বাংলাদেশের সেরা দর্শনীয় স্থান - বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ
আপনি যদি ভ্রমণ বিলাসী হয়ে থাকেন তাহলে সবার আগে অর্থাৎ ভ্রমনে বের হওয়ার আগে আপনার জেনে নেওয়া দরকার, বাংলাদেশের সেরা দর্শনের স্থান গুলো সম্পর্কে।আর যদি বাংলাদেশের সেরা দর্শনের স্থান সম্পর্কে আপনার জানা থাকলে আপনি খুব সহজেই যে কোন একটি জায়গা বাছাই করে নিয়ে এটি ভ্রমণ করতে পারেন।
সূচিপত্রঃ বাংলাদেশের সেরা দর্শনীয় স্থান - বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ
বাংলাদেশের সেরা দর্শনীয় স্থান
আপনি যদি বাংলাদেশের সেরা দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে অবগত না থাকেন তাহলে, এই
পোস্টের মধ্যে দিয়ে এখনই জেনে নিন বাংলাদেশের সেরা দর্শনের স্থান গুলো সম্পর্কে।
চলুন তাহলে নিজে আলোচনা শুরু করা যায় বাংলাদেশের সেরা দর্শনীয় স্থান নিয়ে।
সেন্ট মার্টিনঃ সুন্দর এবং মনোমুগ্ধকর একটি জায়গার নাম হলো সেন্ট মার্টিন। এটি
একটি প্রবাল দ্বীপ। এবং সেন্ট মার্টিনের ডাব অত্যন্ত বিখ্যাত, কারণ এখানকার দাপের
পানে অত্যন্ত সুস্বাদু এবং সুমষ্ট।
কক্সবাজারঃ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত হল কক্সবাজার। অনেক প্রাচীন
স্থাপনা রয়েছে এই কক্সবাজারকে ঘিরে। ভ্রমণি মানুষদের জন্য কক্সবাজার একটি
অন্যতম স্থান।
খাগড়াছড়িঃ ভ্রমণ বিলাসীদের জন্য ভ্রমণ করার মতন আরেকটি চমৎকার জায়গা হল
খাগড়াছড়ি জেলা এখানে রয়েছে ঝুলন্ত ব্রিজ , রহস্য গুহা , ঝরনা এবং পাহাড়ের
অভূতপূর্ব সুন্দর।
সিলেটের চা বাগানঃ সিলেটের জাফলং, যা নাকি বাংলাদেশের রাজকন্যা হিসেবে সবার কাছে
পরিচিত। এখানে রয়েছে সুদীর্ঘ চায়ের বাগান, সারাদেশের চা এর বেশিরভাগ চাহিদা এই
সিলেট থেকেই পূরণ করা হয়। সিলেটের চা বাগান দর্শনার্থীদের মন কাড়ার মতন আরেকটি
অন্যতম স্থান।
বিছানাকান্দিঃ এটিও সিলেটে এই অবস্থিত। বিছানাকান্দির দর্শনীয় হয়ে উঠেছে মেঘালয় পাহাড় বয়ে আসা ঠান্ডা পানির টোটো ধরা থেকে। পানির এই স্বচ্ছ ধারা কি তৈরি করেছে মোনোরম এক পরিবেশ।
সাজেকঃ আপনি যদি পাহাড়ের বাজে বাজে মেঘের ভেলা দেখতে চান তাহলে আপনাকে যেতে হবে
রাঙ্গামাটি জেলায় অবস্থিত সাজেক এ।
নীলগিরিঃ বান্দরবান জেলায় অবস্থিত নীলগিরির আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন
কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এখান থেকে আপনি সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য
দেখতে পাবেন। নীলগিরির সবচাইতে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এখানে আপনি নিজের হাতে দেখতে
পারবেন।
চলনবিলঃ এটি আমরা সবাই জানি যে আমাদের বাংলাদেশের সবচাইতে বড় ভিলেন নাম হলো
চলন বিল। বর্ষাকালে আশেপাশের প্রায় তিনটি জেলা জুড়ে পানিতে পরিপূর্ণ থাকে
এই চলনবিন। এবং এই চলনবিলটি উপভোগ করার জন্য অনেক দূর দূর থেকে ভ্রমণ বিলাসিতা
ছুটে আসে।
ছেঁড়া দ্বীপঃ ভ্রমণ বিলাসীদের জন্য আরেকটি উল্লেখযোগ্য জায়গা হল ছেড়া দ্বীপ
এটি রয়েছে বাংলাদেশের সীমানার শেষ বিন্দুতে। এটি সাধারণত পাথরের একটি
দ্বীপ যা রয়েছে বঙ্গোপসাগরের মাঝখানে এবং সেন্ট মার্টিনের বিচ্ছিন্ন অংশ
হিসেবে পরিচিত।
কুয়াকাটাঃ এই কুয়াকাটাতে আসলে আপনি দেখতে পাবেন সমুদ্রের মাঝখান
থেকে সূর্যের উদয় হওয়া এবং সন্ধ্যার আগে সমুদ্রের বুকে সূর্যের
অদৃশ্য হওয়া এটি হলো কুয়াকাটার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য। সাগরকন্যা কুয়াকাটা কে
অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি ও বলা হয়ে থাকে। আপনি চাইলে সময় করে কুয়াকাটা ঘুরে
আসতে পারেন।
সুন্দরবনঃ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রো বন হল সুন্দরবন । শুধু দেশের নয়
বিদেশ থেকেও অনেক ভ্রমণ বিলাসী লোকেরা সুন্দরবন ভিজিট করতে আসেন। সুন্দরবনে আসলে
আপনি জোয়ার ভাটার অপরূপ চিত্র দেখতে পাবেন।
নিঝুম দ্বীপঃ বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলের নোয়াখালী জেলায় অবস্থিত নিঝুম দ্বীপ।
এখানকার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউ এবং অপর প্রান্ত থেকে
বয়ে আসা হিমেল হাওয়া। নিঝুম দ্বীপের চিত্রটি দেখলে মনে হয় এটি যেন শিল্পীর
হাতে তৈরি করা একটি ছবি।
বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ
এবার আমরা জানবো বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থানসমূহের নাম সম্পর্কে।
বাংলাদেশে বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে যেগুলো পর্যটন করলে আপনি এর ইতিহাস
সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবে। চলুন তাহলে সংক্ষেপে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থান
গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ময়নামতিঃ রানী ময়নামতির নাম অনুসারে এখানকার নামকরণ করা হয় ময়নামতি নামে।
ময়নামতি ছিলেন রাজা মানিক চন্দ্রের স্ত্রী। এই ময়নামতিতে রয়েছে হিন্দু ও
বৌদ্ধদের ধর্মের বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা এবং সেই নিদর্শনগুলো সংরক্ষণের জন্য
এখানে একটি জাদুঘর তৈরি করা হয়েছে।
মহাস্থানগড়ঃ বগুড়া জেলা অবস্থিত এই ঐতিহাসিক। পূর্ব দিক দিয়ে বয়ে গেছে
করতোয়া নদী। এই অঞ্চলেই একসময় গড়ে উঠেছিল পুন্ড্র নগরী। শাহ সুলতান বকলি
পরশুরাম রাজা কে পরাজিত করে এই মহস্থান গড়ে ইসলামের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।
এখনো সেখানে এই আউলিয়ার মাজার রয়েছে।
সোমপুর বিহারঃসোমপুর বিহার যেটি নাকি বৌদ্ধবিহার নামে বেশি পরিচিত। সোমপুর বিহার স্থাপন করা হয়েছিল পাল বংশের রাজার ধর্ম পালের শাসন আমলে। সোমপুর বিহারের মোট পক্ষ সংখ্যা হল ১১৭। এখানেও হিন্দু ও বৌদ্ধদের ধর্মীয় বিভিন্ন নিদর্শন পাওয়া যায়।
পাহাড়পুরঃ রাজশাহী বিভাগে অবস্থিত নওগাঁ জেলায় পাহাড়পুর অবস্থিত। এই নিদর্শনটি
হলো বৌদ্ধ যুগের বড় একটি নিদর্শন। পাহাড়পুর এর খনন কাজ শুরু করা হয়েছিল
১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে।
সোনারগাঁওঃ বাংলাদেশের আরেকটি ঐতিহাসিক স্থান হল সোনারগাঁও। সোনারগাঁও এর
নামকরণ করা হয়েছিল ইসাখার আমলে তার স্ত্রীর নাম অনুসারী। ঐতিহাসিক স্থান
সোনারগাঁও রয়েছে পঞ্চম পীরের মাজার , গিয়াস উদ্দিন আজম সাহেবের কবর এবং
হোসেন শাহ নির্মিত মসজিদ।
লালবাগ কেল্লাঃ আরঙ্গজেবের পুত্র শাহজাদা আজম ১৬৭৮ সালের লালবাগের কেল্লা নির্মাণের কাজ শুরু করে এবং এই নির্মাণের কাজ শায়েস্তা খায়ের আমলে শেষ। তিনটি পুরাকৃতি দ্বারা বেষ্টিত রয়েছে লালবাগের কেল্লাটি এগুলো হলো-পরিবির মাজার , দরবার হল , তিন গম্বুজ মসজিদ।
পরী বিবির মাজারঃ শায়েস্তা খানের মেয়ের নাম ছিল পরি বিবি ।১৬৮৪ সালে
ইন্তেকালের পর তার কবরের ওপরে এই স্থাপনাটি নির্মাণ করা হয়। এটি প্রধানত তাজমহল
কে অনুসরণ করে বানানো হয়।
উত্তরা গণভবনঃ রাজশাহী বিভাগে অবস্থিত নাটোর শহরের অবস্থিত উত্তরা গণভবন।
রাজা প্রমোথ নাথ রায় ১৮৯৭ সালে এই ভবনটি নির্মাণ করেছিলেন,
পরবর্তীতে শেখ মুজিবুর রহমান এটির নাম পরিবর্তন করে 1972 সালে উত্তরা গণভবন
রাখেন।
বাহাদুর শাহ পার্কঃ বাহাদুর শাহ পার্ক নামকরণ করার আগে এটি ছিল
আর্মেনীদের ক্লাব হিসেবে । ১৮৮৫ সালে ভারতের শাসনভার যখন রাণী ভিক্টোরিয়া গ্রহণ
করে তখন তিনি এর নাম পরিবর্তন করে ভিক্টোরিয়া পার্ক রাখেন।
ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শনের গুরুত্ব
আমরা আলোচনা করব ঐতিহাসিক স্থান গুলো পরিদর্শন করা জরুরী কেন। আসুন তাহলে জেনে
নেওয়া যাক ঐতিহাসিক স্থানগুলো পরিদর্শনের গুরুত্ব সম্পর্কে। আমরা যদি ঐতিহাসিক
স্থানগুলো পরিদর্শন করি তাহলে এর মাধ্যমে আমরা।
- অতীতের বিভিন্ন সভ্যতার সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারবে
- বিভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কে আমাদের ধারণা আসবে
- শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের প্রসার ও প্রচার হবে
- ঐতিহাসিক স্থানগুলো পরিদর্শনের মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো কোন স্থান কিসের জন্য বিখ্যাত ছিল
- আরও জানতে পারবো কোন জাতি কতটা সমৃদ্ধি অর্জন করেছিল
ঐতিহাসিক স্থান গুলো সংরক্ষণ করা প্রয়োজন কেন
আমাদের দেশে অনেকগুলো ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে। আমাদের উচিত সেই ঐতিহাসিক স্থান
গুলো সংরক্ষণ করা। এবার আপনাদের সাথে আলোচনা করা হবে ঐতিহাসিক স্থান সংরক্ষণ করা
প্রয়োজন কেন এই বিষয়টি। চলুন এবার তাহলে জেনে নেয়া যাক ঐতিহাসিক স্থান গুলো
সংরক্ষণ করা প্রয়োজন কেন
ঐতিহাসিক স্থান গুলোর মধ্যে দিয়ে আমরা অতীতের সভ্যতা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারি এবং অতীতের বিভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কে আমাদের ধারণা। ঐতিহাসিক স্থানগুলো পরিদর্শনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের ভান্ডার বিস্তৃত হয় এবং তারা এগুলো নিয়ে গবেষণার কাজ চালিয়ে যেতে পারে। ঐতিহাসিক স্থানগুলো সংরক্ষণ করা থাকলে এগুলো পরিদর্শনের মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো কোন জাতি কতটুকু সমৃদ্ধি অর্জন করেছিল এবং কোন এলাকার কিসের জন্য বিখ্যাত ছিলো। এছাড়াও দেশের ঐতিহাসিক স্থানগুলো সংরক্ষণ করা হলে এগুলো পরিদর্শন করতে দেশ-বিদেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের পর্যটকরা আসা যাওয়া করবে এবং এর মাধ্যমে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url