইবার করে- আশহাদু-আল লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ ।আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্ ।হাইয়া ‘আলাছ ছালাহ্ ।হাইয়া ‘আলাল ফালাহ্ । এই বাক্যগুলো বলতে হবে এরপর আবার দুইবার -আল্লাহু আকবার বলার পরে, একবার -লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ্ বলতে হবে।
তবে ফজরের আযান দেয়ার সময় আযানের মধ্যে - হাইয়া ‘আলাল ফালাহ্ এই বাক্যটি বলার পরে দুইবার বলতে হবে - আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম।
আজানের দোয়া
আজান মানে হল আহবান করা। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে মোয়াজ্জিন আজান
দিয়ে মুসল্লীদের নামাজের জন্য আহ্বান করে এছাড়াও আজান বিভিন্ন কারণেই দেওয়া
হয় বা দেওয়া যেতে পারে। আযান দেওয়ার পরে আরবিতে একটি দোয়া আছে, আজান দেয়ার
পরের এই দোয়াটি নিচে আপনাদের জন্য দেওয়া হলো। আজানের দোয়া টি হল,
আযানের দোয়ার উচ্চারণ
অনেক মানুষ রয়েছে যারা এখনো আরবী পড়তে জানে না, অথবা আরবি পড়া জানলেও শুদ্ধভাবে বা ভালোভাবে করতে পারেন। যারা আরবি জানেন না তাদের জন্য আযানের দোয়ার উচ্চারণ বাংলায় নিচে তুলে ধরা হয়েছে। এখান থেকে আপনি আযানের দোয়ার উচ্চারণ পড়ে নিতে ও শিখে নিতে পারেন। আযানের দোয়ার উচ্চারণ কি হল,
আযানের দোয়ার অর্থ
মুসলমান হিসেবে আমাদের আজানের দোয়ার অর্থ জেনে রাখা উচিত। আযানের পরে যে
দোয়াটি পড়া হয় সেটির মধ্যে আসলে আল্লাহ রব্বুল আলামীন কে কি বলা হয় কি
অবশ্যই জানা দরকার। এই কারণে এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের আজকে আযানের দোয়ার
অর্থও জানানো হবে। নিচে আযানের দোয়ার অর্থ কি তা জেনে নিন।
আযানের জবাব
ইসলাম ধর্মে আযানের গুরুত্ব অনেক বেশি , আজান শুনলে এর সাথে সাথে আজানের জবাব বা উত্তর দিতে হয়। আজান শুনলে এর জবাব দেওয়া সুন্নত। তবে অনেকেই হয়তো কিভাবে আযানের জবাব দিতে হয় বা আজানের উত্তর দিতে হয় জানেন না। যারা আযানের জবাব দিতে জানেন না তাদের জন্য আজকের এই পোস্টটি। আজকে পোস্টের মাধ্যমে আমরা আযানের জবাব সম্পর্কে জেনে নেবে। শুধু নামাজের আগেই নয় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে আজান দেয়ার প্রয়োজন পড়ে যেমন-সন্তান জন্মগ্রহণের পরে সন্তানের কানে আযান দেওয়া হয় , অতিরিক্ত ঝড়ের সময় আযান দেওয়া হয় এবং বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বাঁচার জন্য আজান দেওয়া হয় তবে আজান দেয়ার কারণ যেটাই হোক না কেন এর উত্তর দেওয়া সুন্নত। চলুন আমরা এবার আযানের জবাব কিভাবে দিতে হয় সেটি জেনে নিন।
যখন মত কিংবা অন্য কেউ আজান দিবে তার প্রতিটি কথা বলার পরে মুয়াজ্জিন যখন কিছু সময় বিরতি দেয় , তখন সেই কথাগুলো মোয়াজ্জিমের মতন করে বা যিনি আজান দেয় তার মতন করে রিপিট করাকে বা পুনরায় বলা কে আজানের জবাব দেওয়া বলা। তবে আজানের মধ্যে যখন-হাইয়্যা আলাস সালাহ এবং হাইয়্যা আলাল ফালাহ বলা হবে তখন যিনি আজানের উত্তর দেবেন তিনি বলবেন -লা হাওলা ওয়া লা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। আর ফজরের নামাজের সময় আযানের মধ্যে মুয়াজ্জিন যখন-আচ্ছালাতু খাইরুম মিনান্নাওম বলবে তখন যারা আযান শুনবে তারা বলবেন-সাদ্দাক্বাতা ওয়া বারারতা। নারী এবং পুরুষদের উভয়ের ক্ষেত্রেই আজানের উত্তর দেওয়ার একই নিয়ম।
আযানের জবাব দেওয়ার গুরুত্ব
হাদিস শরীফে যেহেতু আযানের উত্তর দেওয়ার বিধান রয়েছে সুতরাং আযানের জবাব দেওয়ার গুরুত্ব অনেক বেশি। বুখারী শরীফের হাদিস নম্বর ৬১১ থেকে জানা যায় রাসূলুল্লাহ(সা) বলেছেন-যখন তোমরা আজান শুনতে পাবে তখন মোয়াজ্জেমের মতন করে তোমরাও বলবে। আযানের জবাব দিলে অশেষ সওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়। আল্লাহর রাসূল(সা) আরো বলেছেন-যে ব্যক্তি আন্তরিকতার সাথে আজানের জবাব দেবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব ও অপরিহার্য হয়ে যাবে (মিশকাত শরীফ)।
একদিন মহানবী মুয়াজ্জেমের সওয়াবের কথা বলতে গিয়ে বলেন যে-মোয়াজ্জেমের আজান শুনে যতজন মুসল্লী নামাজ আদায় করবে তাদের নামাজের সমপরিমাণ সওয়াব মোয়াজ্জেম পাবে, এই কথা শুনে কিছু সাহাবী নবীজিকে প্রশ্ন করেন মোয়াজ্জেমের মতন এত সওয়াব অন্যরা কিভাবে পেতে পারে, এর উত্তরে মহানবী(সা) সাহাবীদের জানান-মোয়াজ্জেমের মতন সোয়াব পেতে হলে মোয়াজ্জেম যখন আজান দেয় তখন সেই আযানের জবাব দেওয়া। এই ঘটনা থেকেই বোঝা যায় আযানের জবাব দেওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে।
যে যে অবস্থায় আযানের জবাব দেওয়া যাবে না
আজানের জবাব দেওয়ার ফজিলত বা মর্যাদা অনেক বেশি এবং হাদিসে আযানের জবাব দেওয়ার
বিধান থাকলেও বেশ কয়েকটি অবস্থায় আযানের জবাব দেওয়ার নিষেধ। যে যে অবস্থায়
আযানের জবাব দেওয়া যাবে না আজকে আমরা সেই অবস্থার কথাগুলো জানবো। যে যে অবস্থায়
আযানের জবাব দেওয়া যাবে না সেই অবস্থার কথাগুলো যদি আপনি না জানেন তাহলে
গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি এখনই জেনে নিন। যে অবস্থায় থাকাকালীন আজানের উত্তর
দেওয়া যাবে না, সেগুলো হল
- নামাজরত অবস্থায়
- খুতবা শোনার সময়
- স্ত্রী সহবাসের সময়
- খাবার খাওয়ার সময়
- শরীয়তের মাসলা মাসায়েল শোনার সময়
- হায়েজ অবস্থায়
- নিফাস অবস্থায়
- প্রস্রাব পায়খানা করার সময়
মন্তব্য, আপনি যদি মনোযোগ সহকারে এই পোস্টটি পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই পোস্টের
মাধ্যমে আযানের দোয়া , আযানের দোয়ার উচ্চারণ এবং আযানের জবাব দেওয়ার গুরুত্ব
সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিয়েছেন। এই পোস্টটি পড়ে বুঝতে পেরেছেন আযানের জবাব
দেওয়ার গুরুত্ব কতখানি। সুতরাং এই বিষয়টি অবহেলা না করে সকল মুসলমান নর-নারীর
উচিত নিষিদ্ধ সময় গুলো বাদ দিয়ে প্রত্যেকটা সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আজানের
জবাব দেয়া। মুসলমান হিসেবে আযানের জবাব দিন এবং এর মাধ্যমে
অশেষ সওয়াবের অধিকারী হন।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url